সেনাবাহিনী ক্ষমতার বিকল্প সত্তা নয়
০৩ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:১০ এএম | আপডেট: ০৩ জানুয়ারি ২০২৫, ১১:১১ এএম
একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় সেনাপ্রধান যে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন, তা নিয়ে জনমনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর পুলিশ বাহিনীর নিস্ক্রিয়তা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির বেসামাল অবস্থায় সেনাবাহিনী গুরুত্বপূর্ণ ভ’মিকা পালন করেছিল। বিশেষ পরিস্থিতিতে সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ্জামান জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণও দিয়েছিলেন। কিন্তু নোবেল বিজয়ী বিশ্বখ্যাত ব্যক্তিত্ব ড. মুহাম্মদ ইউনূস অর্ন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেয়ার পর অর্ন্তবর্তী সরকার প্রধানই হচ্ছেন রাষ্ট্রের নির্বাহী প্রধান এবং ক্ষমতার ভরকেন্দ্র। প্রায় ১৬ বছর ধরে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর দলীয়করণ, সম্পদ লুণ্ঠন এবং সব সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান অকার্যকর ও ধসে পড়ার চাপ একটি অর্ন্তবর্তী সরকারের পক্ষে সামাল দেয়া খুবই কঠিন। সে বাস্তবতায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে স্বাভাবিকভাবেই সেনাবাহিনী সিভিল প্রশাসনের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। সেনাবাহিনীকে মাঠ পর্যায়ে মোতায়েন করে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতাও দেয়া হয়েছে। এর মানে এই নয় যে, সেনাবাহিনী সরকারের কোনো বিকল্প বা প্যারালাল সত্তা বহন করছে। সেনাবাহিনী প্রধান বলেছেন, অর্ন্তবর্তী সরকার যেভাবে চাইবেন, সেনাবাহিনী সেভাবেই সহায়তা করবেন এবং করছেন। অর্ন্তবর্তী সরকার যখন আর চাইবে না, তখন সেনাবাহিনী সেনানিবাসে চলে যাবে। সেনাপ্রধানের বক্তব্যে জুলাই বিপ্লবের স্পিরিট এবং নতুন স্বপ্ন ও সময়ের পরির্বতনের প্রত্যাশা থাকলেও ঘটা করে গণমাধ্যমে তার সাক্ষাৎকার প্রদানের কারণে জনমনে কিছুটা বিভ্রান্তি ও সংশয়ের জন্ম দিয়েছে।
জাতির এক ক্রান্তিকালে রাজনৈতিক প্রসঙ্গ টেনে সেনাপ্রধানের সাক্ষাৎ গ্রহণ প্রথম আলো পত্রিকার একটি এজেন্ডাভিত্তিক প্রকল্প কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে পারে। সাংবিধানিক আইনের আওতায় রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীর গুরুদায়িত্বে থাকা সেনাপ্রধানকে ক্ষমতার বিকল্প কেন্দ্র হিসেবে দেখানো কাম্য হতে পারে না। খোলামেলা সাক্ষাৎকারে অতীতে সেনাবাহিনীর ক্ষমতা দখল এবং রাজনীতিতে হস্তক্ষেপের প্রশ্নে সেনাপ্রধান বাস্তবতার আলোকে বুদ্ধিদীপ্ত জবাব দিয়েছেন। তবে প্রশ্ন যেমনই হোক, সেনাপ্রধানের কিছু প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে যাওয়াই সমীচিন ছিল। প্রয়োজনে সরকারের পাশে থাকা বা সরকারকে সহযোগিতা করা সেনাপ্রধানের ঐচ্ছিক বিষয় নয়। তিনি জনগণের ট্যাক্সের টাকায় পরিচালিত একটি বাহিনীর প্রধান মাত্র। নিজেকে সেভাবে উপস্থাপন করলে সহজেই জনগণের আস্থা ও সমর্থন বাড়ে। ইতিপূর্বে রয়টার্সকে দেয়া সাক্ষাৎকারেও সেনাপ্রধান নির্বাচনের টাইমলাইন প্রশ্নে নিজের মতামত ব্যক্ত করে খানিকটা বিতর্কের জন্ম দিয়েছিলেন। আগস্টে অর্ন্তবর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর একটি ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দল প্রধান উপদেষ্টার সাথে সাক্ষাৎ করার পর সেনাপ্রধানের সাথেও সাক্ষাৎ করে সহযোগিতা চাওয়ার পর এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল, সে সব ব্যবসায়ী সেনাবাহিনীকে সরকারের বিকল্প অবস্থানে দাঁড় করাতে চাইছেন কিনা। প্রথম আলোর পক্ষ থেকে সেনাপ্রধানকে রাজনৈতিক প্রশ্ন করা হলে, তিনি সপ্রতিভভাবেই বলেছেন, সেনাবাহিনীর রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের ইতিহাস সুখকর নয়। ঊর্দিপরা সেনাপ্রধানকে রাজনৈতিক বিতর্কে টেনে আনা সমীচিন নয়। কারণ ‘ঘর পোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখলে ভয় পায়’। সাম্প্রতিক সময়ে ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি বাংলাদেশ সফরের সময় সেনাপ্রধানের সাথে সাক্ষাৎ করেছিলেন বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অভিযোগ উঠতে দেখা গেছে।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের ৫ মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো জনআকাঙ্খার অনেক কিছুই অধরা রয়ে গেছে। রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠিত হয়নি। পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনা এবং তার দোসররা দেশকে অস্থিতিশীল করতে এবং অর্ন্তবর্তী সরকারকে ব্যর্থ করে দিতে নানাবিধ ষড়যন্ত্র ও উস্কানিমূলক কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে। ভারতের পক্ষ থেকে অনৈতিক-অস্বাভাবিক চাপ ও হুমকি আসছে। পিলখানা হত্যাকান্ডের পুন:তদন্ত ও বিচার প্রশ্নে সেনাপ্রধানের প্রত্যক্ষ সমর্থন ও সহযোগিতা নিয়ে ভিকটিম পরিবার ও জনমনে কোনো সংশয় থাকা উচিৎ নয়। এ বিষয়ে সেনাপ্রধানকে আইনের শাসন ও ছাত্র-জনতার স্পিরিটের সাথে একাত্মতা নিশ্চিত করতে হবে। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা একটি সাংবিধানিক পরিবর্তনের বিষয়। বর্তমান অবস্থায় তা সম্ভব নয়। প্রধান উপদেষ্টা প্রধানমন্ত্রীর স্থলাভিষিক্ত রয়েছেন। তবে হাজার হাজার ছাত্র-জনতার রক্তের উপর প্রতিষ্ঠিত অর্ন্তবর্তী সরকারের মূল শক্তি ছাত্র-জনতা ও জনগণের সমর্থন। সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার খাতিরে স্বৈরাচার শেখ হাসিনার নিয়োগকৃত রাষ্ট্রপতি এখনো বহাল থাকলেও তিনি জনগণের আস্থার প্রতীক নন। অতএব এ সময়ে রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার কোনো প্রশ্ন তোলাই অবান্তর। সেনাপ্রধানের সাক্ষাৎকার গ্রহণের নেপথ্যে সংশ্লিষ্টদের যে এজেন্ডাই থাক না কেন, সেনাপ্রধান সে ফাঁদে পা দেননি। তবে তিনি কিছু প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে গেলেই ভাল করতেন। মনে রাখতে হবে, ড.মুহাম্মদ ইউনূস প্রধানমন্ত্রীর পদমর্যাদায় প্রধান উপদেষ্টা। সেনাবাহিনী সাংবিধানিকভাবে প্রধান উপদেষ্টার অধীন। সুতরাং প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশিত দায়িত্ব পালন করাই সেনাবাহিনীর দায়িত্ব। সেনাপ্রধানকে স্বতন্ত্র কোনো ক্ষমতা কেন্দ্র ভাবা বা বলা যাবে না। আমরা আশা করবো, চলমান পরিস্থিতি উত্তরণে অর্ন্তবর্তী সরকারের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা এবং জন আকাঙ্খা পুরণে সেনাবাহিনী সাম্প্রতিক অতীতের ধারাবাহিকতায় ছাত্র-জনতার পাশে গৌরবময় ভ’মিকা অক্ষুন্ন থাকবে।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ব্রাইটনের বিপক্ষে আর্সেনালের হোঁচট
টানা দ্বিতীয় জয়ে ছন্দে ফেরার ইঙ্গিত সিটির
রিকেলটনের মহাকাব্যিক ইনিংস,রান পাহাড়ের চাপে পাকিস্তান
রহমতের লড়াকু সেঞ্চুরিতে জয়ের স্বপ্ন দেখছে আফগানিস্তান
আশুলিয়ায় ছাত্র হত্যা মামলার আসামি গ্রেফতার
আটঘরিয়ায় প্রভাষকের বাড়িতে দুর্ধর্ষ চুরি
আরব বসন্ত থেকে বাংলাদেশ: স্বৈরাচার মুক্ত নতুন ব্যবস্থার সন্ধানে
৫০০ হজ কোটা বহাল রাখতে প্রধান উপদেষ্টার সহায়তা কামনা
ফেব্রুয়ারিতে আয়ারল্যান্ড-জিম্বাবুয়ে পূর্ণাঙ্গ সিরিজ
পাওনা টাকা ফেরত দিতে বিলম্ব যাওয়ায় পাওনাদার টাকা ফেরত নিতে না চাওয়া প্রসঙ্গে।
‘রাষ্ট্র সংস্কার শেষ করে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতির নির্বাচন দিতে হবে’
শীতে পশু-পাখিদের যত্ন
মানব পাচার রোধ করতে হবে
মজলুমের বিজয় ও জালেমের পরাজয় অবধারিত
বিনিয়োগ বাড়ানোর কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে
১১৬ বছর বয়সে বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক ব্যক্তির মৃত্যু
লাদাখে দুই প্রশাসনিক অঞ্চল তৈরী চীনের
চিনির নিম্নমুখী বাজারে বিশ্বে কমেছে খাদ্যপণ্যের দাম
মার্কিন শপিং সেন্টারে প্রাণ গেল ৫ শতাধিক প্রাণীর
জাতীয় ঐক্য এখন আমাদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন: মির্জা ফখরুল