সীমায় বিস্ফোরণ দুশ্চিন্তায় ব্যাংক
১২ মার্চ ২০২৩, ১১:১৩ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ০৩:০৮ পিএম
ভয়াবহ বিস্ফোরণে চট্টগ্রামের সীতাকু-ের সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্ট ধ্বংসস্তুপে পরিনত হয়েছে। সাতজনের প্রাণহানী এবং ২০ জন আহত হওয়া ছাড়াও এই দুর্ঘটনায় প্রাথমিকভাবে ৮০ কোটি টাকার ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে বলে মালিক পক্ষ দাবি করছে। পরিস্থিতি এতটাই নাজুক কারখানাটি আদৌ চালু করা যাবে কী না তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। এই অক্সিজেন কারখানাটি ছিল সীমা গ্রুপের চালু প্রতিষ্ঠানের অন্যতম। এটি ধ্বংসস্তুপে পরিনত হওয়ায় মালিক পক্ষের পাশাপাশি সাতটি ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মাঝে ভর করছে গভীর দুশ্চিন্তা।
কারণ এসব ব্যাংক থেকে সীমা গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণ নেয়া হয়েছে। ব্যাংকের পাশাপাশি বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকেও নেয়া হয়ে ঋণ। জানা গেছে, একের পর এক প্রতিষ্ঠান রুগ্ন হয়ে পড়ায় এমনিতেই সীমা গ্রুপ তাদের ব্যাংক ঋণের কিস্তি পরিশোধে হিমশিম খাচ্ছিল। কয়েকটি ব্যাংকে তারা হয়েছে খেলাপি। এ অবস্থায় ঋণের এসব টাকা উদ্ধার হওয়া নিয়ে এখন তৈরি হয়েছে সংশয়। সীমা অক্সিজেনের নামে সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক থেকে নেয়া হয় মোটা অংকের ঋণ।
গত ৪ মার্চ সীমা অক্সিজেনে বিস্ফোরণে সাতজনের প্রাণহানির ঘটনায় ব্যবস্থাপনা পরিচালক মামুন উদ্দিন, তার ভাই পারভেজ উদ্দিন, আশরাফ উদ্দিন ওরফে বাপ্পিসহ ১৬ জনের নাম উল্লেখ করে গত ৭ মার্চ রাতে সীতাকু- থানায় মামলা হয়েছে। মামলাটি করেছেন দুর্ঘটনায় নিহত অক্সিজেন কারখানার শ্রমিক আবদুল কাদেরের স্ত্রী রোকেয়া বেগম। মামলায় কারখানা কর্তৃপক্ষের অবহেলা ও গাফিলতির কারণে এই প্রাণহানীর ঘটনা ঘটেছে বলে উল্লেখ করা হয়।
বিস্ফোরণের পর থেকে মালিক পক্ষ দৌঁড়ের উপর আছে। তার উপর মামলা হওয়ায় তারাও পড়েছে বিপাকে। বলা হচ্ছে মামলায় অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাদের সাজাও হতে পারে। আর তখন সীমা গ্রুপকে ঋণ দেয়া বিভিন্ন ব্যাংকের বিপদ আরও বাড়বে।
তাই অক্সিজেন প্লান্টে দুর্ঘটনার পর ঋণের টাকা পেতে যোগাযোগ বাড়িয়েছে ব্যাংকগুলো। কিন্তু সাড়া পাচ্ছে না মালিকপক্ষের। যদিও সীমা গ্রুপের কর্মকর্তাদের দাবি তারা নিয়ম মেনেই ব্যাংক লোন নিয়েছেন, এবং যথারীতি কিস্তি পরিশোধ করছেন। জানা গেছে, সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর প্রধান কার্যালয় থেকে সীমা গ্রুপের নেয়া ঋণের সর্বশেষ অবস্থা জানতে চাওয়া হয়েছে। তাদের ঋণের কিস্তি পরিশোধ হালনাগাদ আছে কিনা তাও জানতে চাওয়া হয়েছে।
সীমা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ শফি আশির দশকে বানুর বাজারে একটি চায়ের দোকান দিয়ে ব্যবসা শুরু করেন। নব্বইয়ের দশকের শুরুতে স্ক্র্যাপ জাহাজে ঠিকাদারি কাজ নেন তিনি। ৯২-৯৩ সালে মাদামবিবির হাটের জাহানাবাদে গড়ে তোলেন শিপব্রেকিং ইয়ার্ড। এর পরে সীমা গ্রুপ গঠন করেন। সীমা বাস সার্ভিস ও অক্সিজেন প্ল্যান্ট থেকে পর্যায়ক্রমে গড়ে তোলেন এস ট্রেডিং করপোরেশন, মামুন স্টিল ও ম্যাপস ট্রেডিং। তিন বছর আগে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান মোহাম্মদ শফি। এর পরে এসব ব্যবসার হাল ধরেন তার তিন ছেলে মামুন উদ্দিন, পারভেজ উদ্দিন ও আশরাফ উদ্দিন।
অক্সিজেন প্ল্যান্টের দুটি কোম্পানি আছে সীমা গ্রুপের। তার মধ্যে অক্সি অক্সিজেনের তিনটি ও দুর্ঘটনাকবলিত সীমা অক্সিজেন কোম্পানির দুটি প্ল্যান্ট ছিল। অক্সি অক্সিজেন কোম্পানির তিনটি প্ল্যান্ট বন্ধ আছে। আর বিস্ফোরণে সীমার দুটি প্ল্যান্ট ধ্বংস হয়ে গেছে। এ ছাড়া সীমা অটো রি-রোলিং মিল চালু থাকলেও সেটি ধুঁকছে দেনার দায়ে। তাদের জাহাজভাঙা ইয়ার্ডেও নেই পর্যাপ্ত জাহাজ। এটিও অনেকটা বন্ধের পর্যায়ে রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মিউচুয়াল ট্রাস্ট, মার্কেন্টাইল ও পূবালী ব্যাংকের কাছে সীমা গ্রুপের ঋণ ৮শ’ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। ২০১৮ সালে ঋণ ছিল ৮৯২ কোটি টাকা। ২০১৭ সালে ছিল ৭১২ কোটি টাকা। ব্যাংকের ঋণ এখন নিয়মিত পরিশোধও করতে পারছে না তারা। এ গ্রুপের কাছে পূবালী ব্যাংকের ঋণ ৬০০ কোটি টাকা, মিউচুয়াল ট্রাস্টের ২০০ কোটি টাকা। মার্কেন্টাইল ব্যাংকের কাছে তাদের ঋণ ৭০ কোটি টাকা। সীমা অটো রি-রোলিং মিলের কাছে স্বল্পমেয়াদি ব্যাংক ঋণ আছে ৩শ’ কোটি টাকার বেশি। আর দীর্ঘমেয়াদি ঋণ আছে প্রায় ৭০ কোটি টাকা।
দুর্ঘটনা কবলিত সীমা অক্সিজেনের ব্যবস্থাপক ইফতেখার উদ্দিন বলেন, দুর্ঘটনায় কারখানার প্রায় আশি কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। কবে নাগাদ কারখানাটি চালু করা যাবে তা বলা যাচ্ছে না। তবে কারখানায় কর্মরতদের বেতন-ভাতা চলবে। সীমা অক্সিজেনের নামে এসআইবিএল ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, বিভিন্ন ব্যাংক থেকে নেয়া লোনের কিস্তি যথাসময়ে পরিশোধ করা হচ্ছে।
নিহত সাত জনের পরিবারকে ১০ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আহতদের মধ্যে গুরুতর দুইজনকে পাঁচ লাখ টাকা করে ১০ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। বাকি আহতদেরও ক্ষতিপূরণ দেয়া হচ্ছে। এদিকে বিস্ফোরণের ঘটনায় চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রাকিব হাসানের নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত কমিটি কারখানার নানা অনিয়মের পাশাপাশি তাদের আর্থিক খাতের বিষয়ও তদন্ত করছে বলে জানিয়েছেন কমিটির একজন সদস্য।
বিভাগ : আজকের পত্রিকা
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
নাসিরনগর উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি অসিম কুমার পাল গ্রেফতার।
জাল স্টাম্প-কোর্ট ফি তৈরি করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিক্রি করতো চক্রটি
উত্তরায় শিকলে বেঁধে মধ্যযুগীয় কায়দায় ২ কিশোরকে নির্যাতন, আটক ২
শৈলকুপায় চাঞ্চল্যকর ‘ফাইভ মার্ডার’ মামলায় দুইজনের যাবজ্জীবন
চাঁবিপ্রবি’র ভূমি অধিগ্রহণ বাতিল হলেও দীপু মনির চাপে গোপন রাখা হয়
ঢাকায় মানবাধিকার অফিস খুলতে চায় জাতিসংঘ : সমকামিতা প্রসারের আশঙ্কা
কুড়িগ্রামে নারী প্রতারক আটক
গণঅভ্যুত্থানে আহত শিক্ষার্থীদের বেতন-টিউশন ফি মওকুফের সিদ্ধান্ত
জর্জির ১০০, দ. আফ্রিকার ২০০
আশুলিয়ায় স্বামী-স্ত্রী ও শিশু সন্তানকে হত্যার ঘটনায় দুইজনকে গ্রেপ্তার
ভারতীয় সেনাবাহিনীর গুলিতে কাশ্মিরে গেরিলা যোদ্ধা নিহত ১
দুদকের চেয়ারম্যান মইনুউদ্দীনসহ দুই কমিশনারের পদত্যাগ
সৎ ছেলেকে হত্যার পরিকল্পনা, সৎ মা নিজেই হত্যার শিকার হয়
ফিলিপাইনের মাদকবিরোধী অভিযানে ‘ডেথ স্কোয়াড’, দুতার্তের স্বীকারোক্তি
হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস র্যাগিং ও মাদক মুক্ত ঘোষনা
রাজবাড়ীতে অস্ত্র মামলায় এক সন্ত্রাসীর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড
জর্জি-স্টাবসের শতরানের জুটিতে বড় সংগ্রহের পথে দক্ষিণ আফ্রিকা
মহেশপুরে অসুস্থ্য গরুর মাংস বিক্রয়ের অপরাধে কসাই আটক, জেল-জরিমানা
ব্যবসা নয় ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কাজ হচ্ছে হাজীদের সেবা করা
কিশোরগঞ্জ সেন্ট্রাল প্রেস ক্লাবের আহ্বায়ক কমিটি গঠিত