ঢাকা   রোববার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

যশোরে বিএডিসির ধানের বীজ সরবরাহ করে ক্ষতির মুখে সাড়ে তিন হাজার চাষি

Daily Inqilab যশোর ব্যুরো

০৯ জুলাই ২০২৩, ১০:২৮ পিএম | আপডেট: ১০ জুলাই ২০২৩, ১২:০০ এএম

পূর্ব দর নির্ধারণ ছাড়াই বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনে (বিএডিসি) বোরো ধানের বীজ সরবরাহ করে ক্ষতির মুখে পড়েছেন যশোর অঞ্চলের ৩ হাজার ৫৯১ জন চাষি। বিএডিসি থেকে বীজের যে দাম দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে তাতে উৎপাদন খরচই উঠবে না বলে দাবি তাদের। সারাদেশে যখন দ্রব্যমূল্য আকাশচুম্বি, সরকার কর্তৃক ধান-চাল সংগ্রহ দাম বৃদ্ধি, সেখানে ধান বীজ সংগ্রহে দর নিম্নমূখী করায় চুক্তিভিত্তিক চাষিরা ক্ষোভ প্রকাশ ও হতাশ হয়েছেন। এতে করে দেশে ধান বীজ উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ধান বীজ উৎপাদনের চুক্তিবদ্ধ চাষীরা কৃষক বান্ধব প্রধানমন্ত্রীকে বিষয়টি বিশেষ বিবেচনায় নিয়ে বিএডিসি‘র বীজ ধানের দর বৃদ্ধির জন্য আকুতি জানিয়েছেন।

তাদের বক্তব্য মতে, ১৯৮১ সালের নিয়মে দর নির্ধারণ করেছেন বিএডিসি কর্তৃপক্ষ। পক্ষান্তরে বীজ সরবরাহের ক্ষেত্রে বিএডিসি গ্রেডিং চার্জ কেজি প্রতি ১৫ পয়সা থেকে ৪ গুণ বৃদ্ধি করে ৬০ পয়সা করেছেন। কিন্তু যে প্রক্রিয়ায় দর ধার্য্য করা হয় সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দফতর নজরদারি না করে পূর্বের নিয়মে দর ধার্য্য করছেন। অন্যদিকে সরকারের চাল-ধান সংগ্রহে ৪ টাকা দর বৃদ্ধি করা হলেও বিএডিসি‘র চুক্তিবদ্ধ চাষিরা বঞ্চিত ও ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন।

তাদের ক্ষোভ বীজ ধান সরবরাহের কমপক্ষে ৩ থেকে ৭ মাস পর তাদের পাওনা টাকা প্রদান করা হয়। চুক্তিকালীন ধানের কোনো দর নির্ধারণ করা হয় না। বর্তমানে জমি লিজ, সেচ, সার, কীটনাশক, শ্রমিক মজুরী উর্দ্ধমুখী রয়েছে। সব মিলিয়ে বর্তমান বীজ উৎপাদন খরচের তুলনায় চুক্তিভিক্তিক চাষিদের কম মূল্য প্রদান করা হচ্ছে।

কৃষিবিদদের মন্তব্য, এভাবে কম মূল্য প্রদান করা হলে হয়ত তারা বীজ ধান উৎপাদন থেকে সরে যাবেন। এমনকি বেসরকারি বিভিন্ন কোম্পানীকে উচ্চ মূল্যে বীজ সরবরাহ করবেন। এতে করে প্রান্তিক চাষিরা ক্ষতিগ্রস্থ হবেন। এক্ষেত্রে ব্যাহত হবে কন্ট্রাক্ট গ্রোয়ার্স ও আপৎকালীন বীজ মজুদ কর্মসূচি। সেক্ষেত্রে বীজ উৎপাদন কমে গেলে ধান উৎপাদনও কমে যাবে। আমদানি নির্ভর হলে দেশ চালের দামও বেড়ে যাবে।

বিএডিসির যশোর কন্ট্রাক্ট গ্রোয়ার্স জোন ও বীজের আপৎকালীন মজুদ কর্মসূচি সূত্র জানিয়েছে, মৌসুম শেষে চুক্তিবদ্ধ চাষিদের কাছ থেকে ধান বীজ সংগ্রহ করা হয়। এবার বিএডিসির যশোর কন্ট্রাক্ট গ্রোয়ার্স জোনের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ যশোর, খুলনা, ঝিনাইদহ ও মাগুরা জেলার ৩ হাজার ৫৯১ জন কৃষক ১ হাজার ৬২০ একর জমিতে (কঃ গ্রোঃ) ও ১ হাজার ৬ একর জমিতে আপদকালীন বোরো ধানের বীজ উৎপাদন করে তা সরবরাহ করেছেন।

বিএডিসি যশোরাঞ্চলের সূত্র জানায়, কন্ট্রাক্ট গ্রোয়ার্স জোন কর্মসূচির আওতায় উৎপাদিত বিভিন্ন জাতের বোরো ধান বীজ সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৫ শ ৮৩ টন, গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সংগ্রহ হয়েছে প্রায় ১৪ শ টন। অন্যদিকে, বীজের আপদকালীন মজুদ কর্মসূচির আওতায় উৎপাদিত বিভিন্ন জাতের বোরো ধান বীজ সংগ্রহরে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ হাজার টন, সংগ্রহ হয়েছে প্রায় ৯ শ টন। এখনও বীজ ধান সংগ্রহ অব্যাহত রয়েছে। ২৫ এপ্রিল থেকে বোরো ধানের বীজ সংগ্রহ শুরু করে বিএডিসি। জুলাই মাসের ২০ তারিখ পর্যন্ত তা সংগ্রহ করা হবে। এবার মোটা বীজ ৪৩ টাকা কেজি, চিকন বীজ ৪৪ টাকা কেজি, ভিত্তি বীজ ৪৭ টাকা কেজি এবং সুগন্ধি বাসমতি ধানের বীজ ৪৯ টাকা দর নির্ধারণ করে দিয়েছে সংশ্লিষ্ট দফতর।

গত ২৫ জুন বীজ ধান সরবরাহে, বিএডিসি নির্ধারিত দরে প্রাপ্ত মূল্য গ্রহণের জন্য চুক্তিবদ্ধ চাষিদের ডাকা হলে তারা ওই দর জেনে ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেছেন। বিষয়টি বিএডিসি চেয়ারম্যান, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব, বিএডিসি’র সদস্য পরিচালক (বীজ ও উদ্যান) মহাব্যবস্থাপক ও অতিরিক্ত মহাব্যবস্থাপক (কঃ গ্রোঃ), কর্মসূচি পরিচালক (বীআমক), বিএডিসি খুলনা অঞ্চলের যুগ্ম পরিচালক (বীজ বিপনন) বরাবরে গত ২ জুলাই বোরো ধান বীজের দর পুনঃনির্ধারণ (সংশোধন) আবেদন করেছেন। কিন্তু চাষিরা এখনও পর্যন্ত কোন সুরাহ না পেয়ে আশাহত হচ্ছেন।
অভিযোগকারী চাষিরা জানান, চুক্তিপত্রে বীজের দর উল্লেখ ছিল না। বাজারে সাধারণ ধানের সর্বোচ্চ যে খুচরা মূল্য থাকে তার সঙ্গে ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি করে বিএডিসি থেকে বীজের মূল্য পরিশোধ করা হয়। বর্তমান সময়ে উৎপাদন খরচ বিবেচনায় ধার্য্যকৃত ৩০ শতাংশ থেকে তা বৃদ্ধি করে ৫০ শতাংশ করাও সময়ের দাবি চুক্তিবদ্ধ চাষিদের।

চুক্তিবদ্ধ চাষি ঝিনাইদহের সদরের আব্দুস সালাম জানান, ভালো ফসলের জন্য ভালো বীজ প্রয়োজন। আর ভালো বীজের জন্য প্রয়োজন বাড়তি পরিচর্যা। বাড়তি পরিচর্যা করে বীজের উৎপাদন খরচ বেড়েছে। বর্তমান নির্ধারিত দামের সাথে অন্তত কেজি প্রতি ৫ টাকা বৃদ্ধি করার জোর দাবি জানাচ্ছি। তা না হলে বীজ উৎপাদনকারী চুক্তিবদ্ধ চাষিরা নিরুৎসাহিত হবেন। দেশে ধান বীজ উৎপাদন কমবে। ধান চাল আমদানি নির্ভরতা বাড়বে। এত দেশে চালের দাম বৃদ্ধি পাবে।

যশোরের ঝিকরগাছার চাষি আশানুর রহমান ধান বীজ সরবরাহের দরের ব্যাপারে বলেন, বর্তমান নির্ধারিত দরে আমাদের বিষ খাওয়া উচিত, সংশ্লিষ্ট দফতরের উচিত অন্তত ৫২ থেকে ৫৪ টাকা দর নির্ধারণ করা। আরো উল্লেখ করেন ধান/চাল সংগ্রহসহ অন্যান্য বিষয়াদি দামের সাথে আমাদের দেয়া দর সামঞ্জস্যহীন।

খুলনা জেলার ডুমুরিয়া থানার মৃত হারুন অর রশিদের ছেলে চাষি আব্দুল হালিম বলেন, অন্তত বীজ ধানের দাম কেজি ৫০ থেকে ৫২ টাকা হওয়া উচিত। অন্যথায় বীজ ধান উৎপাদন কমবে। দেশের খাদ্য ঘাটতি হবার আশঙ্কা দেখা দিবে। একই কথা বলেন, যশোরাঞ্চলের বিএডিসি’র একাধিক চুক্তিবদ্ধ বীজ উৎপাদনকারী কৃষক।

চাষিদের অভিযোগ সরকার কর্তৃক ধান/চাল সংগ্রহের দাম বাড়ানো হল, বীজ ধান সংগ্রহে দাম কমানো হয়েছে। এবিষয়ে বিএডিসি’র যশোরাঞ্চলের উর্দ্ধতন এক কর্মকর্তা কাছে জানতে চাইলে তিনি নাম প্রকাশ না করা শর্তে বলেন, বাস্তবতায় বাজার দরে দাম ঠিক থাকলেও চাষিদের উৎপাদন খরচ পর্যাপ্ত বেড়েছে। এটা বিবেচনায় তাদেরও কিছুটা দাম বৃদ্ধি করে মূল্য নির্ধারণ করা বাঞ্চনীয়। বর্তমান দরে চাষিরা কিছুটা হলেও ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন বলে বিএডিসির এই কর্মকর্তা স্বীকার করেন।

বিএডিসির অন্য এক কর্মকর্তা বলেন, ‘বাজারে ধানের মূল্য কত সেটা আমরা কৃষি বিপণন কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে জেনে নিই। তার সঙ্গে ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি করে বীজের মূল্য নির্ধারণের জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠাই। সেখান থেকেই মূল্য নির্ধারণ হয়ে আসে। বিএডিসির সারা দেশের জোনের জন্য বীজের মূল্য ঠিক হয়ে যায়।

যশোরাঞ্চলের বিএডিসি’র চুক্তিবদ্ধ চাষিরা কৃষক বান্ধব প্রধানমন্ত্রীকে বিষয়টি বিশেষ বিবেচনায় নিয়ে সার্বিক পরিস্থিতি থেকে বীজ ধানের দর বৃদ্ধির জন্য আকুতি জানান।


বিভাগ : বাংলাদেশ


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

গোল উৎসবে নেশন্স কাপে উড়ন্ত সূচনা জার্মানির

গোল উৎসবে নেশন্স কাপে উড়ন্ত সূচনা জার্মানির

জয়ে ইংল্যান্ডের সাউথগেট-পরবর্তী অধ্যায় শুরু

জয়ে ইংল্যান্ডের সাউথগেট-পরবর্তী অধ্যায় শুরু

পোপের ১৫৪ রানের পরেও ইংল্যান্ডের ৩২৫,কামিন্দু-সিলভায় লংকানদের লড়াই

পোপের ১৫৪ রানের পরেও ইংল্যান্ডের ৩২৫,কামিন্দু-সিলভায় লংকানদের লড়াই

স্কটল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করলো অস্ট্রেলিয়া

স্কটল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করলো অস্ট্রেলিয়া

মানিকগঞ্জে ইছামতী নদীতে থেকে মরদেহ উদ্ধার

মানিকগঞ্জে ইছামতী নদীতে থেকে মরদেহ উদ্ধার

‌'শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের কঠাগড়ায় দাঁড় করাতে হবে'

‌'শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের কঠাগড়ায় দাঁড় করাতে হবে'

শেষ ম্যাচও জিততে চায় বাংলাদেশ

শেষ ম্যাচও জিততে চায় বাংলাদেশ

সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় জামায়াতকে পাহারাদারের ভূমিকা পালন করতে হবে

সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় জামায়াতকে পাহারাদারের ভূমিকা পালন করতে হবে

আইওসির কোচিং কোর্সে বাংলাদেশের মাহফিজুল

আইওসির কোচিং কোর্সে বাংলাদেশের মাহফিজুল

নাটোরে পৌরসভার পরিচ্ছন্নতা সপ্তাহ শুরু

নাটোরে পৌরসভার পরিচ্ছন্নতা সপ্তাহ শুরু

পটিয়ায় জশনে জুলুসে ঈদে মিলাদ্ন্নুবী অনুষ্ঠিত

পটিয়ায় জশনে জুলুসে ঈদে মিলাদ্ন্নুবী অনুষ্ঠিত

মীরসরাইয়ে কমছে পানি তীব্র হচ্ছে নদীভাঙন

মীরসরাইয়ে কমছে পানি তীব্র হচ্ছে নদীভাঙন

বিএনপিতে কোনো সন্ত্রাসী চাঁদাবাজের ঠাঁই হবে না

বিএনপিতে কোনো সন্ত্রাসী চাঁদাবাজের ঠাঁই হবে না

নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেয়াই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব

নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেয়াই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব

নেমে গেছে বানের পানি স্পষ্ট হচ্ছে ক্ষতচিহ্ন

নেমে গেছে বানের পানি স্পষ্ট হচ্ছে ক্ষতচিহ্ন

সভাপতি শওকত সম্পাদক মানিক

সভাপতি শওকত সম্পাদক মানিক

সংযোগ সড়ক ভেঙে দুর্ভোগে ৬ গ্রামবাসী

সংযোগ সড়ক ভেঙে দুর্ভোগে ৬ গ্রামবাসী

বাড়িভিটা হারিয়ে দিশেহারা তিস্তা পাড়ের মানুষ

বাড়িভিটা হারিয়ে দিশেহারা তিস্তা পাড়ের মানুষ

ভয়াবহ বন্যায় কৃষি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদের সর্বনাশ

ভয়াবহ বন্যায় কৃষি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদের সর্বনাশ

মাদরাসা শিক্ষার সংস্কার : একটি পর্যালোচনা

মাদরাসা শিক্ষার সংস্কার : একটি পর্যালোচনা