ডিএসসিসিতে চাকরিচ্যুত দুই কর্মকর্তার পুনঃনিয়োগে চেষ্টা
১৯ মার্চ ২০২৫, ১২:০৯ এএম | আপডেট: ১৯ মার্চ ২০২৫, ১২:০৯ এএম

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে (ডিএসসিসি) রাজস্ব বিভাগের চাকরিচ্যুত দুই কর্মকর্তাকে পুনঃনিয়োগে তুঘলকি কা- ঘটছে। এ দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিয়োগে অনিয়ম, সনদ জাল, দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু কিছুই তোয়াক্কা করছে না ডিএসসিসি। ওই দুই কর্মকর্তার নাম এ এস এম হাসানুজ্জামান ও মো. শামী ফয়সাল। তারা দুজন একই দিন চাকরি আবেদন, লিখিত পরীক্ষা, বাছাই, সাক্ষাৎকার, ফলাফল প্রকাশ, নিয়োগ এবং যোগদান করেছিলেন এমন অভিযোগ রয়েছে। নানা অভিযোগে তারা এক যুগের বেশি সময় ধরে চাকরিচ্যুত। তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা মামলও চলমান। এতো অভিযোগের পরও তাদের পুননিয়োগে প্রস্তুতি নেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সংস্থাটির অন্যান্য কর্মকর্তারা। তাদের অভিযোগ, হাসানুজ্জামান ও শামী ফয়সালকে করপোরেশনে পুননিয়োগ দেওয়া হলে অন্যায়কে প্রশ্রয় দেওয়া হবে। এতে করপোরেশনে অনিয়ম-দুর্নীতি আরও বাড়বে।
ডিএসসিসির কর্তৃপক্ষ বলছে, হাসানুজ্জামান ও শামী ফয়সাল নিজেদের আওয়ামী শাসনামলে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার বলে দাবি করেছেন। এর মধ্যে হাসানুজ্জামান তার চাকরিচ্যুতের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে রীট করেছিলেন। এই রীটের শুনানিতে তার চাকরিচ্যুত অবৈধ ছিল বলে রায় দিয়েছেন আদালত। সেই রায়ের কপি তিনি ডিএসসিসিতে জমা দিয়েছেন। এখত তার পুননিয়োগে করপোরেশনের আইন বিভাগের মতামত চাওয়া হয়েছে। এ মতামতের ভিত্তিতে করণীয় সিদ্ধান্ত নিবে ডিএসসিসি।
ডিএসসিসি সচিব মোহাম্মদ বশিরুল হক ভূঁঞা বলেন, হাসানুজ্জামানের পুননিয়োগে স্থানীয় সরকার আইনে আইনগত বাধা আছে কী না, তা জানতে ডিএসসিসির আইন বিভাগের মতামত চাওয়া হয়েছে। এই মতামত পেলে করণীয় নির্ধারণ করা হবে। এখানে করপোরেশনের সচিবের একার পক্ষে কিছু করা সম্ভব নয়।
ডিএসসিসির সূত্র জানায়, ২০০৬ সালে কর কর্মকর্তা পদে সরাসরি নিয়োগের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে রীটপিটিশন দাখিল করেছিলেন করপোরেশনের সাবেক উপকর কর্মকর্তা মো. আ. আলিম খান। ওই রীট পিটিশনে এ এস এম হাসানুজ্জামানকে বিবাদী করা হয়। ওই মামলায় কর কর্মকর্তা পদে সরাসরি নিয়োগের বিরুদ্ধে প্রথমে তিন মাস এবং পরবর্তীতে মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত স্থগিতাদেশ বহাল রাখা হয়। মামলাটি চলমান রয়েছে। কিন্তু ২০০৬ সালের ১৮ অক্টোবর মৌখিক পরীক্ষা, একই তারিখে বাছাই কমিটির সভা অনুষ্ঠান, সভার কার্য বিবরণী প্রস্তুত, পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ, নিয়োগাদেশ জারী এবং কর্মস্থলে যোগদান দেখিয়ে হাসানুজ্জামানের নিয়োগ সম্পন্ন করে ডিএসসিসি।
পরে হাসানুজ্জামান চাকুরিতে আবেদনপত্রের সঙ্গে ভুয়া পে-অর্ডার ডিএসসিসিতে জমা দেন। আবার আবেদনে উল্লেখ করেছেন ১৯৯৮ সালে কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় হতে বি.কম পিকিউ (পিকিউ) শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হয়েছেন। যা বাংলাদেশের কোনো স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মূল্যায়ন করা হয়নি। জমা দেওয়া সনদে দেখা যায় তিনি বি কম অনার্সের পার্ট-১ শেষ করেছেন। কর কর্মকর্তা পদে চাকরিতে নিয়োগের নূন্যতম যোগ্যতা ছিল বাণিজ্যে ২য় শ্রেণীর স্নাতক ডিগ্রী।
ডিএসসিসির সূত্র আরো জানায়, ২০১২ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ওই অভিযোগের ভিত্তিতে হাসানুজ্জামানকে চাকরিচ্যুত করেছিলেন ডিএসসিসির সাবেক প্রশাসক মো. খলিলুর রহমান। চাকরিচ্যুতের ওই অফিস আদেশে বলা হয়, হাসানুজ্জামান তদানিন্তন কর্তৃপক্ষের বেআইনী যোগসাজসে কর কর্মকর্তা পদে অবৈধভাবে কর্মরত আছেন। তাই তার নিয়োগ আদেশ বাতিল করা হল। তখন তিনি চাকরি ফিরে পেতে উচ্চ আদালতে রীট করেছিলেন। সম্প্রতি এই রীটের শুনানি হয়। আদালত তাকে পুননিয়োগে আদেশ দেন।
হাসানুজ্জামান উচ্চ আদালতের রায়ের কপি ডিএসসিসির সচিব দপ্তরে জমা দেন। তবে নিয়ম অনুযায়ী উচ্চ আদালতের এই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করার বিধান রয়েছে। আপিল করলে হাসানুজ্জামান চাকরি পুননিয়োগ পাবে না। কারণ, তার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ রয়েছে, তার প্রত্যেকটির প্রমাণ ডিএসসিসির কাছে রয়েছে। এমন অবস্থায় হাসানুজ্জামানকে পুননিয়োগ দেওয়া হলে তার চাকরিকে বৈধতা দেওয়া হবে। ২০১২ সাল থেকে তার বেতন-ভাতা বাবদ ৭৫ লাখ টাকা বকেয়া করপোরেশনকে দিতে হবে।
জানতে চাইলে এ এস এম হাসানুজ্জামান ইনকিলাবকে বলেন, কারা আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করছেন আমি তাদের চিনি না। ৬ বছর চাকরি করার পর বাদ দেয়া হয়েছে। এতোগুলো বছর চাকরি ছাড়া কিভাবে কাটিয়েছি কেউতো খবর নেয়নি। আর আমার চাকরিতো প্রাতিষ্ঠানিক নিয়মে হয়েছে। যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে সেগুলো ঠিক না। প্রতিষ্ঠান সবকিছু দেখেই আমাকে চাকরি দিয়েছে। এতোদিন পর এখন কেন এসব কথা আসছে। কোর্টের রায় চলে এসেছে। কোর্টের রায়ের পর আর কি কোনো কথা থাকতে পারে। আইনের মাধ্যমে আসার চেষ্টা করছি তাতেও আমার দোষ। ইতোমধ্যে অনেকে সিনিয়র হয়ে গেছে জুনিয়র থেকে।
জানতে চাইলে শামী ফয়সাল ইনকিলাবকে বলেন, আমি নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর আবেদন করি। অন্য পদেরসহ অগ্রণী ব্যাংকের হাটখোলা শাখা থেকে চারটি প্রে-অর্ডার করি। প্রে-অর্ডারের অংশ এবং কপি আমার কাছে রয়েছে। ব্যাংকের দেয়া সার্টিফিকেটও আমার কাছে রয়েছে। চাকরির পরীক্ষায় ৭টি প্রশ্ন করা হয়েছে আমাকে আমি ৬টির উত্তর দিয়েছি। প্রাতিষ্ঠানিক সকল কাগজপত্র জমা দিয়েছি। সঠিকভাবেই আমাকে নিয়োগ দেয়া হয়। এরপর আমার চাকরি চলে যায়। কোর্টের রায় পাই।
ডিএসসিসির অডিট বিভাগ সূত্র জানায়, ২০১২ সালে হাসানুজ্জামান ও শামী ফয়সালের নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে আপত্তি জানিয়েছিল পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদফতর। কারণ, তাদের দুজনকে অনিয়মিতভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। এ জন্য পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদফতর করপোরেশনের কাছে জবাব চেয়েছিল। কিন্তু করপোরেশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদফতরের বক্তব্য সঠিক এবং মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন। তখন পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদফতরের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, করপোরেশনের জবাব যুক্তিসংগত নয়। ওই দুই কর্মকর্তার চাকরি বাতিলসহ তাদের কাছে আপত্তিকৃত অর্থ আদায় করে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে।
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও






আরও পড়ুন

ইউএসএআইডি বন্ধ করে দেয়া ‘সম্ভবত অসাংবিধানিক’

বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী পাসপোর্ট কোন দেশের?

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জরুরি হস্তক্ষেপ চায় সউদী, নিন্দা রাশিয়ার

বিচার প্রক্রিয়ায় ধীরগতি

ঈদের ছুটিতে শুল্ক স্টেশনে চালু থাকবে আমদানি-রপ্তানি সেবা

নারী সাংবাদিককে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ: এক জনের দোষ স্বীকার, অপরজন কারাগারে

পরিবেশগত ছাড়পত্র না থাকলেই ইটভাটা অবৈধ

অস্ত্র মামলায় ১৭ বছরের দ- থেকে খালাস লুৎফুজ্জামান বাবর

সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক-ইনুসহ সাত জন বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডে

তারেক রহমানসহ সব আসামির খালাস আদেশের বিরুদ্ধে আপিল

রাজধানির বিলাসি ব্র্যান্ডের আউটলেটে ভিড় বাড়ছে ক্রেতাদের

ধামরাইয়ে ব্রিজের নিচ থেকে মাটি কেটে নিল দুর্বৃত্তরা

রিমান্ড শেষে কারাগারে পলক, প্রতিমন্ত্রী এনাম ফের রিমান্ডে

হায়রানিমূলক ধর্ষণ মামলায় গ্রেফতারের প্রতিবাদে নেত্রকোনায় বিক্ষোভ মিছিল

ইফায় ফ্যাসিস্টের সহচরদের পদোন্নতি দেয়ার পাঁয়তারা

নারীর প্রতি সহিংসতা ভয়াবহতায় রূপ নিয়েছে মহিলা পরিষদ

পাঁচ পণ্য নিয়ে ঢাকায় ‘জনতার বাজার’ উদ্বোধন

ড. ইউনূসের আপিলের রায় ২৩ এপ্রিল

ঈদ নিরাপত্তায় ডিএমপি ১৪ নির্দেশনা

জাগপা’র নিবন্ধন ফেরত দিতে ইসিকে নির্দেশ