অস্তিত্ব রক্ষার জন্য লড়ছে নির্বাসিত আফগান নারী ক্রিকেট দল
১৯ এপ্রিল ২০২৩, ০১:৩৩ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ১১:০৬ পিএম
আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক জোটের সামরিক অভিযানে তালেবান সরকার পতনের ন’বছর পর প্রথমবারের মতো আফগান জাতীয় নারী ক্রিকেট দল গঠিত হয় ২০১০ সালে। শুরুর কয়েক বছর আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ড এসিবি নারীদের এই দলটিকে “তালেবানের হুমকির” কারণে আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে খেলতে দিত না।
কিন্তু আফগান পুরুষ ক্রিকেট দলের জনপ্রিয়তা ও শক্তি বৃদ্ধির সাথে সাথে এসিবিকে নারীদের ক্রিকেট খেলাকেও গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া শুরু করতে হলো। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল আইসিসির শর্ত অনুসারে তার পূর্ণ সদস্য ১২টি দেশে জাতীয় নারী ক্রিকেট দল থাকতে হবে। আফগানিস্তান ২০১৭ সালে আইসিসির পূর্ণ সদস্যপদ লাভ করে। একারণে ২০২০ সালের নভেম্বর মাসে কর্তৃপক্ষ আফগান জাতীয় নারী ক্রিকেট দলের ২৫ জন খেলোয়াড়ের নাম ঘোষণা করে।
কিন্তু এর এক বছরেরও কম সময়ে মধ্যে তালেবান ক্ষমতায় ফিরে এলে নারী ক্রিকেটারসহ সারা দেশের নারীদের স্বপ্ন ধ্বংস হয়ে যায়। তালেবান সরকার বিশ্ববিদ্যালয়, পার্ক এবং খেলাধুলায় নারীদের নিষিদ্ধ করেছে। নারী অ্যাথলিটদের খোঁজে তারা বাড়িতে বাড়িতে চালিয়েছে তল্লাশি অভিযানও। আফগান নারী ক্রিকেট দলের ২০ জনেরও বেশি সদস্য আফগানিস্তান থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর তারা এখন অস্ট্রেলিয়ায় বসবাস করছেন।
তাদের মধ্যে আরো একজন ১৭ বয়সী বোলার আয়শা ইউসুফযাই। তালেবানের বসানো তল্লাশি-চৌকিগুলো পার হয়ে তিনি কিভাবে পাকিস্তানে গিয়ে পৌঁছেছিলেন তার এক ভয়াবহ বিবরণ তিনি বিবিসির কাছে তুলে ধরেছেন। ‘আমাদের মুখ ঢাকা ছিল। কারণ আমাদের এমনভাবে চলতে হতো যারা পুরুষরা আমাদের মুখ দেখতে না পারে। ফলে তারা বুঝতে পারেনি আমরা কারা। এনিয়ে আমরা ভয়ে ভয়ে ছিলাম, কিন্তু সৌভাগ্যবশত তারা আমাদের মুখ দেখাতে বলেনি,’ বলেন তিনি।
ইউসুফযাই এভাবে পাকিস্তানে পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। এর পরে অস্ট্রেলিয়ার সরকার আফগান নারী ক্রিকেট দলের অন্যান্য সদস্যদের অস্ট্রেলিয়ায় নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করে। কিন্তু তাদের কিছু বন্ধু ও পরিবারের সদস্যদের এই সৌভাগ্য হয়নি। ‘আফগানিস্তানে এখন কারোরই ভালো কিছু হচ্ছে না, বিশেষ করে নারীদের তো নয়ই। পড়াশোনা করা, কাজ করা এমনকি পুরুষ সঙ্গী ছাড়া তাদের ভ্রমণ করারও অধিকার নেই,’ বলেন তিনি।
ইউসুফযাই এবং সাপান এখন অস্ট্রেলিয়ায় বাস করছেন। নতুন জীবনের সঙ্গে তারা নিজেদের মানিয়ে নিয়েছেন। তারা দুজনেই সেখানে লেখাপড়া করছেন। আফগানিস্তানের তুলনায় তারা এখন যে স্বাধীনতা ভোগ করছেন তার জন্য তারা বেশ খুশি। ‘অস্ট্রেলিয়ায় থেকে মনে হচ্ছে আমরা সত্যিকার অর্থেই বেঁচে আছি। আমরা যখন আফগানিস্তানে ছিলাম, মনে হতো যে আমাদের শুধু অস্তিত্ব আছে,’ বলেন সাপান, ‘এখন আমি আমার ভবিষ্যতের ব্যাপারে আশা করতে পারি, আগামিকাল নিয়ে আশা করতে পারি। আমি আশা করতে পারি যে আমার স্বপ্ন একদিন বাস্তব হবে।’
তাদের এই নতুন জীবনের জন্য তারা অস্ট্রেলিয়ার সরকারের কাছে কৃতজ্ঞ, তবে তারা মনে করেন যে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের পরিচালনাকারী সংস্থা আইসিসি তাদেরকে তেমন একটা সাহায্য সহযোগিতা করেনি। আফগান নারী দলের সদস্যরা বলছেন আইসিসির পক্ষ থেকে তাদের সঙ্গে এখনও কোনো যোগাযোগ করা হয়নি, যদি তারা “আফগানিস্তানে ক্রিকেট এবং আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ড এসিবির স্ট্যাটাস পর্যালোচনা করে দেখার জন্য ২০২১ সালে আফগানিস্তান ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করেছে।
আফগান নারীদের এই দলটি গত বছরের ডিসেম্বর মাসে এবিষয়ে আইসিসির কাছে চিঠি লিখে জানতে চেয়েছে। কিন্তু আইসিসি বলছে নারী দলের স্ট্যাটাস আফগান ক্রিকেট বোর্ডের বিষয়। ‘আমাদের ভবিষ্যতের ব্যাপারে তারা কী সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন সেটা আমাদের দলের কাউকে জানানো হয়নি,’ বলেন সাপান, ‘আমাদের ব্যাপারে কথা বলার জন্য তারা দুবার দুবাই গিয়েছিল, কিন্তু আমরা এখনও কিছু জানি না। আমরা ইন্টারনেট থেকেই যা কিছু জেনেছি। আমরা কেমন আছি, অথবা আমরা কী চাই এসব জানতে কেউই আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি।’
অথচ আইসিসির পূর্ণ সদস্য দেশ হিসেবে আফগানিস্তানের একটি নারী ক্রিকেট দলও থাকতে হবে। আফগান নারী দলের পক্ষ থেকে আইসিসিকে অনুরোধ করা হয়েছে তারা যেন তাদেরকে অস্ট্রেলিয়ায় একটি নারী ক্রিকেট দল হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয়, এবং আফগান ক্রিকেট বোর্ডের জন্য বরাদ্দ অর্থের কিছু অংশ তাদের কাছে পাঠায়। এবছরের মার্চ মাসে আইসিসি আফগান ক্রিকেট বোর্ডের বাজেট “উল্লেখযোগ্য পরিমাণে” বৃদ্ধি করেছে, কিন্তু নারী দলের ব্যাপারে তারা কিছু উল্লেখ করেনি।
নারী ক্রিকেট দলের প্রতি সাহায্য না থাকার কারণে তারা এখন নিয়মিত অনুশীলন করতে পারছে না। এমনকি তাদের পক্ষে আনুষ্ঠানিক কোনো ম্যাচ আয়োজন করাও সম্ভব হচ্ছে না। মানবাধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান হিউম্যান রাইটস ওয়াচের একজন পরিচালক মিঙ্কি ওয়ার্ডেন বলছেন আইসিসির এখন অস্ট্রেলিয়ায় নারীদের এই জাতীয় দলটিকে স্বীকৃতি দেওয়া প্রয়োজন। একই সাথে নারীরা যাতে আফগানিস্তানে খেলায় অংশ নিতে পারে সেজন্য চাপও তৈরি করতে হবে।
ওয়ার্ডেন মনে করেন আফগান ক্রিকেট বোর্ড যদি এটা করতে না পারে তাহলে আইসিসির উচিত হবে আফগানিস্তানের সদস্যপদ সাময়িকভাবে বাতিল করা। এরকম হলে আফগান পুরুষদের দলও কোথাও খেলতে পারবে না। ‘নিয়ম তো নিয়মই। খেলাও তো নিয়ম,’ বলেন তিনি। তালেবান বেশ ভালো করেই জানে আফগানরা এই ক্রিকেট খেলাকে কতোটা ভালোবাসে এবং সেকারণে তারা পুরুষদের টিমকে প্রকাশ্যে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে।
ওয়ার্ডেন মনে করেন আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট থেকে আফগান পুরুষ দলকে সাময়িকভাবে বাদ দেওয়ার হুমকি তালেবানের উপর “চাপ” হিসেবে কাজ করবে যাতে তারা নারীদের খেলাধুলা করার বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়। ‘আফগান নারী খেলোয়াড়দের খেলাধুলায় নিষিদ্ধ করার জন্য তালেবানকে তো এখন কোনো মূল্য দিতে হচ্ছে না,’ বলেন তিনি। তবে ইউসুফযাই এবং সাপান তারা কেউই চান না আফগান পুরুষ দল কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হোক। সূত্র: বিবিসি।
বিভাগ : খেলাধুলা
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
প্রশাসন ক্যাডার নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে
যুক্তরাজ্যে ট্রাম্পের বিশেষ দূত হিসেবে মার্ক বার্নেট নিযুক্ত
ফাইনালে ভারতের কাছে বাংলাদেশের হার
ফ্রেন্ডলি ফায়ার দুর্ঘটনায় লোহিত সাগরে মার্কিন যুদ্ধবিমান ধ্বংস
ইরানে যাত্রীবাহী বাস খাদে পড়ে নিহত ১০
বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী নারী কে, জানেন?
বাংলাদেশি রোগী পেতে সীমান্ত পর্যন্ত মেট্রো চালু করবে ভারত
হাত ফসকে আইফোন পড়ে গেল মন্দিরের দানবাক্সে, ফেরত দিতে অস্বীকৃতি
কুয়াশায় ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে একাধিক দুর্ঘটনা: নিহত ১, আহত ১৫
ঢাকার বায়ুমানে উন্নতির কোনো লক্ষণ নেই, বিপজ্জনকের কাছাকাছি
উগ্রবাদী সন্ত্রাসী 'সাদ' পন্থীদের কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে সাতক্ষীরায় মানববন্ধন
বাংলাদেশ সীমান্তে অত্যাধুনিক ড্রোন মোতায়েন ভারতের
নরসিংদীতে দুর্বৃত্তের গুলিতে ছাত্রদলকর্মী নিহত
সিনেটে প্রার্থী হতে সরে দাঁড়ালেন লারা ট্রাম্প
আমাদেরকে আর স্বৈরাচার হতে দিয়েন না : পার্থ
মার্চের মধ্যে রাষ্ট্র-সংস্কার কাজ শেষ হবে : ধর্ম উপদেষ্টা
জামালপুরে দুই ইজিবাইকের চাপায় সাংবাদিক নুরুল হকের মৃত্যু
বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী রাখাইনের সামরিক সদর দফতরের দখল নিয়েছে আরাকান আর্মি
ব্রাজিলে বাস-ট্রাক সংঘর্ষে নিহত ৩২
নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিয়োগ সিরিয়ায়