পুঁজিবাদী অর্থনীতি ও একচ্ছত্র রাজনীতির বিকল্পের কথা ভাবতে হবে
২১ মার্চ ২০২৩, ০৮:৫২ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ১০:৪১ এএম
পশ্চিমা পুুঁজিবাদের কর্পোরেট দুর্গগুলো যেন তাসের ঘরের মত ভেঙ্গে পড়তে শুরু করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের মূলধারার প্রধান ব্যাংকগুলো হঠাৎ করেই দেউলিয়াত্বের শিকার হচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম বৃহৎ ব্যাংক (এসভিবি) সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক হঠাৎ গুজবের শিকার হলে গ্রাহকরা ২৪ ঘন্টার মধ্যে তাদের আমানতের হাজার হাজার কোটি ডলার তুলে নেয়ার পর কর্তৃপক্ষ কার্যত ব্যাংকটি বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়। এর প্রভাব পড়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপের অন্যান্য কমার্সিয়াল ব্যাংকগুলোতে। ইউরোপের অন্যতম বৃহৎ ব্যাংকিং সিস্টেম ক্রেডিট সুইস ব্যাংকও অনুরূপ অবস্থার সম্মুখীন হয়ে অচলাবস্থার সম্মুখীন হয়েছে। সুইস ন্যাশনাল ব্যাংক থেকে ৫০ বিলিয়ন ডলার বেইলআউট পুঁজি নিয়ে ব্যাংকটি তার অস্তিত্ব রক্ষার শেষ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বহুজাতিক বাণিজ্যিক কোম্পানির দুর্নীতি, অস্বচ্ছতা ও সম্পদের অস্তিত্বহীন কাঠামোর উপর ভিত্তি করে কর্পোরেট সা¤্রাজ্যবাদের যে ভীত গড়ে উঠেছিল তা এখন অনেকটা নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে। জায়ান্ট ব্যাংকগুলোর পাশাপাশি প্রথম সারির কপোর্রেট কোম্পানিগুলোতেও নজিরবিহীন অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। বিশ্বের শীর্ষ তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানি গুগল একদিনে শত বিলিয়ন ডলার ক্ষতির সম্মুখীন হয়। চ্যাট জিপিটি’র আর্টিফিসিয়াল ইন্টিলিজেন্সের সাথে টেক্কা দিতে গুগল তাদের অনুরূপ এআই চ্যাটবট অ্যাপ উদ্যোগের শুরুতে একটি ভুল তথ্যের কারণে একশ’ বিলিয়ন ডলার ক্ষতির সম্মুখীন হয় গুগল। ভারতের বিজেপি সরকারের অন্যতম কর্পোরেট পৃষ্ঠপোষক আদানির দুর্নীতি, অস্বচ্ছতার ফিরিস্তি তুলে ধরে একটি মার্কিন গবেষণা প্রতিষ্ঠান হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর শত শত কোটি ডলারের পুঁজি হারিয়ে কোম্পানিটির বৈশ্বিক অবস্থান অস্বাভাবিক নিচে নেমে যায়। ফোর্বস তালিকা অনুসারে বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ধনী গৌতম আদানির ব্যক্তিগত সম্পদ রাতারাতি অর্ধেকে নেমে আসে। অস্বচ্ছ-অনৈতিক পন্থায় গড়ে ওঠা পুঁজিবাদি বিশ্বব্যবস্থায় একেকটি কর্পোরেট টাইকুন প্রতিষ্ঠান যেভাবে হাওয়াই মিঠাইর মত ফুলে-ফেঁপে রাতারাতি আকাশ ছুঁয়ে যায়, ঠিক একইভাবে সামান্য ভুল, গুজব কিংবা ভেতরকার আসল চেহারা বেরিয়ে আসলে তাসের ঘরের মত ভেে ঙ্গ পড়তেও সময় লাগেনা। গুগল, আদানি, সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক, সিগনেচার ব্যাংক, ক্রেডিট সুইসের মত বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় কর্পোরেট আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর পাশাপাশি তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর জাতীয় অর্থনীতিও ভয়াবহ হুমকির মুখে এসে দাঁড়িয়েছে। গত বছরের শেষদিকে জাতিসংঘের বিশ্ব উন্নয়ন বিষয়ক প্রধান অ্যাসিম স্টেইনার জানিয়েছিলেন, ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি, জ্বালানি সংকটের মধ্যে ব্যাংক ঋণে সুদের হার বৃদ্ধি ও সুদ পরিশোধে ব্যর্থতার কারণে অন্তত ৫৪টি দেশ অর্থনৈতিক দেউলিয়াত্বের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে। শিল্পোন্নত বিশ্ব তাদের পাশে প্রয়োজনীয় সহায়তার হাত বাড়িয়ে না দিলে অনেক দেশই শ্রীলঙ্কার মত অবস্থার সম্মুখীন হতে পারে বলে স্টেইনার উল্লেখ করেছিলেন।
হাজার হাজার বছর ধরে বিশ্ব সভ্যতায় বিভিন্ন দেশ ও সা¤্রাজ্যের উত্থান-পতনেরন ইতিহাস রয়েছে। সাধারণত ক্ষমতার লড়াই, সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক আধিপত্য, যুদ্ধ-বিগ্রহের মধ্য দিয়ে একেকটি সা¤্রাজ্য দুর্বল হয়ে পতনের শেষপ্রান্তে পৌছে যেতে দেখা গেছে। কিন্তু চলমান বিশ্বব্যবস্থায় রাষ্ট্রীয় ও রাজনৈতিক পতনের মূল ভোমরাটি রক্ষিত থাকে অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ও সক্ষমতার উপর। এ সময়ে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাশালী দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের সবচেয়ে ঋণগ্রস্ত দেশ হলেও বৈশ্বিক রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার উপর তার আধিপত্য থাকায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে শ্রীলঙ্কা বা ভেনিযুয়েলার পরিনতি ভোগ করতে হচ্ছেনা। এই মুহূর্তে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ঋণের পরিমান সাড়ে ৩১ ট্রিলিয়ন ডলার। গত বছরের হিসাব অনুসারে, প্রত্যেক মার্কিন নাগরিকের ঘাড়ে প্রায় ৯৫ হাজার মার্কিন ডলারের ঋণ যা শ্রীলঙ্কাসহ বিশ্বের যেকোনো দেশের নাগরিকের চেয়ে অনেক বেশি। চলতি অর্থবছরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল বাজেট ৬.২৭ টিলিয়ন ডলারের মধ্যে ঘাটতি প্রায় দেড় ট্রিলিয়ন ডলার, বা শতকরা ২০ ভাগের বেশি। জাতীয় বাজেটের প্রায় ৫গুণ ঋণের বোঝা নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অনেক আগেই দেউলিয়া হয়ে গেছে। এর মধ্য দিয়েই বর্তমান পুঁজিবাদী বিশ্বব্যবস্থার শুভঙ্করের ফাঁকি ও গলদ ধরা পড়েছে। অষ্টাদশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে এসে বৃটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ ও স্বাধীনতার মধ্য দিয়ে ইউরোপীয় ঔপনিবেশিক যুগ এক নতুন বাস্তবতায় পা রাখে। তবে ইঙ্গ-মার্কিন প্যাক্ট শিল্পবিপ্লব ও পুঁজিতান্ত্রিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার নতুন বাস্তবতায় মূল অনুঘটক হিসেবে কাজ করতে শুরু করে। বর্ণবাদ ও বৃটিশ কলোনিয়াল মনোভাব শত বছর পেরিয়ে এসেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে একটি গৃহযুদ্ধের মুখোমুখি করে তোলে। সেই যুদ্ধে দক্ষিণের কনফেডারেট রাজ্যগুলো বৃটিশদের কাছ থেকে গোপণ সহায়তা প্রত্যাশা করলেও তারা তা পায়নি। দাসপ্রথা ও উত্তর দক্ষিণে বিভাজিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিঙ্কণ সত্যিকারের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও দাসপ্রথা বিলুপ্তির স্বপক্ষে নিজের অবস্থান তুলে ধরে গৃহযুদ্ধে ইউনিয়নের পক্ষে রাজনৈতিক নেতৃত্ব দেন। সত্যিকারের গণতন্ত্র ও মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠার দায়বদ্ধ রাজনৈতিক তৎপরতার কারণেই আব্রাহাম লিঙ্কনকে আততায়ীর হাতে নিহত হতে হয়েছিল। এর অনেক আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতার অন্যতম ঘোষক বা ১৭৭৬ সালের ডিক্লারেশন অব ইন্ডিপেন্ডেন্টস এর প্রধান লেখক ও তৃতীয় প্রেসিডেন্ট টমাস জেফারসনের সেই বিখ্যাত উক্তিটি আবারো স্মরণ করা যেতে পারে। তিনি বলেছিলেন, ‘আই বিলিভ দ্যাট ব্যাংকিং ইনস্টিটিউশন্স আর মোর ডেঞ্জারাস টু আওয়ার লিবার্টিজ দ্যান স্ট্যান্ডিং আর্মিজ’। তিনি আরো বলেছিলেন, মার্কিন জনগণ যদি কখনো প্রাইভেট কপোর্রেট ও ব্যাংকগুলোকে কারেন্সি ইস্যু করার ক্ষমতা দেয়, তাহলে এসব কোম্পানি জনগণের সম্পদের উপর কর্তৃত্ব করতে করতে এক সময় হয়তো আমাদের উত্তর পুরুষদের সন্তানরা একদিন গৃহহীন হয়ে পড়বে এবং তাদের পূর্বপুরুষরা যে দেশটি অর্জন করেছিল সেটিও হাতছাড়া হয়ে গেছে। জেফারসনের সেই ভবিষ্যদ্বানির বাস্তব প্রতিফলন এখন দেখা যাচ্ছে। মার্কিন ফেডারেল রির্জাভ ব্যাংক এখনো একটি প্রাইভেট ব্যাংক। এর উপর মার্কিন জনগণের কর্তৃত্ব খুবই ক্ষীণ। উৎপাদন ব্যবস্থার সাথে সঙ্গতিহীন অর্থনৈতিক ব্যবস্থার গ্যাঁড়াকলে পুঁজিতান্ত্রিক ব্যবস্থা এখন ধসে যেতে শুরু করেছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতার বছর ১৭৭৬ সালে স্কটিশ দার্শনিক এডাম স্মীথের বিখ্যাত গ্রন্থ ‘এন ইনকোয়ারি ইন টু দ্য ন্যাচার অ্যান্ড কজেজ অব দ্য ওয়েল্থ অব দি নেশন’ সংক্ষেপে ওয়েল্থ অব দি নেশন’ প্রকাশিত হয়। অ্যাডাম স্মিথের দেখানো পথেই কর্পোরেট পুঁজিবাদের বিকাশ ও ঔপনিবেশিক লুণ্ঠনে নতুন মাত্রা লাভ করে। সুদ এবং শ্রম দাসত্বের উপর গড়ে ওঠা পুঁজিবাদ বিশ্বকে মানবিক-অর্থনৈতিকভাবে চরম ভারসাম্যহীন করে তোলে। মানুষের জীবনযাত্রা, চাহিদা এবং সামাজিক শান্তি, স্থিতিশীলতা ও সাম্যের প্রয়োজনীয় উদ্যোগগুলোর সাথে ইসলামের যে নির্দেশনা তার সাথে চলমান পুঁজিবাদের প্রতিযোগিতামূলক উদ্যোগগুলোর কোনো তুলনা চলে না। যদিও সমাজতন্ত্রের পতনের পর পশ্চিমাবিশ্ব পলিটিক্যাল ইসলামকেই তার প্রতিপক্ষ হিসেবে হাজির করে নানাবিধ আয়োজন করে যুদ্ধের দামামা বাজিয়ে চলেছে। দুইটি মহাযুদ্ধ এবং পরবর্তি বিশ্বব্যবস্থার সংঘাতে সোভিয়েত নেতৃত্বাধীন মার্ক্সবাদী সাম্যবাদের পতন ঘটলেও এডাম স্মিথের ওয়েল্থ অব দি নেশনস প্রকাশিত হওয়ার প্রায় শত বছর ঊনবিংশ শতকের মধ্যভাগে (১৮৬৭) কার্ল মার্ক্সের দাস ক্যাপিটাল লেখা শুরু পর্যন্ত পশ্চিমা পুঁজিবাদ এতটা প্রকট রূপ ধারণ না করলেও পুঁিজবাদের উত্থান-পতন সম্পর্কে মার্ক্সের ভবিষ্যদ্বানির বাস্তবতা এখন স্পষ্টভাবেই তুলে ধরা যায়। পুঁজিবাদের পতনের নেপথ্যে কার্ল মার্ক্স যে সব বিষয়কে আলোচনায় এনেছিলেন তার মধ্যে ‘কাল্পনিক চাহিদা তত্ত্ব’ পুঁজির প্রতিযোগিতায় বাজারের ‘উত্থান-পতন তত্ত্ব’, বড় বড় কোম্পানিগুলো তাদের প্রতিন্দন্দ্বী কোম্পানিগুলোকে গ্রাস করে একাধিপত্য সৃষ্টি করবে, বাজারে মূল্যস্ফীতি ও কোম্পানির মুনাফা বাড়লেও শ্রমিকের বেতন না বাড়ার কারণে কিছু মানুষের হাতে সম্পদের পাহাড় জমবে এবং মধ্যবিত্ত পরিবারের সংকোচন ঘটার মধ্য দিয়ে সামাজিক বৈষম্য বেড়ে যাওয়া এবং পুঁজিবাদের অস্বচ্ছতা ও গলদ নিজেদের কাছে ধরা পড়ার পর এর কুশীলবরা নিজেরাই নিজেদের ধ্বংস ডেকে আনবে। অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় সাম্প্রতিক অস্থিতিশীলতা, বড় বড় বহুজাতিক কোম্পানি চব্বিশ বা আটচল্লিশ ঘন্টার মধ্যে দেউলিয়া হয়ে যাওয়ার মাধ্যমে কার্ল মার্ক্সের ভবিষ্যদ্বানির এই সবগুলো উপাদানের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। নিত্য নতুন ভার্সনের মোবাইল ফোন, আইফোন, নতুন নতুন অ্যাপ, সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের অবস্থান, ক্রিপ্টোকারেন্সির মত বিষয়গুলো মানুষের অদম্য প্রতিযোগিতামুলক মনোভাব ও কথিত কাল্পনিক চাহিদার বাস্তব উদাহরণ হতে পারে। এ ক্ষেত্রে বিশ্বের বাণিজ্যিক রাজধানী নামে খ্যাত নিউ ইয়র্কের সিগনেচার ব্যাংক অভাবনীয় আকষ্মিকভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঘটনাটি প্রণিধানযোগ্য। একবিংশ শতকের অর্থনৈতিক বাস্তবতার আলোকে ২০০২ সালে প্রতিষ্ঠিত সিগনেচার ব্যাংক মাত্র ২০ বছরের মাথায় গত ১২ মার্চ বন্ধ হয়ে যায়। এর মধ্য দিয়ে ব্যাংকটিকে কর্মরত হাজার হাজার শ্রমিক কর্মচারির রুটি-রুজির পথ রুদ্ধ হয়ে যায়। পুঁজিবাদী সভ্যতার অগ্রগতির সাথে মানুষের কাল্পনিক চাহিদা বৃদ্ধির নিবিড় যোগসুত্র বিদ্যমান। পণ্য ও সেবার কাল্পনিক চাহিদার সাথে সাথে তথ্য প্রযুক্তির এলগরিদম ব্যবহার করে এখন কাল্পনিক মূদ্রা ও সম্পদের বাজার সৃষ্টি করা হয়েছে। আমেরিকার সিলভারগেইট ক্যাপিটাল কোম্পানি মূলত ক্রিপ্টোকারেন্সির উপর বিনিয়োগ করেছিল। হিন্ডেনবার্গ রির্সাচের রিপোর্টে আদানিগ্রুপের দুর্নীতি ও মিথ্যাতথ্যের ফিরিস্তি উঠে আসার পর কোম্পানির শেয়ারের মূল্য শত বিলিয়ন ডলার কমে যায়। একই ধরনের অস্বচ্ছতা ও গোঁজামিলের কারণে সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক এবং সিলভার গেইট ক্যাপিটালের উপর গ্রাহকদের আস্থা ধসে গেলে তারাও শত শত বিলিয়ন ডলারের পুঁজি হারিয়ে দেউলিয়া হয়ে যায়। সিলভারগেইট ক্যাপিটালের বিনিয়োগে পরিচালিত সিগনেচার ব্যাংকটির নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগেই ১২ মার্চ আকষ্মিক বন্ধ হয়ে যায়।
একটি সভ্যতা থেকে আরেকটি সভ্যতার উত্তরণ ও পালাবদলের ক্রান্তিকালে শত বছরের ব্যবধান থাকতে পারে। পুঁজিবাদী সভ্যতার উত্থান ও সম্ভাবনা সম্পর্কে এডাম স্মিথ অষ্টাদশ শতকে ‘অ্যান ইনকোয়ারি ইন টু দ্য ন্যাচার অ্যান্ড কজেজ অব দ্য ওয়েল্থ অব দি নেশন’ লিখেছিলেন। পরবর্তী ২শ’ বছর ধরে পুঁজিবাদের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ বাড়তে বাড়তে তা ধ্বংসের কিনারে চলে আসে। দুই শতাব্দী পর আরেকজন বৃটিশ অর্থনীতিবিদ ও সমাজচিন্তক হ্যারি সাট লিখেছেন ‘দ্য ট্রাবল উইদ ক্যাপিটালিজম:এন ইনকোয়ারি ইন টু দি কজেজ অব গ্লোবাল ইকোনমিক ফেইলিউর, দ্য ডিক্লাইন অব ক্যাপিটালিজম, অ্যা নিউ ডেমোক্রেসি: অল্টারনেটিভ্স টু এ ব্যাংকরাপ্ট ওয়ার্ল্ড অর্ডার’ ইত্যাদি গ্রন্থ। প্রায় দুইশ বছর আগে জার্মান দার্শনিক কার্ল মার্ক্স পুঁজিবাদের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে যে বার্তা দিয়েছিলেন, প্রায় পৌনে দুইশ বছর পর পশ্চিমা অর্থনীতিবিদরা অনৈতিক সা¤্রাজ্যবাদের পুঁজিবাদী দুর্গের ধস নেমে আসার এনাটমি হাজির করেছেন। একবিংশ শতকের একেবারে শুরুতে হ্যারি সাট পশ্চিমা পুঁজিবাদ ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার যে অবক্ষয় ও পতনের পথরেখা তুলে ধরেছিলেন, বিশ বছর পেরিয়ে এসে বড় বড় বহুজাতিক কোম্পানি, কর্পোরেট ব্যাংকিং ব্যবস্থার একেকটি আইকনিক প্রতিষ্ঠান তাসের ঘরের মত ভেঙ্গে পড়ার মধ্য দিয়ে তার বাস্তব প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে। মিথ্যা, ভণিতা ও মেকি অর্থনৈতিক ব্যবস্থার উপর প্রতিষ্ঠিত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাও এখন দেশে দেশে অকার্যকর হয়ে পড়ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে মধ্যপ্রাচ্য এবং ভারতীয় উপমহাদেশ পর্যন্ত কর্পোরেট লুটপাট, অর্থপাচার, বর্ণবাদী সাম্প্রদায়িক রাজনীতি, জায়নবাদ, হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির আগ্রাসি থাবার নিচে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও রাজনীতির প্রত্যাশা ক্রমেই ধোঁয়াশাচ্ছন্ন ও অগ্নিময় হয়ে উঠেছে। সীমাহীন অর্থনৈতিক লুটপাটের কারণে অস্বাভাবিক মূল্যস্ফীতি, দুর্নীতি-দু:শাসন ও বিচারহীনতার নিগড়ে কিছু সংখ্যক মানুষ সম্পদের পাহাড় গড়লেও শতকরা ৯০ ভাগ মধ্যবিত্ত পরিবার এখন দারিদ্র্যপীড়িত হয়ে পড়ছে। রাষ্ট্র ও রাজনীতি জনগণের সম্মিলিত অভিপ্রায়ের ফসল। ঘুণেধরা বিশ্বব্যবস্থা এবং জাতীয় অর্থনীতি ও রাজনীতিতে আমূল পরিবর্তন ছাড়া যুদ্ধবাদী সন্ত্রাস ও পুঁজিবাদী লুন্ঠনব্যবস্থা থেকে উত্তরণের আর কোনো পথ নেই। আঞ্চলিক আধিপত্যবাদের কবলে মানুষের সাংস্কৃতিক-অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক অধিকার ও নিরাপত্তা হরণের অপতৎপরতা রাষ্ট্র ও জনগণের সম্মিলিত শক্তিতে রুখে দাঁড়াতে হবে।
বিভাগ : আজকের পত্রিকা
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
উপায়ান্তর না দেখে বাংলাদেশিদের চিকিৎসায় অতিরিক্ত ছাড়ের ঘোষণা দিলো কলকাতার হাসপাতাল
আশুলিয়ায় ছাত্র-জনতা হত্যা মামলায় আ.লীগ নেতা গ্রেপ্তার
বিএনসিসির সহায়তায় দেশ নিরাপদ জায়গায় এসেছে : সেনাপ্রধান
রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসককে রাঙ্গামাটি প্রেস ক্লাবের বদলিজনিত বিদায় ও ফুলেল শুভেচ্ছা
দৌলতপুরে ৭৯৫ রোহিঙ্গার জন্মনিবন্ধন: ইউপি চেয়ারম্যান ও সচিবের আইডি সাময়িক বন্ধ
নারী নির্যাতন বন্ধে পুরুষদের বেশি এগিয়ে আসতে হবে
কাপ্তাইয়ে রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদ দু'ই সদস্যকে সংবর্ধনা ও তিতুমীর একাডেমির শিক্ষার্থীদের বিদায় অনুষ্ঠিত
পশ্চিমবঙ্গে বাংলাদেশের পতাকা অবমাননার ঘটনায় গ্রেপ্তার ৩
সিংগাইরে দুধর্ষ ডাকাতি, ১০ লক্ষ টাকার মালামাল লুট
সালথায় ঘরের চালা কেটে শিশুকে জিম্মি করে প্রবাসীর বাড়িতে ডাকাতি
বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর নব বিমানসেনা দলের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকওয়াজ অনুষ্ঠিত
গাজায় যুদ্ধবিরতির আহ্বানে টার্নার প্রাইজ বিজয়ী স্কটিশ শিল্পী জাসলিন কাউর
সোনাহাট স্থলবন্দরে কমিটি গঠন নিয়ে দ্বন্ধ, সংবাদ সম্মেলন করে ২ গ্রুপের নতুন কমিটি গঠনের দাবি
নোয়াখালীর গুলিবিদ্ধ আরমানের চিকিৎসা খরচ নিয়ে বিপাকে পরিবার
লিয়ামের স্মৃতি বিজড়িত বাড়ি ছেড়ে কান্নায় ভেঙে পড়লেন লিয়াম পেইনের প্রেমিকা
ভিয়েতনামে বন্ধ হলো জনপ্রিয় শপিং অ্যাপ টেমু
১৫ বছরে রিজার্ভ থেকে উধাও ২৪ বিলিয়ন ডলার : গভর্নর
পাকিস্থানী নাগরিকের 'ক্ষমতায়' সম্পত্তি নিয়ে বিপাকে কসবার অসহায় নারী
নরসিংদীতে আন্ত:কলেজ খেলাধুলা ও ক্রীড়া প্রতিযোগীতা শুরু
ভারতীয় শাড়ি আগুনে পুড়িয়ে প্রতিবাদ জানালেন রিজভী