ঋণ বিতরণে ব্যর্থ ৮ ব্যাংককে ২০৭০ কোটি টাকা ফেরত দেয়ার নির্দেশ
০৬ আগস্ট ২০২৩, ১০:০৯ পিএম | আপডেট: ০৭ আগস্ট ২০২৩, ১২:০১ এএম
কৃষি ঋণ বিতরণে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে না পারায় আট ব্যাংককে দুই হাজার ৬৯ কোটি ৯৪ লাখ টাকা ফেরত দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে এর বিপরীতে ২ শতাংশ মুনাফা পাবে ব্যাংকগুলো। এর জন্য অপেক্ষা করতে হবে ১৮ মাস। যেসব ব্যাংক কৃষি ঋণ বিতরণের সফল হয়েছে তাদের মাধ্যমে এই টাকাগুলো পুনরায় কৃষকদের মাঝে বিতরণ করা হবে। গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংক আয়োজিত কৃষি ঋণ নীতিমালা ঘোষণা অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর একেএম সাজেদুর রহমান। এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন নির্বাহী পরিচালক নুরুল আমিন, পরিচালক সারোয়ার হোসেন, সাঈদা খানমসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের অন্যান্য কর্মকর্তারা। ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালকরাও এ অনুষ্ঠানে অংশ নেন।
জানা গেছে, গত জুনে সমাপ্ত ২০২২-২৩ অর্থবছরে সরকারি-বেসরকারি আটটি ব্যাংক কৃষিঋণ বিতরণের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি। এর মধ্যে সাতটিই বেসরকারি ব্যাংক, যাদের ঋণ বিতরণ পরিস্থিতি একেবারেই হতাশাজনক। বিতরণের হার মাত্র ৮ থেকে ৩৫ শতাংশ। আবার একই সময়ে দেশে কার্যরত বিদেশি খাতের আটটি ব্যাংকের সবাই নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি কৃষিঋণ বিতরণ করতে সক্ষম হয়েছে।
ডেপুটি গভর্নর সাজেদুর রহমান বলেন, ব্যাংকগুলোর বার্ষিক কৃষি ও পল্লীঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রার অনর্জিত অংশ কৃষি উৎপাদন বাড়াতে বিনিয়োগের জন্য ‘বাংলাদেশ ব্যাংক অ্যাগ্রিকালচারাল ডেভেলপমেন্ট কমন ফান্ড (বিবিএডিসিএফ)’ নামে একটি তহবিল গঠন করেছে। ফলে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ ব্যাংকগুলোর লক্ষ্যমাত্রার অনর্জিত অংশের সমপরিমাণ অর্থ এ তহবিলে জমা রাখতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক এ জমাকৃত অর্থের ওপর মাত্র ২ শতাংশ হারে সুদ দেবে। তিনি বলেন, বিবিএডিসিএফে জমাকৃত অর্থ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সফল ব্যাংকগুলোর চাহিদা অনুযায়ী এবং সক্ষমতার ভিত্তিতে বরাদ্দ করা হবে। ব্যাংকগুলো বরাদ্দপ্রাপ্তির সর্বোচ্চ ১৮ মাসের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংককে ২ শতাংশ হারে সুদসহ আসল পরিশোধ করবে।
সাজেদুর রহমান বলেন, কৃষি আমাদের প্রাণশক্তি। বিভিন্ন প্রতিকূলতার মাঝে যখন সব খাত নি¤œমুখী ছিল তখন আমাদেরকে আশ্রয় দিয়েছে এ কৃষি। এখনো পর্যন্ত বাংলাদেশের মোট উৎপাদনের বেশিরভাগই কৃষি নির্ভর। তাই প্রতিবছরই কৃষি কাজ ও উৎপাদন বাড়ানোর জন্য এই খাতে ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানো হচ্ছে। আগামী বছর থেকে পশুপাখি লালন পালনের জন্য নিজস্ব জমির পাশাপাশি লিজ নেয়া জমির বিপরীতেও কৃষকদের ঋণ দিতে পারবে ব্যাংক। এমনকি ছাদ কৃষিতেও বিনিয়োগ করবে ব্যাংক। যারা এই ঋণ বিতরণে ব্যর্থ হবে তারা বাংলাদেশ এগ্রিকালচার কমন ফান্ডে (বিএসিএফ) জমা দিবে। এই অর্থগুলো শতভাগ সফল ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে আবারও কৃষকদের মাঝে বিতরণ করা হবে। আশা করি আগামী বছর থেকে সব ব্যাংকই শতভাগ কৃষি ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারবে।
অনুষ্ঠানে সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আফজাল করিম বলেন, বাংলাদেশের মোট শ্রমশক্তির ৪১ শতাংশ কৃষি খাত নির্ভর। বাংলাদেশের জিডিপিতেও রয়েছে উল্লেখযোগ্য অবদান। প্রায় ১১ শতাংশ। তাই কৃষি খাতকে আরো উন্নত করতে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে ঋণ বিতরণ বৃদ্ধির কোন বিকল্প নেই। কারণ এনজিও-র কাছ থেকে ঋণ নিতে গেলে কৃষকদের ২৪ শতাংশের বেশি মুনাফা গুনতে হয়। ক্ষতিগ্রস্ত হন প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষক।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শওকত আলী খান বলেন, আমাদের দেশের জনসংখ্যার চাপে কৃষি জমি প্রতিনিয়ত হ্রাস পাচ্ছে। এ কারণে তীব্র ডলার সংকটের মধ্যেও বিভিন্ন কৃষি পণ্য বিদেশ থেকে আমদানি করতে হচ্ছে। এসব সমস্যার সমাধানে উৎপাদন বৃদ্ধিই একমাত্র উপায়। বেসরকারি খাতের দি সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাশরুর আরেফিন বলেন, গত বছর কৃষি ঋণ বিতরণে ব্যর্থ হয়েছিল দি সিটি ব্যাংক। সেখান থেকে ধাক্কা খাওয়ার পর এ বছর নতুন করে ঘুরে দাঁড়িয়েছি আমরা। যে লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে তার চেয়ে অনেক বেশি কৃষি ঋণ বিতরণ করেছে ব্যাংকটি। লক্ষ্যমাত্রার ১৬৮ দশমিক ২৩ শতাংশ। ভবিষ্যতেও লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে বলে আশা ব্যক্ত করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, কৃষি উৎপাদন বাড়াতে চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে কৃষকদের জন্য ৩৫ হাজার কোটি টাকা ঋণের বরাদ্দ রেখেছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। এ লক্ষ্যমাত্রা গত অর্থবছরের চেয়ে ১৩ দশমিক ৬০ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছর কৃষি ঋণের লক্ষ্য ছিল ৩০ হাজার ৮১১ কোটি টাকা। এবার কৃষি ও পল্লী ঋণের চাহিদা বিবেচনায় চলতি অর্থবছরে মোট লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংকগুলো ১২ হাজার ৩০ কোটি টাকা, বেসরকারি ২১ হাজার ৯২৩ কোটি টাকা এবং বিদেশি বাণিজ্যিকগুলোর জন্য এক হাজার ৪৭ কোটি টাকা পল্লী ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বিগত ২০২২-২৩ অর্থবছরে ব্যাংকগুলো মোট ৩২ হাজার ৮৩০ কোটি টাকা কৃষি ও পল্লি ঋণ বিতরণ করেছে, যা অর্থবছরের মোট লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১০৬ দশমিক ৫৫ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুসারে, গত অর্থবছরে ৩৩ লাখ ৪ হাজার ৮১১ জন কৃষি ও পল্লী ঋণ পেয়েছেন। এর মধ্যে ব্যাংকগুলোর নিজস্ব নেটওয়ার্ক ও এমএফআই লিংকেজের (এনজিও) মাধ্যমে ৩৬ লাখ ১৮ হাজার ৫৪৫ জন ঋণ পেয়েছে। ১৮ লাখ ৮১ হাজার ৯৩৩ জন নারী ১২ হাজার ৭৫২ কোটি টাকা কৃষি ও পল্লী ঋণ পেয়েছেন। এছাড়া, গত অর্থবছরে ২৭ লাখ ৩৬ হাজার ৮৭ জন ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষি বিভিন্ন ব্যাংক থেকে প্রায় ২২ হাজার ৪০২ কোটি টাকা এবং চর, হাওর প্রভৃতি অনগ্রসর এলাকার ৩ হাজার ৪৪৯ জন কৃষক প্রায় ১৮ কোটি টাকা ঋণ পেয়েছেন।
নীতিমালায় বলা হয়েছে, পরিবর্তিত বিশ্ব পরিস্থিতিতে দেশে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়টি বিবেচনা করে ব্যাংকগুলোকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কৃষি খাতে ঋণ বিতরণ করতে হবে। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর লক্ষ্যমাত্রার বাইরে বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংক লিমিটেড এবং বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড (বিআরডিবি) তাদের নিজস্ব অর্থায়নে ২৬ কোটি ও এক হাজার ৪২৩ কোটি টাকা কৃষি ও পল্লী ঋণ বিতরণ করবে। ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য ব্যাংকগুলোকে নিজস্ব নেটওয়ার্ক (শাখা, উপশাখা, এজেন্ট ব্যাংকিং, কন্ট্রাক্ট ফার্মিং, দলবদ্ধ ঋণ বিতরণ) এবং ব্যাংক-এমএফআই লিংকেজ ব্যবহার করতে পারবে। এক্ষেত্রে ব্যাংকের নিজস্ব নেটওয়ার্কের মাধ্যমে বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ লক্ষ্যমাত্রার ন্যূনতম ৫০ শতাংশ হতে হবে। আগে তা ছিল ৩০ শতাংশ। ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের কৃষি ও পল্লী ঋণ নীতিমালা ও কর্মসূচি’তে নতুন করে বেশকিছু বিষয় যুক্ত করা হয়।
নতুন ঋণগ্রহীতা কৃষকদেরকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ঋণ বিতরণ করতে হবে। পল্লী অঞ্চলে আয়-উৎসারী কর্মকান্ডে ঋণের সর্বোচ্চ সীমা হবে ৫ লাখ টাকা। ছাদকৃষিতে অর্থায়ন করতে পারবে ব্যাংক। অর্থাৎ বাড়ির ছাদে বাগান করতে ঋণ পাবেন গ্রাহক। এছাড়া ভেনামি চিংড়ি, কাঁকড়া ও কুচিয়া চাষে ঋণ বিতরণ করতে পারবে। মৎস্য খাতে লক্ষ্যমাত্রার ন্যূনতম ১৩ শতাংশ এবং প্রাণিসম্পদ খাতে লক্ষ্যমাত্রার ন্যূনতম ১৫ শতাংশ ঋণ বিতরণ করতে হবে।
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
মেসির সঙ্গে প্রেমের গুঞ্জন উড়িয়ে দিলেন সেই সাংবাদিক
দেশের মানুষ হাসিনার ফাঁসি চায় :ভোলায় সারজিস আলম
জীবনযাত্রা ব্যয় আরো বাড়তে পারে
সাবেক ওসি শাহ আলমকে ধরতে সারা দেশে রেড অ্যালার্ট
মনে হচ্ছে পারমাণবিক বোমা ফেলা হয়েছে লস অ্যাঞ্জেলেসে
খালেদা জিয়ার চিকিৎসা ভালোভাবেই হচ্ছে
চাল ও মুরগির বাজার অস্থিতিশীল
সামরিক খাতে বাংলাদেশকে সহায়তা করতে চায় তুরস্ক
মানুষ জবাই করা আর হাত-পা ভেঙে দেয়ার নাম তাবলিগ নয় :জুমার খুৎবা-পূর্ব বয়ান
মুজিব কোট এখন ‘বাচ্চাদের পটি’
সীমান্তে প্রতিরোধ ব্যূহ
গণঅভ্যুত্থানে শহীদ আরও ৬ জনের লাশ ঢামেক মর্গে
মালয়েশিয়ায় এনআইডি ও স্মার্ট কার্ড সেবা কার্যক্রম চালু হচ্ছে
সাংবাদিক মিজানুর রহমান খানের চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী আজ শনিবার
ক্র্যাবের সভাপতি তমাল, সাধারণ সম্পাদক বাদশাহ্
মুকসুদপুরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিএনপির দু’গ্রুপে সংঘর্ষ : আহত ২৫
ভারতকে গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক সহযোগী মনে করে তালেবান
মাইনাস টু ফর্মুলার আশা কখনো পূরণ হবে না : আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী
গাজীপুর কারাগারে শ্রমিক লীগ নেতার মৃত্যু
ট্রাম্পের শপথ অনুষ্ঠানে শীর্ষ পর্যায়ের দূত পাঠাবে চীন