১৫ বছরের আক্ষেপ ঘোঁচানো জয়
০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০৮ এএম | আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০৮ এএম
আগের দিন যে প্রক্ষাপটের অবতারনা, পরদিন সেটি পেল পূর্ণতা। দীর্ঘ ১৫ বছর পর ক্যারিবিয়ায় টেস্ট জিতল বাংলাদেশ। জ্যামাইকায় ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ১০১ রানে হারিয়ে স্মরণীয় এক জয় পেল মেহেদী হাসান মিরাজের দল। দ্বিতীয় ইনিংসে দলকে বলতে গেলে একাই টেনে নেন জাকের আলি। তার ৯১ রানের ইনিংসের সৌজন্যে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সামনে লক্ষ্য দাঁড়ায় ২৮৭। কিন্তু তাদের ইনিংস গুটিয়ে যায় ১৮৫ রানেই। দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজ শেষ হল ১-১ সমতায়। আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের বর্তমান চক্রও তারা শেষ করতে পারল জয় দিয়ে। তাতে পুরস্কার মঞ্চে মেরুন শিবিরে রাজ্যের হতাশা!
শুরুটা একতরফাভাবেই হয়। ম্যাচ সেরার পুরস্কার নিয়ে কোনো দ্বিধা দ্বন্দ্বের অবকাশ ছিল না। ৫০ রানে ৫ উইকেট শিকার করেন তাইজুল ইসলাম। ম্যাচে ৬ উইকেটের পাশাপাশি ব্যাট হাতে দুই ইনিংসেই অবদান রেখে অনুমিতভাবেই সেটি উঠেছে তাইজুল ইসলামের হাতে। তবে ম্যান অব দ্য সিরিজ যৌথভাবে দুজন। সেই ট্রফি নিতে গিয়ে তাসকিন আহমেদের মুখে চওড়া হাসি, জেডেন সিলসের মুখ গুমোট। সিরিজ জয়ের ট্রফি নেওয়ার সময়ও একই দৃশ্য। একসঙ্গে ট্রফি গ্রহণ করলেও মিরাজের মুখে ঝলমলে হাসি, ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েটের চেহারায় রাজ্যের আঁধার। ড্র হওয়া সিরিজেও যে কখনও কখনও জয়-পরাজয় থাকে, সেটিই যেন ফুটে উঠল এই দৃশ্যগুলোয়।
জয়ের ভিত আগের দিনই গড়ে ফেলেছিল বাংলাদেশ। গত পরশু চতুর্থ দিন সকালে ৫ উইকেটে ১৯৩ রান নিয়ে দিন শুরু করে বাংলাদেশ। আগের দিনের দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যান জাকের ও তাইজুল আরেকটু এগিয়ে নেন দলকে। কার্যকর এক বাউন্সারে তাইজুলের প্রতিরোধ ভেঙে এই জুটি থামান আলজারি জোসেফ। আগের দিন অসুস্থতার কারণে ব্যাট করতে না পারা মুমিনুল হক অবশেষে ব্যাটিংয়ে নামেন আট নম্বরে। কিন্তু প্রথম ইনিংসের মতোই আউট হয়ে যান কোনো রান না করেই। বাংলাদেশের রান তখন ৭ উইকেটে ২১১। জাকের খেলছেন ৭২ বলে ৩৯ রান করে।
জোড়া উইকেট হারানোর পর নিজের করণীয় বুঝে নেন জাকের। তৃতীয় টেস্ট খেলতে নামা ব্যাটসম্যান দারুণ পরিপক্কতার পরিচয় দিয়ে স্কিল আর পেশির জোরের প্রদর্শনী মেলে রান বাড়াতে থাকেন ঝড়ের বেগে। চার-ছক্কার ¯্রােতে ভেসে সেঞ্চুরির সম্ভাবনাও জাগিয়ে তোলেন তিনি। ছক্কার চেষ্টায় শেষ পর্যন্ত তার সেঞ্চুরিটা হয়নি। আউট হয়ে যান শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে। তবে ৮ চার ও ৫ ছক্কায় ১০৫ বলে ৯১ রানের ইনিংসটি বাংলাদেশের স্বপ্নের পালে দেয় জোর হাওয়া। এ দিন বাংলাদেশ যে ৭৫ রান তোলে, এর ৬২-ই আসে জাকেরের ব্যাট থেকে।
এই মাঠে ২১২ রানের বেশি তাড়া করে জয়ের নজির নেই। সেখানে ২৮৭ রানের লক্ষ্য তো অনেক বেশিই। ওয়েস্ট ইন্ডিজও পারেনি নতুন ইতিহাস লিখতে। লাঞ্চের ঠিক আগের ওভারে আক্রমণে এসেই বাংলাদেশকে প্রথম উইকেট এনে দেন তাইজুল। ৬ রান করে বিদায় নেন মিকাইল লুই। ক্যারিবিয়ান অধিনায়ক ক্রেইগ ব্যাথওয়েট অবশ্য বেশ ইতিবাচক শুরু করেন। স্বভাববিরুদ্ধ পথে হেঁটে আগ্রাসী কিছু শট খেলেন তিনি। ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে ছক্কা মারেন তাইজুলকে। বাঁহাতি এই স্পিনার পরে ঠিকই শোধ তোলেন। তার তীক্ষè টার্ন ও বাউন্সে ৪৩ রানে বিদায় নেন ব্র্যাথওয়েট। এর আগেই কেসি কার্টিকে ফেরান তাসকিন আহমেদ।
পরে তাইজুলের বিশাল টার্ন করা ডেলিভারিতে বোল্ড হন আলিক আথানেজ। যা একটু লড়াই করতে পারেন কেবল কাভেম হজ। তাকেও ৫৫ রানে থামান তাইজুল। জশুয়া দা সিলভাকে ফিরিয়ে তাইজুল পূর্ণ করেন পাঁচ উইকেট। টেস্ট ক্যারিয়ারে এই স্বাদ পেলেন তিনি পঞ্চদশবার। এর মধ্যে দেশের বাইরে চতুর্থবার। দুটিতেই তার ওপরে আছেন বাংলাদেশের কেবল সাকিব আল হাসান। এরপর কেবল শেষের অপেক্ষা। হাসান মাহমুদ এক ওভারেই ধরেন দুটি শিকার। শামার জোসেফকে দারুণ ইয়র্কারে বোল্ড করে ম্যাচের ইতি টানেন নাহিদ রানা। প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ মাত্র ১৬৪ রান করার পরও লিড পেয়েছিল এই নাহিদের দারুণ বোলিংয়ে। তার হাত ধরে ঘুরে দাঁড়ানোর শুরু, তার হাত দিয়েই জয়ের পূর্ণতা।
দেশের ক্রিকেটে ছোটখাটো একটি রেকর্ডও হয়েছে এই জয়ে। এই প্রথম এক পঞ্জিকাবর্ষে দেশের বাইরে তিনটি টেস্ট জিততে পারল বাংলাদেশ। মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে জয়, আরও আগে দেশের শততম টেস্টে শ্রীলঙ্কায় জয় কিংবা এই বছরে পাকিস্তানে দুটি জয় হয়তো এখনও ওপরেই থাকবে। তবে নিয়মিত অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত ও অভিজ্ঞতম ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিমকে ছাড়া এই জয়, প্রথম টেস্টে হেরে কোণঠাসা হয়ে পড়া অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে এই জয়ও বিশেষ কিছু। টেস্ট সিরিজ শেষে এবার ওয়ানডের লড়াই। সেন্ট কিটসে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ শুরু আগামী রোববার।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ : ১৬৪ ও ২য় ইনিংস : ৫৯.৫ ওভারে ২৬৮ (আগের দিন ১৯৩/৫) (জাকের ৯১, তাইজুল ১৪, মুমিনুল ০, হাসান ৩, তাসকিন ০, নাহিদ ১*; সিলস ১/৪৬-১, আলজারি ৩/৭৭, শামার ২/৮০, গ্রেভস ১/২০, হজ ০/৪, রোচ ৩/৩৬)। ওয়েস্ট ইন্ডিজ : ১৪৬ ও ২য় ইনিংস : ৫০ ওভারে ১৮৫ (ব্র্যাথওয়েট ৪৩, লুই ৬, কার্টি ১৪, হজ ৫৫, আথানেজ ৫, গ্রেভস ২০, জশুয়া ১২, আলজারি ৫, রোচ ৮, শামার ৮; হাসান ২/২০, তাসকিন ২/৪৫, তাইজুল ৫/৫০, নাহিদ ১/৩২, মিরাজ ০/৩১)।
ফল : বাংলাদেশ ১০১ রানে জয়ী। সিরিজ : দুই ম্যাচের সিরিজ ১-১ ড্র।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ : তাইজুল ইসলাম। ম্যান অব দ্য সিরিজ : তাসকিন ও সিলস।
বিভাগ : খেলাধুলা
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
জুলাই সনদ ও গণভোট নিয়ে ড.এনায়েত উল্লাহ আব্বাসীর মন্তব্য
জোড়া গোলের পর অ্যাসিস্টে নতুন উচ্চতায় মেসি, সেমি-ফাইনালে মায়ামি
শেষ মৃতদেহ উদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত অভিযান চলবে: ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী
লেবাননে ইসরায়েলি হামলার তীব্র নিন্দা জানাল ইইউ
গাজায় যুদ্ধবিরতির পরও থামেনি ইসরায়েলি হামলা, নিহত ছাড়াল ৬৯ হাজার
সৈয়দপুরে ট্রেনে কাটা মরদেহ উদ্ধার
৮ ডিসিকে যুগ্মসচিব হিসেবে পদায়ন
দেশের ১৫ জেলায় নতুন ডিসি, মধ্যরাতে প্রজ্ঞাপন জারি
অটো চার্জার ছিনতাইয়ের চেষ্টায় ড্রাইভারকে ছুরিকাঘাত
আওয়ামী লীগ নেতা এখন ইসলামী আন্দোলনের সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী
পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে ভারতের গোলামী আর দাসত্ব করার জন্য নয়: শাহজাহান
৮ ম্যাচ পর গোল হজম করে আর্সেনালের হোঁচট
কিছু দল নির্বাচন বিলম্বিত করে ক্ষমতার স্বাদ নিতে চায়: মেজর হাফিজ
আইন ভাঙায় জরিমানা দিতে বাধ্য হলেন কাতারের আমির
জি-২০ সম্মেলন বয়কট করছে যুক্তরাষ্ট্র
গাঁজা বিক্রি নিষেধ করায় খুন
ফরাসী নাগরিকদের জরুরী ভিত্তিতে মালি ত্যাগের পরামর্শ
অনুষ্ঠিত হলো উদ্ভাবন, নীতি ও সহযোগিতাকে কেন্দ্র করে ৫ম বাংলাদেশ ফিনটেক সামিট
স্বাস্থ্যের মিঠু চক্র এখনো সক্রিয়, মানি লন্ডারিং মামলা থেকে রেহাই পেতে সিআইডির কর্মকর্তাদের ম্যানেজের চেষ্টা
ধামরাইয়ে আওয়ামী লীগের ৩ নেতা গ্রেপ্তার
