‘পাকিস্তানে পারলে বাংলাদেশে কেন নয়’

বিশ্বাসের মন্ত্রে জয়ের স্বপ্ন

Daily Inqilab স্পোর্টস রিপোর্টার

২৪ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০২ এএম | আপডেট: ২৪ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০২ এএম

সকালের শুরুটা দেখলে এই কথা অনেকের কাছে হয়ত লাগত ‘পাগলের প্রলাপ’। ইনিংস হারের শঙ্কায় পড়ে যাওয়া বাংলাদেশ দল দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে জাকের আলি অনিক ও মেহেদী হাসান মিরাজের ব্যাটে। স্পিন কোচ মুশতাক আহমেদ জানালেন, দলের ভেতর এবার জেতার বিশ্বাস ছড়িয়ে পড়ছে। স্কোরবোর্ডের দিকে তাকালে আর একটু সাহসী হলে, মুশতাকের কথাকে খুব অমূলক মনে হবে না হয়তো। মিরপুর টেস্টের দ্বিতীয় দিন শেষে বাংলাদেশের সামনে ছিল ইনিংস পরাজয়ের শঙ্কা। তৃতীয় দিন শেষে সেই দলটি এখন জয়ের স্বপ্নও দেখতে পারছে!
মিরপুর টেস্টে প্রথম ইনিংসে মাত্র ১০৬ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ। জবাবে ৩০৮ রান তুলে ২০২ রানের লিড নিয়ে নেয় প্রোটিয়ারা। ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ তখন সফরকারীদের হাতে। তৃতীয় দিন সকালে ১১২ রানে ৬ উইকেট পড়ার পর ইনিংস ছিলো সম্ভাব্য বাস্তবতায়। সেই জায়গা থেকে ১৩৮ রানের রেকর্ড জুটি গড়ে ঘুরে দলকে টেনে তুলেন মিরাজ-জাকের। পরে নাঈম হসানকে নিয়ে অবিচ্ছিন্ন আরও ৩৩ রান যোগ করেছেন মিরাজ, এই অলরাউন্ডার অপরাজিত আছেন ৮৭ রানে।
শেষ তিন উইকেট নিয়ে অন্তত দেড়শো রানের লিড নিলেও ম্যাচ জেতার দারুণ সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে। কারণ মিরপুরের উইকেটে চতুর্থ ইনিংসে তিন অঙ্কের উপরে যেকোনো পুঁজি তাড়া করাই চ্যালেঞ্জের। বৃষ্টি ও আলোক স্বল্পতায় তৃতীয় দিনের খেলা সংক্ষিপ্ত হওয়ায় ম্যাচ গড়িয়েছে চতুর্থ দিনে। তৃতীয় দিনের খেলা শেষে দলের হয়ে গণমাধ্যমে আসেন স্পিন কোচ মুশতাক। তিনি তার প্রতিটি জবাবে বাংলাদেশ দলের বিশ্বাসের কথা জোরালোভাবে জানিয়ে গেছেন, ‘আমার দৃষ্টিকোণ থেকে বলব আমাদের বিশ্বাস রাখতে হবে। যেকোনো পরিস্থিতিতে বিশ্বাস আছে। যখন বিশ্বাস থাকে যেকোনো প্রতিপক্ষকে চ্যালেঞ্জ করতে পারবেন। আমাদের যতটা বেশি সম্ভব ব্যাটিং চালিয়ে যেতে হবে। নিয়মিত রান বাড়াতে হবে। লিড যতটা বড় করা যায় করতে হবে।’
শেষ তিন উইকেট নিয়ে আরও একশোর বেশি রান তোলার বিশ্বাসও রাখেন মুশতাক, ‘এই বিশ্বাস আছে (দুইশোর বেশি লিড দেওয়া)। কোচিং স্টাফ ও খেলোয়াড়রা বিশ্বাস করতে শুরু করেছে। ক্রিকেটে আপনাকে যেকোনো পরিস্থিতিতে বিশ্বাস রাখতে হবে। আমরা ফলের কথা না ভেবে লড়াই ও প্রক্রিয়া ঠিক রাখব। বিশ্বাস থাকলেই ঘুরে দাঁড়িয়ে লড়াই করা যায়।’ প্রথম ইনিংসে দুইশো রানে পিছিয়ে প্রবল প্রতিকূল অবস্থা থেকে ম্যাচ জেতা এখন ভীষণভাবেই সম্ভব মনে হচ্ছে মুশতাকের কাছে, ‘কেন নয় (জেতা)। আপনাকে বিশ্বাস করতে হবে। এটা হচ্ছে প্রক্রিয়া ঠিক রাখা ও হাল ছেড়ে না দেওয়া। যখন আপনি হাল ছাড়বেন না, প্রতিপক্ষ আপনাকে সমীহ করা শুরু করবে।’
তৃতীয় দিন শেষে ৮১ রানে এগিয়ে নাজমুল হোসেন শান্তর দল। উইকেট বাকি আছে তিনটি। চতুর্থ দিন সকালে দ্বিতীয় নতুন বলে এই তিন উইকেট দ্রুতই তুলে নিতে পারে দক্ষিণ আফ্রিকা। সেক্ষেত্রে জয় তাদের নাগালেই থাকবে। তবে বাংলাদেশের ভরসা হয়ে ৮৭ রানে অপরাজিত আছেন মিরাজ। তার সঙ্গে আছেন নাঈম হাসান, ব্যাটিংটা যিনি ভালোই করতে পারেন। অপেক্ষায় আছেন তাইজুল ইসলাম, ব্যাট হাতে লড়াইয়ে তিনি যখন সহজে হাল ছাড়েন না। ১৫০-১৮০ রানের লিড নিতে পারলে এবং উইকেটের সহায়তা মিললে এই ম্যাচে জয় পাওয়াটা অসম্ভব নয় বাংলাদেশের জন্য।
মুশতাকের মতে, সেই লক্ষ্যটা পূরণ করতে হলে সবচেয়ে বড় অস্ত্র ‘বিশ্বাস।’ কিছুদিন আগে পাকিস্তান সফরে ২৬ রানে ৬ উইকেট পড়ার পর সেই স্মরণীয় সেই জয়কে প্রেরণা মানছেন স্পিন কোচ, ‘(এই ধরনের লড়াই) সবসময়ই দারুণ। কারণ, এভাবেই বিশ্বাস রাখতে হয়। পাকিস্তান সিরিজেও ২৬ রানে ৬ উইকেট হারানোর পরও আমরা ঘুরে দাঁড়াতে পেরেছিলাম। এই ধরনের ইতিবাচক ব্যাপার থেকেই সবাই বিশ্বাস পেতে শুরু করে যে, আমরা যে কোনো জায়গা থেকে জিততে পারি বা ঘুরে দাঁড়াতে পারি। দলের এই ধরনের আবহ থাকা সবসময়ই দারুণ। এই ধরনের ম্যাচ জিততে থাকলে সবাই বিশ্বাস করতে শুরু করে। টেস্ট ক্রিকেটের সৌন্দর্যই এটা যে, একটা দল যখন ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই করতে থাকে, বিশেষ করে লোয়ার অর্ডারে যখন এরকম লড়াই হয়, কৌশলগত দিক থেকেও প্রতিপক্ষের ওপর অনেক চাপ ফিরিয়ে দেওয়া যায়। এটা দারুণ লক্ষণ।’


বিভাগ : খেলাধুলা


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

টানা ৩৫ ঘণ্টা পর অনশন প্রত্যাহার জবি শিক্ষার্থীদের

টানা ৩৫ ঘণ্টা পর অনশন প্রত্যাহার জবি শিক্ষার্থীদের

খুশদিল ঝড়ে খুলনাকে চ্যালেঞ্জিং লক্ষ্য দিল রংপুর

খুশদিল ঝড়ে খুলনাকে চ্যালেঞ্জিং লক্ষ্য দিল রংপুর

ভারতে পালানোর সময় ইডেন কলেজ ছাত্রলীগ নেত্রী সুস্মিতা পান্ডে গ্রেপ্তার

ভারতে পালানোর সময় ইডেন কলেজ ছাত্রলীগ নেত্রী সুস্মিতা পান্ডে গ্রেপ্তার

বাগেরহাটে আওয়ামী লীগ নেতা বাদশা মিয়া গ্রেফতার

বাগেরহাটে আওয়ামী লীগ নেতা বাদশা মিয়া গ্রেফতার

লুকিয়ে পাথর লুঠে যেয়ে সিলেটে এক শ্রমিকের মৃত্যু !

লুকিয়ে পাথর লুঠে যেয়ে সিলেটে এক শ্রমিকের মৃত্যু !

লক্ষ্মীপুরের চন্দ্রগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যানকে কার্যালয় থেকে বের করে দিয়ে তালা!

লক্ষ্মীপুরের চন্দ্রগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যানকে কার্যালয় থেকে বের করে দিয়ে তালা!

খুলনা-পাইকগাছা মহাসড়কে সড়ক দূর্ঘটনায় ২ জনের মৃত্যু

খুলনা-পাইকগাছা মহাসড়কে সড়ক দূর্ঘটনায় ২ জনের মৃত্যু

‘১০ দিনের ট্রেনিং করে ১ কোটি লোক যুদ্ধে যেতে প্রস্তুত’

‘১০ দিনের ট্রেনিং করে ১ কোটি লোক যুদ্ধে যেতে প্রস্তুত’

বিএনপির ৩১ দফা বাস্তবায়নের জন্য শেরপুর বিএনপির মিছিল

বিএনপির ৩১ দফা বাস্তবায়নের জন্য শেরপুর বিএনপির মিছিল

রায়পুরায় জমির আইল নিয়ে মারামারি, আহত ৪

রায়পুরায় জমির আইল নিয়ে মারামারি, আহত ৪

স্ট্রেচারে মাঠ ছাড়লেন জেসুস

স্ট্রেচারে মাঠ ছাড়লেন জেসুস

শক্তিশালী ভূমিকম্পে কাঁপল জাপান, সুনামির সতর্কতা

শক্তিশালী ভূমিকম্পে কাঁপল জাপান, সুনামির সতর্কতা

‘আমার কি সর্বনাশ হইয়া গেল রে, আমার সোনা হারায় গেল রে'!

‘আমার কি সর্বনাশ হইয়া গেল রে, আমার সোনা হারায় গেল রে'!

ভাঙ্গায় মোটরসাইকেলের ধাক্কায় প্রাণ গেল শিশুর

ভাঙ্গায় মোটরসাইকেলের ধাক্কায় প্রাণ গেল শিশুর

ভাঙ্গায় পুলিশের বিশেষ অভিযানে আ'লীগের ৫ নেতাকর্মী গ্রেপ্তার

ভাঙ্গায় পুলিশের বিশেষ অভিযানে আ'লীগের ৫ নেতাকর্মী গ্রেপ্তার

কুষ্টিয়ায় বিএনপির সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় আহত জামায়াতকর্মীর মৃত্যু

কুষ্টিয়ায় বিএনপির সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় আহত জামায়াতকর্মীর মৃত্যু

ইনকিলাবে সংবাদ প্রকাশ সেই কৃষি কর্মকর্তাকে বদলী

ইনকিলাবে সংবাদ প্রকাশ সেই কৃষি কর্মকর্তাকে বদলী

ইসলামবিদ্বেষীদের মোকাবেলায় মুসলিম রাষ্ট্রপ্রধানদের ঐক্য খুবই জরুরি

ইসলামবিদ্বেষীদের মোকাবেলায় মুসলিম রাষ্ট্রপ্রধানদের ঐক্য খুবই জরুরি

না.গঞ্জে নির্বাচন কমিশনার ‘সৎ উদ্দেশ্য থাকলে নির্ভেজাল ভোটার লিস্ট করা সম্ভব’

না.গঞ্জে নির্বাচন কমিশনার ‘সৎ উদ্দেশ্য থাকলে নির্ভেজাল ভোটার লিস্ট করা সম্ভব’

আর্মি ডে’র কুচকাওয়াজে প্রথমবার অংশ নিচ্ছে রোবট সেনা

আর্মি ডে’র কুচকাওয়াজে প্রথমবার অংশ নিচ্ছে রোবট সেনা