ভাষাসৈনিকদের নামে সড়ক নামফলকেই সীমাবদ্ধ
২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০১ এএম | আপডেট: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০১ এএম
ভাষা আন্দোলনে অবদান রাখা ভাষাসৈনিকদের নামে অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশন রাজধানী ঢাকায় ১৫টি সড়কের নামকরণ করে। বর্তমান দুই সিটির মধ্যে দক্ষিণে ১৪টি আর উত্তরে একটি সড়ক রয়েছে ভাষাসৈনিকদের নামে। ২০০৭ সালে মরহুম মেয়র সাদেক হোসেন খোকার হাত ধরে শুরু হওয়া এই উদ্যোগ এখনও শুধু নামফলকেই সীমাবদ্ধ। সড়কগুলো যেমন ভাষাসৈনিকদের নামে পরিচিতি পায়নি, তেমনি সারা বছর নামফলকগুলোও থাকে সৌন্দর্যহীন। এমন কি ২১ ফেব্রুয়ারি মহান শহীদ দিবস উপলক্ষেও সংশ্লিষ্ট কেউ নজর দেন না নামফলকগুলোতে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের দোয়েল চত্বর থেকে শিক্ষা ভবন পর্যন্ত সড়কটি ভাষাশহীদ শফিউর রহমান সড়ক নামে নামকরণ করেছে। এছাড়া বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের উত্তর ফটক থেকে ডিআইটি এক্সটেনশন সড়কে বের হতে নির্মাণাধীন সড়কটির নাম খতিব অধ্যাপক মাওলানা মোহাম্মদ সালাহ্ উদ্দিন সড়ক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিটি করপোরেশন। ভাষাসৈনিকদের নামের সড়কগুলোর বাসিন্দা, ব্যবসায়ী কিংবা নিয়মিত চলাচল করেন এমন একাধিক পথচারীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অনেকেই জানেন না কার নামে কোন সড়ক।
ইতিহাসবিদরা বলছেন, ভাষাসৈনিকদের নামে সড়কগুলোর নামকরণ করা হলেও পরবর্তীতে এ নিয়ে খুব বেশি প্রচার-প্রচারণা চালানো হয়নি। নাগরিকরাও সচেতন নয়। যে কারণে সড়কগুলো আগে যে নামে পরিচিত ছিল সে নামেই ডাকা হচ্ছে। ভাষাসৈনিকদের নামে নতুন নামকরণ গুরুত্ব পাচ্ছেন না।
২০০৭ সালের ২ জানুয়ারি সিটি করপোরেশনের ১১তম সভায় ধানম-িসহ বেশকিছু সড়ক ভাষাসৈনিক, বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ গুণী মানুষের নামে নামকরণ করা হয়। জানা গেছে, ভাষাসৈনিকদের নামে সড়কগুলো উদ্বোধন করা হয় ২০০৬ থেকে ২০০৭ সালের মধ্যে। তখন মেয়র ছিলেন সাদেক হোসেন খোকা। সিটি করপোরেশনের দক্ষিণের বেশিরভাগ সড়ক ধানমন্ডিতে অবস্থিত। উত্তরের সড়কটি রয়েছে টেকনিক্যাল মোড়ে।
ধানমন্ডি ১ নম্বর এলাকার সড়কের নামকরণ করা হয়েছিল ভাষাসৈনিক ডা. গোলাম মাওলার নামে। সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড়ে ওভার ব্রিজের নিচে একটি ম্যুরালও আছে। কিন্তু হকার আর রিকশার ভিড়ে ভাষাসৈনিকের নামের ম্যুরাল চোখে পড়াও কষ্টকর।
একজন পথচারী বলেন, ভাষাসৈনিকের নাম রিকশাওয়ালাকে বললে জীবনেও চিনবে না। আমরাও যারা নিয়মিত চলাচল করি তারাও ভালো করে জানি না।
সিটি কলেজ পার হয়ে সামনে এগোলে আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ দ্য ঢাকার দেয়াল। ধানমন্ডি তিন নম্বর সড়কের প্রবেশমুখে লেখা রয়েছে ভাষাসৈনিক মোহাম্মদ সুলতান সড়ক। ২০০৭ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি এটি উদ্বোধন করার তথ্য থাকলেও যার নামে সড়ক তার কোনো তথ্য নেই ফলকে। ধানমন্ডি ৪ নম্বর সড়কের মুখেই ভাষাসৈনিক অলি আহাদের নামের ফলক। জরাজীর্ণ নামফলকের পাশেই চা-সিগারেটের দোকান চালান মানিক। নিজেই জানেন না কার নামে এই সড়কটি।
ভাষাসৈনিক ডা. গোলাম মাওলা ছাড়াও ধানমন্ডি ৭ নম্বরে ভাষাসৈনিক আবদুল মতিন সড়কে তার নামে একটি ম্যুরাল আছে। যা তৈরি হয়েছে এনসিসি ব্যাংকের সৌজন্যে। ধানমন্ডি ৮ নম্বরকে ভাষাসৈনিক গাজীউল হক সড়ক করা হয়েছে। তার একটি ম্যুরালও রয়েছে। তবে ম্যুরালের লেখা প্রায় মুছে গেছে। পড়া যায় না। এটি তৈরি করা হয়েছে ইস্টার্ন ব্যাংকের সৌজন্যে।
ম্যুরালগুলোতে ভাষাসৈনিকদের ছবি, পরিচিতি এবং ভাষা আন্দোলনের সময়ে তাদের ভূমিকার কথা উল্লেখ আছে। ধানমন্ডি ৯ ও ১০ নম্বরে সড়কের নামকরণ করা হয়েছে ভাষাসৈনিক কাজী গোলাম মাহবুবের নামে। ৯ নম্বর সড়কে একটি ম্যুরাল থাকলেও তার সামনে একটি নার্সারির দোকান অনেকটা স্থায়ীভাবে বসানোর কারণে ম্যুরাল খুব একটা দেখা যায় না। ধানমন্ডি ৯/এ ভাষাসৈনিক তোয়াহা, ধানমন্ডি ১৫ নম্বরে ভাষাসৈনিক বিচারপতি আবদুর রহমান চৌধুরী, ধানমন্ডি ১২ নম্বরে ভাষাসৈনিক অধ্যাপক সুফিয়া আহমেদ, ধানমন্ডি ১৩ নম্বরে ভাষাসৈনিক অধ্যাপক সাফিয়া খাতুন, ধানমন্ডি ৫/এ ভাষাসৈনিক কামরুদ্দীন আহমদ এবং ধানমন্ডি ৪/এ ভাষাসৈনিক শওকত আলীর নামে নামকরণ করার ফলক আছে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের অধীনে টেকনিক্যাল মোড় থেকে মিরপুর ১ নম্বর পর্যন্ত সড়কের নামকরণ করা হয়েছে ভাষাসৈনিক প্রিন্সিপাল আবুল কাসেমের নামে। টেকনিক্যাল মোড় থেকে মিরপুর সড়কে যেতে শুরুতে এই ভাষাসৈনিকের নামে একটি ফলক আছে। যদিও সড়কটি পরিচিত দারুস সালাম সড়ক হিসেবে।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সাধারণ সম্পাদক পরিকল্পনাবিদ ড. আদিল মোহাম্মদ খান বলেন, নতুন প্রজন্মের কাছে ভাষাসৈনিকদের ইতিহাস ও অবদান তুলে ধরতে ব্র্যান্ডিংয়ে মনোযোগ দিতে হবে। তাদের নামে সড়কের নামকরণ করা হলেও আসলে ব্র্যান্ডিং করা হয়নি। তাদের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্যও নেই। ফলকগুলোর পাশে বড় করে ভাষাসৈনিকদের সম্পর্কে সব তথ্য রাখা যেতে পারে। স্কুলের মাঠ কিংবা শিক্ষার্থীদের এদের ইতিহাস ও অবদানের বিষয় জানানোর ব্যবস্থা করা উচিত। অর্থাৎ সামগ্রিক পরিকল্পনা নেওয়া গেলে একদিন সবার মুখে মুখে তাদের নাম উচ্চারিত হবে।
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
বাংলাদেশকে পূর্ণ সমর্থন বাইডেনের
পাবর্ত্য চট্টগ্রামে দুর্গম পাহাড়ি সেনা ক্যাম্প পরিদর্শন সেনা প্রধানের
নিউইয়র্কে পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সাথে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠক
আম্মু তোমাকেও আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে
দেশের মাজার রক্ষা করতে হাইকোর্টের নির্দেশ
বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য চীন খুবই গুরুত্বপূর্ণ: উপদেষ্টা সাখাওয়াত
ক্ষোভ বাড়ছে ভারতে
ভারতীয় সাংবাদিকদের এড়িয়ে গেলেন ড. ইউনূস
সোনারগাঁওয়ে তিতাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ওপর হামলা, আহত ৮
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উপাচার্য চায় পবিপ্রবির গ্রাজুয়েটবৃন্দ
হামজাকে পাওয়ার আরও কাছে বাংলাদেশ
বান্দরবানে জামাতুল আনসারের ৩১ সদস্য কে ৪ মামলায় জামিন
সাগরে লঘুচাপ, চার সমুদ্রবন্দরে বন্দরে ৩ নম্বর সতর্কতা সংকেত
সকল অপকর্মে জড়িতদের বিরুদ্ধে যার যার অবস্থান থেকে সামাজিক আন্দোলন জোরদার করতে হবে -চকরিয়ায় নারী সমাবেশে বক্তারা
সেনা কর্মকর্তা হত্যাকারীদের অবিলম্বে সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে
অবশেষে স্বস্তির বৃষ্টি পঞ্চগড়ে
আগামীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নিজেদের প্রস্তুত করতে হবে: ডিএমপি কমিশনার
এবার প্রকাশ্যে এলো চবি ছাত্রশিবিরের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক
জাতিসংঘ মহাসচিবের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন ড. ইউনূস
ফের বাড়ল স্বর্ণের দাম, ভরি ছাড়াল ১ লাখ ৩৫ হাজার টাকা