সাফ অনুর্ধ্ব-১৯ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে অপরাজিত বাংলাদেশের সামনে পড়েছে সেই ভারতই। লিগ পর্বে যাদেরকে ১-০ গোলে হারিয়ে ফাইনালে টিকিট কাটে লাল-সবুজরা। কমলাপুরস্থ বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে আজ সন্ধ্যা ৬টায় শুরু হবে বাংলাদেশ-ভারত শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচটি। লিগ পর্বে হারালেও ফাইনালে ভারতকে সমীহই করছে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ। তবে ম্যাচে নিজেদের সর্বোচ্চটা দিয়েই শিরোপা ধরে রাখতে চায় স্বাগতিকরা। ফাইনালের আগে গতকাল এমনটাই জানান বাংলাদেশ দলের প্রধান কোচ সাইফুল বারী টিটু। টুর্নামেন্টের আগের আসরটি হয়েছিল অনুর্ধ্ব-২০ পর্যায়ে। সেই আসরের ফাইনালে নেপালকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বাংলাদেশ। ভারত ওই আসরে অংশ নিলেও প্রথম পর্ব টপকাতে পারেনি। তবে এবারের চিত্র ভিন্ন। নেপালই এবার বিদায় নিয়েছে লিগ পর্ব থেকে। ভারত এসেছে ফাইনালে। যাদের দলে আছে চারজন অনুর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপে খেলা ফুটবলার।
টুর্নামেন্টে এবার রাউন্ড রবিন লিগ পদ্ধতিতে অংশ নিয়েছে চার দল। এর মধ্যে ভুটান সব থেকে খারাপ ফলাফল করে। তিন ম্যাচ খেলে একটিতেও জয় কিংবা ড্র পায়নি তারা। ভারত নিজেদের প্রথম ম্যাচে ভুটানকে ১০-০ গোলে উড়িয়ে দিয়ে টুর্নামেন্ট শুরু করেছিল। পরের ম্যাচে তারা প্রতিপক্ষ হিসেবে পায় বাংলাদেশকে। স্বাগতিকদের সঙ্গে ৯০ মিনিট লড়াই করলেও ম্যাচের যোগকরা সময়ে গোল হজম করে হেরে যায় ভারতীয়রা। আর গ্রুপের শেষ ম্যাচে নেপালকে ৪-০ গোলে উড়িয়ে দিয়ে ফাইনালে জায়গা করে নেয় ভারত। অন্যদিকে প্রথম ম্যাচে নেপালকে ৩-১ ব্যবধানে হারায় বাংলাদেশ। পরের ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে সাগরিকার একমাত্র গোলে জয় পেয়ে এক ম্যাচে হাতে রেখেই ফাইনালে উঠে স্বাগতিকরা। আর নিয়ম রক্ষার শেষ ম্যাচে ভুটানকে ৪-০ গোলে উড়িয়ে দিয়ে অপরাজিত থেকেই ফাইনালে ভারতের সঙ্গি হয় বাংলাদেশ। এবার লাল-সবুজদের মিশন শিরোপা জয়ের। বয়সভিত্তিক এই প্রতিযোগিতার গত চার আসরে তিনবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশ। ‘চারে চার’ হয়নি, ২০২২ সালে ভারতের বিপক্ষে ফাইনালে হেরে যাওয়ায়। এ দুই দল এবার ফের মুখোমুখি। যদিও কোনো কোচের কণ্ঠে প্রতিশোধের দামামা বাজছে না, কিন্তু শিরোপা লড়াইয়ের উত্তাপ তাতে কমছে না একটুও।
লিগ পর্বের দেখায় শেষ মুহূর্তের গোলে হারলেও ওই ম্যাচে আক্রমণে ছড়ি ঘুরিয়েছিল ভারতই। অনেক সুযোগ নষ্ট করার কারণেই সেদিন লক্ষ্যপূরণ হয়নি তাদের। এবার ফাইনাল নিয়ে দলটির কোচ শুক্লা দত্তের কণ্ঠে প্রতিশোধের ঝাঁঝ না থাকলেও লিগ পর্বে ওই হারের ক্ষত যে এখনও শুকায়নি, তা পরিষ্কার তার কথায়। ম্যাচের আগে কাল শুক্লা দত্ত গণমাধ্যমকে বলেন,‘প্রতিশোধের মানসিকতা আমার মধ্যে নেই। খেলতে এসেছি, খেলব। আবার বাংলাদেশের সঙ্গে দেখা হচ্ছে (ফাইনালে), সেটাই বড় ব্যাপার। আমারও ভালো লাগবে বাংলাদেশের বিপক্ষে আবারও খেলতে, একটা ম্যাচ ওদের বিপক্ষে খেলেছি (হেরেছি), দেখা যাক, ফাইনালে কী হয়?’
২০২২ সালে অনূর্ধ্ব-১৮ বছর বয়সীদের আসরে রাউন্ড রবিন লিগ ও ফাইনাল- দুই ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে একই ব্যবধানে (১-০) হেরেছিল বাংলাদেশ। সেই হারের প্রতিশোধ নেওয়ার হুঙ্কার ছাড়লেন না বাংলাদেশ কোচ টিটু,‘অতীত প্রসঙ্গ আমি আসলে খুব একটা অনুভব করি না, যেহেতু আমি ওই সময় দায়িত্বে ছিলাম না। আপনি যদি কোথাও না থাকেন, তখন আপনি ওই সময়ের উত্তাপটা অনুভব করবেন না। এটা ভিন্ন টুর্নামেন্ট, তুলনামূলক ভালো দলটিই জিতবে।’
বাংলাদেশ কোচের পরের কথাগুলো অবশ্য এতটা সাদামাটা নয়। সেখানে ভারতের প্রতি সমীহ থাকলেও তাদেরকে হারিয়ে শেষটা রাঙানোর লক্ষ্য বেশ স্পষ্ট,‘ভারতের বিপক্ষে প্রথম যে ম্যাচটা খেলেছিলাম, সেখানেই তো বুঝেছিলাম কঠিন প্রতিপক্ষ। খুবই প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ম্যাচ হয়েছিল ওটা। ফাইনালেও ভারতকে সমীহ করতে হবে। ওভাবে নিজেদের খেলাটা খেলতে হবে। ফাইনাল এমন একটা বিষয়,আপনার শরীর চলবে না, কিন্তু মন চাইবে ভালো করার। ভারত ক্লান্ত থাকলেও ওভাবেই আসবে, আমাদের ওভাবেই খেলতে হবে। ফাইনালে যে কোনো দলই জিততে পারে। যারাই চ্যাম্পিয়ন হয়, সেরা দলকে হারিয়েই চ্যাম্পিয়ন হতে হয়।’
টুর্নামেন্টের এবারের আসরে গোলের পরিসংখ্যানে ভারতের আক্রমণভাগ সবচেয়ে শক্তিশালী। তিন ম্যাচে তারা গোল করেছে ১৪টি, হজম করেছে মাত্র ১টি। সেখানে তিন ম্যাচে বাংলাদেশ ৮ গোল দিয়ে খেয়েছে ১টি। রাউন্ড রবিন লিগে হ্যাটট্রিক উপহার দিয়েছেন ভারতের পুজা, শিবানি দেবি। ৪ গোল নিয়ে পুজা গোলদাতার তালিকায় শীর্ষে। বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ৩ গোল করেছেন সাগরিকা। বাকি পাঁচ গোল করেছেন- ঐশি খাতুন (২টি), মুনকি আক্তার, নুসরাত জাহান মিতু ও তৃষ্ণা রানী।
সর্বশেষ ভুটানের বিপক্ষে বাংলাদেশ ৪-০ গোলে জিতেছে সাইড বেঞ্চের ৯ খেলোয়াড় দিয়ে একাদশ সাজিয়ে। তাই ফাইনালে সবাইকে সতেজ অবস্থাতেই পাচ্ছেন কোচ। টিটুর মনে হচ্ছে, অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে হলে মাঝমাঠেই ভেস্তে দিতে হবে ভারতের আক্রমণ। পাশাপাশি স্বীকৃতি পাওয়ার তাড়নার বীজও তিনি বুনে দিচ্ছেন মেয়েদের মনে, ‘ওদের আক্রমণভাগে কয়েকজন দ্রুত গতির খেলোয়াড় আছে। মাঝমাঠে ওদের পাসগুলোর জোগান নষ্ট করে দিতে হবে। তবে ফুটবল মজার খেলা (ফানি গেম)। অনেক কিছুই এখানে হতে পারে। কিন্তু শিরোপা যেন আমাদের হাতছাড়া না হয়, আমাদের তো এটার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টাই থাকবে। আপনারা জানেন, মেয়েদের স্বীকৃতিরও একটা ব্যাপার আছে। চ্যাম্পিয়ন হলেই ভালো স্বীকৃতি পায় তারা, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও স্বীকৃতি দেন; মেয়েরা সেই সুযোগটা তো নিতে চাইবেই।’ ফাইনালের আগে কাল বিকালে বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে শেষ মুহূর্তের অনুশীলন সারেন বাংলাদেশ ও ভারতের ফুটবলাররা।