উপমহাদেশের ক্রিকেটে সর্বোচ্চ টুর্নামেন্ট এশিয়া কাপে ফের বাঁচা-মরার লড়াইয়ে মাঠে নামছে বাংলাদেশ। টুর্নামেন্টের গ্রুপ পর্বে নিজেদের প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হেরে সুপার ফোরে উঠা অনেকটা কঠিন হয়ে গিয়েছিল টাইগারদের। গত ৩১ আগস্ট পাল্লেকেলেতে ওই ম্যাচে লঙ্কানরা ৫ উইকেটে হারিয়েছিল বাংলাদেশকে। ফলে দ্বিতীয় ম্যাচে আফগানিস্তানের বিপক্ষে জয়ের বিকল্প ছিলনা সাকিব আল হাসানদের। অবশ্য এটা ঠিকঠাকই করে দেখালেন তারা। আফগানদের বড় ব্যবধানে (৮৯ রানে) হারিয়ে ‘বি’ গ্রুপের দ্বিতীয় দল হিসেবে সুপার ফোর পর্বে জায়গা করে নিলো বাংলাদেশ। এবার এই পর্বে একই পরিস্থিতির মুখোমুখি মুশফিকুর রহিম-লিটন দাসরা। ফলে আরেকটি বাঁচা-মরার লড়াইয়ে মাঠে নামতে হচ্ছে তাদের। এ লড়াইয়ে তাদের প্রতিপক্ষ সেই লঙ্কানরা। শনিবার সুপার ফোরে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে শ্রীলঙ্কার মুখোমুখি হচ্ছে বাংলাদেশ। কলম্বোর রানাসিংহে প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে ম্যাচটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় বিকাল সাড়ে ৩টায়। এ ম্যাচে জিতলে এশিয়া কাপের ফাইনালে খেলার আশা বেঁচে থাকবে টাইগারদের। হারলে স্বপ্নভঙ্গ হবে বাংলাদেশের। কারণ গত ৬ সেপ্টেম্বর লাহোরে সুপার ফোর পর্বে নিজেদের প্রথম ম্যাচে পাকিস্তানের কাছে ৭ উইকেটে হেরে যান সাকিব-মুশফিকরা। যে কারণে টুর্নামেন্টে টিকে থাকতে লঙ্কানদের বিপক্ষে জয়ের বিকল্প নেই তাদের।

গ্রুপ পর্বের দ্বিতীয় ম্যাচে আফগানদের বিপক্ষে দারুণভাবে ঘুড়ে দাঁড়িয়েছিল বাংলাদেশ। প্রথমে ব্যাট করে ৫ উইকেটে বিদেশের মাটিতে দলীয় সর্বোচ্চ ৩৩৪ রান তোলেন সাকিবরা। তবে সুপার ফোরে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জিততেই হবে- এমন সমীকরণে আরও একবার জ্বলে উঠতে পারবে কিনা বাংলাদেশ? এই প্রশ্ন এখন বাংলাদেশের কোটি ক্রিকেটপ্রেমীর মনে ঘুরপাক খাচ্ছে। আফগানিস্তানের বিপক্ষে ১০৪ রানের ইনিংসে খেলে হ্যামস্ট্রিং ইনজুরিতে পড়েন বাংলাদেশের ইনফর্ম ব্যাটার নাজমুল হোসেন শান্ত। যে কারেণ এশিয়া কাপ থেকে ছিটকে পড়তে হয় তাকে। তাই পাকিস্তান ম্যাচে তিনি মাঠে ছিলেন না। শান্তর অনুপস্থিতিতে ইতোমধ্যেই দল বেশ দুর্বল হয়ে পড়েছে। সেটা বাবর আজমদের বিপক্ষেই দেখা গেছে। শান্তর জায়গায় সুযোগ পেলেও নিজের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারেননি বাংলাদেশ দলের আরেক তারকা ব্যাটার লিটন দাস। সাম্প্রতিক সময়ে তার পারফরম্যান্স চিন্তায় ফেলেছে টিম ম্যানেজমেন্টকে।

নিদাহাস ট্রফির ঘটনায় গত পাঁচ বছর ধরে উত্তেজনা বিরাজ করছে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা ম্যাচে। সেই উত্তেজনাপূর্ণ মুহূর্ত এখনও দুই দেশের ক্রিকেটারদের স্মরণে আছে। কিন্তু এশিয়া কাপের প্রথম ম্যাচে দু’দলের মধ্যে নিদাহাস ট্রফির ম্যাচের কোনো ছাপ দেখা যায়নি। প্রথম ম্যাচে লঙ্কানরা বাংলাদেশের বিপক্ষে সহজেই জিতলেও দ্বিতীয় ম্যাচে আফগানিস্তানের বিপক্ষে চাপে পড়েছিল। জয় না পেলেও ওই ম্যাচে রান রেটে হিসাব-নিকাশ ছিল শ্রীলঙ্কার সামনে। শেষ পর্যন্ত ২ রানের জয়ে সুপার ফোরে উঠে তারা।

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হার দিয়ে এবারের এশিয়া কাপ শুরু করলেও বাংলাদেশ ২০১৫ সাল থেকেই ওয়ানডে ফরম্যাটে সব দিক দিয়েই তাদের চেয়ে উপরে আছে। এশিয়া কাপের মঞ্চে ১৬ বার মুখোমুখি হয়েছে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা। এরমধ্যে লঙ্কানরা পেয়েছে ১৩ জয়। সব মিলিয়ে পরস্পরের বিপক্ষে ৫২টি ওয়ানডে খেলেছে দু’দল। এক্ষেত্রে শ্রীলঙ্কা ৪১ ম্যাচ জিতলেও বাংলাদেশ জয় পেয়েছে ৯ ম্যাচে। বাকী ২টি ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়।

এবারের এশিয়া কাপে বাঁচা-মরার ম্যাচে আবারো জ্বলে উঠবে বাংলাদেশ দল এ বিশ্বাস অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের। তিনি বলেন, ‘আমাদের বোলিং বিভাগ ভালো করছে। এই মুহূর্তে ব্যাটিং ভালো ও খারাপ মিলিয়ে হচ্ছে। আমাদের ধারাবাহিক হতে হবে এবং আমরা সেটাই করার চেষ্টা করবো।’ তিনি যোগ করেন,‘পাকিস্তান ম্যাচের হার ভুলে আমাদেরকে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ভালো ক্রিকেট খেলতে হবে। আমার বিশ্বাস ঘুরে দাঁড়িয়ে জয়ের ধারায় ফিরতে পারবো আমরা।’ সাকিব আরো বলেন, ‘আমি যখন কলম্বোতে এলপিএল খেলেছিলাম, দেখেছি মাঠের পিচ কিছুটা ধীরগতির, কিছুটা উঁচু-নিচু। এটা হয়তো আমাদের সাহায্য করবে। আশা করি, আমরা কলম্বোয় ভালো করব।’

বাংলাদেশ দল : সাকিব আল হাসান (অধিনায়ক), লিটন দাস, তাওহিদ হৃদয়, মুশফিকুর রহিম, আফিফ হোসেন, মেহেদি হাসান মিরাজ, তাসকিন আহমেদ, হাসান মাহমুদ, মুস্তাফিজুর রহমান, শরিফুল ইসলাম, নাসুম আহমেদ, মাহেদি হাসান, নাইম শেখ, শামীম হোসেন পাটোয়ারী, তানজিদ হাসান তামিম, তানজিম হাসান সাকিব ও এনামুল হক বিজয়।

শ্রীলঙ্কা দল : দাসুন শানাকা (অধিনায়ক), পাথুম নিশাঙ্কা, দিমুথ করুণারতেœ, কুসল পেরেরা, কুসল মেন্ডিস, ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা, চারিথ আসালঙ্কা, সাদিরা সামারাবিক্রমা, দুনিথ ওয়েলালাগে, মহেশ থিকশানা, মাথিশা পাথিরানা, কাসুন রাজিথা, দুশান হেমন্থা, বিনুরা ফার্নান্দো ও প্রমোদ মাদুশান।