দীর্ঘ প্রায় তিন মাস পর মতিঝিলস্থ বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) ভবনে পা রাখেন সভাপতি কাজী মো. সালাউদ্দিন। গতকাল বেলা ২টার কিছু সময় আগে বাফুফে ভবনে পৌঁছান তিনি। সভাপতির আগমন উপলক্ষে বাফুফের নির্বাহী কমিটির কয়েকজন কর্মকর্তাও এসেছিলেন এসময়। ঘণ্টাখানেক নিজ কক্ষে কর্মকর্তাদের সঙ্গে দাপ্তরিক আলাপ সেরে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হন সালাউদ্দিন। এসময় সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেওয়ার পাশাপাশি একপর্যায়ে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রী এবং বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের প্রশংসাও করেন বাফুফের সভাপতি। ৮৭ দিন পর জনসম্মুখে এলেন দেশের কিংবদন্তি ফুটবলার কাজী সালাউদ্দিন। গত ১৬ বছর ধরে তার পরিচয় বাফুফের সভাপতি হলেও দেশের অধিকাংশ ফুটবলপ্রেমীদের হৃদয়ে এখনও সালাউদ্দিন তারকা ফুটবলার হয়ে রয়েছেন। ওপেন হার্ট সার্জারির ধকল অনেকটাই কাটিয়ে উঠেছেন তিনি। ফলে বাহ্যিকভাবেও তাকে বেশ সুস্থ দেখা গেছে কাল। বিগত সময়ের তুলনায় গলার শুষ্কতা একটু বেশি বোধ হয়েছে। এছাড়া তেমন বাড়তি কোনো বিষয় পরিলক্ষিত হয়নি। নিজের শারীরিক পরিস্থিতি, ফুটবলীয় কর্মকা-ের ব্যাপারে সাধারণ আলোচনার পর ওঠে আসে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রী নাজমুল হাসান পাপন প্রসঙ্গটি। বাফুফে সভাপতির অসুস্থকালীন সময়ে নতুন মন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়ে পাপন গিয়েছিলেন সালাউদ্দিনের বাসায় তার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত করতে। ওই সাক্ষাতের পর যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রী নাজমুল হাসান পাপন বলছিলেন, ‘দীর্ঘদিনের সম্পর্ক একদিনে নষ্ট হওয়ার নয়।’ পাপন অকপটে বলেছিলেন তিনিও খেলোয়াড় সালাউদ্দিনের ভক্ত। তার খেলা দেখতেই স্টেডিয়ামে ছুটে যেতেন। অসুস্থ থাকায় তখন পাপনের কথায় সালাউদ্দিনের কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে কাল বাফুফে ভবনে এসে সালাউদ্দিনও পাপনের প্রসঙ্গে একই কথা বললেন,‘আমাদের অনেক দিনের সম্পর্ক। আজ-কালের নয়। পারিবারিক সম্পর্ক।’
২০২৩ সালের এপ্রিলে অলিম্পিক বাছাই খেলতে মিয়ানমারে জাতীয় নারী দল পাঠায়নি বাফুফে। সেই সময় বাফুফে ও বিসিবি সভাপতি তর্কে লিপ্ত হয়েছিলেন। এতে পুরো ক্রীড়াঙ্গনে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়। এই বিষয়ে সালাউদ্দিন পরোক্ষ বক্তব্যকেই সামনে এনেছেন, ‘যা হয়েছে সেটা সাম ফরেন ইনভলমেন্ট। এক জায়গার কথা আরেক জায়গায়। আমাদের মধ্যে কিছুই হয়নি। হওয়ার স্কোপও (সুযোগ) নেই।’
পাপন সালাউদ্দিনের সঙ্গে সাক্ষাতের পর অনেক প্রশংসাই করেছেন। এটা সালাউদ্দিনের প্রত্যাশিতই ছিল, ‘আমাদের মধ্যে খুব সৌহাদ্যপূর্ণ কথা হয়েছে। পাপন এরকম স্ট্যাটমেন্ট দেবে, সেটা প্রত্যাশিতই ছিল। আমার কাছেও পাপনের একই প্রত্যাশা।’
বিসিবি সভাপতি হলেও পাপন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রী হয়েছেন। ক্রীড়া মন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়ে দেশের ফুটবল উন্নয়নে কাজ করার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন তিনি। পাপনের মন্তব্য সম্পর্কে সালাউদ্দিন বলেন, ‘পাপন খুব শিক্ষিত ছেলে। ও যেটা বলেছে সেটা সঠিক। যেখানে ২১১ দেশ যুদ্ধ করে। যা অন্য কোনো খেলায় পাবেন না।’
সাম্প্রতিক সময়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ফুটবলার হামজা চৌধুরীর বাংলাদেশের জার্সিতে খেলার আগ্রহ প্রকাশ এবং বাফুফে থেকে তাকে পাওয়ার প্রক্রিয়া শুরুর বিষয় নিয়ে। হামজা এবং প্রবাসী ফুটবলার নিয়ে বাফুফে সভাপতির ভাবনা কি জানতে চাইলে কাজী সালাউদ্দিন বলেন, ‘প্রবাসী ফুটবলার আর হামজা চৌধুরীর বিষয়টা এক নয়। হামজার খেলার বিষয়টি পুরোপুরি নির্ভর করছে তার ক্লাবের সিদ্ধান্তের ওপর। আমাদের অফিস তার সঙ্গে যোগাযোগ করছে। বাংলাদেশের জার্সিতে তার খেলতে হলে অনেক বিষয় আছে। হামজা খেলতে চাইলেই হবে না। সে খেলতে চাইলে তাকে অবশ্যই তার ক্লাবের অনুমতি নিতে হবে। তারপর হামজার চাহিদা কেমন সেটাও তো দেখতে হবে। আসলে এখানে অনেক কিছু আছে। হামজা খেলতে চাইলে কেন নেব না। আমরা তাকে সেধেই নেবো।’