বিজয় দিবসে দেশবাসীকে টাইগারদের জয় উপহার

স্পোর্টস ডেস্ক

১৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:৫৫ এএম | আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:৪৫ পিএম

ছবি: বিসিবি/ফেসবুক

বল হাতে দুর্দান্ত পারফরর্ম করলেন মেহেদি হাসান। উপহার দিলেন ক্যারিয়ার সেরা বোলিং। আলো ছড়ালেন তাসকিন আহেমদ, হাসান মাহমুদরাও। অল্প পুঁজি নিয়েও ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে টি-টোয়েন্টি সিরিজ শুরু করল বাংলাদেশও। এর মধ্য দিয়ে আজ বিজয় দিবসে দেশবাসীকে জয় উপহার দিলো টাইগাররা।

সেন্ট ভিনসেন্টে বাংলাদেশ সময় সোমবার ভোরে শুরু হওয়া সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৭ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। ৬ বছর পর ওয়েস্ট ইন্ডিজকে টি-টোয়েন্টিতে হারাল টাইগাররা।

নির্ধারিত ২০ ওভারে সফরকারী দলটি তোলে ৬ উইকেটে ১৪৭ রান। জবাবে এক বল বাকি থাকতে ১৪০ রানে গুটিয়ে যায় ক্যারিবীয়রা।

স্বাগতিক শিবিরে সবচেয়ে বড় আঘাত হানেন মেহেদি। ৪ ওভারে স্রেফ ১৩ রানের বিনিময়ে ৪ উইকেট নেন এই স্পিনার। এর আগে ব্যাট হাতেও ২৪ বলে অপরাজিত ২৬ রানের সময়োপযোগী ইনিংস খেলে ম্যাচের নায়ক মেহেদিই।

ক‍্যারিয়ারে দ্বিতীয়বার ম‍্যাচ সেরার পুরস্কার জিতলেন তিনি। প্রথমবার জিতেছিলেন গত ডিসেম্বরে, নিউজিল‍্যান্ডের বিপক্ষে নেপিয়ারে।

শেষ ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজের দরকার ছিল ১০ রান, হাতে ছিল ২ উইকেট। প্রথম বলে সিঙ্গেল নিয়ে রভম‍্যান পাওয়েলকে স্ট্রাইক দেন আলজারি জোসেফ। ধারাভাষ‍্যকাররা তখন বলছিলেন, বিশ্বের যে কোনো বোলারের কাছ থেকে ৫ বলে ৯ রান নিতে পারেন পাওয়েল। কিন্তু এদিন সেটি হতে দেননি হাসান মাহমুদ।

নিখুঁত ইয়র্কারে ডট খেলান একটি বল। পরেরটি অফ স্টাম্পের বাইরে লেংথ বল, ব‍্যাট চালিয়ে দিয়ে লিটন দাসের গ্লাভসে ধরা পড়েন পাওয়েল। ক্যারিবীয় দলপতি ফেরেন ৩৫ বলে ৫ চার ও ৪ ছক্কায় ৬০ রান করে।

এই ক‍্যাচ নিয়ে বাংলাদেশের প্রথম কিপার হিসেবে টি-টোয়েন্টিতে কোনো ম‍্যাচে লিটন গড়েন পাঁচ ডিসমিসালের কীর্তি।

২ রানে ২ উইকেট হারিয়ে বসা উইন্ডিজ পাওয়ার প্লেতে হারায় জনসন চার্লকেও। প্রথম ওভারে স্রেফ ১ রান দেন হাসান মাহমুদ। পরের ওভারের পোথম বলেই ব্রান্ডন কিংকে মিড অফে তানজিদের ক্যাচ বানান তাসকিন আহমেদ।

পরে বল হাতেও উইন্ডিজকে এলোমেলো করে দেন মেহিদি। নিজের প্রথম ও দলীয় তৃতীয় ওভারে নিকোলাস পুরানকে স্টাম্পিংয়ের ফাঁদে ফেলেন এই স্পিনার। নিজের পরের ওভারে জনসন চার্লকে মিড অফে হাসানের ক্যাচে পরিণত করেন মেহেদি। উইন্ডিজ ৫ ওভারে ৩৩ রানে হারায় তৃতীয় উইকেট।

নিজের তৃতীয় ও দলীয় সপ্তম ওভারে জোড়া উইকেট নেন মেহেদি। দুজনই ক্যাচ দিয়েছেন উইকেটের পেছনে লিটনের হাতে। ৩৮ রানে ৫ উইকেট হারায় স্বাগতিকরা।

নিজের প্রথম ওভারে ২৫ রান দেওয়া তানজিম হাসান সাকিব একাদশতম ওভার করতে এসে তৃতীয় বলে ধরেন শিকার। গুড়াকেশ মোটিকে কট বিহাইন্ড করেন এই তরুণ পেসার।

পরের ওভারে আকিল হোসেনকে ডিপ মিড উইকেটে শামিমের হাতে ক্যাচ বানান রিশাদ হোসেন। ৬১ রানে সপ্তম উইকেট হারায় উইন্ডিজ।

এরপর অষ্টম উইকেটে নিজেদের রেকর্ড জুটি গড়েন রভমান পাওয়েল ও রোমারিও শেফার্ড। দুজন স্রেফ ৩৩ বলে ৬৭ রান যোগ করেন। জয়ের সম্ভাবনাও জাগে তদের।

১৮তম ওভারের প্রথম বলে শেফার্ডকে (১৭ বলে ২২) ফিরিয়ে জুটি ভাঙেন তাসকিন। তখনও উইকেটে ছিলেন উইকেটে ঝড় তোলা পাওয়েল। শেষ ওভারের তৃতীয় বলে তাকে ফিরিয়ে সব শঙ্কা দূর করেন হাসান মাহমুদ।

৩.৫ ওভারে ১৮ রানে ২ উইকেট নেন হাসান। ৪ ওভারে ২৮ রানে ২টি নেন তাসকিন।একটি করে নেন তানজিম ও রিশাদ।

এর আগে টস হেরে ব্যাট বেছে নেওয়া বাংলাদেশের শুরুটা ভালো হয়নি। দলীয় তৃতীয় ওভার করতে আসেন আকিল হোসেন। এই স্পিনারের তৃতীয় বলে বোল্ড হয়ে যান তানজিদ হাসান (১১ বলে ৬)। এসেই পরের বলে আকিলকে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে সাজঘরের পথ ধরেন খুব খারাপ সময়ে থাকা লিটন কুমার দাস। পাওয়ার প্লের মধ্যে আরেক স্পিনার রস্টন চেইসের শিকার হয়ে ফেরেন আফিফ হোসেন (১১ বলে ৮)। ৩০ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ তখন প্রবল চাপে।

এরপর ৪২ বলে ৫৭ রানের জুটি গড়েন সৌম্য ও জাকের আলি। বলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রান তুলতে পরেননি জাকের (২৭ বলে ২৭)।

দুবার ক্যাচ থেকে নতুন জীবন পাওয়া সৌম্য বোল্ড হন ওয়েব ম্যাকয়ের বলে, ২ চার ও ৩ ছক্কায় ৩২ বলে ৪৩ রান করে।

১৫ ওভারে বাংলাদেশ দলের রান ছিল ৫ উইকেটে ৯৬।

শেষ ৫ ওভারে যোগ হয়েছে ৫১ রান। যার অর্ধেকের বেশি শামিম হোসেনের। এক বছর পর টি-টোয়েন্টি খেলতে নামা এই বাঁহাতি বিশতম ওভারের পঞ্চম বলে আউট হওয়ার আগে করেন ১৩ বলে ২৭ রান। ছোট্ট ক্যামিও ইনিংসটিতে ছিল ৩টি ছক্কা ১টি চার। মেহেদী হাসান অপরাজিত থাকেন ২৪ বলে ২৬ রানে।

এই রানই বাংলাদেশের জন্য হয়ে যায় যথেষ্ঠ।

২০১৮ সালের পর টি-টোয়েন্টিতে ক‍্যারিবিয়ানদের বিপক্ষে প্রথম জয়ে তিন ম‍্যাচের সিরিজে এগিয়ে গেল বাংলাদেশ।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১৪৭/৬ (তানজিদ ৬, সৌম‍্য ৪৩, লিটন ০, আফিফ ৮, জাকের ২৭, মেহেদি ২৬*, শামীম ২৭, রিশাদ ২*; আকিল ৪-১-১৩-২, ম‍্যাককয় ৪-০-৩০-২, জোসেফ ৪-০-২৬-০, শেফার্ড ৩-০-৩৩-১, মোটি ১-০-১৫-০)

ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ১৯.৫ ওভারে ১৪০ (কিং ১, চার্লস ২০, পুরান ১, চেইস ৭, ফ্লেচার ০, পাওয়েল ৬০, মোটি ৬, আকিল ২, শেফার্ড ২২, জোসেফ ৯, ম‍্যাককয় ০*; হাসান ৩.৫-০-১৮-২, তাসকিন ৪-০-২৮-২, মেহেদি ৪-০-১৩-৪, তানজিম ৪-০-৪৭-১, রিশাদ ৪-০-৩২-১)

ফল: বাংলাদেশ ৭ রানে জয়ী।

সিরিজ: তিন ম্যাচের সিরিজে বাংলাদেশ ১-০তে এগিয়ে।

ম্যাচসেরা: মেহেদি হাসান (২৬* রান ও ৪/১৩)।

বিভাগ : খেলাধুলা