সম্রাট বেকেনবাওয়ারকে হারিয়ে শোকতুর সাম্রাজ্য
১০ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০৪ এএম
ফুটবল ইতিহাসে খেলোয়াড় ও কোচ- দুই ভূমিকাতেই বিশ্বকাপ জয়ী তিন ব্যক্তির দুজন না ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন তিন দিনের মধ্যে। মারিও জাগালোর পর পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে গেলেন জার্মান কিংবদন্তি ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ার। তার মৃত্যুতে শোকে মূহ্যমান ফুটবল বিশ্ব। গত শনিবার মারা যান ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি জাগালো। একদিন বাদেই গতপরশু ফুটবল বিশ্বকে নাড়িয়ে দেয় বেকেনবাওয়ারের মৃত্যুর সংবাদ। বায়ার্ন মিউনিখের সাবেক এই ডিফেন্ডারের বয়স হয়েছিল ৭৮ বছর। ডিয়াগো ম্যারাডোনা, পেলে, মারিও জাগালো... একে একে নিভছে ফুটবল-আকাশের আলো! এ ধারায় সর্বশেষ সংযোজন বেকেনবাওয়ার। তার মৃত্যুর খবর প্রকাশ করার পর শোকে মুহ্যমান হয়ে পড়ে ফুটবল-বিশ্ব।
১৯৭৪ সালে সেই সময়ের পশ্চিম জার্মানির বিশ্বকাপ জয়ে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন বেকেনবাওয়ার। পরে কোচ হিসেবে ১৯৯০ বিশ্বকাপে জেতেন শিরোপা। বায়ার্নের খেলোয়াড় ও কোচ হিসেবেও জার্মানির শীর্ষ লিগের ট্রফি জয়ের স্বাদ পান তিনি। আরও অনেক রেকর্ড-অর্জনে ভাস্বর তার ক্যারিয়ার। চারদিক থেকে আসতে শুরু করে শোকবার্তা।
অনেকেই তাকে মনে করে থাকে জার্মানির ইতিহাসের সেরা ফুটবলার। যেমনটা বললেন জাতীয় দলের জার্মান কোচ হুলিয়ান নাগেলসম্যান, ‘আমার কাছে ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ার জার্মান ইতিহাসের সেরা ফুটবলার। একজন ফুটবলার এবং পরে কোচ হিসেবেও তিনি দুর্দান্ত ছিলেন, তিনি সবকিছুর ওপরে ছিলেন। ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ার যখন কোনো ঘরে প্রবেশ করতেন, ঘরটি তখন আলোকিত হয়ে উঠত, যোগ্যতর হিসেবেই তিনি “জার্মান ফুটবলের দীপ্তিমান একজন” উপাধি অর্জন করেছিলেন। আমি কৃতজ্ঞ এবং গর্বিত যে, তাকে জানতে পেরেছি এবং তাকে ভালোবেসে মনে রাখব।’
জার্মান ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের (ডিএফবি) সভাপতি বার্ন্ড নিউয়েনডর্ফের মতে, গোটা ফুটবল বিশ্বের জন্যই একটা ‘লেগ্যাসি’ রেখে গেছেন বেকেনবাওয়ার, ‘আমরা তার জীবনের কর্মকে সম্মান এবং কৃতজ্ঞতার সঙ্গে দেখি। আমরা একজন অনন্য ফুটবলার ও প্রিয় এক ব্যক্তিকে হারালাম। “ডের কাইজার” (বেকেনবাওয়ারের ডাক নাম) ছিলেন আমাদের খেলার ইতিহাসের সেরা খেলোয়াড়দের একজন। ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ার ডিএফবি ও সামগ্রিক ফুটবলের জন্য একটি দারুণ লেগ্যাসি রেখে গেছেন।’
১৯৯০ সালে যেবার কোচ হিসেবে বিশ্বকাপ জেতেন বেকেনবাওয়ার, সেই দলের অধিনায়ক ছিলেন লোথার মাথেউস। এই গ্রেট মনে করেন, বেকেনবাওয়ার মাঠের বাইরেও ছিলেন সেরাদের একজন, ‘ধাক্কাটা অনেক বড়। যদিও আমি জানতাম যে, ফ্রাঞ্জ ভালো বোধ করছেন না। তার মৃত্যু ফুটবল এবং সামগ্রিকভাবে জার্মানির জন্য বড় ক্ষতি। খেলোয়াড় ও কোচ হিসেবে তিনি ছিলেন সেরাদের একজন, মাঠের বাইরেও তাই। ফ্রাঞ্জ শুধুমাত্র ফুটবলেই অসামান্য ব্যক্তিত্ব ছিলেন না, তিনি বিশ্বব্যাপী পরিচিত ছিলেন। যারা তাকে চিনতেন তারা সবাই জানেন, ফ্রাঞ্জ কত মহান এবং উদার ব্যক্তি ছিলেন।’
বেকেনবাওয়ারের মৃত্যু ছুঁয়ে গেছে সাবেক ইংলিশ ফুটবলার ও বর্তমানে ফুটবল বিশেষজ্ঞ গ্যারি লিনেকারকে, ‘ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ার মারা গেছেন শুনে খুবই খারাপ লাগছে। আমাদের খেলার সত্যিকারের গ্রেটদের একজন। ডের কাইজার ছিলেন ফুটবলারদের মধ্যে সুন্দরতম, যিনি সবকিছু জিতেছিলেন সহজাত সৌন্দর্য্য এবং মাধুর্য্য ছড়িয়ে।’ লিনেকারের মতো সাবেক ইংলিশ গোলরক্ষক পিটার শিল্টন সামাজিক মাধ্যম এক্স-এ লিখেছেন, ‘গ্রেট বেকেনবাওয়ারের মারা যাওয়ার খবর শুনে খুব খারাপ লাগছে। তিনি বিশ্বমানের দুর্দান্ত একজন খেলোয়াড ছিলেন।’
জনপ্রিয় টিভি ব্যক্তিত্ব ও সাংবাদিক পিয়ার্স মর্গ্যান লিখেছেন, ‘ওপাড়ে ভালো থাকবেন ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ার। জার্মান ফুটবল কিংবদন্তি, যিনি খেলোয়াড় ও কোচ হিসেবে বিশ্বকাপজয়ী মাত্র তিন জন ব্যক্তির একজন ছিলেন। দুর্দান্ত ডিফেন্ডার, দুর্দান্ত কোচ, খেলার অসাধারণ একজন দূত।’ ইউরোপিয়ান ফুটবলের সর্বোচ্চ নিয়ন্তা সংস্থা উয়েফা লিখেছে, ‘ইউরোপিয়ান ফুটবলের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের একজন ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ার ৭৮ বছর বয়সে মারা গেছেন। “ডের কাইজার” ছিলেন অসাধারণ খেলোয়াড়, সফল কোচ এবং জনপ্রিয় ফুটবল বিশেষজ্ঞ।’ জার্মানি ও বায়ার্নের ফরোয়ার্ড টমাস মুলার লিখেছেন, ‘বায়ার্নের ইতিহাসের সেরা খেলোয়াড়দের একজন আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। শান্তিতে ঘুমান ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ার। জার্মানির ফুটবলে আপনি যা দিয়েছেন, আপনাকে কখনই ভুলব না আমরা।’
বায়ার্নের সভাপতি হের্বার্ট হাইনার বলেছেন, ‘দারুণ একজন ব্যক্তিত্ব, শ্রদ্ধাবোধ দিয়ে তিনি সবাইকে মুগ্ধ করেছিলেন। জার্মান ফুটবল তার ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্বকে হারাল। আমরা তাকে অনেক বেশি মিস করব। প্রিয় ফ্রাঞ্জ , সবকিছুর জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।’
সর্বকালের অন্যতম সেরা ফুটবলার লিওনেল মেসিও জানিয়েছেন শোক। আর্জেন্টিনাকে অধিনায়ক হিসেবে ২০২২ কাতার বিশ্বকাপ জেতানো মেসি শোক জানিয়েছেন নিজের ইনস্টাগ্রামে। জার্মানির হয়ে খেলোয়াড় হিসেবে ১৯৭৪ ও কোচ হিসেবে ১৯৯০ বিশ্বকাপ জেতা বেকেনবাওয়ারের মৃত্যুর পর ইনস্টাগ্রামে তার খেলোয়াড়ি জীবনের ছবি দিয়ে স্প্যানিশ ভাষায় লিখেছেন- ‘কিউইপিডি’। এর ইংরেজি মানে ‘আরআইপি (রেস্ট ইন পিস)’। বাংলা অর্থ-‘শান্তিতে ঘুমান’।
অনেক বছর ধরেই অসুস্থায় ভুগছিলেন বেকেনবাওয়ার। এ কারণে তাঁকে দেখা যেত না ফুটবলের কোনো অনুষ্ঠানে। কয়েক বছর ধরে তিনি সংবাদমাধ্যমের সামনেও খুব একটা আসেননি। সেই ‘কাইজারের’ মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর ইনস্টাগ্রামকেই শোক প্রকাশের জায়গা হিসেবে বেছে নিয়েছেন মেসি।
এক নজরে
নাম : ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ার
ডাকনাম : ‘দ্য কাইজার’
জন্ম : ১১ সেপ্টেম্বর ১৯৪৫
বয়স : ৭৮ বছর
জন্মস্থান : মিউনিখ
জাতীয়তা : পশ্চিম জার্মান/জার্মান
উচ্চতা : ১ মিটার ৮১ সে.মি (৫ ফিট ১১ ইঞ্চি)
স্পোর্ট : ফুটবল
পজিশন : লিবারো (রক্ষণ-আক্রমণের সংযোগ স্থাপনকারী)
মৃত্যু : ৮ জানুয়ারি ২০২৪
খেলোয়াড়ী জীবন
আন্তর্জাতিক
পশ্চিম জার্মানির : ১০৩ ম্যাচ
অধিনায়ক হিসেবে : ৫০ ম্যাচ
আন্তর্জাতিক গোল : ১৪
বিশ্বকাপ দলের সদস্য : ১৯৬৬, ১৯৭০, ১৯৭৪
অভিষেক : সুইডেন ১ : ২ পশ্চিম জার্মানী, বিশ্বকাপ বাছাই (২৬ সেপ্টেম্বর ১৯৬৫)
প্রথম গোল : নেদারল্যান্ডস ২ : ৪ পশ্চিম জার্মানি, প্রীতি ম্যাচ (২৩ মার্চ ১৯৬৬)
শেষ ম্যাচ : ফ্রান্স ১ : ০ পশ্চিম জার্মানি, প্রীতি ম্যাচ (২ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৭)
স্বীকৃতি
বিশ্বকাপ শিরোপা : ১৯৭৪
বিশ্বকাপ রানার্স-আপ : ১৯৬৬
ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়ন : ১৯৭২
ক্লাব ক্যারিয়ার
বায়ার্ন মিউনিখ (১৯৬৪-১৯৭৭)
নিউ ইয়র্ক কসমস (১৯৭৭-১৯৮০)
হামবুর্গ (১৯৮০-১৯৮২)
নিউ ইয়র্ক কসমস (১৯৮২-১৯৮৩)
ক্লাব শিরোপা
ইউরোপিয়ান কাপ (৩) : ১৯৭৪, ১৯৭৫, ১৯৭৬
ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপ : ১৯৭৬
ইউরোপিয়ান কাপ উইনার্স কাপ : ১৯৬৭
বুন্দেসলিগা (৫) : ১৯৬৯, ১৯৭২, ১৯৭৩, ১৯৭৪, ১৯৮২
জার্মান কাপ (৪) : ১৯৬৬, ১৯৬৭, ১৯৬৯, ১৯৭১
নর্থ আমেরিকান সকার লিগ (৩) : ১৯৭৭, ১৯৭৮, ১৯৮০
ব্যক্তিগত অ্যাওয়ার্ড
ব্যালন ডি’অর (২) : ১৯৭২, ১৯৭৬
জার্মান বর্ষসেরা খেলোয়াড় (৪) : ১৯৬৬, ১৯৬৮, ১৯৭৪, ১৯৭৬
ফিফা অর্ডার অব মেরিট : ১৯৮৪
কোচিং ক্যারিয়ার
জাতীয় দল : ১৯৮৪-১৯৯০, পশ্চিম জার্মানীর কোচ হিসেবে ৬৬ ম্যাচে দায়িত্ব পালন
প্রথম ম্যাচ : পশ্চিম জার্মানী ১ : ৩ আর্জেন্টিনা, প্রীতি ম্যাচ (১২ সেপ্টেম্বর ১৯৮৪)
শেষ ম্যাচ : পশ্চিম জার্মানী ১ : ০ আর্জেন্টিনা, বিশ্বকাপ ফাইনাল (৮ জুলাই ১৯৯০)
আন্তর্জাতিক শিরোপা
বিশ্বকাপ শিরোপা : ১৯৯০
বিশ্বকাপ রানার্স-আপ : ১৯৮৬
ক্লাব
মার্সেই (১৯৯০-১৯৯১)
বায়ার্ন মিউনিখ (১৯৯৩-৯৪, ১৯৯৬)
শিরোপা
উয়েফা কাপ : ১৯৬৬
বুন্দেসলিগা : ১৯৯৪
বোর্ডরুম ক্যারিয়ার
বায়ার্ন মিউনিখ, সহ-সভাপতি : ১৯৯১-১৯৯৪
বায়ান মিউনিখ, সভাপতি : ১৯৯৪-২০০৯
বায়ার্ন মিউনিখ, এ্যাডভাইজারি বোর্ডের চেয়ারম্যান : ২০০২-২০০৯
বায়ার্ন মিউনিখ, অনারারি প্রেসিডেন্ট : ২০০৯-আমৃত্যু
ফিফা, সহ-সভাপতি : ২০০৭-২০১১
জার্মান ফুটবল ফেডারেশন (ডিএফবি), সহ-সভাপতি : ১৯৯৮-২০১০
২০০৬ বিশ্বকাপ : আয়োজক কমিটির সভাপতি
ব্যক্তিগত অ্যাওয়ার্ড
কমান্ডার্স ক্রস অব মেরিট অব ফেডারেল রিপাবলিক অব জার্মানি : ২০০৬
লরিয়াস আজীবন সম্মাননা : ২০০৭
ফিফা প্রেসিডেন্টিয়াল অ্যাওয়ার্ড : ২০১২
বিভাগ : খেলাধুলা
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ভারতের কাছে হারানো ২০০ একর জমি ফেরত পাচ্ছে বাংলাদেশ
সাবেক রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন গ্রেপ্তার
যৌথ বাহিনীর অভিযানে ১৩দিনে ১৫৫ অস্ত্র উদ্ধার, গ্রেপ্তার ৭২
ইলিয়াস আলীকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবীতে বালাগঞ্জে স্বেচ্ছাসেবক দলের মিছিল
সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারীর সাথে সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের সৌজন্য সাক্ষাৎ
গুলশানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক
যশোরে ৪ দিনের বৃষ্টিপাতে নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা, বিপর্যস্ত জনজীবন
যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান টেকনাফ থেকে গ্রেপ্তার
৪ ধরনের জ্বালানি তেলের দাম কমালো পাকিস্তান
তারাকান্দায় সাবেক এমপি শরীফসহ ৫৯ আ’লীগ নেতাকর্মীর নামে মামলা
শার্শায় বাবার কোদালের আঘাতে ছেলে নিহত
গোলাপগঞ্জে ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসায়ী আটক
কিশোরগঞ্জে ঈদে মিলাদুন্নবীর র্যালিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, মসজিদ-মাজার ভাঙচুর, নিহত- ১
রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য হাবিব-বিপ্লব গংদের নির্দেশে পুলিশ নেতা সেজে বিভ্রান্ত করেছিলেন কনস্টেবল জয়
ইসলামের বিধি-বিধান প্রতিষ্ঠা হলে ইসলামের প্রকৃত সৌন্দর্য জগতবাসী দেখতে পাবে -মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম
যানজটের সমাধান খুঁজতে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশ
মহানবী (সঃ) এর আদর্শ অনুসরণ করা হলে কোন রাষ্ট্র প্রধানকে পালাতে হবেনা-মিলাদুন্নবী (সঃ) এর আলোচনা সভায় বক্তারা
মসজিদ-মাদরাসা কমিটি থেকে ফ্যাসিবাদের সুবিধাভোগীদের বিতাড়িত করতে হবে: আজিজুল হক ইসলামাবাদী
প্রশাসক হতে চান শিক্ষকরা, ঠেকাতে একাট্টা ৪ সংগঠন
বাংলাদেশের এই দলকে সেরা বললেন হার্শা