গম্ভীরের হাত ধরেই কলকাতায় উৎসব
২৮ মে ২০২৪, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ২৮ মে ২০২৪, ১২:০৩ এএম
আইপিএলে তৃতীয়বারের মতো শিরোপা জেতার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটা গ্রাফিকস পোস্ট করেছে কলকাতা নাইট রাইডার্স। ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, ‘দ্য টিম বিহাইন্ড দ্য টিম’। মানে পর্দার আড়ালে যে দলটা কাজ করেছে—কোচ ও সাপোর্ট স্টাফের সেই সদস্যদের ছবি দিয়ে বানানো সেই গ্রাফিকস। তাতে সবচেয়ে বড় ছবিটা গৌতম গম্ভীরের। তার পেছনে ডান পাশে কলকাতার প্রধান কোচ চন্দ্রকান্ত পÐিত, বাঁয়ে সহকারী কোচ অভিষেক নায়ার।
কাগজে-কলমে গম্ভীরের পদবি—তিনি কলকাতার মেন্টর বা পরামর্শক। তবে মৌসুমজুড়েই বারবার সামনে এসেছেন তিনি। গতকালের ফাইনালের পরও খেলোয়াড়েরা কৃতিত্ব দিচ্ছেন তাঁকেই। তাতে প্রধান কোচও আড়ালে চলে যাচ্ছেন বারবার। ‘মেন্টর’ ভ‚মিকাটাই যেন বদলে দিয়েছেন কলকাতাকে এর আগে দুবার চ্যাম্পিয়ন বানানো অধিনায়ক। ফাইনালে ৩ উইকেট নেওয়া আন্দ্রে রাসেল যেমন বলেছেন, ‘জিজি (গৌতম গম্ভীর) শুধু মেন্টর ছিল না, সে প্রতিটি বিভাগেই আমাদের নেতা ছিল। আমার মনে হয়, আমাদের সাফল্যের চাবিকাঠি সেটিই। সে নিশ্চিত করেছে, যাতে প্রত্যেক ব্যাটার ও বোলার তাদের ভ‚মিকা পালন করে। জিজি যেকোনো দলেই দুর্দান্ত একজন।’
গত দুই মৌসুম লক্ষেèৗ সুপার জায়ান্টসে একই ভ‚মিকায় ছিলেন গম্ভীর। এবার তিনি ফেরেন কলকাতায়। রাসেলের মতে, অনেক কিছুই বদলে গেছে তাতে, ‘আমরা যা চেয়েছি, সাপোর্ট স্টাফ সব সময়ই তা দিয়েছে। নিশ্চিত করেছে, যাতে আমরা সন্তুষ্ট হয়ে নেট ছাড়ি। সবাই চ্যাম্পিয়নশিপের পথে বড় ভ‚মিকা রেখেছে। জিজি ফিরে এসেছে, আইপিএল জিতেছে, দারুণ একটা সাপোর্ট স্টাফ—আপনার এর চেয়ে বেশি আর কী চাই!’
এর আগে কলকাতাকে নেতৃত্ব দেওয়া নিতীশ রানা বলছেন, গম্ভীর তাঁদের আত্মবিশ্বাস জুগিয়েছিলেন মৌসুমের শুরুর আগেই। তিনি বলেছেন, ‘গৌতম গম্ভীর যখন আমাদের মেন্টর হিসেবে সই করলেন, আমি হোয়াটসঅ্যাপে তাঁকে অভিনন্দন জানিয়েছিলাম। লম্বা একটা মেসেজ লিখেছিলাম। আমাকে ধন্যবাদ জানিয়েছিলেন। কিন্তু এটাও বলেছিলেন, যখন ট্রফিটা মঞ্চে উঁচিয়ে ধরব, সেদিনই তিনি সবচেয়ে খুশি হবেন। আজ সেই দিন, আর আমি ওই মেসেজ চিরদিন মনে রাখব।’
টুর্নামেন্টে মাত্র তিনটি ম্যাচ হেরেছে কলকাতা, আইপিএলে কোনো দলের এক মৌসুমে যা যৌথভাবে সবচেয়ে কম ম্যাচ হারের রেকর্ড। মৌসুমে দলটির অন্যতম শক্তি ছিলেন সুনীল নারাইন। ব্যাটিংয়ে ১৮০.৭৪ স্ট্রাইক রেটে ৪৮৮ রান করার পাশাপাশি বোলিংয়ে ১৭ উইকেট নিয়ে টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়ও হয়েছেন এই ক্যারিবীয়। এমন পারফরম্যান্সের পর নারাইনও কৃতিত্ব দিয়েছেন গম্ভীরকে, ‘নেমে শুধু নিজেকে মেলে ধরার যে ভ‚মিকা, দলকে উড়ন্ত সূচনা এনে দেওয়ার চেষ্টা করা- এগুলোই মূল ব্যাপার। সাপোর্ট স্টাফের সহায়তা, বিশেষ করে জিজি (গম্ভীর) শুধু বলেছে, “গিয়ে উপভোগ করো, দলকে শুধু কয়েকটা ম্যাচ জেতানোর চেষ্টা করো। পুরো মৌসুমে এমন কিছু করতে বলছি, শুধু কয়েকটা ম্যাচে করতে বলছি।” পরামর্শটা ভালো ছিল।’ গম্ভীরের কথা বলেছেন স্পিনার বরুণ চক্রবর্তীও, ‘আমরা মৌসুমের শুরুতে পাঞ্জাব কিংসের কাছে হেরেছিলাম। গৌতম এরপর আমাদের বলেছিল, “এই হারই আমাদের ফাইনালে জেতাবে।” এখন সেটিই হলো।’
এর আগে ২০১২ সালে দলটির হয়ে শিরোপা জিতেছেন অধিনায়ক হিসেবে, এবার জেতালেন মেন্টর হয়ে। সব মিলিয়ে কলকাতায় গম্ভীরের এবার পথচলা কিছুটা ‘ফিরলাম, দেখলাম, জয় করলাম’-এর মতো ব্যাপার। তবে পরের মৌসুমেও গম্ভীরকে দলটি পাবে কি না, প্রশ্ন সেটিই। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শেষে রাহুল দ্রাবিড় চলে যাওয়ার পর ভারতের পরবর্তী সম্ভাব্য প্রধান কোচ হিসেবে আসছে গম্ভীরের নাম। অবশ্য গম্ভীরকে রেখে দিতে সব রকম চেষ্টাই করা হবে মালিক শাহরুখ খানের পক্ষ থেকে- এমন সংবাদও এসেছে আগেই। কেননা এই গম্ভীরের হাত ধরেই যেন দু’দুবার কলকাতায় জমেছে উৎসবের আবহ!
বোলারদের দুঃস্বপ্নের এক আইপিএল
গত ২২ মার্চ চেন্নাই সুপার কিংস ও রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর ম্যাচ দিয়ে শুরু হয়েছিল ২০২৪ সালের আইপিএল। গতপরশু রাতে সানরাইজার্স হায়দরাবাদকে হারিয়ে কলকাতা নাইট রাইডার্সের শিরোপা জেতার মধ্য দিয়ে শেষ হলো এবারের টুর্নামেন্ট। যাতে ব্যাটিংয়ে দেখা গেছে নতুন সব রেকর্ড, আর বোলাররা হয়ে পড়েছেন কোণঠাসা। যদিও ফাইনালে শেষ পর্যন্ত কলকাতার বোলিং দাপটের কাছেই হার মেনেছে হায়দরাবাদের বিস্ফোরক ব্যাটিং। ২০২৪ আইপিএলের উল্লেখযোগ্য কিছু রেকর্ড-
৩- এবার চ্যাম্পিয়ন কলকাতা হেরেছে মাত্র তিনটি ম্যাচ- চেন্নাই, রাজস্থান ও পাঞ্জাবের বিপক্ষে। এক মৌসুমে সবচেয়ে কম ম্যাচ হারে ২০০৮ সালের রাজস্থানের রেকর্ডে ভাগ বসাল তারা। কলকাতার এটি তৃতীয় শিরোপাও। মুম্বাই ও চেন্নাইয়ের পর এখন সবচেয়ে সফল দল তারাই। মুম্বাই ও চেন্নাই দুই দলই জিতেছে ৫টি করে শিরোপা।
৯.৫৬- ২০২৪ মৌসুমে ওভারপ্রতি রান। আইপিএলের এক মৌসুমে যা সর্বোচ্চ। আগের রেকর্ড ছিল গত মৌসুমে, উঠেছিল ওভারপ্রতি ৮.৯৯ রান।
২৯.৪১- এবারের আইপিএলে উইকেটপ্রতি রান। এটিও লিগটির ইতিহাসে সর্বোচ্চ। এ মৌসুম ছাড়িয়ে গেছে ২০২০-২১ মৌসুমে উইকেটপ্রতি ২৮.৯৭ রানের রেকর্ড। আইপিএলের সে মৌসুম হয়েছিল সংযুক্ত আরব আমিরাতে।
১২৬০- এবার আইপিএল দেখেছে মোট ১২৬০টি ছক্কা, আগের রেকর্ডের চেয়ে যা ১৩৬টি বেশি। ২০২৩ সালে ৭৪টি ম্যাচে হয়েছিল ১১২৪টি ছক্কা।
৪২- সর্বোচ্চ ৪২টি ছক্কা মেরেছেন হায়দরাবাদের অভিষেক শর্মা। এক মৌসুমে কোনো ভারতীয় ব্যাটসম্যানের সর্বোচ্চ ছক্কারও রেকর্ড এটি। সব মিলিয়ে অভিষেক আছেন তালিকার ছয়ে। শীর্ষে পাঁচে তিনবারই আছে ক্রিস গেইলের নাম, একবার করে আছেন জস বাটলার ও আন্দ্রে রাসেল।
২১৭৪- ২০২৩ সালের আইপিএলে ছিল ২১৭৪টি চার। ২০২৪ সালের আইপিএলও দেখেছে ২১৭৪টি চারই। এক মৌসুমে এখন এটিই যৌথভাবে সর্বোচ্চ চারের রেকর্ড।
১৪- সেঞ্চুরির নতুন রেকর্ডও গড়ল ২০২৪ সালের আইপিএল। এবার তিন অঙ্কের ইনিংস দেখা গেছে ১৪টি। ২০২৩ সালে সংখ্যাটি ছিল ১২। আর কোনো মৌসুমে দুই অঙ্কের সেঞ্চুরির সংখ্যা নেই।
১৫০.৫৮- এবারের আইপিএলে ব্যাটসম্যানের সমন্বিত স্ট্রাইক রেট, যেটিও এক মৌসুমে সর্বোচ্চ। গত মৌসুমে এটি ছিল ১৪১.৭১।
৪- ২৮৭/৩, ২৭৭/৩, ২৭২/৭ ও ২৬৬/৭- আইপিএলের ইতিহাসের সর্বোচ্চ চারটি স্কোরই এসেছে ২০২৪ সালে। এর মধ্যে ৭ উইকেটে ২৭২ রানের স্কোরটি শেষ পর্যন্ত চ্যাম্পিয়ন কলকাতার। বাকি তিনটিই ফাইনালে কলকাতার কাছে হারা হায়দরাবাদের।
৪১- সব মিলিয়ে এ মৌসুমে ৪১টি ২০০ রানের স্কোর দেখেছে আইপিএল। এক মৌসুমে যা সবচেয়ে বেশি। ২০২৪ সাল ছাড়িয়ে গেল ২০২৩ সালকে, গতবার এমন স্কোর ছিল ২৩টি। ২০২৩ সালের আগে আইপিএলের এক মৌসুমে সবচেয়ে বেশি ২০০ রানের স্কোর ছিল ২০২২ সালে- ১৮টি।
২৭- শতরানের জুটিতেও নতুন রেকর্ড গড়েছে ২০২৪ সালের আইপিএল। এবার এমন জুটি ছিল ২৭টি। আগের সর্বোচ্চ ২৪টি শতরানের জুটি এসেছিল গতবার। এবার অবশ্য ২৫টি ভিন্ন জুটি মিলে এমন রেকর্ড গড়েছে, গত মৌসুমে জুটির সংখ্যা ছিল ১৭।
৯- সব মিলিয়ে মাত্র ৯টি মেডেন করতে পেরেছেন বোলাররা। এক মৌসুমে যেটি সর্বনিম্ন। এর আগে ২০০৯-১০ ও ২০১৭ সালে এক মৌসুমে যৌথভাবে সর্বনিম্ন ১৩টি করে মেডেন ওভার ছিল।
৮৮৩- আইপিএলে এবার সব মিলিয়ে পড়েছে ৮৮৩টি উইকেট। গত তিন মৌসুমের মধ্যে যা সর্বনিম্ন। সবচেয়ে কম ৬৬৫টি উইকেট পড়েছিল ২০১৬ সালে।
০- কোনো টাই ম্যাচ দেখা যায়নি এবার। এ নিয়ে টানা তিন মৌসুম আইপিএলে কোনো টাই ম্যাচ দেখা গেল না। ২০০৮ সালে শুরু লিগটির ইতিহাসে এর আগে এমনটা ঘটেনি।
৬২৭- ১৩টি ক্যাচের জন্য ২০২৪ সাল গড়তে পারেনি নতুন রেকর্ড। ২০২২ সালে এক মৌসুমে ছিল ৬৪০টি ক্যাচ, এবার ৬২৭টি।
বিভাগ : খেলাধুলা
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
১৩ বাংলাদেশিকে ধরে নিয়ে গেছে বিএসএফ
সাতক্ষীরা কালিগঞ্জে পটল চাষে বাম্পার ফলন
গফরগাঁওয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় ছাত্রের মর্মান্তিক মৃত্যু
শাহরাস্তিতে বিদ্যুৎ স্পৃষ্ট হয়ে শিক্ষার্থীর মৃত্যু
পাকিস্তানে অবশেষে সরকার ও বিরোধী দলের আলোচনা শুরু
ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার ফোন
রানার অটোমোবাইলস পিএলসির এজিএম সম্পন্ন
আগামী নির্বাচনে ধানের শীষের বিজয়ে ঐক্যবদ্ধ কাজের আহ্বান: এমরান আহমদ চৌধুরী
নকল পণ্য প্রতিরোধে আমদানির উপর শুল্ক কমানোর দাবি বাজারের ২০ শতাংশ খাদ্য মানহীন
লক্ষ্মীপুরে চুরির অপবাদে জনসম্মুখে যুবককে খুঁটিতে বেঁধে নির্যাতন, নাকে খত
বাঘায় মেয়াদ উত্তীর্ণ ৪ ইউপিতে প্রশাসক নিয়োগ
বিশ্বে বছরজুড়ে আলোচনায় যুদ্ধ, নির্বাচন ও মূল্যস্ফীতি
যুক্তরাষ্ট্র আগুন নিয়ে খেলছে : চীন
আওয়ামী দুঃশাসনের বিচার না হলে জুলাই আগষ্টের শহীদদের রক্তের সাথে বেঈমানী হবে: ডা. জাহিদ হোসেন
মেক্সিকোতে প্লেন বিধ্বস্ত হয়ে নিহত ৭
মাথাপিছু ১৪০০ ডলারের চেক পাচ্ছেন ১০ লাখ মার্কিনি
৯১ শিশু খেলোয়াড়সহ ৬৪৪ ক্রীড়াবিদকে হত্যা করেছে ইসরাইল
মোজাম্বিকে ঘূর্ণিঝড় চিডোরে নিহত ৯৪
মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা পড়িয়ে সম্মানহানী
রাফালের আগমনে ভারত সীমান্তে উত্তেজনা বৃদ্ধি