ভয়াবহ বন্যায় কৃষি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদের সর্বনাশ
০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:১১ এএম | আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:১১ এএম
নাঙ্গলকোটে ভয়াবহ বন্যায় কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ভয়াবহ বন্যায় কৃষি খাতে রোপা আমনবীজ, রোপাআমন, শাকসবজি, রোপাআউশ, বোনা আমন, আখের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। মৎস্য খাতে ফিনফিস, পোনা মাছ এবং পুকুর, খামার ও দীঘির অবকাঠামোগত ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। প্রাণিসম্পদ খাতেও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পানি কমার সাথে কৃষি, মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ খাতে ক্ষতির মাত্রা ষ্পষ্ট হয়ে উঠছে। কৃষি খাতে মাঠ পর্যায়ে রোপা আমনবীজতলা, রোপাআমন, শাকসবজি, রোপাআউশ, বোনা আমনের ক্ষতি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। পুকুর, দিঘী, মৎস্য পুকুরের ছোট, বড় সকল মাছ বন্যার শুরুতে ভেসে গেছে। প্রাণিসম্পদ খাতে পোল্টি, গবাদিপশু খামারের ক্ষয়ক্ষতিও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতে কোটি-কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে কৃষক ও খামারীদের মধ্যে সর্বত্র চোখের পানি এবং হাহাকার বিরাজ করছে। ফসল, মাছ এবং গবাদিপশু হারিয়ে তারা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। এ ক্ষতি কাটিয়ে উঠে আবার গুরে দাঁড়ানো নিয়ে তাদের দুঃচিন্তার শেষ নেই। কৃষক ও খামারীরা তাদের ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে সরকারি পর্যায়ে সহায়তার জন্য উপজেলা মৎস্য, কৃষি, প্রাণীসম্পদ ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে আবেদন নিয়ে ছুটছেন। বাস্তবে সরকারি সহায়তা তারা কতটুকু পাবেন এ নিয়েও তাদেরকে হতাশার মধ্যে থাকতে হচ্ছে।
ভয়াবহ বন্যায় সরকারিভাবে কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতে ক্ষতির পরিমাণ ২শ’ কোটি ৮২ লক্ষ ৬৯ হাজার ৪শ’ টাকা নির্ধারণ করা হলেও কৃষক ও খামারী পর্যায়ে ক্ষতির পরিমাণ ৩শ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে কৃষক ও খামারীদের সূত্রে জানা যায়।
সরেজমিনে বিভিন্ন এলাকায় দেখা যায়, বন্যার পানি নামার সাথে-সাথে উপজেলার সর্বত্র মাঠের পর মাঠ আমন বীজতলা, রোপা আমন, রোপা আউশ ও শাকসবজি ক্ষেত পানিতে পচে সম্পূর্ণ নষ্ট হতে দেখা যায়। মৎস্য খামার, পুকুর, দীঘিগুলো মাছ শূণ্য পড়ে থাকতে দেখা যায়। এছাড়া গবাদিপশু, পোল্টি খামারগুলো শুণ্য পড়ে থাকতে দেখা যায়।
উপজেলা কৃষি, মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলার কৃষি খাতে রোপা আমন বীজতলা ৬শ ৭০ হেক্টর আবাদি জমির মধ্যে মোট ক্ষতিগ্রস্ত ফসলি জমির পরিমাণ হচ্ছে ৪শ২৫ হেক্টর। রোপা আমন ২শ ৪০ হেক্টরের মধ্যে মোট ক্ষতিগ্রস্ত ফসলি জমির পরিমাণ হচ্ছে ২শ ২৮ হেক্টর। খরিপ-২ শাকসবজি আবাদকৃত জমির পরিমাণ হচ্ছে ১০ হেক্টর। শাকসবজি ১০ হেক্টরই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রোপা আউশ ৯ হাজার ৬শ ১০ হেক্টরের মধ্যে মোট ক্ষতিগ্রস্ত ফসলি জমির পরিমাণ হচ্ছে ৬ হাজার ৮শ ৭০ হেক্টর। বোনা আমন ৩শ ৫০ হেক্টরের মধ্যে ৩শ ৫০ হেক্টরই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আখ ৬০ হেক্টরের মধ্যে ১ হেক্টর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে কৃষি খাতে মোট ক্ষতির আর্থিক মূল্য দেখানো হয়েছে ১শ ১৩ কোটি ২৪ লাখ ৬৯ হাজার ৪শ টাকা।
উপজেলার ক্ষতিগ্রস্ত পুকুর/দিঘী ও মৎস্য খামার হচ্ছে, ৩ হাজার ১শ ৬২টি। এর মধ্যে ফিনফিসের (রুই, কাতল, মৃগেল, তেলাফিয়া) ক্ষতি হয়েছে প্রায় ১হাজার ৮শ ৯৭ মেট্রিক টন। যার আনুমানিক আর্থিক মূল্য ৩৭ কোটি ৯৪ লক্ষ টাকা। পোনা মাছ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৩ কোটি টাকা। যার আনুমানিক আর্থিক মূল্য ৪ কোটি টাকা। এছাড়া পুকুর/দিঘী ও মৎস্য খামারের অবকাঠামোগত আর্থিক ক্ষতি দেখানো হয়েছে, প্রায় ৬কোটি ৩৩লক্ষ টাকা। উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তর থেকে মৎস্য খাতে মোট ক্ষতি দেখানো হয়েছে ৪৮ কোটি ২৭লাখ টাকা। যদিও মৎস্যচাষি ও পুকুর, দিঘী মালিক সূত্রে জানা যায়, বাস্তবে এক্ষতির পরিমাণ আরো অনেক বেশি হবে।
প্রাণীসম্পদ খাতে বন্যাকবলিত ক্ষতিগ্রস্ত গবাদিপশুর খামার হচ্ছে, ১হাজার ১শ ২৩টি। এতে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ হচ্ছে, ১ কোটি ২০লাখ টাকা। ক্ষতিগ্রস্ত হাঁসমুরগীর খামার হচ্ছে, ৬শ ৪৭টি। এতে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ হচ্ছে, ১ কোটি ১০লাখ টাকা। পশুপাখির বিনষ্ট খাবার হচ্ছে ৩শ ৬টন। যার আর্থিক মূল্য হচ্ছে, ১ কোটি ৯০ লাখ টাকা। বিনষ্ট খড়ের আর্থিক মূল্য হচ্ছে ৫০ লাখ টাকা। বিনষ্ট ঘাসের আর্থিক মূল্য হচ্ছে, ৬২ লাখ টাকা। মৃত পশুপাখির মোট ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ হচ্ছে ১১ কোটি ২২লাখ টাকা। বন্যায় প্রাণিসম্পদ খাতে মোট ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ হচ্ছে, ১৬ কোটি ৫৪ লাখ টাকা।
ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্য ও পোল্টি খামারী আনোয়ার হোসেন মুকুল বলেন, ভয়াবহ বন্যায় মৎস্য ও পোল্টি খাতে আমার প্রায় ৬ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। এ বন্যায় আমি নিঃস্ব হয়ে গেছি।
উপজেলা বটতলী ইউনিয়নের কাশিপুর গ্রমের হাজী জামাল উদ্দিন বলেন, আমার ৪ একর জমির কাঁচা-পাকা আউশ ধানা সম্পূর্ণ পানিতে তলিয়ে গেছে। এগুলো ঘরে আনার কোন উপায় নেই। খড় আনলেও বদলা খরচ অনেক টাকা দিতে হবে। তাই খড়ও আর আনবো না। ৪ একর জমির আমার প্রায় লক্ষধিক টাকা খরচ হয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, মন্ত্রণালয় থেকে ক্ষতির তথ্য চেয়েছে। আমরা তথ্য প্রেরণ করেছি। সিদ্ধান্ত আসলে পরবর্তীতে সে মোতাবেক কাজ করা হবে।
উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ আশরাফুজ্জামান বলেন, জেলার মাধ্যমে মন্ত্রণালয়ে তথ্য প্রেরণ করা হয়েছে। বরাদ্ধ আসলে আমরা সে অনুযায়ী কাজ করবো।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ইসরাত জাহান বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত খামারিরা আমার নিকট আবেদন দিয়েছে। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট ক্ষয়ক্ষতির তালিকা প্রেরণ করেছি। কোন নির্দেশনা আসলে আমরা সে মোতাবেক কাজ করবো।
এ প্রসঙ্গে নাঙ্গলকোট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুরাইয়া আক্তার লাকী বলেন, আমরা সংশ্লিষ্ট তিনটি মন্ত্রণালয়ের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট মোট ক্ষয়ক্ষতির তথ্য প্রেরণ করেছি। যদি আর্থিক ক্ষতি অথবা উপকরণ আসে তাহলে নির্দেশনা মোতাবেক আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে সেগুলো বিতরণ করবো।
বিভাগ : অভ্যন্তরীণ
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ভারতের কাছে হারানো ২০০ একর জমি ফেরত পাচ্ছে বাংলাদেশ
সাবেক রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন গ্রেপ্তার
যৌথ বাহিনীর অভিযানে ১৩দিনে ১৫৫ অস্ত্র উদ্ধার, গ্রেপ্তার ৭২
ইলিয়াস আলীকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবীতে বালাগঞ্জে স্বেচ্ছাসেবক দলের মিছিল
সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারীর সাথে সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের সৌজন্য সাক্ষাৎ
গুলশানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক
যশোরে ৪ দিনের বৃষ্টিপাতে নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা, বিপর্যস্ত জনজীবন
যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান টেকনাফ থেকে গ্রেপ্তার
৪ ধরনের জ্বালানি তেলের দাম কমালো পাকিস্তান
তারাকান্দায় সাবেক এমপি শরীফসহ ৫৯ আ’লীগ নেতাকর্মীর নামে মামলা
শার্শায় বাবার কোদালের আঘাতে ছেলে নিহত
গোলাপগঞ্জে ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসায়ী আটক
কিশোরগঞ্জে ঈদে মিলাদুন্নবীর র্যালিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, মসজিদ-মাজার ভাঙচুর, নিহত- ১
রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য হাবিব-বিপ্লব গংদের নির্দেশে পুলিশ নেতা সেজে বিভ্রান্ত করেছিলেন কনস্টেবল জয়
ইসলামের বিধি-বিধান প্রতিষ্ঠা হলে ইসলামের প্রকৃত সৌন্দর্য জগতবাসী দেখতে পাবে -মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম
যানজটের সমাধান খুঁজতে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশ
মহানবী (সঃ) এর আদর্শ অনুসরণ করা হলে কোন রাষ্ট্র প্রধানকে পালাতে হবেনা-মিলাদুন্নবী (সঃ) এর আলোচনা সভায় বক্তারা
মসজিদ-মাদরাসা কমিটি থেকে ফ্যাসিবাদের সুবিধাভোগীদের বিতাড়িত করতে হবে: আজিজুল হক ইসলামাবাদী
প্রশাসক হতে চান শিক্ষকরা, ঠেকাতে একাট্টা ৪ সংগঠন
বাংলাদেশের এই দলকে সেরা বললেন হার্শা