বাংলাদেশ বিদেশি বিনিয়োগের সেরা জায়গা : সালমান এফ রহমান
১২ মার্চ ২০২৩, ১১:৩৩ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ১১:৪৮ পিএম
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেছেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক যাত্রার শক্তি, সামাজিক সূচকগুলোতে অসাধারণ উন্নয়ন, ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য বাংলাদেশে থাকা সুযোগ-সমূহ উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, গত ১৪ বছরে বাংলাদেশের জিডিপি পাঁচগুণ বড় হয়েছে, বার্ষিক গড় হার দাঁড়িয়েছে ৬ শতাংশের বেশি। এছাড়া প্রতি দশকে জিডিপির বার্ষিক প্রবৃদ্ধি কমপক্ষে ১০০ বেসিস পয়েন্ট বাড়ানোর দশকব্যাপী রেকর্ড রয়েছে বাংলাদেশের। এ প্রবৃদ্ধি দেশে বিনিয়োগকারী আকর্ষণ করতে সাহায্য করেছে। আগামী এক দশকেরও কম সময়ে বাংলাদেশ বিশ্বের নবম বৃহত্তম ভোক্তা বাজার হয়ে উঠবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এছাড়া বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান সুবিধাজনক হওয়ায় এ অঞ্চলের সবচেয়ে সক্রিয় বাজারগুলোর নাগালেও সহজে পৌঁছাতে পারছে বাংলাদেশ।
রাজধানীতে ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) আয়োজিত বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট সামিট ২০২৩-এর দ্বিতীয় দিনে গতকাল ‘বাংলাদেশ ১০০ বিলিয়ন ডলার ইনভেস্টমেন্ট অপারচুনিটিজ ইন কি সেক্টরস ফর ইনভেস্টরস টু লেভারেজ’ শীর্ষক প্লেনারি সেশনের কী নোট ‘কস্ট কম্পিটিটিভনেস’ উপস্থাপনের সময় এসব কথা বলেন সালমান এফ রহমান। সেশনে বাংলাদেশের কস্ট কম্পিটিটিভনেস উপস্থাপন করেন সালমান রহমান। এতে বাংলাদেশের মূল খাতগুলোতে ১০০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কী কী সুযোগ-সুবিধা রয়েছে সেগুলো তুলে ধরা হয়। সালমান এফ রহমান বলেন, বড়বড় সমধর্মী অর্থনীতির তুলনায় বাংলাদেশে বিনিয়োগ করলে বিনিয়োগকারীরা মজুরির দিক থেকে ৪৭-৮৪ শতাংশ, ব্যবস্থাপকদের বেতনের ক্ষেত্রে ৪১-৬৯ শতাংশ, পানি ও বিদ্যুৎ খরচে যথাক্রমে ৮৯ ও ৫৫ শতাংশ পর্যন্ত খরচ কমাতে পারবেন। তাই বাংলাদেশই বিদেশি বিনিয়োগের সেরা জায়গা। প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেন, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে সরকার। বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে নিরাপদ। আপনারা নিশ্চিন্তে বিনিয়োগ করতে পারেন।
এ সময় দুর্নীতির বিষয়েও কথা বলেন সালমান এফ রহমান। বিদেশি ডেলিগেটদের উদ্দেশে তিনি বলেন, সরকার প্রধান (প্রধানমন্ত্রী) এ বিষয়ে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছেন। কোনো ধরনের অনিয়মকে আমরা ছাড় দেই না। আমাদের অবকাঠামো উন্নয়নসহ নানা খাতে সুবিধা রয়েছে। সবদিক বিবেচনায় বলতে পারি আমাদের দেশে আপনার বিনিয়োগ হবে নিরাপদ।
সেশনে প্যানেলিস্ট হিসেবে কোরিয়া ট্রেড-ইনভেস্টমেন্ট প্রমোশন এজেন্সি’র গ্রিন গ্রোথ ডিপার্টমেন্ট-এর মহাপরিচালক জং ওন কিম বলেছেন, ভিয়েতনামে বিনিয়োগের সুযোগ হারানো যেসব কোম্পানি চীন থেকে তাদের কারখানা সরিয়ে নিতে চাচ্ছে, তাদের উচিত বাংলাদেশে বিনিয়োগের বিবেচনা করা। বাংলাদেশে এখন ১০০ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ তৈরি হচ্ছে এবং ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি ও উন্নত রাষ্ট্র হওয়ার জন্য বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা প্রদান করছে। এদিকে দেশি-বিদেশি ব্যবসায়ীদের অংশগ্রহণে উৎসব মুখর ছিল বিজনেস সামিট। এতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকারের প্রতিনিধি, বিনিয়োগকারী এবং ব্যবসায়ী নেতারা অংশ নেন।
বাংলাদেশের মূলখাতগুলোতে ১০০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। তাই সেই ট্রেন মিস না করতে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের পরামর্শ দিয়েছেন মন্ত্রী। দেশের ব্যবসা ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণের লক্ষ্য নিয়ে দ্বিতীয় দিনের মতো চলছে ‘বাংলাদেশ বিজনেস সামিট-২০২৩’। এতে বাংলাদেশের মূল খাতগুলোতে ১০০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কী কী সুযোগ-সুবিধা রয়েছে সেগুলো তুলে ধরা হয়।
বাণিজ্যমন্ত্রী জানান, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের শুল্ক ছাড়সহ বিভিন্ন নীতিগত সহায়তা দিচ্ছে বাংলাদেশ। ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরি হচ্ছে, ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালু করা হয়েছে। তাই এসব সুযোগ কাজে লাগিয়ে বিদেশি কোম্পানিগুলোকে আরও বেশি বিনিয়োগ করতে আমন্ত্রণ জানান টিপু মুনশি।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, বাংলাদেশের বাণিজ্য ও কর চুক্তিসমূহ এবং সু-কর্মনীতির বিষয়ে বৈশ্বিক প্রথার প্রতি উন্মুক্ত থাকার মনোভাব দেশের বাণিজ্য সুযোগের ক্ষেত্রে বাড়তি শক্তি হিসেবে বিবেচিত হয়।
সেশন মডারেটরের বক্তব্যে এফবিসিসিআই’র সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, বিজনেস সামিটে দেশ-বিদেশের অনেক বিনিয়োগকারী ও ব্যবসায়ী প্রতিনিধি অংশ নিয়েছেন। আমরা বিদেশি ব্যবসায়ীদের কাছে আমাদের দেশের সক্ষমতা ও বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগের সুযোগ ও সম্ভাবনাগুলো তুলে ধরতে চাই।
জসিম উদ্দিন বলেন, সামিটের প্রথম দিনে সউদী আরবের সঙ্গে বাংলাদেশের চারটি সমঝোতা স্বারক স্বাক্ষর হয়েছে। সামিটের দ্বিতীয় দিনে বেশ কিছু প্লেনারি ও পেরালাল সেশন থেকে কিছু সমঝোতা স্মারক হতে পারে বলে আশা করছি। তবে আমাদের মূল লক্ষ্য সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর নয়, আমরা আমাদের সক্ষমতা ও সম্ভাবনাগুলো তুলে ধরতেই এই সামিটের আয়োজন করেছি।
এফবিসিসিআই’র সাবেক সভাপতি হা-মীম গ্রুপের চেয়ারম্যান এ কে আজাদ বলেন, বিশ্বে ম্যানমেইড ফাইবারের চাহিদা বাড়ছে। শ্রমবাজার ক্রেতারা তাদের ম্যানমেইড ফাইবার পণ্য চায়। এ খাতে বিনিয়োগের সু্যােগ রয়েছে। এফবিসিসিআইর এমন সংলাপ থাকলে ১০০ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ আরও সহজ হবে। তিনি বলেন, আমাদের দেশে ভালো জব মার্কেট আছে, যেটা অন্য দেশের চেয়ে সাশ্রয়ী। ইকনোমিক জোনে ননস্টপ সার্ভিস শুরু হয়েছে। অতএব, বিদেশিরা এখানে নিরাপদে বিনিয়োগ করতে পারেন।
বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট সামিট ২০২৩-এ স্থানীয় ব্যবসায়িক নেতৃবৃন্দ, বৈশ্বিক বিনিয়োগকারীদের প্রতিনিধি, বিভিন্ন বাণিজ্য সংস্থা, এবং দেশে ও বিদেশের মন্ত্রীরা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে বিনিয়োগ বাড়াতে আগ্রহের কথা জানান যুক্তরাজ্য, কোরিয়া এবং কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর বিনিয়োগকারীরা। তবে এর জন্য নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি, দীর্ঘমেয়াদি নীতি সহায়তা এবং বিনিয়োগ পরিবেশের উন্নতি চান তারা।
সেশনটির সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া। এছাড়াও যুক্তরাজ্যের ইন্দো-প্যাসিফিক বিষয়কমন্ত্রী অ্যান-ম্যারি ট্রেভেলিয়ান, দক্ষিণ কোরিয়ার ইয়াঙ্গুন করপোরেশনের চেয়ারম্যান কিহাক সুং, আসিয়ানের দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ার আঞ্চলিক সিইও তাকেশি মামিয়াসহ আরও কয়েকজন বিদেশি ব্যবসায়ী প্রতিনিধি অংশ নেন।
এদিন বিজনেস সামিটে পোশাক ও বস্ত্র খাত, খাদ্যপণ্য, অবকাঠামো, ডিজিটাল ইকোনমি, এনার্জি সিকিউরিটি, কৃষি খাতসহ ৯টি বিষয়ে প্লেনারি এবং পেরালাল সেশন অনুষ্ঠিত হয়। এতে দেশের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও সচিব, ব্যবসায়ী প্রতিনিধি এবং বিদেশি ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীরা অংশ নেন।
এর আগে, গত শনিবার ‘বাংলাদেশ বিজনেস সামিট- ২০২৩’ এর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকারের প্রতিনিধি, বিনিয়োগকারী এবং ব্যবসায়ী নেতারা অংশ নেন। তিন দিনব্যাপী আয়োজিত এই আন্তর্জাতিক সম্মেলন আজ সোমবার শেষ হবে। সম্মেলনে বাংলাদেশের বিভিন্ন খাত নিয়ে ১৭টি সেমিনার ও ৩টি প্লেনারি সেশন অনুষ্ঠিত হবে। এতে যুক্তরাজ্য, সউদী আরব, চীন, ভুটান, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ ৭টি দেশের মন্ত্রী এবং ১২টি বহুজাতিক কোম্পানির প্রধান নির্বাহী, বিশ্বের ১৭টি দেশের দুই শতাধিক বিদেশি বিনিয়োগকারী এবং ব্যবসায়ী নেতারা সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন। এই সামিটের মাধ্যমে দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ অনুসন্ধান ও উত্তোলন, যোগাযোগ, পোশাক ও বস্ত্র, হালকা প্রকৌশল, কৃষি ও স্বাস্থ্য-শিক্ষার মতো খাতে বিপুল বিদেশি বিনিয়োগের আশা করা হচ্ছে।
বিভাগ : আজকের পত্রিকা
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
বগুড়ায় মেয়েকে হত্যা করে মায়ের আত্মহত্যা, চিরকুট উদ্ধার
বিবাহ বিভ্রাটে তৌহিদ আফ্রিদি, স্যোশ্যাল মিডিয়ায় শালিকা নিয়েছে বউয়ের অবস্থান
বিদেশি হস্তক্ষেপে বিগত সরকার ফ্যাসিস্টে পরিণত হয়েছিলো : আসিফ নজরুল
মাদক নির্মূলে কঠোর অবস্থানের ঘোষনা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার
নারায়ণ চন্দ্রকে আদালত চত্বরে ডিম নিক্ষেপ
সেই কবি এবার ৬৯ বছর বয়সে এইচএসসি পাস করলেন
ফিলিপাইনে টাইফুন উসাগির আঘাত
যশোরে ছুরিকাঘাত করে নগদ টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় মামলা
চুয়াডাঙ্গার চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হলেন যশোরের বিচারক শিমুল
জুলাই-আগষ্ট বিপ্লবে ছাত্র-জনতার অন্যতম লক্ষ্য ছিল একটি বৈষম্যহীন সমাজ গঠন : ভূমি উপদেষ্টা
২০ হাজার ওমরাযাত্রী অনিশ্চয়তায়, ওমরাহ টিকিটে এক লাফেই ১৭ হাজার টাকা বৃদ্ধি
সংষ্কার কাজ দ্রুত শেষ করে নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন -মুফতী সৈয়দ ফয়জুল করীম
কটিয়াদীতে যুবকের লাশ উদ্ধার, স্ত্রী আটক
বেনাপোল বন্দরে কার্গো ভেহিকেল টার্মিনাল উদ্বোধন করলেন নৌপরিবহন উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন, কমবে ভোগান্তি, বাড়বে বাণিজ্য
যশোর বোর্ডে এইচএসসিতে পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন ৬৬ হাজার, পরিবর্তন ৭১ জনের
আইএইচএফ ট্রফির বাছাইপর্বে অংশ নিবে ইয়ুথ ও জুনিয়র হ্যান্ডবল দল
ফের কমলো সোনার দাম
সাফজয়ী দলকে আর্থিক পুরস্কার দিল সাউথ ইস্ট ব্যাংক
২৪২ সদস্যবিশিষ্ট ঢাবি ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি প্রকাশ
গ্র্যান্ডমাস্টার জিয়াউর রহমানের পরিবারের পাশে তামিম