রফতানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে শঙ্কা
৩০ আগস্ট ২০২৩, ০৯:৫২ পিএম | আপডেট: ৩১ আগস্ট ২০২৩, ১২:০২ এএম
২০২৩-২৪ অর্থ বছরের জন্য সরকারের রফতানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে নিয়ে চ্যালেঞ্জে পড়েছে সরকার। এর প্রধান কারণ বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতি ও বাজার অস্থিরতা। নতুন রফতানিনীতিতে রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৮০ বিলিয়ন ডলার। বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতি, অস্থিতিশীল বাজার ও রাশিয়া-ইউক্রেন চলমান যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে জ্বালানি তেল এবং পরিবহন খরচ বাড়ায় সরকারের সামনে লক্ষ্যে পৌঁছানোর এবারের চ্যালেঞ্জটা একটু ভিন্নমাত্রিক। তবে সব প্রতিবন্ধকতা জয় করে ২০২৪ সাল নাগাদ রফতানি আয়ের এ বিশাল লক্ষ্যমাত্রা ছুঁতে চায় সরকার। এর পক্ষে সরকারের দায়িত্বশীলরা যুক্তি খ-নও করছেন। বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, তৈরি পোশাক আমাদের প্রধান রফতানি পণ্য হলেও বিশেষ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আরও ৫-৬টি পণ্য ১ বিলিয়ন ডলারের বেশি রফতানি করবে। ২০২৪ সাল নাগাদ রফতানির আকার ৮০ বিলিয়নে পৌঁছানো সম্ভব হবে।
অর্থনৈতিক উন্নয়নে সরকারের অগ্রাধিকারমূলক পরিকল্পনা, রফতানি খাতের চাহিদা এবং বিশ্ব বাণিজ্য পরিস্থিতি ও প্রেক্ষাপটের সঙ্গে সামঞ্জস্যমূলক নীতি প্রণয়নের লক্ষ্যে প্রতি তিন বছর পরপর রফতানিনীতি প্রণয়ন করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় রফতানিনীতি ২০২১-২০২৪ দিয়েছে সরকার। যেখানে আট হাজার কোটি মার্কিন ডলারের পণ্য রফতানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা শতভাগ অর্জন করতে হলে তিনটি অর্থবছরেই আগের অর্থবছরগুলোর চেয়ে রফতানি আয় দ্বিগুণের বেশি বাড়াতে হবে।
শিল্পখাতের উদ্যোক্তারা বলছেন, বিদ্যমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ এবং বিশ্ব অর্থনৈতিক সংকট নিরসন না হলে রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন কঠিন হবে। সরকার রফতানি পণ্যের বৈচিত্র্যকরণ ও উৎপাদন বাড়াতে আন্তরিক। এ লক্ষ্যে দেশের আনাচে-কানাচে ইকোনমিক জোন বা অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হয়েছে। রফতানি বাড়াতে দেয়া হচ্ছে বিশেষ প্রণোদনা। তবে সবকিছুর পর এখনো দেশের মূল রফতানি পণ্য তৈরি পোশাক। এ খাতের হাত ধরেই রফতানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব। এর বাইরে তথ্যপ্রযুক্তি (আইটি), চামড়া ও কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পখাতকেও এগিয়ে আসতে হবে।
পণ্য ও সেবা মিলিয়ে ২০২২-২৩ অর্থবছরে রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আয় হয়েছিল ৫৫ দশমিক ৫৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। চলতি (২০২৩-২৪) অর্থবছর রফতানির আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ৭২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। যার মধ্যে পণ্য খাতে ৬২ বিলিয়ন আর সেবা খাতে ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার নির্ধারণ করেছে সরকার।
দেশের রফতানি আয়ের সিংহভাগই আসে পোশাক খাত থেকে। গত অর্থবছর ৫৫ বিলিয়ন ডলার রফতানির মধ্যে ৮৪ দশমিক ৫৭ শতাংশ অথবা ৪৬ বিলিয়ন ডলার এসেছে তৈরি পোশাক খাত থেকে। ২০৩০ সাল নাগাদ পোশাক খাতে রফতানির আকার ১০০ বিলিয়নে উন্নীত করতে চান এ খাতের উদ্যোক্তারা। এ লক্ষ্যে চলতি বছর পোশাক খাতে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে অন্তত আটটি প্রতিষ্ঠান।
রফতানিতে নতুন বাজার সম্প্রসারণ, উৎপাদন খরচ হ্রাস, রোবটিক প্রযুক্তি ব্যবহার, কৃত্রিম বা ম্যানমেড ফাইবার ও ফেব্রিক এবং রিসাইকেলড ফাইবার ব্যবহারের মাধ্যমে পোশাক রফতানির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে চান উদ্যোক্তারা। খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পশ্চিমা বাজারে বাংলাদেশের ব্যবসা সম্প্রসারণ হচ্ছে। আশা করা যাচ্ছে, আগামী বছর অর্থাৎ ২০২৪ সাল নাগাদ দেশের পোশাক ব্যবসা ইতিবাচক ধারায় ফিরে আসতে পারে। তবে ডলারের অস্থিতিশীল বিনিময় হার, গ্যাস-বিদ্যুৎ সরবরাহে ঘাটতি এবং রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার মতো চ্যালেঞ্জগুলো এখনো পোশাকশিল্পের জন্য বড় বাধা।
বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সহ-সভাপতি শহীদুল্লাহ্ আজিম বলেন, বাজার সম্প্রসারণের মাধ্যমে লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব। প্রবৃদ্ধি ১৫ শতাংশ হলে এটা অর্জন করা কঠিন হবে না। এজন্য আমরা ২০টি লক্ষ্য নির্ধারণ করেছি।
প্যাসিফিক জিন্স গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর বলেন, সিইপিজেডে (চট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল) আমরা নতুন কারখানা স্থাপন করেছি। আগামী নভেম্বর থেকে উৎপাদন শুরু হতে পারে। বছর শেষে আমাদের রফতানির পরিমাণ ৬০০ মিলিয়ন ডলারে পৌঁছাতে পারে।
ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন দ্য ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সদস্য এবং জিন্স কনসেপ্ট লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী গাজী আহমেদ বলেন, ইউরোপে যুদ্ধ চলছে, আমেরিকায় চলছে মূল্যস্ফীতি। এ কারণে ক্রেতারা এখন পণ্য কিনছেন না। পশ্চিমা বহু দেশে আমাদের পণ্যের ক্রয়াদেশ কমে যাচ্ছে। আমাদের ব্যবসায়ীদের নতুন নতুন বাজার খুঁজতে হবে। বাংলাদেশের বিদেশি মিশনগুলোকে এ ব্যাপারে জোরালো ভূমিকা রাখতে হবে। তিনি বলেন, রফতানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা কঠিন, তবে অসম্ভব নয়। এজন্য ইউরোপে যুদ্ধের ইতি টানা প্রয়োজন। কারণ, বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের বড় বাজার ইউরোপের দেশগুলো।
সম্প্রতি আগামী তিন থেকে চার বছরের মধ্যে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রফতানি আয় ৫ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। এ বিষয়ে নীতিসহায়তা দেয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া বলেন, সাভারের ট্যানারি শিল্পের সিইটিপি (সেন্ট্রাল ইফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট) ত্রুটিমুক্ত করে মানদ-ের উন্নয়ন করা খুবই জরুরি। বর্তমানে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য থেকে দেশের রফতানি আয়ের পরিমাণ ১ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার। তবে যথোপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে পারলে এ খাতের আয় দ্বিগুণ করা সম্ভব। ২০২২-২৩ অর্থবছরে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রফতানি হয়েছে ১২২ কোটি ডলারের। যার মধ্যে চামড়া ১২, চামড়াজাত পণ্য ৪০ ও চামড়ার জুতা ৭০ কোটি ডলারের। সামগ্রিকভাবে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রফতানিতে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে পৌনে ২ শতাংশ। অন্যদিকে দেশেই এখন তৈরি হচ্ছে তথ্যপ্রযুক্তির (আইটি) পণ্য ও সেবা। তবে রফতানি খাতে এর প্রভাব অত্যন্ত নগণ্য। যদিও বৈশ্বিক তথ্যপ্রযুক্তির বাজার দিন দিন সম্প্রসারিত হচ্ছে। ২০৩০ সালে আইটি পণ্য ও সেবার আকার ছাড়াবে হাজার বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশেরও এ খাতে রফতানির ভালো সম্ভাবনা দেখছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
আমরা একটি কল্যাণকর রাষ্ট্র গঠনের দিকে এগিয়ে যেতে চাই: হাসনাত আবদুল্লাহ
যুবদল কর্মী হত্যার ঘটনায় ছাত্রশিবিরকে জড়িয়ে মিথ্যাচার ও শিবির সভাপতির উপর বর্বরোচিত হামলার প্রতিবাদ
এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ
টাঙ্গাইলে ইসলামি ছাত্র আন্দোলনের বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত
শিক্ষা ও গবেষণায় তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার
মানুষের দুর্দশা মোচনে সরকারকে মনোযোগ দিতে হবে
সেনাবাহিনী ক্ষমতার বিকল্প সত্তা নয়
লিভ টুগেদার ইস্যুতে এবার স্বাগতাকে উকিল নোটিশ
ফিলিস্তিনের সমর্থনে ইস্তাম্বুলে লাখ লাখ মানুষের সমাবেশ
ব্যাপক গোলাগুলিতে নিউইয়র্কে আহত ১০
গাজায় জনসংখ্যা কমেছে ৬ শতাংশ
আইএসের পতাকা উড়িয়ে হামলা, নিহত বেড়ে ১৫
নোয়াখালীতে কৃষি জমির মাটি কাটায় ৫০ হাজার টাকা জরিমানা
ইসরাইলি পার্লামেন্ট থেকে পদত্যাগ করলেন ইয়োভ গ্যালান্ট
ঝিনাইদহে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় তিনজন নিহত
আশা জাগানিয়া প্রত্যাশা করা বড়ই কঠিন : গুতেরেস
মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে নববর্ষ উদযাপন অনুষ্ঠানে উন
শেনজেন অঞ্চলের পূর্ণ সদস্য হলো রোমানিয়া ও বুলগেরিয়া
প্লাস্টিক দূষণের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নির্দেশিকা প্রণয়ন করা হচ্ছে : পরিবেশ উপদেষ্টা
১৫% ভ্যাট বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত অবিলম্বে বাতিল করুন: মাওলানা মোসাদ্দেক বিল্লাহ