নিত্যপণ্যের চড়া দামে অস্বস্তিতে ক্রেতারা
১৩ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ১৩ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:০৩ এএম
প্রচণ্ড শীতে জবুথবু দেশ। শীতের সবজিতে ভরে গেছে রাজধানী ঢাকার বাজারগুলো। ভরা মৌসুমেও সবজির দাম আকাশ ছোঁয়া। সিমের কেজি ১০০ টাকা থেকে ১২০ টাকা, ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা থেকে ৬০ টাকা। শীতের প্রতিটি সবজির দাম চড়া। অথচ গত বছর এই সময়ে সিমের কেজি ছিল ৩০ টাকা থেকে ৪০ টাকা। ফুল কপির দাম ছিল ২০ টাকা থেকে ২৫ টাকার মধ্যেই। ডিসেম্বর মাসের চেয়ে জানুয়ারিতে প্রতিটি সবজির দাম বেড়েছে। নতুন বছরের শুরুতে সপ্তাহ না পেরুতেই আরো উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের বাজার। এক সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে চালসহ বেশকিছু ভোগ্যপণ্যের দাম বেড়েছে। ভরা মৌসুমে আরো চড়া হয়েছে সবজির দাম। বেড়েছে ব্রয়লার মুরগি, আটা, ময়দা, ডাল, ছোলা, আদা ও রসুনসহ আরও বেশ কিছু পণ্যমূল্য। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর যাত্রাবাড়ি পাইকারি বাজার, শনির আখড়া বাজার, ফকিরাপুল বাজারসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে যাত্রাবাড়ির ব্যবসায়ীরা বলছেন, নির্বাচনের কারণে সরবরাহ বিঘিœত হওয়ায় পণ্যের দাম বেড়েছে। তবে সাধারণ ভোক্তারা মনে করছেন, সরকারের ভোটের ব্যস্ততার সুযোগ নিয়ে একশ্রেণির অতিমুনাফালোভী অসাধু ব্যবসায়ী ইচ্ছেমতো পণ্যের দাম বাড়িয়েছেন।
যাত্রাবাড়ি বাজারে সাপ্তাহিক বাজার করতে আসা আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, এমন বিপর্যয় পরিস্থিতিতে অতীতে পড়িনি। ভরা মৌসুম অথচ প্রতিটি সবজির দাম বেশি। বগুড়ায় যে কপি বিক্রি হচ্ছে ১৫ টাকা সেই ফুলকপি ঢাকায় বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা। রংপুরের ৩০ টাকা কেজির সিম ঢাকায় ১০০ টাকা। পণ্যের দাম বেশি হওয়ায় কম কম করে সবজি কিনে সংসার চালাচ্ছি।
ফকিরাপুল বাজারে হোস্টেলের সাপ্তাহিক বাজার করতে আসেন মোছা. সুলতানা রাজিয়া ও হেলেনা খাতুন নামের দুই শিক্ষার্থী। উভয়ই রাজধানীর একটি নার্সিং কলেজে অধ্যায়নরত। সকাল ৯ টার দিকে তারা বলেন, ভেবেছিলাম শীতকালে সবজির দাম ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে থাকবে। কিন্তু প্রতি সপ্তাহেই সবজির দাম বাড়ছে। চাল, ডাল, আলু, পিঁয়াজের দাম আমাদের নাগালের বাইরে চলে গেছে। হোস্টেলের মিল খরচ বেড়েছে। এজন্য পরিমাণমতো বাজার করতে পারছি না। শিক্ষার্থীদের তো সীমিত টাকায় চলতে হয়। ফলে খাওয়া দাওয়া কমিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছি। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত কয়েক দিনের ব্যবধানে বাজারে প্রায় সব ধরনের চালের দাম বেড়েছে। এখন সরু (মিনিকেট) চালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬৮ থেকে ৭৫ টাকা দরে। যা ৬৫ থেকে ৬৬ টাকা ছিল। মাঝারি (বিআর-২৮, পায়জাম) চালের কেজিতে সর্বোচ্চ তিন টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৫৬ টাকা। দুই টাকা বেড়ে মোটা চালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫২ টাকা।
ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা জানান, গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই চড়া সবজির দাম। এরমধ্যে আরও একদফা বেড়েছে এই কাঁচা পণ্যটির দাম। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এখন সব ধরনের সবজির দাম ঊর্ধ্বমুখী। কাঁচা পেঁপে ও মুলা ছাড়া ৫০ টাকা কেজির নিচে কোনো সবজি বাজারে নেই। ভরা মৌসুমে শিম প্রতি কেজি ৮০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ফুলকপি ও বাঁধাকপি ৫০ টাকার নিচে মিলছে না। এক পিস লাউয়ের দাম ঠেকেছে ১০০ টাকায়। বাজারে বছরজুড়ে পাওয়া যায় এমন গোল বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা কেজি। ঝিঙ্গা, চিচিঙ্গা ও বরবটির কেজিও ৮০ থেকে ১০০ টাকা।
বাজারে সবজি কিনতে আসা কবির হোসেন বলেন, শীতের সবজির দাম শুরুতে বেশি থাকে। পরে দ্রুত দাম নেমে আসে। এবার সেটা হলো না। বিষয়টা অবাক করার মতো। হয়তো আমরা বেশি দামে কিনতে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। এ জন্য ব্যবসায়ীরা দাম কমাচ্ছেন না।
অন্যদিকে দুদিনের ব্যবধানে বাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে ২০ টাকা পর্যন্ত। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২২৫ টাকা। যা দুদিন আগেও ২০০ থেকে ২০৫ টাকা ছিল। সোনালি জাতের মুরগির দামও বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩২০ থেকে ৩৪০ টাকায়। এছাড়া গরুর গোশতের বেঁধে দেওয়া দাম ৬৫০ টাকা হলেও রাজধানীর অধিকাংশ বাজারে ওই দামে গরুর গোশতের মিলছে না। প্রতি কেজি গরুর মাংস এখন ৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বেশিরভাগ গোশতের বিক্রির দোকানে নেই মূল্যতালিকাও।
মুদি বাজারে ছোলার কেজি ছিল ৮৫ থেকে ৯০ টাকা। কেজিতে ১৫ থেকে ২০ টাকা বেড়ে এখন তা বিক্রি হয়েছে ১০০ থেকে ১১০ টাকায়। এছাড়া দুই সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে অ্যাংকর ডাল বিক্রি হচ্ছে ৭৫ থেকে ৮০ টাকা দরে। বেড়েছে মসুর ডালের দামও। প্রতি কেজি ভালো মানের মসুর ডাল ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। যা আগের থেকে ১০ টাকা বেশি।
সাপ্তাহের ব্যবধানে নতুন বছরের শুরুতে বাজারে আটা, ময়দা, পেঁয়াজ, রসুন ও আদার দাম বেড়েছে। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) বাজারদরের তালিকা বলছে, গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্যাকেটজাত আটা ও ময়দার দাম কেজিতে ৫ টাকা বেড়েছে। এখন বাজারে প্যাকেটজাত আটা বিক্রি হয়েছে কেজিপ্রতি ৬০ থেকে ৬৫ টাকায়। এক সপ্তাহ আগে এই দাম ছিল কেজিপ্রতি ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে প্যাকেটজাত আটার দাম বেড়েছে কেজিতে ৪ দশমিক ৩৫ শতাংশ। এছাড়া বাজারে পেঁয়াজের দাম সাড়ে ৫ শতাংশ বেড়ে ৮০ থেকে ১০০ টাকারমধ্যে বিক্রি হচ্ছে, যা গত সপ্তাহে ৮০ থেকে ৯০ টাকার মধ্যে পাওয়া যেত। একই সঙ্গে রসুনের দাম ৪ দশমিক ৩৫ শতাংশ এবং আদার দাম ২ দশমিক ২২ শতাংশ বেড়েছে।
রাজধানীর বাজারগুলোতে মাছের দামও চড়া। মাছের বাজারে রুই ও কাতল আকারভেদে ৩০০ থেকে ৪৫৯ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। চাষের কৈ ২০০ টাকায় বিক্রি হলেও দেশি কৈ বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৮০০ টাকায়। এছাড়া পাবদা ৩০০, তেলাপিয়া ২৫০ এবং পাঙ্গাস বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ২০০ টাকায়। তবে অন্যান্য দিনের মতোই চাষের মাছের চেয়ে নদীর মাছের দাম ছিল তুলনামূলক বেশি। মাছ বিক্রেতারা জানান, দাম বেড়ে যাওয়ায় চাষের মাছের চাহিদা বেশি। ক্রেতারা চাষের কই, পাবদা, পাঙ্গাস, তেলাপিয়া মাছ বেশি বিক্রি হয়।
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
মেসির সঙ্গে প্রেমের গুঞ্জন উড়িয়ে দিলেন সেই সাংবাদিক
দেশের মানুষ হাসিনার ফাঁসি চায় :ভোলায় সারজিস আলম
জীবনযাত্রা ব্যয় আরো বাড়তে পারে
সাবেক ওসি শাহ আলমকে ধরতে সারা দেশে রেড অ্যালার্ট
মনে হচ্ছে পারমাণবিক বোমা ফেলা হয়েছে লস অ্যাঞ্জেলেসে
খালেদা জিয়ার চিকিৎসা ভালোভাবেই হচ্ছে
চাল ও মুরগির বাজার অস্থিতিশীল
সামরিক খাতে বাংলাদেশকে সহায়তা করতে চায় তুরস্ক
মানুষ জবাই করা আর হাত-পা ভেঙে দেয়ার নাম তাবলিগ নয় :জুমার খুৎবা-পূর্ব বয়ান
মুজিব কোট এখন ‘বাচ্চাদের পটি’
সীমান্তে প্রতিরোধ ব্যূহ
গণঅভ্যুত্থানে শহীদ আরও ৬ জনের লাশ ঢামেক মর্গে
মালয়েশিয়ায় এনআইডি ও স্মার্ট কার্ড সেবা কার্যক্রম চালু হচ্ছে
সাংবাদিক মিজানুর রহমান খানের চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী আজ শনিবার
ক্র্যাবের সভাপতি তমাল, সাধারণ সম্পাদক বাদশাহ্
মুকসুদপুরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিএনপির দু’গ্রুপে সংঘর্ষ : আহত ২৫
ভারতকে গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক সহযোগী মনে করে তালেবান
মাইনাস টু ফর্মুলার আশা কখনো পূরণ হবে না : আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী
গাজীপুর কারাগারে শ্রমিক লীগ নেতার মৃত্যু
ট্রাম্পের শপথ অনুষ্ঠানে শীর্ষ পর্যায়ের দূত পাঠাবে চীন