রোমাঞ্চকর জয়ে ব্রডকে বিদায় জানাল ইংল্যান্ড
০১ আগস্ট ২০২৩, ১০:০৫ পিএম | আপডেট: ০২ আগস্ট ২০২৩, ১২:০১ এএম
ক্যারিয়ারে শেষবারের মতো বোলিংয়ে স্টুয়ার্ট ব্রড। কিন্তু প্রতিপক্ষকে সে অর্থে ভোগাতে পারছিলেন না শুরুতে। তবে জ্বলে উঠলেন কার্যকরী সময়ে। অষ্টম উইকেটে যখন ৩৮ রানের জুটিতে প্রতিরোধ গড়ছিল অস্ট্রেলিয়া, তখনই ভাঙেন তাদের প্রতিরোধ। অসাধারণ এক ডেলিভারিতে ভাঙেন জুটি। ব্রডের অফ স্টাম্পের বল অ্যালেক্স ক্যারির ব্যাট ছুঁয়ে জমা পড়ল কিপার জনি বেয়ারস্টোর গ্লাভসে। দুই হাত প্রসারিত করে ডানা মেলে দিলেন ইংলিশ পেসার। গ্যালারিতে তার পরিবারের সদস্যদের মুখে চওড়া হাসি ধরা পড়ল টিভি ক্যামেরায়। ব্রডকে একে একে আলিঙ্গনে বাঁধলেন সতীর্থরা। পেশাদার ক্রিকেটে নিজের বিদায়ী ম্যাচ তিনি স্মরণীয় করে রাখলেন শেষ বলে উইকেট নিয়ে। দুর্দান্ত এক জয়ে সমতায় সিরিজ শেষ করল ইংল্যান্ড।
ওভালে অ্যাশেজের পঞ্চম টেস্টের শেষ দিনে ব্যাট-বলের দারুণ লড়াইয়ের পর স্বাগতিকরা জিতল ৪৯ রানে। ৩৮৪ রানের বড় লক্ষ্য তাড়ায় বিনা উইকেটে ১৪০ ও একটা পর্যায়ে ৩ উইকেটে ২৬৪ রানের শক্ত অবস্থানে ছিল অস্ট্রেলিয়া। ৭ উইকেট হাতে রেখে দরকার ছিল ১২০ রান। এরপরই নাটকীয় ধসে গুটিয়ে যায় তারা ৩৩৪ রানে। অস্ট্রেলিয়ার ‘ছাইদানি’ ধরে রাখা নিশ্চিত হয়েছিল আগেই। এই হারে ইংল্যান্ডের মাটিতে তাদের সিরিজ জয়ের অপেক্ষা বাড়ল আরও। প্রথম দুই ম্যাচে হারের পর ইংল্যান্ড সিরিজ শেষ করল ২-২ সমতায়।
রান তাড়ায় ডেভিড ওয়ার্নার, উসমান খাওয়াজা ও স্টিভেন স্মিথের ফিফটি, ৯৫ রানের চতুর্থ উইকেট জুটি- কিছুই শেষ পর্যন্ত কাজে এলো না। দ্বিতীয় সেশনে বৃষ্টির বাগড়ায় এমনকি ড্রয়ের সম্ভাবনাও উঁকি দিচ্ছিল একটা সময়। শেষ পর্যন্ত ইংল্যান্ড পেল নাটকীয় জয়। যেখানে বড় অবদান পেসার ক্রিস ওকস ও স্পিনার মঈন আলীর। দুজনে মিলেন নেন সাত উইকেট। ওকসের শিকার সর্বোচ্চ চারটি। শেষের দুই উইকেট নিয়ে শেষটা রাঙান ব্রড।
এই ম্যাচে রান হলো মোট ১ হাজার ৩০৭। কোনো ব্যক্তিগত শতক ছাড়া এক টেস্টে সবচেয়ে বেশির রানের রেকর্ড এটিই। পেছনে পড়ে গেল ১৯২৮ সালে ডারবানে দক্ষিণ আফ্রিকা ও ইংল্যান্ড ম্যাচের ১ হাজার ২৭২ রান।
এই সিরিজ শুরুর আগে আলোচনায় ছিলেন আরেকজন- মঈন আলী। যাকে এক শব্দের একটি ম্যাসেজ পাঠিয়েছিলেন স্টোকস, ‘অ্যাশেজ?’ মঈন শুরুতে ভেবেছিলেন, মজা করা হচ্ছে। আসলে তা ছিল জরুরি বার্তা। সেই বার্তার পথ ধরেই অবসর ভেঙে মঈনের টেস্টে ফেরা। রোমাঞ্চের দোলায় ভেসে সেই অ্যাশেজ শেষ হলো। মঈনের ফেরার পর্বও শেষ। আবার অবসরে যাওয়া নিশ্চিত করে এই অলরাউন্ডার স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, আর কারও কোনো অনুরোধেই সাড়া দেবেন না তিনি। এবার অ্যাশেজের আগে ইংল্যান্ডের মূল স্পিনার জ্যাক লিচ চোটে পড়ার পর মঈনের কথা মনে পড়ে স্টোকসের। অধিনায়কের অনুরোধেই শুধু এই সিরিজের জন্য সাদা পোশাকে আরেকবার ফেরেন এই স্পিনিং অলরাউন্ডার। দুজনের সম্পর্কের রসায়ন দারুণ। ফেরার পর তিনি বলেছিলেন, অন্য কোনো অধিনায়ক হলে হয়তো তিনি এই অনুরোধ রাখতেন না।
ফেরার সিরিজে পাঁচ টেস্টের মধ্যে চারটিতে খেলেছেন মঈন। সিরিজে তার সার্বিক পরিসংখ্যান চোখধাঁধানো কিছু নয়। ৪ টেস্টে ১৮০ রান, ৯ উইকেট। এই পরিক্রমায় টেস্টে ৩ হাজার রান ও ২০০ উইকেটের ডাবলও পূর্ণ করে ফেলেন। সার্বিক পারফরম্যান্স অসাধারণ না হলেও নিজের কাজটুকু করে গুরুত্বপূর্ণ অবদান ঠিকই রাখেন তিনি। হেডিংলিতে ইংল্যান্ডের জয়ের ম্যাচে যেমন, অস্ট্রেলিয়ার দুই ব্যাটিং স্তম্ভ মার্নাস লাবুশেন ও স্টিভেন স্মিথকে অল্প সময়ের মধ্যে আউট করে ম্যাচের মোড় বদলে দেন তিনি।
ওল্ড ট্র্যাফোর্ড টেস্টে দল প্রথম উইকেট দ্রুত হারানোর পর তিনি নেমে কার্যকর এক ইনিংস খেলেন ব্যাট হাতে। জ্যাক ক্রলির সেই ১৮২ বলে ১৮৯ রানের স্মরণীয় ইনিংসের পথে সঙ্গ দেন তিনি। দ্বিতীয় উইকেটে গড়েন ১২১ রানের জুটি। ৭ চারে খেলেন ৫৪ রানের ইনিংস। ওভাল টেস্টে তো তিনি ইংল্যান্ডের জয়ের নায়কদের একজন। দুই ইনিংসে ৩৪ ও ২৯ রানের ক্যামিও ইনিংস খেলেন। কুঁচকিতে টান লাগার কারণে প্রথম ইনিংসে বোলিং করতে পারেননি। কিন্তু সেই চোটকে হারিয়ে শেষ দিনে দুর্দান্ত বোলিং করেন। স্টিভেন স্মিথ ও ট্রাভিস হেডের জুটি যখন অস্ট্রেলিয়াকে জয়ের দিকে এগিয়ে নিচ্ছে, হেডকে ফিরিয়ে তখন তিনিই ভাঙেন জুটি। এরপর মিচেল মার্শের মহামূল্য উইকেট ও প্যাট কামিন্সের উইকেটও নেন। সব মিলিয়ে স্মরণীয় করে রাখেন শেষটা।
অ্যাশেজে তো শেষ হলো। সামনে ইংল্যান্ডের আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ আগামী জানুয়ারিতে ভারত সফর। তখন তো স্টোকসের আবার মনে পড়তেই পারে মঈনকে! ওভাল টেস্ট শেষে স্কাই স্পোর্টসকে মজার ছলেই উত্তটা জানিয়ে রাখলেন মঈন, ‘স্টোকসি (বেন স্টোকস) যদি আবার আমাকে বার্তা পাঠায়, তা মুছে দেব। এখানেই আমার শেষ। সত্যিই উপভোগ করেছি এবং এভাবেই শেষ করাটা দারুণ।’ পরে বিবিবি টেস্ট ম্যাচ স্পেশালকে তিনি বলেন, নিজের সঙ্গে চ্যালেঞ্জ নিয়ে এই ফেরার পর্ব উপভোগ করেছেন, ‘অসাধারণ লাগছে। ফিরে আসাটা কিছুটা চ্যালেঞ্জিং ছিল সত্যি বলতে, কারণ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তত ভালো কখনোই খেলিনি। স্টোকসি যখন আমাকে জিজ্ঞেস করল ফেরা নিয়ে, আমার মনে হলো, ‘কেন নয়! দুর্দান্ত একটি দলে ঢুকব আমি এবং মোটামুটি কাজটা করতে পারব বলে বিশ্বাস করি এখনও।’
ব্রেন্ডন ম্যাককালামের কোচিংয়ে ও বেন স্টোকসের অধিনায়কত্বে ইংল্যান্ডের টেস্ট দল যে বদলে গেছে, ড্রেসিং রুমে ফিরেই সেই আবহের ছোঁয়া পান মঈন। শেষটাও জয়ে রাঙাতে পেরে তিনি উচ্ছ্বসিত, ‘আমি খুবই খুশি যে ‘হ্যাঁ’ বলেছিলাম। আবার খেলার জন্য এবং দলের অংশ হওয়ার জন্য বাজ (ব্রেন্ডন ম্যাককালাম) ও স্টোকসির তত্ত্বাবধানে এই ড্রেসিং রুমে প্রথম দিনে যখন পা রাখলাম... জিমি ও ব্রডিসহ এই ছেলেরা ছিল... আমার শুরুর সময়ও ওরা ছিল... সব মিলিয়ে অসাধারণ ছিল। আমি খুবই রোমাঞ্চিত যে, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জয় দিয়ে শেষ করতে পেরেছি এবং সেখানে সামান্য সহায়তা করতে পেরেছি। মোটামুটি ভালো খেলেছি (সিরিজে) এবং আবার ইংল্যান্ডের হয়ে টেস্ট খেলতে ও দেশের সবাইকে প্রতিনিধিত্ব করতে পারাটা উপভোগ করেছি।’
বিভাগ : খেলাধুলা
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ফাইনালে ভারতের কাছে বাংলাদেশের হার
ফ্রেন্ডলি ফায়ার দুর্ঘটনায় লোহিত সাগরে মার্কিন যুদ্ধবিমান ধ্বংস
ইরানে যাত্রীবাহী বাস খাদে পড়ে নিহত ১০
বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী নারী কে, জানেন?
বাংলাদেশি রোগী পেতে সীমান্ত পর্যন্ত মেট্রো চালু করবে ভারত
হাত ফসকে আইফোন পড়ে গেল মন্দিরের দানবাক্সে, ফেরত দিতে অস্বীকৃতি
কুয়াশায় ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে একাধিক দুর্ঘটনা: নিহত ১, আহত ১৫
ঢাকার বায়ুমানে উন্নতির কোনো লক্ষণ নেই, বিপজ্জনকের কাছাকাছি
উগ্রবাদী সন্ত্রাসী 'সাদ' পন্থীদের কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে সাতক্ষীরায় মানববন্ধন
বাংলাদেশ সীমান্তে অত্যাধুনিক ড্রোন মোতায়েন ভারতের
নরসিংদীতে দুর্বৃত্তের গুলিতে ছাত্রদলকর্মী নিহত
সিনেটে প্রার্থী হতে সরে দাঁড়ালেন লারা ট্রাম্প
আমাদেরকে আর স্বৈরাচার হতে দিয়েন না : পার্থ
মার্চের মধ্যে রাষ্ট্র-সংস্কার কাজ শেষ হবে : ধর্ম উপদেষ্টা
জামালপুরে দুই ইজিবাইকের চাপায় সাংবাদিক নুরুল হকের মৃত্যু
বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী রাখাইনের সামরিক সদর দফতরের দখল নিয়েছে আরাকান আর্মি
ব্রাজিলে বাস-ট্রাক সংঘর্ষে নিহত ৩২
নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিয়োগ সিরিয়ায়
ঘনকুয়াশায় ৩ ঘন্টা পর আরিচা-কাজিরহাট নৌরুটে ফেরি সার্ভিস চালু
গাজায় যুদ্ধবিরতির আলোচনা চূড়ান্ত পর্যায়ে