ঢাকা   রোববার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৭ আশ্বিন ১৪৩১
ইউনিসেফ ও ডব্লিউএইচও এর নতুন প্রতিবেদন

খাবার পানি, স্যানিটেশন ও হাইজিন পরিষেবায় বৈষম্যের শিকার নারীরা

Daily Inqilab স্টাফ রিপোর্টার

০৭ জুলাই ২০২৩, ০৯:৩০ পিএম | আপডেট: ০৮ জুলাই ২০২৩, ১২:০১ এএম

বাড়ির খাবার পানি এবং স্যানিটেশন ও হাইজিন পরিষেবায় যে নারীরা লিঙ্গ বৈষম্যের শিকার হচ্ছে, এমন তথ্য উঠে এসেছে ইউনিসেফ ও ডব্লিউএইচও প্রকাশিত নতুন এক প্রতিবেদনে। যা প্রথম প্রকাশিত হলো। গত বৃহস্পতিবার প্রকাশিত বিশ্লেষণমূলক ওই প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, বাসগৃহে পানির সংস্থান না থাকা প্রতি ১০টি পরিবারের মধ্যে ৭টিতে পানি সংগ্রহ নারী ও মেয়েদের দায়িত্ব। ওই প্রতিবেদনের তথ্য অনুসারে, বিশ্বব্যাপী নিজের পরিবারের জন্য পানি সংগ্র্রহের কাজটি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নারীরাই করে থাকেন। যেখানে এই দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে মেয়েদের সংখ্যা ছেলেদের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ এবং প্রতিদিন এই কাজের পেছনেই তাদের অনেক সময় ব্যয় হয়।
পরিবারের খাবার পানি, স্যানিটেশন ও হাইজিন (ওয়াশ) বিষয়ে ২০০০-২০২২ পর্যন্ত অগ্রগতি : লিঙ্গভিত্তিক বিশেষ দৃষ্টি’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদন ‘ওয়াশ’ পরিষেবায় লিঙ্গ বৈষম্যের বিষয়ে প্রথমবারের মতো গভীর বিশ্লেষণ তুলে ধরে। পাশাপাশি উল্লেখ করে যে, নারী ও মেয়েরা বাড়ির বাইরে টয়লেট ব্যবহার করার সময় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অনিরাপদ বোধ করেন ও স্বাস্থ্যবিধির ঘাটতির প্রভাব ও বৈষম্য অনুধাবন করে।
ইউনিসেফের ‘ওয়াশ’ ও ‘সীড’ বিষয়ক পরিচালক সিসিলিয়া শার্প এ বিষয়ে বলেন, পানি সংগ্রহের জন্য একটি মেয়ের একটি করে ধাপ এগিয়ে যাওয়ার অর্থ হলো পড়াশোনা, খেলাধুলা ও নিরাপত্তা থেকে তার একটি করে ধাপ দূরে সরে যাওয়া। অনিরাপদ পানি, অনিরাপদ টয়লেট ও বাড়িতে হাত ধোয়ার অনিরাপদ ব্যবস্থা মেয়েদের কাছ থেকে তাদের সম্ভাবনা কেড়ে নেয়, তাদের সার্বিক কল্যাণকে ঝুঁকিতে ফেলে এবং দারিদ্র্যের চক্রকে স্থায়ী করে। ‘ওয়াশ’ কর্মসূচি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে মেয়েদের চাহিদার প্রতি সাড়া প্রদানের বিষয়টি সর্বজনীন পানি ও স্যানিটেশন পরিষেবা নিশ্চিত করা এবং লিঙ্গ সমতা ও ক্ষমতায়ন অর্জনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
গত বৃহস্পতিবার ইউনিসেফের কমিউনিকেশন কনসালটেন্ট ফারিয়া সেলিম স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে প্রতিবেদনের বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয়। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী ১৮০ কোটি মানুষ এমন ঘরবাড়িতে বসবাস করে যেখানে বাসগৃহে পানির সংস্থান নেই। এ ধরনের প্রতি ১০টি পরিবারের মধ্যে ৭টিতে ১৫ বছর বা তার বেশি বয়সী নারী ও মেয়েরা প্রাথমিকভাবে পানি সংগ্রহের দায়িত্ব পালন করে। আর এ ধরনের প্রতি ১০টি পরিবারের মধ্যে ৩টিতে তাদের সমবয়সী পুরুষ ও ছেলেদের এই দায়িত্ব পালন করতে হয়।
১৫ বছরের কম বয়সী মেয়েরা (৭ শতাংশ) একই বয়সী ছেলেদের (৪ শতাংশ) তুলনায় পানি সংগ্রহের দায়িত্ব বেশি পালন করে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নারী ও মেয়েদের পানি সংগ্রহের জন্য দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হয়, যা তাদের পড়াশোনা, কাজ ও অবসর যাপনের সময় কমিয়ে দেয় এবং পথে তাদের শারীরিক আঘাত পাওয়া ও বিপদে পড়ার ঝুঁকিতে ফেলে।
প্রতিবেদনের তথ্যে আরও উঠে এসেছে যে, ৫০ কোটির বেশি মানুষ এখনও অন্য পরিবারের সঙ্গে স্যানিটেশন সুবিধা ভাগাভাগি করে, যা নারী ও মেয়েদের গোপনীয়তা, মর্যাদা এবং নিরাপত্তাকে ঝুঁকিতে ফেলছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পাারে, ২২টি দেশে পরিচালিত সাম্প্রতিক জরিপে উঠে আসা তথ্য বিশ্লেষণ করে ইউনিসেফ বলছে, যেসব পরিবার নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে টয়লেট ব্যবহার করে সে সব পরিবারের নারী ও মেয়েরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে রাতের বেলায় একা হাঁটাচলা করতে পুরুষ ও ছেলেদের তুলনায় অনিরাপদ বোধ করে এবং যৌন হয়রানি ও অন্যান্য নিরাপত্তা ঝুঁকির সম্মুখীন হয়। এ ছাড়া অপর্যাপ্ত ‘ওয়াশ’ পরিষেবা নারী ও মেয়েদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ায় এবং নিরাপদে ও ব্যক্তিগতভাবে তাদের মাসিক ব্যবস্থাপনার সামর্থ্যকে সীমিত করে। উপাত্ত পাওয়া যায়, এমন ৫১টি দেশের মধ্যে সবচেয়ে দরিদ্র পরিবারের নারী ও কিশোরী এবং যারা শারীরিকভাবে অক্ষম তাদের বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শারীরিক পরিচ্ছন্নতা ও পোশাক বদলের জন্য ব্যক্তিগত গোপনীয় স্থান থাকে না।
ডব্লিউএইচওর পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন ও স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক ড. মারিয়া নেইরা বলেন, ডব্লিউএইচওর সাম্প্রতিক তথ্য একটি কঠোর বাস্তবতা তুুলে ধরে: অপর্যাপ্ত পানি, স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্যবিধির কারণে প্রতি বছর ১৪ লাখ মানুষ প্রাণ হারায়। নারী ও মেয়েরা ডায়রিয়া ও তীব্র শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণের মতো শুধুমাত্র ‘ওয়াশ’ সম্পর্কিত সংক্রামক রোগের সম্মুখীন হয় না, তারা এর বাইরেও বিভিন্ন স্বাস্থ্যঝুঁকির সম্মুখীন হয়, কারণ যখন পানি সংগ্রহ বা শুধুমাত্র টয়লেট ব্যবহার করার জন্য তাদের বাড়ির বাইরে যেতে হয় তখন তারা হয়রানি, সহিংসতা ও আঘাতের শিকার হওয়ার ঝুঁকিতে থাকে।
প্রতিবেদনে উঠে আসা তথ্যে দেখাচ্ছে যে, স্বাস্থ্যবিধির অভাবও অসামঞ্জস্যপূর্ণভাবে নারী ও মেয়েদের ক্ষতিগ্রস্ত করে। অনেক দেশে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, খাবার রান্না করা এবং অসুস্থদের দেখাশোনা করাসহ ঘরের কাজ ও অন্যদের যতœ নেওয়ার জন্য প্রাথমিকভাবে নারী ও মেয়েরাই দায়বদ্ধ থাকে। এটি অনেক ক্ষেত্রে তাদেরকে রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে ফেলে। হাত ধোয়াজনিত সুরক্ষার অভাবও তাদেরকে অন্যান্য স্বাস্থ্যগত ঝুঁকির মুখে ফেলে। গৃহস্থালি কাজে অতিরিক্ত সময় ব্যয় করা হলে তা মেয়েদের মাধ্যমিক বিদ্যালয় পর্যায়ে পড়াশোনা শেষ করার এবং কর্মসংস্থান লাভের সম্ভাবনাকেও সীমিত করতে পারে।
প্রতিবেদনের তথ্যানুসারে, বর্তমানে প্রায় ২২০ কোটি মানুষ বা প্রতি ৪ জনের মধ্যে ১ জনের এখনও বাড়িতে নিরাপদে সংগ্রহ করা খাবার পানির অভাব রয়েছে এবং ৩৪০ কোটি মানুষ বা প্রতি ৫ জনের মধ্যে ২ জনের নিরাপদ স্যানিটেশন ব্যবস্থাপনা নেই। প্রায় ২ কোটি মানুষ বা প্রতি ৪ জনের মধ্যে ১ জন বাড়িতে সাবান ও পানি দিয়ে তাদের হাত পরিষ্কার করতে পারে না।
প্রতিবেদনে সবার জন্য ‘ওয়াশ’ পরিষেবা নিশ্চিত করার প্রতি কিছু অগ্রগতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ২০১৫ থেকে ২০২২ সালের মধ্যবর্তী সময়ে পরিবারগুলোর নিরাপদ খাবার পানি প্রাপ্তির হার ৬৯ শতাংশ থেকে বেড়ে ৭৩ শতাংশে উন্নীত হয়েছে; নিরাপদ স্যানিটেশন ব্যবস্থাপনার হার ৪৯ শতাংশ থেকে বেড়ে ৫৭ শতাংশে উন্নীত হয়েছে; এবং মৌলিক স্বাস্থ্যবিধি সেবা ৬৭ থেকে বেড়ে ৭৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।
কিন্তু ২০৩০ সালের মধ্যে সবার জন্য নিরাপদে খাবার পানি, স্যানিটেশন ও মৌলিক স্বাস্থ্যবিধি পরিষেবা নিশ্চিত করার টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য নিরাপদ পানি সংগ্রহের ক্ষেত্রে অগ্রগতির বর্তমান হার ছয়গুণ, নিরাপদ স্যানিটেশন ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে অগ্রগতির হার পাঁচগুণ, এবং মৌলিক স্বাস্থ্যবিধি পরিষেবাগুলোর ক্ষেত্রে অগ্রগতির হার তিনগুণ বাড়ানোর প্রয়োজন হবে।


বিভাগ : বাংলাদেশ


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

স্কুলছাত্র মারুফ হত্যা মামলায় টাঙ্গাইল পৌরসভার কাউন্সিলর গ্রেপ্তার, একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর

স্কুলছাত্র মারুফ হত্যা মামলায় টাঙ্গাইল পৌরসভার কাউন্সিলর গ্রেপ্তার, একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর

জনগণের প্রত্যাশা পূরণে কাজ করছে সরকার : সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান

জনগণের প্রত্যাশা পূরণে কাজ করছে সরকার : সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান

দোকান বরাদ্দের বিষয় খতিয়ে দেখতে কমিটি

দোকান বরাদ্দের বিষয় খতিয়ে দেখতে কমিটি

শুটিং ফেডারেশন চলছে অপুর নির্দেশেই!

শুটিং ফেডারেশন চলছে অপুর নির্দেশেই!

বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলে পোশাক কারখানায় ৪৩২ কোটি টাকার বিদেশি বিনিয়োগ

বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলে পোশাক কারখানায় ৪৩২ কোটি টাকার বিদেশি বিনিয়োগ

আরামবাগ ক্রীড়া সংঘের সভাপতি তাজওয়ার আউয়াল

আরামবাগ ক্রীড়া সংঘের সভাপতি তাজওয়ার আউয়াল

সাবেক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ব্যাংক হিসাবের তথ্য চেয়েছে বিএফআইইউ

সাবেক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ব্যাংক হিসাবের তথ্য চেয়েছে বিএফআইইউ

রংপুর রেঞ্জের নতুন ডিআইজি আমিনুল ইসলাম

রংপুর রেঞ্জের নতুন ডিআইজি আমিনুল ইসলাম

গণঅধিকার পরিষদের ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখার ৯৩ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি

গণঅধিকার পরিষদের ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখার ৯৩ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি

বগুড়ায় সহযোগী সহ শীর্ষ সন্ত্রাসী সাগরকে নৃশংস কায়দায় হত্যা

বগুড়ায় সহযোগী সহ শীর্ষ সন্ত্রাসী সাগরকে নৃশংস কায়দায় হত্যা

শৈলকুপায় অস্ত্র ও গুলিসহ ২ জন আটক

শৈলকুপায় অস্ত্র ও গুলিসহ ২ জন আটক

পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে : বাংলাদেশ ন্যাপ

পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে : বাংলাদেশ ন্যাপ

পাহাড়ে অশান্তির বীজ উপরে ফেলতে হবে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে যে কোন চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র রুখে দিতে হবে

পাহাড়ে অশান্তির বীজ উপরে ফেলতে হবে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে যে কোন চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র রুখে দিতে হবে

ওরা পার্বত্য অঞ্চলকে ভারতের অঙ্গরাজ্য বানাতে চায়

ওরা পার্বত্য অঞ্চলকে ভারতের অঙ্গরাজ্য বানাতে চায়

ঈশ্বরদীতে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান তুহিনসহ যুবদল নেতাদের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ

ঈশ্বরদীতে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান তুহিনসহ যুবদল নেতাদের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ

এখনো ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেম্বরদের রেখেছেন কেন? - রিজভী

এখনো ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেম্বরদের রেখেছেন কেন? - রিজভী

কোর্ট ম্যারেজ করা প্রসঙ্গে?

কোর্ট ম্যারেজ করা প্রসঙ্গে?

গুজবে কান দেবেন না : জনপ্রশাসন সচিব

গুজবে কান দেবেন না : জনপ্রশাসন সচিব

কোয়াড সম্মেলনে বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা

কোয়াড সম্মেলনে বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা

এনজিও,নাস্তিকদের প্রতিষ্ঠা করতে চাইলে সংগ্রাম চলবে- চরমোনাই

এনজিও,নাস্তিকদের প্রতিষ্ঠা করতে চাইলে সংগ্রাম চলবে- চরমোনাই