কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলায় প্রশাসনিক ভবন সঙ্কটে পুরাতন জরাজীর্ণ একটি আদালত ভবন এবং সাবেক উপজেলা পরিষদের অন্য একটি জরাজীর্ণ ভবনে ৮টি বিভাগের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। ভবনগুলোর ভিতরের কক্ষ এবং বারান্দার পলেস্তার খসে পড়ছে। বর্ষাকালে বৃষ্টি হলে ভবনগুলোর ছাদ চুঁয়ে পানি পড়ে গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র নষ্ট হচ্ছে।

পুরাতন জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ স্যাঁত-স্যাঁতে আদালত ভবনটিতে সাব রেজিস্ট্রি অফিসের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। আদালত ভবনটিতে সমাজসেবা অফিস থাকলেও সাবেক উপজেলা পরিষদ ভবনে গেলে ওই ভবনটিতেও ছাদের ট্যাংকির পানিতে ঘেমে ভবনটির দেয়ালে স্যাঁত-স্যাঁতে অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। কক্ষ সঙ্কটে সমাজসেবা অফিসটি উপরে-নিচে দুটি কক্ষে পরিচালিত হচ্ছে। এতে কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং সেবা গ্রহীতাদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

সরেজমিনে ভবনগুলো ঘুরে দেখা যায়, ঝুঁকিপূর্ণ দুটি ভবনে সাব রেজিস্ট্রি অফিস, হিসাবরক্ষণ, নির্বাচন, পরিসংখ্যান, সমবায়, সমাজসেবা ও স্যাটেলমেন্ট অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ভুক্তভোগীদের প্রতিনিয়ত ঝুঁকি নিয়ে দৈনিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে হচ্ছে। দীর্ঘদিন থেকে এ সমস্যা থাকলেও নতুন ভবন নির্মাণ না হওয়ায় একরকম বাধ্য হয়ে ভবনগুলোতে বিভিন্ন বিভাগের কার্যক্রম পরিচালনা করতে হচ্ছে। বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তারা জরাজীর্ণ ভবনগুলো মেরামত করে কিছুদিন কার্যক্রম পরিচালনা করলেও আবার নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে ঝুঁকিপূর্ণ আদালত ভবনটিতে বর্ষাকালে পানি পড়ে দেওয়াল স্যাঁতস্যাঁতে হওয়ায় সাব রেজিস্ট্রি অফিসের গুরুত্বপূর্ণ দলিলপত্র রক্ষায় পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখতে হয়। পুরাতন ঝুঁকিপূর্ণ উপজেলা পরিষদ ভবনের দ্বিতীয় তলায় সমাজসেবা কর্মকর্তার কার্যালয়ে ছাদের পানির ট্যাংকির পানি ছাদ চুঁয়ে পড়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি বার-বার নষ্ট হচ্ছে।

উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ হিসাবরক্ষণ কার্যালয়ের বিভিন্ন কক্ষে ফাটল সৃষ্টি হয়েছে। একাধিকবার বিভিন্ন কক্ষ মেরামত করে ব্যবহার উপযোগী রাখার চেষ্টা করা হয়। হিসাবরক্ষণ কার্যালয়ের সামনে নিরাপত্তা বেষ্ঠনী না থাকায় লোহার সিন্দুক এবং এমবুস সিল সম্পূর্ণ নিরাপত্তাহীন অবস্থায় রয়েছে। কক্ষ সঙ্কটে কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ভুক্তভোগীদের ভোগান্তির মধ্যে দিয়ে অফিসিয়াল কাজ করতে হয়। বর্তমানে দু‘জন কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হলেও তারা কক্ষ সঙ্কটে বসতে পারেন না। এছাড়া হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তাকে একটি কক্ষে দমবন্দ পরিবেশে কাজ করতে হচ্ছে।

উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা কবির আহাম্মদ বলেন, কক্ষ সঙ্কট, বিভিন্ন কক্ষে ফাটল সৃষ্টি, বয়স্ক ও অসুস্থ পেনশনপ্রার্থীরা ঠিকমত বসতে না পারায় তাদেরকে কষ্টের মধ্যে দিয়ে সেবা নিতে হয়। এছাড়া কার্যালয়ের সামনে নিরাপত্তা বেষ্ঠনি না থাকায় উপজেলা গুরুত্বপূর্ণ হিসাবরক্ষণ অফিসটি নিরাপত্তাহীন অবস্থায় রয়েছে। নিরাপত্তা বেষ্ঠনি নির্মাণের জন্য উপজেলা চেয়ারম্যান ও নির্বাহী অফিসারকে বার-বার জানানো হলেও কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।
নাঙ্গলকোট উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নাজমুল হাসান বাছির ভূঁইয়া বলেন, সুন্দর নাঙ্গলকোট বি-নির্মাণের ইচ্ছা রয়েছে। নতুন প্রশাসনিক ভবন নির্মাণের মাধ্যমে প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিরাপদ এবং সুন্দর পরিবেশে যাতে কাজ করতে পারে তা নিশ্চিত করার জন্য আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুরাইয়া আক্তার লাকী জানান, উপজেলা পরিষদ ভবন সঙ্কটে মূল ভবনটিকে ঊর্ধ্বমুখী করার নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। যেসব অফিস ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। সেগুলো এখানে স্থানান্তর করা হবে। উপজেলা সাব রেজিস্ট্রি অফিসটি মুক্তিযোদ্ধা ভবনে স্থানান্তরের জন্য ইতোমধ্যে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পাওয়া গেছে। শীঘ্রই মুক্তিযোদ্ধা ভবনে সাব রেজিস্ট্রি অফিসটি সাময়িকভাবে স্থানান্তর করা হবে।