কিডনি প্রতিস্থাপনে নতুন সাফল্য : রোগীদের আস্থা সৃষ্টি করতে হবে
০৪ এপ্রিল ২০২৩, ০৮:৫০ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ০৩:৫২ পিএম
দেশের ইউরো-নেফ্রোলজি সার্জনরা দীর্ঘদিন ধরে সাফল্যের সাথে দেশে হাজার হাজার রোগীর দেহে কিডনি প্রতিস্থাপন করলেও এবার প্রথমবারের মত মৃতদেহ থেকে সংগ্রহ করা কিডনি প্রতিস্থাপনে দেশীয় সার্জনরা অনন্য সাফল্যের নজির স্থাপন করেছে। আইনগত প্রতিবন্ধকতার কারণে এতদিন মৃত মানুষের দেহ থেকে কিডনি সংগ্রহের সুযোগ ছিল না। ২০১৮ সালে আইনের পরিবর্তনের মাধ্যমে মরনোত্তর কিডনি দান ও মৃতব্যক্তির নিকটাত্মীয়দের অনুমতি সাপেক্ষে কিডনি সংগ্রহ ও (ক্যাডেভারিক) প্রতিস্থাপনের সুযোগ সৃষ্টি হয়। গত ১৯ জানুয়ারি বিএসএমএমইউ হাসপাতালের চিকিৎসকদল প্রথমবারের মতো ২০ বছর বয়েসী কিডনিদাতা সারা ইসলামের মৃতদেহ থেকে সংগৃহিত কিডনি দুজন রোগীর দেহে প্রতিস্থাপন করে সাফল্য লাভ করেন। দেশে প্রথম ক্যাডেভারিক কিডনি প্রতিস্থাপনে সফল চিকিৎসকগণ এবং সংশ্লিষ্ট রোগীদের পরিবারের সদস্যরা বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শরফুদ্দিন আহমদের নেতৃত্বে গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন। জটিল কিডনি রোগের সার্জারিসহ কিডনি প্রতিস্থাপনে বাংলাদেশী ডাক্তারদের অভিজ্ঞতা ও সাফল্যের কথা বিষয়টি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী এ ক্ষেত্রে আরো সাফল্য ও সম্ভাবনার কথাও তুলে ধরার পাশাপাশি জনগণের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতে সরকারের অগ্রাধিকারের কথাও উল্লেখ করেন।
প্রাণঘাতী রোগের মধ্যে কিডনি রোগ অন্যতম। কয়েক বছর আগে এক জরিপে দেখানো হয়েছিল, দেশে প্রায় ২ কোটি লোক কিডনি জটিলতায় আক্রান্ত। বর্তমানে এ সংখ্যাটি যে বেড়েছে, তাতে সন্দেহ নেই। খাদ্যে ভেজাল, পানিদূষণ, ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসসহ জীবনযাপনের নেতিবাচক পরিবর্তন কিডনি রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি করে চলেছে। পাশাপাশি মৃত্যুহারও বেড়ে চলেছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো থেকে প্রাপ্ত সাম্প্রতিক এক রিপোর্টে জানা যায়, ২০১৯ সালে দেশে কিডনি রোগে মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ১০ হাজার ৬২২ জন, ২০২০ সালে এ সংখ্যা প্রায় ৩ গুণ বেড়ে ২৮ হাজার হয়েছে। কিডনি ও ক্যান্সারের মতো প্রাণঘাতী রোগের চিকিৎসার জন্য স্বচ্ছল ও বিত্তবানরা বিদেশে পাড়ি জমান। প্রতি বছর হাজার হাজার রোগী বিদেশ যাওয়ায় দেশ থেকে বিপুল অংকের বৈদেশিক মুদ্রা চলে যায়। প্রায় ২ কোটি কিডনি রোগীর জন্য দেশে সরকারি বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত চিকিৎসা সুবিধা নেই। এক রিপোর্টে জানা যায়, দেশে কিডনি ডায়ালাইসিস সেন্টারের সংখ্যা মাত্র ১২২টি। এসব সেন্টারের ৮০ ভাগই বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনোস্টিক সেন্টারের অধীন। দেশের সব জেলা ও উপজেলা হাসপাতালে কিডনি রোগের চিকিৎসায় প্রয়োজনীয় ডাক্তার ও চিকিৎসাব্যবস্থা নিশ্চিত করা এখন জরুরি হয়ে পড়েছে। দরিদ্র মানুষের জন্য স্বল্পমূল্যে চিকিৎসা, ডায়ালাইসিস ও কিডনি প্রতিস্থাপনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে পারলে কিডনি রোগের মৃত্যুর হার যথেষ্ট কমিয়ে আনা সম্ভব।
দেশের বিশেষায়িত হাসপাতালগুলোতে স্বাস্থ্য সেবার মান ও বিশেষজ্ঞ সার্জনদের অনেক সাফল্যের দৃষ্টান্ত থাকার সত্ত্বেও দেশ থেকে প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষ চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাচ্ছেন। এমনকি সাধারণ মানের চিকিৎসা সেবার জন্যও অনেকে ভারত, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, লন্ডন ও সিঙ্গাপুরে চলে যান। এতে প্রতিবছর হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে চলে যাচ্ছে। এর অন্যতম কারণ, দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রতি আস্থাহীনতা। ‘আস্থা’ এমন একটি বিষয় যা জোর করে আদায় করা যায় না। এটি প্রমাণ দিয়ে অর্জন করতে হয়। দেশে এখন ভালো চিকিৎসা ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও বিদেশে কেন রোগী চলে যাচ্ছে, এ বিষয়টি চিকিৎসকদের খুঁজে বের করতে হবে। কেন তারা দেশের চিকিৎসকদের প্রতি আস্থা রাখতে পারে না। আর কেন বিদেশি চিকিৎসকদের প্রতি আস্থা রাখে এবং তারা কি ব্যবস্থা নেয়, তা খতিয়ে দেখতে হবে। তাদের চিকিৎসা পদ্ধতি পর্যবেক্ষণ করে দেশে তা কিভাবে প্রতিস্থাপন করা যায়, সে ব্যপারে উদ্যোগী হতে হবে। তাহলে, রোগীদের বিদেশমুখী প্রবণতা কমে আসবে। এছাড়া সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা সেবার মান ও শয্যা বাড়ানোর পাশাপাশি দুর্নীতিমুক্ত পরিষেবা নিশ্চিত করার কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। একদিকে সরকারি হাসপাতালে দুর্নীতি-অনিয়ম ও বিড়ম্বনা, অন্যদিকে বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে নানাভাবে উচ্চহারে অর্থ আদায় এবং ব্যবসায়িক মনোবৃত্তির কারণে মানুষের আস্থাহীনতা রয়েছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, দেশে অনেক বিশ্বমানের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও সার্জন রয়েছেন। সরকারি-বেসরকারী বিনিয়োগে দেশে কয়েকটি বিশ্বমানের হাসপাতালও গড়ে উঠেছে। এসব হাসপাতালের পরিষেবা ব্যয় ও সামগ্রিক ব্যবস্থাপনাকে জনগণের কাছে আস্থাশীল ও আকর্ষণীয় করে তুলতে পারলে চিকিৎসার জন্য বিদেশ গমন কমে আসার পাশাপাশি দেশে হেল্থ ট্যুরিজম আকর্ষণও বৃদ্ধি পাবে।
বিভাগ : আজকের পত্রিকা
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
মধ্যরাতে হাসনাতের পোস্ট : ঐক্যের ডাক
লুলা দা সিলভাকে হত্যার পরিকল্পনার অভিযোগে ব্রাজিলে ৪ সেনা, ১ পুলিশ গ্রেপ্তার
ইসরাইলি বর্বর হামলায় গাজায় প্রাণ গেলো আরও ৫০ ফিলিস্তিনির
জুলাই গণহত্যা: সাবেক আইজিপিসহ ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হবে আটজনকে
জাবিতে মতবিনিময় সভায় শিবিরের উপস্থিতি নিয়ে হট্টগোল
মাস্কের স্টারশিপ রকেট উৎক্ষেপণ দেখতে সশরীরে উপস্থিত হলেন ট্রাম্প
যশোরে যুবকের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ
যশোরে ঝটিকা মিছিল থেকে যুবলীগের ৩ কর্মী গ্রেফতার
ব্রাজিল হোঁচট খেল আবারও
ইসরাইল-হিজবুল্লাহের সঙ্গে সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতি চুক্তি পর্যালোচনা করছে লেবানন
আ.লীগকে যারা পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেবে তারা গণশত্রু, যা বললেন নেটিজেনরা
প্রশংসায় ভাসছে সারজিস
মেসির রেকর্ডের ম্যাচে আর্জেন্টিনার জয়
ইয়াং-নিকোলস লড়াইয়ের পর বৃষ্টির বাধা
শ্রীলঙ্কা সফরের জন্য অ-১৯ দল ঘোষণা
'বন্ধু' আমোরি চাইলে ইউনাইটেডে ফিরবেন রোনালদো
ইয়ামালের জন্য ২৫ লাখ ইউরো প্রস্তাবের খবর নাকচ পিএসজির
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সাবেক দুই মন্ত্রী, চার এমপিসহ ১০৬ জনের নামে মামলা
সিলেটে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় করলো ‘আশা'
মোহাম্মদ জহিরুল কবিরের শেরপুর জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে যোগদান : জেলা পুলিশের শুভেচ্ছা