আগের ম্যাচে গুরুত্বপূর্ণ ফেইজে খরুচে বল করে দলের হারের কারণ হয়েছিলেন মুস্তাফিজুর রহমান। তবু তাকে পরের ম্যাচেও একাদশে রেখেছিল দিল্লি ক্যাপিটালস। তবে দলের আস্থার প্রতিদান দিতে পারলেন না বাংলাদেশের পেসার। বিবর্ণ বোলিংয়ে চরম হতাশ করে রান বিলিয়েছেন তিনি। গতকাল ব্যাঙ্গালুরুতে দিল্লি ক্যাপিটালসের বিপক্ষে আগে ব্যাটিং পেয়ে ৬ উইকেটে ১৭৪ রান করেছে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু। মুস্তাফিজ তিন ওভার বোলিংয়ের সুযোগ পেয়ে দিয়ে দিয়েছেন ৪১ রান। ওভারপ্রতি ১৩.৭০ করে রান দিয়ে এই বাঁহাতি নিতে পারেননি কোন উইকেট।

এম চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের দর্শকরা দুই শ বনাম দুই শ’র ম্যাচ দেখে অভ্যস্ত। গতকাল সেখানেই আগে ব্যাট করে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরু করেছে ৬ উইকেটে ১৭৪ রান। প্রতিপক্ষ দিল্লি ক্যাপিটালসের কাজটা তখন সহজই মনে হচ্ছিল। কিন্তু এই রানও তাড়া করতে পারেনি ডেভিড ওয়ার্নারের দল। ব্যাঙ্গালুরুর রানের পেছনে ছুটতে গিয়ে আরও একবার টপ অর্ডারে ধস নেমেছে দিল্লির। সেটি থেকে ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি ওয়ার্নাররা। শেষ পর্যন্ত ২০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ১৫১ রান করেছে দিল্লি। ঘরের মাঠের ম্যাচটি ২৩ রানে জিতেছে বেঙ্গালুরু। ওদিকে দিল্লি পাঁচ ম্যাচ খেলে সব কটিতেই হেরেছে।

চার ম্যাচে তিন ফিফটিতে ২০৯ রান, দিল্লির অধিনায়ক ডেভিড ওয়ার্নার আইপিএলের শুরু থেকেই দারুণ ছন্দে ছিলেন। কিন্তু ওয়ার্নারের স্ট্রাইক রেট মাত্র ১১৬! আজ অবশ্য স্ট্রাইক রেটটা বাড়িয়ে নেওয়ার সুযোগ ছিল। দ্রুত রান তোলার জন্য আদর্শ ভেন্যু বেঙ্গালুরুর এম চিন্নাস্বামী স্টেডিয়াম। কিন্তু প্রতি ম্যাচের মতো আজও দিল্লির টপ অর্ডারে ধস নামে। ইনিংসের প্রথম ওভারেই পৃথ্বী শ কোনো রান না করেই রান আউট হন। বিয়ের ছুটি কাটিয়ে দলে যোগ দেওয়া মিচেল মার্শও ০ রানে আউট হন। তৃতীয় ওভারে দিল্লি হারায় যশ ধুলের উইকেট। দিল্লির রান তখন ২ রানে ৩ উইকেট। রান তাড়ায় এমন শুরুর পর অধিনায়ক ওয়ার্নারের দ্রুত রান নেওয়ার চেষ্টাটা থমকে যায়। তবু প্রতি আক্রমণের পথ বেছে নেন ওয়ার্নার। কিন্তু সেটি বেশিক্ষণের জন্য নয়। ব্যাঙ্গালুরুর হয়ে অভিষিক্ত পেসার বিজয়কুমার বিশাকের বলে ১৩ বলে ১৯ রান করে আউট হন ওয়ার্নার। ৩০ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে দিল্লি তখন খাদের কিনারে। সেখান থেকে ৩৮ বলে ৫০ রানের ইনিংস খেলে দিল্লির রান এক শ’র ওপারে নিয়ে যান মানিশ পান্ডে। শেষ পর্যন্ত দিল্লির ইনিংস থামে ১৫১ রানে। ব্যাঙ্গালুরুর হয়ে সর্বোচ্চ ৩ উইকেট নেন বিজয়কুমার।
চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে আগের ম্যাচে ২১২ রান করেও হেরেছিল ব্যাঙ্গালুরু। একই ভেন্যুতে আরও একটি ম্যাচের আগে ব্যাটিং করার আগে নিশ্চয়ই সে ম্যাচের স্মৃতি মাথায় ছিল কোহলি-ডু প্লেসিদের। ছোট বাউন্ডারির এই মাঠে কত রান নিরাপদ সেটি নিশ্চিত করে বলা যায় না। অধিনায়ক ডু প্লেসি সে জন্যই হয়তো ইনিংসের প্রথম বল থেকেই মেরে খেলার চেষ্টা করছিলেন।

দিল্লির পেসারদের গতি ব্যবহার করে পাওয়ার প্লে’তে দ্রুত রান তোলা ছিল তার লক্ষ্য। মুস্তাফিজুর রহমান ছিলেন ডু প্লেসি’র ফায়ারিং লাইনে। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে মুস্তাফিজকে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে দুটি বাউন্ডারি মারেন তিনি। অক্ষর প্যাটেল ও মিচেল মার্শকেও চার-ছক্কায় ওড়ান তিনি। তবে মার্শকে মেরে খেলতে গিয়ে আউটও হয়েছেন বেঙ্গালুরু অধিনায়ক। আউট হওয়ার আগে ১৬ বলে ২২ রান করেন তিনি। ডু প্লেসির গতিতে খেলে গেছেন মাহিপাল লমরর, গ্লেন ম্যাক্সওয়েলরা। ১৮ বলে ২৬ রান করে মার্শের দ্বিতীয় শিকারে পরিণত হন লমরর। ১৪ বলে ২৬ রান করে কুলদীপ যাদবের স্পিনে ক্যাচ তোলেন ম্যাক্সওয়েল।

ওদিকে আরেক প্রান্ত থেকে নিজের সহজাত খেলাটা খেলে গেছেন বিরাট কোহলি। এবারের আইপিএলের তৃতীয় ফিফটি করেছেন ৩৩ বলে। এরপর অবশ্য ইনিংস লম্বা হয়নি। লালিত যাদবের বলে মারতে গিয়ে ক্যাচ আউট হন ৫০ রানেই, ৬টি চার ও ১টি ছক্কা ছিল কোহলির ১৪৭ স্ট্রাইক রেটের ইনিংসে। শেষের দিকে বেঙ্গালুরুর রানটাকে ১৭০ এর ঘরে নিয়েছেন শাহবাজ আহমেদ। ১২ বলে ২০ রানে অপরাজিত ছিলেন এই অলরাউন্ডার।

দিল্লির হয়ে সর্বোচ্চ ২টি করে উইকেট নিয়েছেন মার্শ ও কুলদীপ। মোস্তাফিজের দিনটা ছিল ভুলে যাওয়ার মতো। ৩ ওভারে ৪১ রান দিয়ে উইকেটশূন্য ছিলেন এই বাঁহাতি। ১৩.৭০ ইকনোমি ছিল দিল্লির বোলারদের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগের ম্যাচে ৪ ওভারে ৩৮ রান দিয়ে ১ উইকেট নিয়েছিলেন মুস্তাফিজ।