সুগন্ধার ভাঙনে হুমকির মুখে নলছিটি-দপদপিয়া সড়ক

Daily Inqilab মুহাম্মদ আব্দুর রশীদ, ঝালকাঠি থেকে

২১ আগস্ট ২০২৩, ১০:৪৫ পিএম | আপডেট: ২২ আগস্ট ২০২৩, ১২:০৩ এএম

সুগন্ধা নদীর অব্যাহত ভাঙনে হুমকির মুখে পড়েছে ঝালকাঠি জেলার নলছিটি-দপদপিয়া সড়ক। নলছিটি উপজেলার দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের বরিশাল সদরে যাওয়ার একমাত্র সড়কটির কিছু অংশ যে কোনো সময়ে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে বিছিন্ন হয়ে যেতে পারে যোগাযোগ। নলছিটিবন্দর থেকে একটু সামনে গেলেই মল্লিকপুর এলাকা থেকে শুরু করে খোজাখালি পর্যন্ত সড়ক থেকে নদীর দূরত্ব মাত্র পাঁচ থেকে সাত ফুট। প্রতিদিন বিশাল বিশাল মাটির খ- নদীতে ভেঙে পরছে। দপদপিয়া ইউনিয়নের পুরাতন ফেরিঘাট সংলগ্ন এলাকায় নদীর ঢেউ আছড়ে পরছে সড়কে। স্থানীয়রা ভাঙন রোধে বালির বস্তা ফেলেও কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না। বর্ষায় ভাঙন বেড়ে যাওয়ায় দুশ্চিন্তায় পরেছেন নদী তীরের বাসিন্দারা। যদিও এসব পয়েন্টে পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে বালির বস্তা ফেলা হয়েছে। তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল বলেও অভিযোগ করেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

জানা যায়, নলছিটি-দপদপিয়া সড়কটির মোট দূরত্ব ১০ কিলোমিটার। দুই বছর আগে ১৩ কোটি টাকা ব্যয়ে সড়কটি দুই পাশে তিন ফুট প্রশস্ত করে সংস্কার করা হয়েছে। তাই বিগত দিনের চেয়ে বর্তমানে সড়কটি এই অঞ্চলের মানুষদের কাছে আরো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এছাড়া নলছিটি শহর থেকে শুরু করে তার আশেপাশের ইউনিয়নের ব্যবসায়ীরা প্রতিদিন তাদের পণ্য এই সড়ক দিয়েই পরিবহন করেন। তাই স্থানীয়দের দাবি অচিরেই যেন ভাঙন রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়। ঝালকাঠির সুগন্ধা ও বিষখালী নদীর ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে।

এদিকে নদী ভাঙনে ইতোমধ্যে বিলীন হয়ে গেছে একটি সাইক্লোন সেল্টারসহ, অসংখ্য বাড়ি-ঘর ও ফসলি জমি। ভাঙনের মুখ রয়েছে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মাদরাসা, হাট-বাজার, বসত বাড়ি ও ফসলি জমি। বাড়ি-ঘর সহায় সম্পদ হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন অসংখ্য মানুষ। ইতোমধ্যে সুগন্ধা ও বিষখালীর ভাঙনে জেলার কয়েকশ একর ফসলি জমি, গাছপালা, বাড়ি-ঘরসহ বিভিন্ন স্থাপনা বিলীন হয়ে গেছে। মাত্র পাঁচ বছর আগে প্রায় তিন কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত দেউরি সাইক্লোন সেল্টার কাম প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনটি এখন বিষখালীর ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে। তীব্র ভাঙনে ঝালকাঠি সদরের চরকাঠি, ভাটারাকান্দা, কৃষ্ণকাঠি, দেউরী, দিয়াকুল, নলছিটি উপজেলার আমিররাবাদ, বহরমপুর, ষাইটপাকিয়া, মল্লিকপুর, কাজিপাড়া, তিমিরকাঠি, হদুয়া ও রাজাপুরের মঠবাড়ী মাধ্যমিক বিদ্যালয়, লঞ্চঘাট, বাদুরতলা, কাচারিবাড়ী বাজার, চল্লিশকাহনিয়া, মানকি সুন্দর সাইক্লোন সেল্টারসহ, এসব এলাকার ফসলি জমি, বসতঘরসহ বিভিন্ন স্থাপনা।

নদী ভাঙনের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় এসব এলাকায় জনমনে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। ভাঙনের মুখে রয়েছে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মাদাসা, ঈদগাসহ বিভিন্ন স্থাপনা। ভাঙনের শিকার নদীতীরের বাসিন্দারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। যেকোন সময় এসব এলাকার গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা নদীগর্ভে বিলীন হতে পারে বলে হুমকির মুখে থাকা বাসিন্দারা জানিয়েছেন।

নলছিটি পৌর শহরের ব্যবসায়ী শাহাদাত হোসেন বলেন, এই সড়ক দিয়েই নলছিটি বন্দরের সকল ব্যবসায়ীরা তাদের বিভিন্ন পণ্য আমদানি করে থাকেন। আমরা চাল ব্যবসায়ীরা উত্তরাঞ্চলের শহরগুলো থেকে ট্রাকে করে এই সড়ক দিয়েই চাল নিয়ে আসি। সড়কটির ঝুঁকিপূর্ণ পয়েন্ট গুলো যদি নদীগর্ভে চলে যায় তাহলে আমরা যোগাযোগ বিছিন্ন হয়ে যাবো। বিকল্প পথে পণ্য আনতে পরিবহন ব্যয় বেড়ে যাবে। যার কারণে আমরা ক্ষতির সম্মুখিন হবো। তাই সড়কটির ঝুঁকিপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে ভাঙন রোধে স্থায়ীভাবে কার্যকরি পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।

সূর্য্যপাশা এলাকার বাসিন্দা আবদুর রহিম বলেন, ছেলে-মেয়েদের স্কুল কলেজ ও নিত্যদিনের বাজার করার তাগিদে আমাদের নলছিটি বন্দরে প্রতিদিন কম করে হলেও তিন-চার বার যাতায়াত করতে হয়। এখন যদি এই সড়ক নদীতে ভেঙে যায় তাহলে আমাদের দুর্ভোগের সীমা থাকবে না।

পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর নুরুল ইসলাম স্বপন বলেন, সুগন্ধা নদীর ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের একটি প্রকল্প হাতে নেওয়ার কথা শুনেছিলাম, তবে তার কোনো অগ্রগতি নাই। যদি প্রকল্পটি চালু হতো তাহলে এখানের মানুষের দুর্ভোগ লাগব হতো। মূলত ইউ আকৃতির হওয়ার কারণেই এখানে নদী ভাঙনের তীব্রতা বেশি। প্রবল স্রোতের চাপে নদীর নিচের মাটি সরে গিয়ে ওপরের মাটি ভেঙে পরছে। যদি নদীর নিচের অংশে কংক্রিটের ব্লক দিয়ে শক্ত বাঁধ দেওয়া হয় তাহলে ভাঙন রোধ করা সম্ভব হবে।

ঝালকাঠি পানি উন্নয়ন বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী কে এম নিলয় পাশা বলেন, ঝালকাঠির বিভিন্ন অঞ্চলের নদী ভাঙন রোধে ৮৫৫ কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। সেই প্রকল্প গৃহিত হলে নদী ভাঙনে কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়া সম্ভব হবে। আপাতত কিছু কিছু জায়গায় বালির বস্তা ফেলা হয়েছে।


বিভাগ : বাংলাদেশ


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

এফএ কাপে সিটির গোল উৎসব

এফএ কাপে সিটির গোল উৎসব

মাদুরোকে গ্রেপ্তারে ২৫ মিলিয়ন ডলার পুরস্কার ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্রের

মাদুরোকে গ্রেপ্তারে ২৫ মিলিয়ন ডলার পুরস্কার ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্রের

যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত উভয়েই একটি স্থিতিশীল বাংলাদেশ দেখতে চায় :বিদায়ী মার্কিন রাষ্ট্রদূত

যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত উভয়েই একটি স্থিতিশীল বাংলাদেশ দেখতে চায় :বিদায়ী মার্কিন রাষ্ট্রদূত

অর্থনৈতিক সঙ্কটের মধ্যে ইরানে অস্থিরতা বাড়ছে

অর্থনৈতিক সঙ্কটের মধ্যে ইরানে অস্থিরতা বাড়ছে

দ্রুত নির্বাচন হলে সৃষ্ট সংকট দূর হবে : মির্জা ফখরুল

দ্রুত নির্বাচন হলে সৃষ্ট সংকট দূর হবে : মির্জা ফখরুল

গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসনে নিহত আরও ২১

গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসনে নিহত আরও ২১

নিষেধাজ্ঞার কারণে যুক্তরাষ্ট্রে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি পাবে

নিষেধাজ্ঞার কারণে যুক্তরাষ্ট্রে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি পাবে

অভিশংসিত প্রেসিডেন্ট বাসভবনকে ‘দুর্গে’ পরিণত করেছেন

অভিশংসিত প্রেসিডেন্ট বাসভবনকে ‘দুর্গে’ পরিণত করেছেন

ভারতের সঙ্গে করা জনস্বার্থবিরোধী চুক্তি বাতিলের দাবি আনু মুহাম্মদের

ভারতের সঙ্গে করা জনস্বার্থবিরোধী চুক্তি বাতিলের দাবি আনু মুহাম্মদের

পাকিস্তানিদের জন্য ভিসার শর্ত শিথিল করল বাংলাদেশ

পাকিস্তানিদের জন্য ভিসার শর্ত শিথিল করল বাংলাদেশ

মুসলিম রাষ্ট্রপ্রধানদের ঐক্যবদ্ধ কার্যকরী ভূমিকা সময়ের অপরিহার্য দাবি

মুসলিম রাষ্ট্রপ্রধানদের ঐক্যবদ্ধ কার্যকরী ভূমিকা সময়ের অপরিহার্য দাবি

রাজনীতি হওয়া উচিত জনমানুষের কল্যাণে -বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আসলাম চৌধুরী

রাজনীতি হওয়া উচিত জনমানুষের কল্যাণে -বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আসলাম চৌধুরী

বিএনপির সাথে জামায়াতের দূরত্ব নয় বরং সুসম্পর্ক রয়েছে -চাঁদপুরে ডা. তাহের

বিএনপির সাথে জামায়াতের দূরত্ব নয় বরং সুসম্পর্ক রয়েছে -চাঁদপুরে ডা. তাহের

আদমদীঘিতে খালেদা জিয়ার রোগ মুক্তি কামনায় দোয়া

আদমদীঘিতে খালেদা জিয়ার রোগ মুক্তি কামনায় দোয়া

ছাত্রাবাস থেকে রুয়েট শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধার

ছাত্রাবাস থেকে রুয়েট শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধার

দেশীয় চোলাই মদের ট্রানজিট বোয়ালখালী

দেশীয় চোলাই মদের ট্রানজিট বোয়ালখালী

সোনারগাঁওয়ে বিনামূল্যে চক্ষু শিবির

সোনারগাঁওয়ে বিনামূল্যে চক্ষু শিবির

রূপগঞ্জ অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সভা, সংবর্ধনা ও বার্ষিক মিলনমেলা অনুষ্ঠিত

রূপগঞ্জ অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সভা, সংবর্ধনা ও বার্ষিক মিলনমেলা অনুষ্ঠিত

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কর্মীরাও ফ্যাসিস্ট সরকারের নিপীড়নের শিকার : অধ্যাপক মুজিবুর রহমান

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কর্মীরাও ফ্যাসিস্ট সরকারের নিপীড়নের শিকার : অধ্যাপক মুজিবুর রহমান

সাম্প্রদায়িক হামলার অভিযোগে ১১৫টি মামলা, ১০০ জন গ্রেফতার

সাম্প্রদায়িক হামলার অভিযোগে ১১৫টি মামলা, ১০০ জন গ্রেফতার