নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, আন্দোলন শেষ হয়নি। বরঞ্চ নতুন পর্যায়ে প্রবেশ করেছে। এই আন্দোলনে বিজয়ী আমরাই হবো। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে নাগরিক ঐক্যের উদ্যোগে গতকাল ‘৬৯›র গণঅভ্যুত্থান এবং এখন’ শীর্ষক এক সেমিনারে লিখিত বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ৭ জানুয়ারি পরিস্থিতিকে মৌলিকভাবে একটুও পাল্টে দেয়নি। বস্তুগতভাবে আগের মতই আছে অথবা তার চাইতে পরিপক্ক হয়েছে। বিষয়টি প্রনিধানযোগ্য এই কারণেও যে আন্দোলনকারী দল ও শক্তিগুলো এটা মনে করছেন যে তারা হারেননি এবং ইতিমধ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলো ভবিষ্যৎ আন্দোলনের প্রশ্নে কর্মসূচি দিতে শুরু করেছে। আপনাদের মনে আছে, ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের ভোট ডাকাতির পর বিরোধী দল কোন প্রতিরোধ কর্মসূচি দেয়া তো দূরের কথা, শক্ত প্রতিবাদও করতে পারেনি। কিন্তু এখন তারা রাস্তায় নামছে তাদের মধ্যে ঐক্য অটুট আছে এবং শত সহ¯্র অত্যাচার-নির্যাতনের পরেও সরকার মূল দল বিএনপির মধ্যে কোন ফাটল তৈরি করতে পারেনি। কি হবে তা দেখার জন্য হয়তো আমাদের আরো খানিকটা অপেক্ষা করতে হবে। তবে এ কথা বলা যায়, আন্দোলন শেষ হয়নি । বরঞ্চ নতুন পর্যায়ে প্রবেশ করেছে। এই আন্দোলনে বিজয়ী আমরাই হবো।

তিনি বলেন, আমি আর ডামির নির্বাচন করতে গিয়ে তারা নিজেদের রাজনৈতিক চরিত্র ধ্বংস করেছে, সংগঠন বিধ্বস্ত হয়েছে, আন্তর্জাতিক মহলে তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট হয়েছে। যতই বানিয়ে বানিয়ে তাদের নির্বাচনের প্রতি বিশ্ব সমর্থন দেখাবার চেষ্টা করছে তারা, কিন্তু সবার কাছে এটা স্পষ্ট যে, বিশেষ করে পশ্চিমা বিশ্ব এই নির্বাচনকে গ্রহণ করেনি। বলা যেতেই পারে ৭ জানুয়ারির আগে আর পরে পরিস্থিতির এমন কোনো পরিবর্তন হয়নি।

মান্না বলেন, নভেম্বর-ডিসেম্বরে তো মানুষ নিজে থেকেই বলছিল, এবার আর সরকার টিকতে পারবে না। কিন্তু কি হলো তা আমরা দেখলাম। কেন? কেন এমন হলো? তীরে এসেও আমরা তরি ভেড়াতে পারলাম না কেন? এই প্রশ্ন এবং তার জবাবের চর্চা করাই আজকে আমাদের এই আলোচনা সভার মূল প্রতিপাদ্য। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলে, মিডিয়ায় অবশ্য বর্তমান আন্দোলনের সফলতা ব্যর্থতা নিয়ে একটা আলোচনা শুরু হয়েছে। শুরু থেকেই আন্দোলন নিয়ে আন্দোলনকারীদের মধ্যেও কিছু প্রশ্ন ছিল। সেটি থাকাই স্বাভাবিক। সব আন্দোলন নিয়েই থাকে। সামগ্রিক প্রশ্নটাই ছিল একটি গণআন্দোলনকে ঘিরে। গণআন্দোলনকে একটি গণঅভ্যুত্থানে রূপ কিভাবে দেয়া যায় যার সামনে সরকার মাথা নোয়াতে বাধ্য হয় এবং পদত্যাগ করে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের পথ সুগম করে।

তিনি বলেন, বলাই বাহুল্য আন্দোলনকারীদের মাথায় একটি গণঅভ্যুত্থানই ছিল, অন্য কিছু ছিল না, তা এই সরকার যতই তাদেরকে অন্যভাবে চিত্রিত করবার চেষ্টা করুক না কেন এবং সত্যি কথা গণআন্দোলন একটি গণঅভ্যুত্থানে রূপ নেয়নি। কেন? সরকার পক্ষ খুব গলাবাজি করেছেন, এখনো করেন, এই বলে যে আন্দোলনে কোন জনসমর্থন ছিল না। তাই তারা রাস্তায় নামেনি। কিন্তু ৭ জানুয়ারি তথাকথিত ওই ভোটের নির্দিষ্ট দিনে জনগণ ভোট বর্জন করে এটা প্রশ্নাতীতভাবে প্রমাণ করেছে যে তারা বিরোধী দলের এই আন্দোলনের সঙ্গে ছিলো এবং এখনো আছে। তবে হ্যাঁ এটা ঠিক, যেরকম করে অতীতের দেশে, ৬৯ এর পূর্ব পাকিস্তানে, মিশরের তেহেরির স্কয়ারে কিংবা আমেরিকা, ইউরোপে ব্ল্যাক লাইফ ম্যার্টাস এ জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে নেমেছিলো, সেরকম করে এই আন্দোলনে মানুষ নামেনি।

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি বলেন, আমার মনে আছে ২৮ অক্টোবরের আগে আমরা গণতন্ত্র মঞ্চ ও বিএনপির লিয়াজো কমিটি কয়েকবার বসেছিলাম কর্মসূচি ঠিক করতে। ঘেরাও, মিছিল, অবরোধসহ গণআন্দোলনের যে সমস্ত রূপ হয় তা নিয়ে কথা হয়েছিলো। তখন কেউ কেউ প্রশ্ন করেছিলেন আমাদের এই ধরনের একটা কর্মসূচিতে সরকার যদি চূড়ান্ত আঘাত হানে আমরা কি ঘুরে দাঁড়াতে পারবো। ওখান থেকেই জবাব বেরিয়েছিল, পারবো না। সেদিন আমাদের পরামর্শ ছিল যদি তাই হয় তবে চূড়ান্ত আঘাত ঘোষণা না করে খ- লড়াই দিয়ে শুরু করি। সে কথা এখন ইতিহাস অথবা ইতিহাসে নাই। পরবর্তী ঘটনা তার সাক্ষ্য দেয়। ২৮ অক্টোবরের পর আমরা টিকে থাকতে পারিনি। একদিনের একটা কর্মসূচি দিয়েছিলাম। মানুষ চূড়ান্তভাবে সেই কর্মসূচিতে এবং তার পরবর্তীতে প্রদত্ত কর্মসূচিগুলিতে সমর্থন জানিয়েছিল কিন্তু আমরা ঘুরে দাঁড়াতে পারিনি।

সেমিনারে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, নাগরিক ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ কায়সার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।