দেশে কোনো রাজনীতি নেই। জনগণও ভোট দিতে পারে না এবং যায় না। সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারের ভাষায় ‘দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা নির্বাসনে চলে গেছে’। সাবেক আমলা, সাবেক সেনা কর্মকর্তা, পুলিশ কর্মকর্তা এবং ব্যবসায়ীরা দখল করেছে রাজনৈতিক অঙ্গন। প্রকৃত রাজনীতিকরা এখন রাজনীতিতে কার্যত নেই। এ অবস্থায় কিছু আলোচিত-বিতর্কিত ব্যক্তি এখন রাজনীতির বাঘ। এমপিদের লাভের গোমর ফাঁস করায় ওই বাঘরা এখন নিজেদের মধ্যেই কামড়াকামড়ি করছেন।

বিএনপিসহ অর্ধশতাধিক দলের বর্জনের মুখে ডামি প্রার্থীর নির্বাচনে ২৬ আসন সমঝোতা করে ১১টি আসনে জয়ী হয় জাতীয় পার্টি। আর আওয়ামী লীগের ডামি প্রার্থী নির্বাচিত হন ফেসবুকার ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন এমপি নির্বাচিত হন। জন প্রত্যাশা উপেক্ষা করে আসন ভাগবাটোয়ারা করে এমপি হয়ে নিজেদের মধ্যে বিষ্ঠা ছড়াচ্ছেন জাতীয় সংসদের গৃহপালিত বিরোধী দল জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু আর ডামি প্রার্থী হয়ে এমপি হওয়া সায়েদুল হক সুমন।

সম্প্রতি সংসদ সদস্যদের ভাতা ও উন্নয়নকাজে বরাদ্দ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্ট্যাটাস দিয়েছেন। যদিও তিনি ঈদুল ফিতরে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া ত্রাণের শাড়ি নিজের বন্ধুর স্ত্রীকে দিয়ে বিতর্কিত হয়েছেন। সুমন ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান, সিনেমার নায়ক ফেরদৌসের বিতর্কিত কর্ম নিয়ে সংসদে ঝড় তুলেছেন। কিন্তু এমপিদের সুযোগ সুবিধার হাটেহাড়ি ভেঙ্গে দেয়া গৃহপালিত বিরোধী দলের চীফ হুইপ মুজিবুল হক চুন্নু ভালভাবে নেননি। তিনি গত ৭ মে আলোচিত আইনজীবী ও সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর কাছে নালিশ দিয়েছেন।

ওই দিন সংসদে অনির্ধারিত আলোচনায় অংশ নিয়ে সংসদ সদস্য সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনকে ইঙ্গিত করে মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, আমাদের হাউজের একজন সংসদ সদস্যের ফেসবুকের বক্তব্যে আমরা সবাই ভুক্তভোগী। তিনি (ব্যারিস্টার সুমন) বলেছেন, ‘আপনারা জানেন, এমপিরা কত টাকা বেতন পান? তারা তো বলে না, গোপন করে।’ তিনি আরও বলেছেন, ‘১ লাখ ৭২ হাজার টাকা বেতন (মাসিক) পেয়েছেন।’ আমরা কত টাকা বেতন পাই, তা লুকানোর কিছু নেই, ওয়েবসাইটে গেলে পাওয়া যাবে।’ স্পিকারের উদ্দেশে চুন্নু আরো বলেন, ‘ওই সংসদ সদস্য বলেছেন, তিনি তিন মাসে ২৮ কোটি টাকা বরাদ্দ পেয়েছেন। এই ২৮ কোটি টাকা কি আমি পেয়েছি, আপনি (স্পিকার) পেয়েছেন? প্রধানমন্ত্রী পেয়েছেন? ইতোমধ্যে ফেসবুক দেখে আমাকে অনেকেই বলছেন, ২৮ কোটি টাকা পেয়েছেন, এই টাকা কই? তিনি (ব্যারিস্টার সুমন) বলেছেন, এমপি হলে যদি এত লাভ হয়, তাহলে আরও আগে এমপি হতাম।’ স্পিকারের উদ্দেশে চুন্নু বলেন, ‘কোনো সংসদ সদস্য যদি এমন কোনো কথা বলেন, যে কথায় প্রধানমন্ত্রী, স্পিকারসহ ৩৪৯ জন এমপি সম্পর্কে ভুল বার্তা যাবে। যাতে ৩৪৯ জন এমপির ইজ্জত না যায় সে জন্য স্পীকার অভিভাবক হিসেবে ওই সংসদ সদস্যকে ডেকে তাকে কী করবেন, একটা ব্যবস্থা নেবেন।’

এতে বিক্ষুব্ধ হয়েছেন ব্যারিস্টার সুমন। তিনি বলেছেন, যে চুন্নু স্বৈরাচারের দোসর ছিল তার কথায় এখন আমাকে চলতে হবে? চুন্নু সাহেব বিরোধীদল হয়েও সরকারী দলের বিরোধিতা না করে স্বতন্ত্র প্রার্থীর বিরোধিতা শুরু করেছেন। তাকে আমি বলবো, নিজের দায়িত্ব পালন করুন। আমার ইচ্ছা ছিল এমপি হলে যেসব জিনিস প্রকাশ করলে জাতির ভালো হয় তা আমি প্রকাশ করবো। এমপি হবার পর শেখ হাসিনা আমাকে যা যা দিয়েছেন আমি সেগুলো প্রকাশ করেছি। আমি আগে জানতাম না এমপিরা কত সম্মানী পান, এটা লুকানোর কিছু নাই। আমি মনে করি এটা বললে স্বচ্ছতা পাওয়া যায়। কত টাকা বরাদ্দ পেয়েছি সেটাও ফেসবুকে জনগণকে জানিয়েছি। বরাদ্দ মানে তো নগদ টাকা না, আমরা ট্রাস্টি মাত্র। আমাকে সরকার বিশ্বাস করে সাধারণ মানুষের উপকারের জন্যে দিয়েছেন, আমি তাদের কাছে সেটি পৌঁছে দিবো। স্বচ্ছতার জন্যে আমি বলেছি আমি কত কত টাকা পেয়েছি। চুন্নু সাহেব স্পিকারের কাছে নালিশ দিলেন। ব্যারিস্টার সুমন আরো বলেন, আমি সংসদে উত্তর দেবার সুযোগ পাইনি। আমার প্রশ্ন হচ্ছে যে, চুন্নু সাহেব বিরোধিতা করবেন সরকারী দলের কিন্তু সেখানে তিনি বিরোধিতা শুরু করেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীর। ওনার তো খুশি হবার কথা যে আমরা আমাদের হিসাব দেয়া শুরু করেছি। এমপি আমার পেশা না উল্লেখ করে এই আইনজীবী বলেন, আমি কথা দিয়েছি এমপি হিসেবে আমি একটা টাকাও হারাম খাবো না। সুতরাং সরকার থেকে যে টাকা আসবে সেটি আমি সবার সামনে তুলে ধরবো। তবে চুন্নু সাহেবের রাজনীতি করাটাই পেশা।