সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ নারী চ্যাম্পিয়নশিপে নেপালকে হারিয়ে শুরু চায় বাংলাদেশের মেয়েরা। চার দলের টুর্নামেন্টে নিজেদের প্রথম ম্যাচে হিমালয় কন্যাদের বিপক্ষে জয় পেয়েই ফাইনালের পথে থাকার লক্ষ্য বর্তমান চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ নারী দলের। তদের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে শিরোপা ধরে রাখা। টুর্নামেন্ট শুরুর আগে গতকাল মতিঝিলস্থ বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) ভবনের সভাকক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এমনটাই জানান স্বাগতিক অধিনায়ক আফিদা খন্দকার এবং জাতীয় নারী দলের প্রধান কোচ সাইফুল বারী টিটু। আজ থেকে রাজধানীর কমলাপুরস্থ বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে শুরু হচ্ছে সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের খেলা। উদ্বোধনী দিনের দ্বিতীয় ম্যাচে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ নেপাল। খেলা শুরু হবে সন্ধ্যা ৭টায়। এর আগে বেলা ৩টায় উদ্বোধনী ম্যাচে ভুটানের বিপক্ষে মাঠে নামবে শক্তিশালী ভারত।
বয়সভিত্তিক নারী সাফে অংশ নেয়া চার দলের কোচের মধ্যে বাংলাদেশের সাইফুল বারী টিটুই সবচেয়ে বেশি অভিজ্ঞ। তিনি জাতীয় দলের তারকা ফুটবলার ছিলেন। খেলা ছাড়ার পর থেকেই কোচিং পেশার সঙ্গে যুক্ত। কখনো ক্লাবে কখনো জাতীয় দলে কোচিং করিয়েছেন টিটু। তিনি জাতীয় পুরুষ ফুটবল দলের কোচ ছিলেন একাধিকবার। নারী ফুটবলেও সিনিয়র দলের কোচ তিনি। এবার দায়িত্ব পেয়েছেন জুনিয়র টুর্নামেন্টে। এই টুর্নামেন্টে অন্য তিন প্রতিপক্ষ কোচের অভিজ্ঞতা তার ধারের কাছেও নেই। ফুটবলাররা মাঠে খেললেও কোচরা ডাগ আউট থেকে খেলা পরিবর্তনে সব সময়ই ভূমিকা রাখেন। কোচদের সেই খেলায় বাংলাদেশের কোচ খানিকটা এগিয়ে থাকলেও মাঠের লড়াইয়ে অন্য দলগুলোর চেয়ে আফিদা খন্দকাররা এগিয়ে থাকবেন কিনা? সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে সাইফুল বারী টিটু বলেন,‘হ্যা এটা ঠিক। খেলোয়াড় পরিবর্তন, ম্যাচের অবস্থা বুঝে কৌশল নির্ধারণে কোচের ভূমিকা থাকে। হয়তো আমার অভিজ্ঞতা এখানে কাজে লাগতে পারে। তবে কাজটা মূলত ফুটবলারদের। তাদের খেলার উপরই নির্ভর করে কোচ সফল হবেন কিনা।’
এই টুর্নামেন্টের গত আসরে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বাংলাদেশ দল। সেই আসরে বাংলাদেশকে চ্যাম্পিয়ন করিয়েছিলেন তারকা কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন। তবে বাফুফের সঙ্গে মনোমালিন্য হওয়ায় ছোটন দায়িত্ব ছেড়েছেন বেশ কিছুদিন আগে। এরপর থেকে অর্ন্তবর্তীকালীন হিসেবে কাজ করছেন সাইফুল বারী টিটু। সিনিয়র নারী দলের পর এখন জুনিয়র দলের কোচ তিনি। এই টুর্নামেন্ট শিরোপা ধরে রাখা চ্যালেঞ্জ কিনা এই প্রসঙ্গে টিটু বলেন,‘চ্যালেঞ্জের কিছু নেই। আমরা এ দেশের নাগরিক সে হিসেবে আমাদের দেশকে কিছু দেয়া উচিত। আমরা রোহিঙ্গা না। দেশ আমাদের থাকতে দিয়েছে। দেশকে আমাদের কিছু দিতে হবে। এটা খেলোয়াড়দের মনে রাখলেই হবে।’ তিনি যোগ করেন,‘নিজেদের প্রথম ম্যাচে নেপালকে হারিয়ে ভালো শুরু চাই আমরা। আমাদের প্রধান লক্ষ্যই হচ্ছে শিরোপা ধরে রাখা। আমরা ধারণা মেয়েরা মাঠে নিজেদের সেরাটা ঢেলে দিতে পারলে ম্যাচ বাই ম্যাচ জয় পাওয়ার পাশাপাশি শিরোপাটা জিততে পারবে। আমি বিশ্বাস করি টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মতো দল আমাদের। বাকিটা ফুটবলাররা মাঠে দেখাবে।’ বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ নারী দলের অধিনায়ক আফিদা খন্দকার তিন দিন আগের সংবাদ সম্মেলনের কথাই পুনরাবৃত্তি করেন। তিনি বলেন,‘প্রথম ম্যাচটি গুরুত্বপূর্ণ। নেপালের বিপক্ষে জিতে আমরা ফাইনালের পথে থাকতে চাই।’ আফিদা আরও বলেন,‘ভালো শুরুর পর ম্যাচ বাই ম্যাচ জিতে ফাইনালে খেলাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য। ফাইনালে খেলে শিরোপা ঘরে তুলতে চাই আমরা। এমন সাফল্য পেতে হলে মাঠে অবশ্যই আমাদের ভালো ফুটবল খেলতে হবে। পাশাপাশি দেশবাসীর দোয়াও লাগবে। সবাইকে বলবো উনারা যেন আমাদের জন্য দোয়া করেন। যাতে আমরা টুর্নামেন্টে সাফল্য পেয়ে দেশের মুখ উজ্জ্বল করতে পারি।’
বাংলাদেশের নারী ফুটবলাররা সাধারণত বাফুফে ভবনে থেকেই আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলে থাকেন। সাফ, এএফসি অর্থ দিলেও এতোদিন বাফুফে ফুটবলারদের ভবনেই রাখত। এবার নারী ফুটবলারদের অন্য দলগুলোর সঙ্গে হোটেলে থাকার ব্যবস্থা করেছেন বাফুফে কর্তারা। যদিও তারা আগে বলতেন,‘নারী ফুটবলাররা হোটেলের পরিবর্তে বাফুফে ভবনেই থাকতেই বেশী স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে।’ সেই ভবন ছেড়ে এখন পাঁচ তারকা হোটেলে থাকা নিয়ে অধিনায়ক আফিদা বললেন,‘আমরা এখানেও ভালো রয়েছি। সব দল একসঙ্গে রয়েছি। সময় ভালোই কাটছে।’
আজকের ম্যাচের পর বাংলাদেশ দল নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে খেলবে রোববার সন্ধ্যায়। ৬ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় লিগ পর্বের শেষ ম্যাচে ভুটানকে মোকাবেলা করবে বাংলাদেশ। একই ভেন্যুতে লিগ পর্বের শীর্ষ দুই দল নিয়ে টুর্নামেন্টের ফাইনাল অনুষ্ঠিত হবে আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা ৬ টায়।