আলফাজের ছোঁয়ায় বদলে যাওয়া মোহামেডান
৩১ মে ২০২৩, ১০:৫৯ পিএম | আপডেট: ০১ জুন ২০২৩, ১২:০০ এএম
ঘরোয়া ফুটবলে কোটি টাকার টুর্নামেন্ট খ্যাত সুপার কাপে দুইবারের চ্যাম্পিয়ন মোহামেডান। এবারের আসর বাদে ফেডারেশন কাপেও দশবারের সেরা তারা। স্বাভাবিকভাবেই তাদের কাছে সমর্থকদের প্রত্যাশা অনেক। তারপরও দীর্ঘ ১৪ বছর ফেডারেশন কাপে শিরোপাহীন মোহামেডান। সাদাকালোদের কোটি সমর্থকের প্রত্যাশা পূরণে যেন প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিলেন মোহামেডানের সাবেক তারকা ফুটবলার ও বর্তমানে দলটির প্রধান কোচ আলফাজ আহমেদ। তার ছোঁয়ায় হঠাৎ করে বদলে যাওয়া মোহামেডান ফিরে পেল দীর্ঘ দিনের হারানো গৌরব। কুমিল্লায় গত মঙ্গলবার শেষ হওয়া বসুন্ধরা গ্রুপ ফেডারেশন কাপের রোমাঞ্চকর ফাইনালে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বি ঢাকা আবাহনী লিমিটেডকে টাইব্রেকারে ৪-২ গোলে হারিয়ে ২০০৯ সালের পর ফের টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হলো ঢাকা মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব। এমন বড় সাফল্য শুধুই মোহামেডানের নয়, আলফাজেরও। কারণ খেলোয়াড় হিসেবে নিজ ক্যারিয়ারে মোহামেডানের পক্ষে শিরোপা জেতার পর এবার কোচ হয়েও দলটিকে এনে দিলেন চ্যাম্পিয়ন ট্রফি। কিভাবে তা সম্ভব হলো? কোচ হয়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে মোহামেডানকে কিভাবে বদলে দিলেন আলফাজ? মোহামেডান তো শুধু আবাহনীর বিপক্ষে ফাইনালটা জেতেনি, দুর্দান্ত খেলাও উপহার দিয়েছে। অথচ গত মার্চ মাসে আলফাজ যখন মোহামেডানের প্রধান কোচের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন, তখন ধুঁকছিল দলটি। ঘরোয়া সর্বোচ্চ আসর বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) ১০ ম্যাচে ১২ পয়েন্ট নিয়ে তালিকায় মোহামেডানের অবস্থান ছিল ছয় নম্বরে। জয় ছিল মাত্র তিনটি। সেই মোহামেডান ফেডারেশন কাপে বসুন্ধরা কিংস ও ঢাকা আবাহনীর মতো তারকা সমৃদ্ধ দলকে হারিয়ে জিতল শিরোপা! আর তিন ম্যাচ হাতে রেখে বিপিএলের পয়েন্ট টেবিলে উঠলো তৃতীয় স্থানে। কোন কৌশলে মাঝারি মানের একটি দলকে চ্যাম্পিয়ন বানালেন আলফাজ। মোহামেডানের এই কোচ নিজে অবশ্য মনে করেন, খুব বেশি কিছু নয়, আক্রমণাত্মক ফুটবল আর খেলোয়াড়দের পরিশ্রমই দলটাকে বদলে দিয়েছে। নিজে আক্রমণাত্মক ফুটবলার ছিলেন বলে কোচ হিসেবে দলকে আক্রমণাত্মক খেলাতে পছন্দ করেন তিনি। আর তার এই কৌশলেই শেষ পর্যন্ত মোহামেডান জিতেছে দীর্ঘ দিনের হারানো গৌরব। যদিও বিপিএলে কিন্তু এখনও শিরোপাহী মোহামেডান। তবে এখন ঘরোয়া সর্বোচ্চ আসরের শিরোপা জেতার যোগ্যতা মোহামেডানের খেলোয়াড়দের রয়েছে বলেই মনে করেন আলফাজ। ফেডারেশন কাপ জেতার পর গতকাল দুপুরে মতিঝিলস্থ মোহামেডান ক্লাবে উৎফুল্ল আলফাজ এই প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপচারিতায় বলেন, ‘মোহামেডনের এই দলটির অধরা বিপিএলের শিরোপা জেতার ক্ষমতা রয়েছে।’
খেলোয়াড় হিসেবে ১৯৯১ সালে রহমতগঞ্জ মুসলিম ফ্রেন্ডস সোসাইটির হয়ে ঢাকা প্রিমিয়ার বিভাগ ফুটবল লিগে ক্যারিয়ার শুরু আলফাজ আহমেদের। দুই বছর পর আরামবাগ ক্রীড়া সংঘে যোগ দিয়ে নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করে ১৯৯৫ সালে মোহামেডানে নাম লেখান তিনি। ২০০১ সাল পর্যন্ত এই ক্লাবটির হয়ে খেলেছেন মাথা উচুঁ করেই। এই সময়ের মধ্যে জাতীয় দলে তার ক্যারিয়ার ছিল স্মরণীয়ই। ১৯৯৫ সালে মিয়ানমারে চারজাতি ফুটবল টুর্নামেন্টে শিরোপা জেতা বাংলাদেশ দলের সদস্য ছিলেন তিনি। ১৯৯৯ কাঠমান্ডু সাফ গেমসে তার গোলেই নেপালকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো স্বর্ণপদক জেতে বাংলাদেশ জাতীয় দল। ২০০৩ সালে ঘরের মাঠে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে প্রথম শিরোপা জেতা দলেরও সদস্য ছিলেন আলফাজ। ২০১৩ সালে খেলা ছেড়ে কোচের কাতারে নাম লেখানোর অপেক্ষায় থাকেন আলফাজ। পরের বছরই সুযোগ মেলে নিজের প্রিয় দল মোহামেডানে। ২০১৪ থেকে মোহামেডানের সাবেক প্রধান কোচ সাইফুল বারী টিটুর সহকারী হিসাবে কোচিং ক্যারিয়ার শুরু করেন তিনি। ওই বছরই মোহামেডান মহিলা দল তার কোচিংয়ে রানার্সআপ হয়। ২০১৫ সাল থেকে সেনাবাহিনী ফুটবল দলের কোচ ছিলেন টানা তিন বছর। পরের বছর উত্তর বারিধারা ক্লাবের প্রধান কোচের দায়িত্বপালন করেন। ২০১৯ সালে মোহামেডানের পুুরুষ ফুটবল দলের সহকারী কোচ হিসাবে যুক্ত হন। এই মৌসুমে বিপিএলের দ্বিতীয় রাউন্ড থেকে দলটির প্রধান কোচের দায়িত্ব নেন। এরপরই একের পর এক সাফল্য ধরা দিচ্ছে মোহামেডানসহ আলফাজকে। তার অধীনে লিগে ছয়টি ম্যাচের তিনটি জয়, দুটি ড্র ও একটিতে হেরেছে মোহামেডান। আর ফেডারেশন কাপের কোয়ার্টার ফাইনাল, সেমিফাইনাল ও ফাইনাল টানা তিন ম্যাচে জিতিয়েছেন দলকে। যা আলফাজের কোচিং ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় সাফল্য। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমার কোচিং ক্যারিয়ারে এটাই সেরা সাফল্য। এই সাফল্যের জন্য আমার খেলোয়াড় ও কোচিং স্টাফের সকলকেই আমি কৃতিত্ব দেব।’
ফেডারেশন কাপ জেতা মোহামেডানের এই দলটির বিপিএলে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার যোগ্যতা আছে বলেই মনে করেন আলফাজ। তার কথায়,‘বিপিএলের বাকি ম্যাচগুলো জিতলে তৃতীয় হবে মোহামেডান। তবে আমার পরিকল্পনা অনুযায়ী খেললে আগামীতে এই দলটি থাকলে বিপিএলে প্রথমবার শিরোপা জিতবে সাদাকালোরা।’ ১৯৯৬ সালে এশিয়ার সেরা স্ট্রাইকার হিসেবে এএফসির স্বীকৃতি পাওয়া সাবেক এই ফুটবলার বলেন, ‘স্ট্রাইকার হিসেবে আমি এবারের ফেডারেশন কাপে অন্য আরেকজন সেরা স্ট্রাইকার দেখলাম। সুলেয়মানে দিয়াবাতের মতো এক ম্যাচে এত দুর্দান্ত ও অসাধারণ খেলা ফুটবলার আগে কখনো দেখিনি। সত্যিই অন্যজগতের এক সুপার পাওয়ার স্ট্রাইকারকে দেখলাম কুমিল্লায় ফেডারেশন কাপের ফাইনালে।’
বিভাগ : খেলাধুলা
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ফাইনালে ভারতের কাছে বাংলাদেশের হার
ফ্রেন্ডলি ফায়ার দুর্ঘটনায় লোহিত সাগরে মার্কিন যুদ্ধবিমান ধ্বংস
ইরানে যাত্রীবাহী বাস খাদে পড়ে নিহত ১০
বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী নারী কে, জানেন?
বাংলাদেশি রোগী পেতে সীমান্ত পর্যন্ত মেট্রো চালু করবে ভারত
হাত ফসকে আইফোন পড়ে গেল মন্দিরের দানবাক্সে, ফেরত দিতে অস্বীকৃতি
কুয়াশায় ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে একাধিক দুর্ঘটনা: নিহত ১, আহত ১৫
ঢাকার বায়ুমানে উন্নতির কোনো লক্ষণ নেই, বিপজ্জনকের কাছাকাছি
উগ্রবাদী সন্ত্রাসী 'সাদ' পন্থীদের কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে সাতক্ষীরায় মানববন্ধন
বাংলাদেশ সীমান্তে অত্যাধুনিক ড্রোন মোতায়েন ভারতের
নরসিংদীতে দুর্বৃত্তের গুলিতে ছাত্রদলকর্মী নিহত
সিনেটে প্রার্থী হতে সরে দাঁড়ালেন লারা ট্রাম্প
আমাদেরকে আর স্বৈরাচার হতে দিয়েন না : পার্থ
মার্চের মধ্যে রাষ্ট্র-সংস্কার কাজ শেষ হবে : ধর্ম উপদেষ্টা
জামালপুরে দুই ইজিবাইকের চাপায় সাংবাদিক নুরুল হকের মৃত্যু
বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী রাখাইনের সামরিক সদর দফতরের দখল নিয়েছে আরাকান আর্মি
ব্রাজিলে বাস-ট্রাক সংঘর্ষে নিহত ৩২
নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিয়োগ সিরিয়ায়
ঘনকুয়াশায় ৩ ঘন্টা পর আরিচা-কাজিরহাট নৌরুটে ফেরি সার্ভিস চালু
গাজায় যুদ্ধবিরতির আলোচনা চূড়ান্ত পর্যায়ে