উত্তরঞ্চলের দরিদ্রতম কুড়িগ্রামের চিলমারীর চরাঞ্চলের একমাত্র বাহন হচ্ছে এখন ‘ঘোড়ার গাড়ি’। চরাঞ্চলগুলোতে পণ্য আনা-নেয়ার জন্য একমাত্র বাহন হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এই ঘোড়ার গাড়ি। চরাঞ্চলের অধিকাংশ লোকজন তাদের জীবন জীবিকা নির্বাহ করছেন ঘোড়াগাড়ি দিয়ে। উপজেলা সদর থেকে ব্যবসায়ীরা সব প্রকার মালামাল ক্রয় করে ঘোড়ার গাড়িযোগে নিয়ে যান বিভিন্ন এলাকাসহ প্রত্যন্ত চরাঞ্চলে। এতে করে চরাঞ্চলের মানুষের নিকট ঘোড়ার গাড়ির কদর বেড়েছে। উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদ বেষ্টিত চিলমারী, নয়ারহাট ও অষ্টমীরচর তিনটি চরাঞ্চলে প্রায় ৪০ প্রকার ফসল ফলে। এসব পণ্য বাজারে বিক্রি করার জন্য ঘোড়ার গাড়ির বিকল্প আর অন্য কোনো পরিবহন মাধ্যম নেই। এছাড়াও রাস্তা ঘাটে বালু থাকায় অন্য কোনো পরিবহণ ব্যবহার করারও উপায় নেই। ফলে এই ঘোড়ার গাড়ির কদর অনেকটাই বেড়েছে। ব্রহ্মপুত্র নদ এলাকায় শুকনো মৌসুমে ৪ থেকে ৫ কি.মি. ও বর্ষা মৌসুমে ২ থেকে ৩ কি.মি. পথ পায়ে হেঁটে পার হতে হয়। তাছাড়া শুকনো মৌসুমে বোশির ভাগই রাস্তায় বালুর ওপর দিয়ে হেঁটে যাওয়া দুষ্কর। সেই বালুর ওপর দিয়ে ঘোড়ার গাড়ি নদীর এপার ওপারে মালামাল পরিবহন করছে। ফলে দিন দিন ঘোড়ার গাড়ির ব্যবহার বেড়েই চলছে। ঘোড়া এখন ব্রহ্মপুত্র তীরবর্তী লোকজনের আয়ের উৎস। চরাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, শত শত ঘোড়ার গাড়ি। উপজেলা থেকে চরাঞ্চলের ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন প্রকার মালামাল ক্রয় করে ঘোড়ার গাড়িযোগে নিয়ে যান বিভিন্ন চরে। দূরত্ব হিসেবে মণপ্রতি বিভিন্ন মালামালের ভাড়া নেন। বালুপথ পাড়ি দিয়ে পরিবহন করছেন বিভিন্ন প্রকার মালামাল ও কৃষিপণ্য। এ গাড়ি অনায়াসেই বালির ওপর দিয়ে চলাচল করতে পারে। আর হাট-বাজার করাসহ মালামাল আনা-নেয়ার জন্য এ গাড়িই হয়ে উঠেছে চরবাসীর একমাত্র বাহন। চিলমারী ইউনিয়নের শাখাহাতি চরের মাইদুল ইসলাম, ইউনুছ আলীসহ অনেকেই জানান, একটি ঘোড়ার গাড়ি তৈরি করতে প্রায় ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়। একটি ঘোড়া কিনতে লাগে কমপক্ষে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা। আর চাকা, বাঁশ ও অন্যান্য খরচ মিলে ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা খরচ হয়। ঘোড়ার গাড়ি শুকনা মৌসুমে প্রতিদিন কমপক্ষে এক থেকে দেড় হাজার আয় হয়। ঘোড়ার গাড়ির মালিক এচাহক, ধলা মিয়া জানান, প্রতিদিন গড়ে ৫শ’ থেকে ৭শ’ টাকা আয় হয়। কিন্তু হাটের দিন বেশি মাল টানা হলে প্রায় ১ হাজার টাকা আসে। তাছাড়া শুকনা মৌসুমে একটু বেশি আয় হয়। ঘোড়ার পেছনে খরচ হয় দেড় থেকে দুইশ’ টাকা। বাকি টাকা দিয়ে কোনরকমে ডাল ভর্তা খেয়ে তারা সংসার চালায়। তারা আরো জানান, ঘোড়ার গাড়ি চালিয়ে চরাঞ্চলের প্রায় ৭শ’ থেকে ৮শ’ পরিবার জীবিকা নির্বাহ করছে। চরাঞ্চলবাসীরা জানান, ‘বাহে কি আর কই এই ঘোড়ার গাড়ি হয়া হামার অনেক উপকার হয়েছে, হামরা এখন পাইকারদের আশায় বসে থাকি না এবং সময় মতো ফসল বাজারে নিয়ে গিয়ে ভালো দামে বিক্রি করতে পারছি।’
চিলমারী ইউপি চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম বলেন, আমার চরাঞ্চল এই ইউনিয়নের মালামাল পরিবহনের জন্য অন্যতম বাহন হিসেবে জনপ্রিয় হচ্ছে ঘোড়ার গাড়ি। যার কারণে ঘোড়ার গাড়ি দিন দিন বৃদ্ধি পেয়েছে। অনেক যুবক আছে যারা বেকার সময় না কাটিয়ে ঘোড়ার গাড়ি চালিয়ে পরিবারকে সহযোগিতা করছে। শুকনো মৌসুমে এসব গাড়িতে ভালো আয় হয়। বৃষ্টি বাদল বা বন্যার সময় তারা বিভিন্ন মালামাল আনা-নেয়া করতে পারে না, সেই সময় তারা একটু বিপদে পড়ে যায়। আগে গরুর গাড়ি জনপ্রিয় ছিলো তবে এখন সেই আর চোখে পরে না।