ঢাকা   শুক্রবার, ০৩ জানুয়ারি ২০২৫ | ১৯ পৌষ ১৪৩১
লজ্জার হারে হোয়াইটওয়াশ

অবশেষে শান্তও বুঝলেন, ‘এভাবে আর চলে না’

Daily Inqilab ইমরান মাহমুদ

০১ নভেম্বর ২০২৪, ১২:১৫ এএম | আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০২৪, ১২:১৫ এএম

শঙ্কাটা আগের দিনই জেগেছিল। তবে চট্টগ্রামের রানপ্রসবা জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম বলেই কিছুটা লড়াইয়ের আশায় বুক বেধেছিল ক্রিকেটপ্রেমীরা। তবে তাদের হতাশা উপহার দিয়ে প্রথম ইনিংসের মতো দ্বিতীয় ইনিংসেও ভয়াবহ ব্যাটিং ব্যর্থতায় অল্পতে গুটিয়ে গেল বাংলাদেশ। একদিনে ১৬ উইকেট হারিয়ে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হোয়াইটওয়াশ হলো তারা। গতকাল চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় টেস্টের ফয়সালা হয়েছে তৃতীয় দিনেই। যে পিচে প্রোটিয়ারা ৬ উইকেটে ৫৭৫ রান তুলে প্রথম ইনিংস ঘোষণা করেছিল, সেই একই পিচে দুই ইনিংসেই বাংলাদেশের ব্যাটিং ছিল ভীষণ হতাশাজনক। প্রথম ইনিংসে ১৫৯ রানে অলআউট হওয়ার পর ফলো-অনে নেমে দ্বিতীয় ইনিংসে টাইগাররা থামে ১৪৩ রানে।
দুঃস্বপ্নের মতো পারফরম্যান্স দেখিয়ে ইনিংস ও ২৭৩ রানে হেরেছে বাংলাদেশ। নিজেদের টেস্ট ইতিহাসে এটি তাদের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যবধানে পরাজয়। ২০০২ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ঢাকার বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে ইনিংস ও ৩১০ রানে পরাস্ত হয়েছিল তারা। সেই রেকর্ড ২২ বছর ধরে টিকে আছে। অন্যদিকে, দক্ষিণ আফ্রিকা পেল নিজেদের টেস্ট ইতিহাসের সবচেয়ে বড় জয়ের স্বাদ। তাদের আগের কীর্তিটিও ছিল বাংলাদেশের বিপক্ষে। ২০১৭ সালে ব্লুমফন্টেইনে ইনিংস ও ২৫৪ রানের ব্যবধানে জিতেছিল তারা। প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের ¯্রফে তিন ব্যাটার পৌঁছেছিলেন দুই অঙ্কে। দ্বিতীয় ইনিংসে সেই সংখ্যা একটি বাড়লেও শান্ত হোসেন শান্তর দলের সংগ্রহ উল্টো আরও কমে যায়। প্রতিরোধ কিংবা প্রতিদ্বন্দ্বিতার কোনো ঝাঁজই দেখাতে পারেননি স্বাগতিক ব্যাটাররা।
আগের দিনের ৪ উইকেটে ৩৮ রান নিয়ে এদিন নেমে ১৫৯ করে থামে বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস। এরপর ফলোঅনে পড়ে ফের ব্যাটিংয়ে নেমে চা বিরতির আগেই ৪ উইকেট হারিয়ে ফেলে তারা। এমন বিপর্যয় থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য প্রয়োজন ছিল একাধিক ব্যাটারের বড় ইনিংস খেলার। কিন্তু কেউই দায়িত্ব নিতে পারেননি। ম্যাচ শেষে দলের প্রতিনিধি হয়ে এদিন সংবাদ সম্মেলনে এসেছিলেন ‘অনেক আরাধ্য’ অধিনায়ক শান্ত। তিন দিনেই এত বড় হারের মূল কারণ ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতা, অকপটে স্বীকার করে নিয়েছেন তিনিও, ‘এটা তো অবশ্যই খুবই হতাশাজনক। এগুলো থেকে বোঝা যায় আমাদের কত উন্নতির জায়গা আছে। পাকিস্তানে ভালো ক্রিকেট খেলেই জিতেছি। মাঠে, মাঠের বাইরে অনেকগুলো জায়গা আছে, যেখানে আমাদের উন্নতি করতে হবে।’
মাঝে পাকিস্তান সিরিজটি বাদ দিলে টেস্টে এমন লজ্জার ঘটনা খুব একটা বিরল নয় দেশের ক্রিকেটে। বিদেশের মাটিতে তো বটেই, ইদানিং দেশের মাঠেও নিজেদের খুঁজে ফিরছেন বাংলাদেশের ব্যাটাররা। শান্তও চিন্তিত সেই অধারাবাহিকতা দেখে, ‘লম্বা সময় ধরেই এ রকম হচ্ছে। টেস্টে টপ অর্ডার থেকে যদি জুটি না হয়, তাহলে পরের ব্যাটসম্যানদের জন্য খুবই কঠিন। ওপরে যারা ব্যাটিং করে, তারা কী চিন্তা করে বা কী ধরনের প্রস্তুতি নেয়, আমি জানি না। তবে এভাবে চলতে থাকলে এ রকম ফলাফলই হবে।’ বাংরাদেশ অধিনায়কের দৃষ্টিতে সমস্যাটা ক্রিকেটারদের দক্ষতা এবং মানসিকতা- দুই জায়গাতেই, ‘দক্ষতার অনেক জায়গা আছে, যেখানে উন্নতি করতে হবে। পাশাপাশি চিন্তাভাবনাতেও পরিবর্তন আনতে হবে। কোন জায়গায় উন্নতি দরকার, এটা খুঁজে বের করতে হবে।’ মাঠের বাইরের বিতর্ক নিয়ে বলেছেন, ‘এগুলো প্রভাব ফেলতে পারে। তার মানে এই নয় যে এত খারাপ খেলব, এক শ’-দেড় শ’ রানে অলআউট হয়ে যাব। খেলোয়াড়দের এই জিনিসগুলোও মানিয়ে নিতে হবে।’
এই টেস্টেই তাইজুল প্রথম ইনিংসে ৫ উইকেট নিয়েছেন, মুমিনুল ৮২ রানের ইনিংস খেলেছেন। অধিনায়কের আক্ষেপ, তাঁদেরকে কেউ সমর্থন দিতে পারেননি। তাই দলীয়ভাবে ভালো করাটাকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন তিনি, ‘তিন-চারজন আমরা ওপরে ব্যাট করি, এখানে একটা জুটি হলেও দলের সাহায্য হয়। পাকিস্তানেও ২৬ রানে ৬ উইকেট চলে গিয়েছিল। ম্যাচ জিতেছি, কিন্তু ওপরের ব্যাটসম্যানরা ভালো করেনি। দলগতভাবে ভালো করা জরুরি। বিশেষ করে টপ অর্ডারের। তাহলে দল নিয়মিত ভালো করবে।’
হতে পারে অধিনায়ক হিসেবে এটাই শান্তর শেষ ম্যাচ। আবার তা না-ও হতে পারে। কী হবে, তা জেনে যাওয়ার কথা গতকাল রাতের মধ্যেই। বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ কথা বলবেন শান্তর সঙ্গে। এরপরই আসবে সিদ্ধান্ত। সংবাদ সম্মেলনে তাই এ নিয়ে কোনো প্রশ্নের উত্তর দেননি শান্ত। তবে বলেছেন, অধিনায়কত্ব তার ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সে কোনো নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে না, ‘ব্যাটিংয়ের সময় আমার কাছে একবারও মনে হয়নি আমি অধিনায়ক। অধিনায়ক বলে সব আমাকে একা করতে হবে, এমন নয়। আমি বল দেখি ব্যাটিং করি, ব্যাটিং উপভোগ করি। এখন পর্যন্ত চাপ হয়নি, আলহামদুলিল্লাহ।’ শুধু তা-ই নয়, অধিনায়কত্বটা নাকি উপভোগই করছেন শান্ত, ‘বয়সভিত্তিক ক্রিকেট থেকেই অনেক জায়গায় বলে আসছি, অধিনায়কত্ব আমি সব সময় উপভোগ করি। গত কয়েকটা সিরিজও মাঠের ভেতরে আমি উপভোগ করেছি। এটা সব সময়ই আমার ভালো লাগার জায়গা।’
পাকিস্তানের মাটিতে তাদেরকে হোয়াইটওয়াশ করার কীর্তির পর এই নিয়ে টানা দুটি টেস্ট সিরিজে ধরাশায়ী হলো বাংলাদেশ। ভারতের মাটিতে বিধ্বস্ত হওয়ার পর এবার দেশের মাটিতে অনভিজ্ঞ দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে উড়ে গেল তারা। সত্যিই, এবাবে চলে না। চলতে পারে না।


বিভাগ : খেলাধুলা


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

৭ উইকেট ছেলেকে দিলেন তাসকিন
তারকাখচিত বরিশালকে উড়িয়ে রংপুরের তিনে তিন
টিভিতে দেখুন
বগুড়ায় জুলাই আন্দোলনে শহীদ রনি ফুটবল টুর্নামেন্ট
ফারুক আহমেদের সঙ্গে মাহফুজের দুর্ব্যবহার!
আরও

আরও পড়ুন

ইসরায়েলি বিমান হামলায় গাজায় নিহত আরও ৭১ ফিলিস্তিনি

ইসরায়েলি বিমান হামলায় গাজায় নিহত আরও ৭১ ফিলিস্তিনি

ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবে দাবি আদায়ে তুমুল যুদ্ধ: অবশেষে সংস্কারের আশ্বাস দিলেন এডিএম

ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবে দাবি আদায়ে তুমুল যুদ্ধ: অবশেষে সংস্কারের আশ্বাস দিলেন এডিএম

সীতাকুণ্ডে হাত-পায়ের রগ কেটে শ্রমিক দল নেতাকে হত্যা

সীতাকুণ্ডে হাত-পায়ের রগ কেটে শ্রমিক দল নেতাকে হত্যা

আমরা একটি কল্যাণকর রাষ্ট্র গঠনের দিকে এগিয়ে যেতে চাই: হাসনাত আবদুল্লাহ

আমরা একটি কল্যাণকর রাষ্ট্র গঠনের দিকে এগিয়ে যেতে চাই: হাসনাত আবদুল্লাহ

যুবদল কর্মী হত্যার ঘটনায় ছাত্রশিবিরকে জড়িয়ে মিথ্যাচার ও শিবির সভাপতির উপর বর্বরোচিত হামলার প্রতিবাদ

যুবদল কর্মী হত্যার ঘটনায় ছাত্রশিবিরকে জড়িয়ে মিথ্যাচার ও শিবির সভাপতির উপর বর্বরোচিত হামলার প্রতিবাদ

এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ

এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ

টাঙ্গাইলে ইসলামি ছাত্র আন্দোলনের বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত

টাঙ্গাইলে ইসলামি ছাত্র আন্দোলনের বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত

শিক্ষা ও গবেষণায় তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার

শিক্ষা ও গবেষণায় তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার

মানুষের দুর্দশা মোচনে সরকারকে মনোযোগ দিতে হবে

মানুষের দুর্দশা মোচনে সরকারকে মনোযোগ দিতে হবে

সেনাবাহিনী ক্ষমতার বিকল্প সত্তা নয়

সেনাবাহিনী ক্ষমতার বিকল্প সত্তা নয়

লিভ টুগেদার ইস্যুতে এবার স্বাগতাকে উকিল নোটিশ

লিভ টুগেদার ইস্যুতে এবার স্বাগতাকে উকিল নোটিশ

ফিলিস্তিনের সমর্থনে ইস্তাম্বুলে লাখ লাখ মানুষের সমাবেশ

ফিলিস্তিনের সমর্থনে ইস্তাম্বুলে লাখ লাখ মানুষের সমাবেশ

ব্যাপক গোলাগুলিতে নিউইয়র্কে আহত ১০

ব্যাপক গোলাগুলিতে নিউইয়র্কে আহত ১০

গাজায় জনসংখ্যা কমেছে ৬ শতাংশ

গাজায় জনসংখ্যা কমেছে ৬ শতাংশ

আইএসের পতাকা উড়িয়ে হামলা, নিহত বেড়ে ১৫

আইএসের পতাকা উড়িয়ে হামলা, নিহত বেড়ে ১৫

নোয়াখালীতে কৃষি জমির মাটি কাটায় ৫০ হাজার টাকা জরিমানা

নোয়াখালীতে কৃষি জমির মাটি কাটায় ৫০ হাজার টাকা জরিমানা

ইসরাইলি পার্লামেন্ট থেকে পদত্যাগ করলেন ইয়োভ গ্যালান্ট

ইসরাইলি পার্লামেন্ট থেকে পদত্যাগ করলেন ইয়োভ গ্যালান্ট

ঝিনাইদহে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় তিনজন নিহত

ঝিনাইদহে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় তিনজন নিহত

আশা জাগানিয়া প্রত্যাশা করা বড়ই কঠিন : গুতেরেস

আশা জাগানিয়া প্রত্যাশা করা বড়ই কঠিন : গুতেরেস

মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে নববর্ষ উদযাপন অনুষ্ঠানে উন

মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে নববর্ষ উদযাপন অনুষ্ঠানে উন