দেশের ক্রীড়াঙ্গনও থমথমে
০৭ আগস্ট ২০২৪, ১১:৫৭ এএম | আপডেট: ০৭ আগস্ট ২০২৪, ১১:৫৭ এএম
দুটি চার দিনের ও তিনটি এক দিনের ম্যাচ খেলতে গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পাকিস্তানের উদ্দেশে দেশ ছাড়ার কথা ছিল ‘এ’ দলের। কিন্তু ‘অনিবার্য’ কারণে অন্তত ৪৮ ঘণ্টা পিছিয়ে দেওয়া হয় ক্রিকেট দলের এই সফর। সেই ‘অনিবার্য’ কারণটা যে কী তা কারো অজানা থাকার কথা নয়।
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন শেখ হাসিনা। ভেঙে দেওয়া হয়েছে জাতীয় সংসদের মন্ত্রীসভা। দেশ পরিচালনার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের কার্যক্রম চলমান। এমন পরিস্থিতিতে স্বাভাবিকভাবেই দেশের বাকি সেক্টরগুলোর মতো অচলবস্থা তৈরি হয়েছে ক্রীড়াঙ্গনেও।
আগামী অক্টোবরে বাংলাদেশে হওয়ার কথা আইসিসি নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। কিন্তু উদ্ভুত পরিস্থিতিতে বৈশ্বিক এই আয়োজন থেকে বঞ্চিত হতে পারে দেশ। সার্বিক বিবেচনায় আইসিসিও নাকি ভেন্যু বদলের কথা ভাবছে। সম্প্রতি এমন খবর প্রকাশিত হয়েছে গণমাধ্যমে।
অতীত অভিজ্ঞতা বলে, বাংলাদেশের সরকার বদলের সাথে বদলে যায় বিভিন্ন ক্রীড়া ফেডারেশনের নেতৃত্বও। সরকার দলীয়রাই আসেন নেতৃত্বে। এরপর শুরু হয় অনিয়ম স্বেচ্ছ্বাচারিতা। এই অভিযোগগুলো থেকে মুক্ত নয় দেশের একটি ফেডারেশনও। দেশের সবচেয়ে বড় দুই ফেডারেশন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) ও বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনকে (বাফুফে) নিয়ে এই অভিযোগ তো আরও বেশি। ক্রিকেট নাজমুল হাসান পাপন আর ফুটবলে কাজী সালাউদ্দিন দুই জনই সভাপতির চেয়ারে এক দশকের বেশি সময়।
পট পরিবর্তনের এই সন্দিক্ষণে ইতোমধ্যে সোচ্চার হয়েছেন বর্তমান-সাবেক অনেক খেলোয়াড়, ক্রীড়া সংগঠক, সংগঠন ও ক্রীড়াপ্রেমীরা। তাদের চাওয়া রাজনীতিমুক্ত ক্রীড়াঙ্গন। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে বিসিবির কার্যালয়ের সামনে জড়ো হয়ে ইতোমধ্যে বিভিন্ন দাবি জানিয়েছেন ক্রিকেট সংগঠকরা। তাদের দাবির মূলকথা, আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে এত দিন বিসিবিতে যে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে তার বিচার এবং তাদের হটিয়ে যোগ্যদের নেতৃত্বে আনা।
বিদায়ী আওয়ামী লীগ সরকারের যুব ও ক্রীড়ামন্ত্রী ছিলেন নাজমুল হাসান পাপন। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডেরও সভাপতি তিনি। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় থেকে বিদায় নিলেও ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি এখনও তিনিই। কারণ বিসিবির সভাপতির পদে সরকার নিয়োগ দেয় না। আইসিসির নিয়ম অনুযায়ী নির্বাচনের মাধ্যমে ঠিক হয় বিসিবির পরিচালনা পর্ষদ। পরে নির্বাচিত পরিচালকদের মধ্য থেকে তাঁদেরই ভোটে নির্বাচিত হন বোর্ড সভাপতি। তবে নির্বচন কারা করবেন সেখানে যে সরকারের হাত থাকে তা অনেকটাই ওপেন সিক্রেট।
পাপনের বিরুদ্ধে অভিযোগ অবশ্য নতুন নয়। তার নেতৃত্বাধীন বিসিবি অনেক ক্রিকেটারদের ক্যারিয়ার ধ্বংস করেছে বলে অভিযোগ তুলেছেন জাতীয় দলের একসময়ের নিয়মিত ক্রিকেটার ইমরুল কায়েস, রুবেল হোসেনদের মতো তারকারা। ইমরুলের দাবি, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডকেও ক্ষমতার কালো থাবা থেকে মুক্ত করতে হবে।
জনগণের তোপের মুখে অন্যান্য মন্ত্রী এমপিদের মতো নিখোঁজ আছেন পাপনও। জানা গেছে, গোপনে দেশ ছেড়েছেন তিনি। বিক্ষুব্ধ জনতা তার ভৈরবের বাড়িতে ভাঙচুর চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়।
পাপন মন্ত্রী হওয়ার আগে থেকেই ক্রীড়াঙ্গনের অলিখিত অভিভাবক। হকি, ফুটবলসহ অনেক সমস্যা সমাধান তার দ্বারস্থ হতেন।
ফেডারেশনেরগুলো কমিটি গঠন হয় নির্বাচনের মাধ্যমে। ফুটবলে বাফুফে সভাপতি পদে কাজী সালাউদ্দিনের বিপক্ষে ২০১২ ও ২০২০ সালে কেউ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেনি নানা কারণে। কাজী সালাউদ্দিন খানিকটা চ্যালেঞ্জে পড়লেও পাপন সব সময় সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন বিনা বাধায়।
উতোমধ্যে সালঅহউদ্দিনের পদত্যাগের দাবি তুলেছে ফুটবল সমর্থকদের সংগঠন ‘বাংলাদেশ ফুটবল আলট্রাস’। সঙ্গে বাফুফের সিনিয়র সহসভাপতি সালাম মুর্শেদী ও নারী কমিটির প্রধান মাহফুজা আক্তার কিরণেরও পদত্যাগের দাবি জানান তারা। পদত্যাগ করতে যদি ফিফার নিয়মে সমস্যা হয়, তাহলে আগামী নির্বাচনে এই তিনজন যেন না দাঁড়ান সেই দাবি তোলেন।
হাসিনার সরকার পতনের পর বিক্ষুব্ধ জনতা বাফুফে ভবনে গিয়ে সালাহউদ্দিনকে খুঁজতে গিয়ে পাননি। বেসরকারী এই ভবন ভাঙচুর না হলেও শেখ হাসিনার ভাই শেখ কামাল প্রতিষ্ঠিত ঐতিহ্যবাহী ঢাকা আবাহনী ক্লাবে হামলা ও ভাঙচুর করা হয়।
অনেকগুলো ফেডারেশনের বিরানভূমি বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামও এখন ধমথমে। সেখানে রোলার স্কেটিং, উশু ফেডারেশন, কারাতেসহ সকল ফেডারেশনের সঙ্গেই জড়িত সকলেই আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। হাসিনার পতনের পর সব পেডারেশন দখলে নেওয়ার চেষ্টা করছে প্রতিপক্ষ। অ্যাথলেটিকস, হকিসহ অনেক ফেডারেশনেও একই অবস্থা। ফেডারেশনগুলোর অধিকাংশ কর্তাব্যক্তিরাই গা ঢাকা দিয়েছেন।
দেশের আরেক শীর্ষ ক্রীড়া সংস্থা বাংলাদেশ অলিম্পিক এসোসিয়েশন। টানা তিন মেয়াদে সংস্থাটির মহাসচিব সৈয়দ শাহেদ রেজাও শেখ হাসিনার আস্থাভাজন।
ফুটবল, ক্রিকেট বাদে দেশের বাকি সব ফেডারেশনের সভাপতি মনোনীত সরকার থেকে। হকি, সাঁতারে সামরিক দুই বাহিনীর প্রধান সভাপতি মনোনীত হন। অন্য ফেডারেশনগুলোতে সরকার মনোনীত আমলা, রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক ব্যক্তিত্ব মনোনীত করে। সরকার পরিবর্তন হওয়ায় সভাপতি পদে পরিবর্তন আসছে এটা প্রায় নিশ্চিতই।
নতুন নেতৃত্বে যিনিই আসুন, ক্রীড়াপ্রেমীদের মনের চাওয়া, যোগ্য ব্যক্তিরা ক্রীড়াঙ্গনের হাল ধরুক। ক্রীড়াঙ্গনে থাকুক ক্রীড়াঙ্গনের লোক।
বিভাগ : খেলাধুলা
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
রাশিয়া বিরোধী নিষেধাজ্ঞার কারণে যুক্তরাষ্ট্রে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি পাবে
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আ. লীগের পলাতক নেতার নৈশভোজ
এবি পার্টির চেয়ারম্যান হলেন মঞ্জু ও সা. সম্পাদক ব্যারিস্টার ফুয়াদ
সুশাসন প্রতিষ্ঠার কারণে দেশ থেকে টাকা পাচার বন্ধ হয়েছে : গভর্নর
শৈলকুপায় আ’লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত ২০
আগামী জাতীয় নির্বাচন নিবন্ধিত সব দল নিয়েই হবে: সিইসি
বিভাগ সংস্কারে আন্দোলনে ইবি শিক্ষার্থীরা
কালের কণ্ঠ বিতর্ক: যা বললেন শিবির সেক্রেটারি
জাতিগতভাবে আমরা একটু বেশি জাজমেন্টাল: তাহসান খান
যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত উভয়েই একটি স্থিতিশীল বাংলাদেশ দেখতে চায়
আখাউড়ায় আসার পর কাপলিং ভাঙ্গলো উপকুল এক্সপ্রেসের
‘কালের কণ্ঠের ভূমিকা নিয়ে অবগত ছিলাম না’, ফাতেমার দুঃখ প্রকাশ
পুতুলকে দৌড়ের উপর রেখে ভারতকে কী বার্তা দিতে বললেন পিনাকী
সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত বিএসএফের
বার্মিংহামের সিরাজাম মুনিরায় ১৪ জানুয়ারি ফুলতলী ছাহেব (রহ.) এর ঈসালে সাওয়াব মাহফিল
নিকলীতে ভুট্টা চাষে আশার স্বপ্ন বুনেছে কৃষক
জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র প্রকাশের দাবিতে লক্ষ্মীপুরে লিফলেট বিতরণ
মেঘনা নদীতে দুই স্পিডবোটের সংঘর্ষে নিহত ৩, নিখোঁজ ১
হবিগঞ্জের সড়কে প্রাণ গেল তিন নারী পোশাক শ্রমিকের
বরিশালে জাতীয় মহাসড়কের ওপর নির্মিত পাক অপসারণে নগর ভবনকে সড়ক অধিদপ্তরের চিঠি