বন্ড মার্কেট উন্নয়নে কাজ করবে আইএমএফ
০৭ জুলাই ২০২৩, ০৯:৩২ পিএম | আপডেট: ০৮ জুলাই ২০২৩, ১২:০১ এএম
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পুঁজিবাজার থেকে বন্ডের মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ দিয়ে থাকে। কিন্তু দেশে বন্ড মার্কেট শক্তিশালী না হওয়ায় এখনো মেয়াদি ঋণ দেয়া হয় ব্যাংক থেকে। তাই বড় ঋণের ব্যাংক নির্ভরতা কমিয়ে পুঁজিবাজারে অর্থের জোগান বাড়াতে বন্ড মার্কেট উন্নয়ন কাজ করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ ক্ষেত্রে কারিগরি সহায়তা করছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। আইএমএফ’র প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদারের সাথে বৈঠকে সেকেন্ডারি মার্কেটে সরকারি বন্ডের উন্নয়নে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। গত বৃহস্পতিবার ঢাকায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে আইএমএফের পাঁচ সদস্য এবং বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধিদলের দুই সদস্য উপস্থিত ছিলেন বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের টিম সেকেন্ডারি মার্কেটে সরকারি বন্ডের প্রচারের মূল উদ্দেশ্য নিয়ে আলোচনা করতে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের সঙ্গেও একটি বৈঠক করবে। প্রতিনিধিদলটি ১৭ জুলাই অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে তাদের সমাপনী বৈঠক করবে।
ঋণের বিষয়ে নয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে বন্ড মার্কেটের উন্নয়নে করণীয় বিষয়ক আলোচনা করেছে আইএমএফ জানিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র বলেন, বন্ড মার্কেটের উন্নয়নে ফিজিবিলিটি স্টাডিজের কাজ চলছে। বন্ড ইস্যু, বন্ড সেটেলমেন্ট সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে লোকাল কারেন্সি ও বন্ড মার্কেট নিয়ে আলোচনা করছে আইএমএফ।
তিনি জানান, দেশে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ এখনও ব্যাংকের মাধ্যমে দেয়া হয়। কিন্তু বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তা পুঁজিবাজার থেকে বন্ডের মাধ্যমে নিয়ে থাকে। তাই পুঁজিবাজারে অর্থের জোগান বাড়ানো ও বন্ড মার্কেট শক্তিশালী করতে কাজ করছে আইএমএফের টেকনিক্যাল টিম।
সরকারের বিভিন্ন দফতরকে কারিগরি সহায়তা দেওয়ার অংশ হিসেবে আইএমএফ’র একটি মিশন এখন ঢাকায়। মিশনের আওতায় পাঁচ সদস্যের একটি দল গত বুধবার থেকে সরকারের বিভিন্ন দফতরের সঙ্গে বৈঠক শুরু করেছে। বৈঠকের মূল বিষয়বস্তু ছিল স্থানীয় মুদ্রায় বন্ড বাজারের উন্নয়ন। দলটির ১২ দিনের সফরের শেষ বৈঠক হবে ১৭ জুলাই।
সূত্র জানায়, সচিবালয়ে গত বুধবার আইএমএফের দলটির প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে অংশ নেন অর্থ বিভাগ, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি), আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা। মোট চার বৈঠকে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সম্পর্কিত বন্ড, স্থানীয় মুদ্রায় বন্ড বাজারের উন্নয়ন, মধ্যমেয়াদি রাজস্ব কাঠামো, অভ্যন্তরীণ সঞ্চয়, সামাজিক নিরাপত্তা, টেকসই ঋণ ব্যবস্থাপনা, নগদ ঋণ ব্যবস্থাপনা, নগদ ঋণের লক্ষ্য ও ব্যবস্থাপনার নীতি এবং নগদ ও ঋণ ব্যবস্থাপনায় অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি), জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের মধ্যে সমন্বয় থাকার বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
সূত্রগুলো আরও জানায়, সকাল সাড়ে ১০টায় সূচনা বৈঠকের পরই আইএমএফের কারিগরি দল শুরু করে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের আলোচনা। বাংলাদেশ এ ব্যাপারে কী পদক্ষেপ নিয়েছে এবং সেগুলো বাস্তবায়ন করছে কী কৌশলে, কারিগরি দলটি বৈঠকে তা জানতে চায়। এছাড়া লেনদেনের ভারসাম্য ও মুদ্রা বিনিময় হার ব্যবস্থাপনা, আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতা, সঞ্চয়, মুদ্রানীতি পরিচালনা ও বাস্তবায়ন নিয়েও আলোচনা করে আইএমএফ’র দল। ইসলামি ধারার ব্যাংকগুলো তারল্য ব্যবস্থাপনা কীভাবে করছে, সুদের হার বৃদ্ধির কাজ কত দূর এগোল, কলমানি মার্কেটের হাল কী, মুদ্রা বাজারে আন্তঃব্যাংক বাণিজ্য ও তারল্যের অবস্থা কী, এসব বিষয় জানতে চায় কারিগরি দলটি। এদিকে শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় এ দু-দিন কোনো বৈঠক নেই। বৈঠক শুরু হবে আবার আগামী রোববার (৯ জুলাই) থেকে।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী ২০২২ সালের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকের বিল এবং বন্ডে বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৭২ হাজার ২০২ টাকা। কিন্তু ছয় মাস আগেও এ খাতে বিনিয়োগ স্থিতি ছিল ৩ লাখ ২২ হাজার ৬৯৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ মাত্র ছয় মাসের ব্যবধানে ৫০ হাজার ৪৯৪ কোটি টাকার বিল-বন্ড ভেঙেছেন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানভিত্তিক বিনিয়োগকারীরা। ২০২১ সাল শেষে বিল-বন্ডে বিনিয়োগের স্থিতি ছিল ৩ লাখ ২৫ হাজার ৬৮৭ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের ডিসেম্বর শেষে ৯১ দিন মেয়াদি ট্রেজারি বিলের সুদহার ছিল ৬ দশমিক ৯০ শতাংশ, ১৮২ দিন মেয়াদি বিলে ৭ দশমিক ৩০ এবং ৩৬৪ দিন মেয়াদি বিলের মুনাফা ছিল শতকরা ৭ দশমিক ৭৬ টাকা। অন্যদিকে দুই বছর মেয়াদি বন্ডে সুদের হার ছিল ৭ দশমিক ৫৫ শতাংশ, পাঁচ বছর মেয়াদি ৭ দশমিক ৯০ শতাংশ, ১০ বছর মেয়াদি ৮ দশমিক ৩৩ শতাংশ, ১৫ বছর মেয়াদি ৮ দশমিক ৭৭ এবং ২০ বছর মেয়াদি বন্ডের সুদের হার ছিল ৮ দশমিক ৯৫ শতাংশ।
রাষ্ট্রীয় খরচ মেটাতে সরকার বিভিন্ন সময় দেশের নাগরিক বা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ঋণ নেয়। এর বিপরীতে তাদের নামে ট্রেজারি বিল ও বন্ড ইস্যু করা হয়। একে সরকারি সিকিউরিটিজও বলা হয়। তিন মাস থেকে সর্বোচ্চ এক বছরের জন্য নেয়া ঋণকে ট্রেজারি বিল ও এক বছর থেকে বিশ বছর পর্যন্ত নেওয়া ঋণকে ট্রেজারি বন্ড বলা হয়। তরল সম্পদ হলো, নগদ টাকা ও খুব সহজে বিনিময়যোগ্য উপাদান। এর মধ্যে বিল-বন্ড অন্যতম। তথ্যমতে, মোট তরল সম্পদের ৭০ শতাংশই বিল ও বন্ড হিসেবে গচ্ছিত থাকে।
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
স্কুলছাত্র মারুফ হত্যা মামলায় টাঙ্গাইল পৌরসভার কাউন্সিলর গ্রেপ্তার, একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর
জনগণের প্রত্যাশা পূরণে কাজ করছে সরকার : সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান
দোকান বরাদ্দের বিষয় খতিয়ে দেখতে কমিটি
শুটিং ফেডারেশন চলছে অপুর নির্দেশেই!
বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলে পোশাক কারখানায় ৪৩২ কোটি টাকার বিদেশি বিনিয়োগ
আরামবাগ ক্রীড়া সংঘের সভাপতি তাজওয়ার আউয়াল
সাবেক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ব্যাংক হিসাবের তথ্য চেয়েছে বিএফআইইউ
রংপুর রেঞ্জের নতুন ডিআইজি আমিনুল ইসলাম
গণঅধিকার পরিষদের ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখার ৯৩ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি
বগুড়ায় সহযোগী সহ শীর্ষ সন্ত্রাসী সাগরকে নৃশংস কায়দায় হত্যা
শৈলকুপায় অস্ত্র ও গুলিসহ ২ জন আটক
পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে : বাংলাদেশ ন্যাপ
পাহাড়ে অশান্তির বীজ উপরে ফেলতে হবে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে যে কোন চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র রুখে দিতে হবে
ওরা পার্বত্য অঞ্চলকে ভারতের অঙ্গরাজ্য বানাতে চায়
ঈশ্বরদীতে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান তুহিনসহ যুবদল নেতাদের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ
এখনো ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেম্বরদের রেখেছেন কেন? - রিজভী
কোর্ট ম্যারেজ করা প্রসঙ্গে?
গুজবে কান দেবেন না : জনপ্রশাসন সচিব
কোয়াড সম্মেলনে বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা
এনজিও,নাস্তিকদের প্রতিষ্ঠা করতে চাইলে সংগ্রাম চলবে- চরমোনাই