ঢাকা   বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪ | ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

ইংরেজি বিভাগে পড়ে আমার জীবন শেষ: নাম্বার টেম্পারিং এর শিকার হওয়া কুবি শিক্ষার্থী

Daily Inqilab ইনকিলাব

০৬ এপ্রিল ২০২৩, ০৯:৫৫ এএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ১১:৫০ পিএম

বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধিমালার তোয়াক্কা না করে নিজের পদোন্নতি বোর্ডে নিজেই সভাপতিত্ব করা,বারংবার সহকর্মী-শিক্ষার্থীদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ, বিভাগে অন্য শিক্ষকদের মতামত উপেক্ষা করে নিজের প্রভাব বিস্তার, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) আইন না মেনে একইসঙ্গে দুই পদে বহাল থাকার অভিযোগের পর এবার কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) ইংরেজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. বনানী বিশ্বাসের বিরুদ্ধে স্নাতকোত্তর ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের থিসিস পেপারের ভাইভা বোর্ডে এবং সেমিস্টার ফাইনাল খাতায় নম্বর টেম্পারিং করার অভিযোগ উঠেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিগত কয়েক দিন যাবৎ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গ্রুপে (ফেইসবুক) নম্বর টেম্পারিং এর বিষয়টি তুলে ধরেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা তাদের নম্বর টেম্পারিং এর রেজাল্ট শীট সহ বিভিন্ন কারণ তুলে ধরেন।ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় নামের একটি গ্রুপে লিখেছেন, আমার স্বপ্ন ছিলো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হবো। কিন্তু ইংরেজি বিভাগে পড়ে আমার জীবন শেষ। স্নাতকে আমার রেজাল্ট অনেক ভালো ছিলো। কিন্তু স্নাতকোত্তরে এক ঘসেটি বেগমের বদ নজর পড়লো আমার উপর। এর কারণ হচ্ছে আমি অন্য শিক্ষকদের অনুসরন করি। যাকে আমি অনুসরণ করি বনানী ম্যাম তাকে একদম সহ্য করতে পারেন না। বলি হলাম আমি।আমাকে এমনভাবে আটকানো হলো যাতে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক নিয়োগে আবেদন না করতে পারি।

 

শিক্ষার্থীদের সূত্রে জানা যায়, স্নাতকে ভালো ফলাফলধারীরা স্নাতকোত্তর ২য় সেমিস্টারে থিসিস করার সুযোগ পেয়ে থাকে। যেখানে সর্বনিম্ন সিজিপিএ ৩.২৫ হলে শিক্ষার্থী তার পছন্দ শিক্ষকের অধীনে থিসিস করতে পারবেন। একজন শিক্ষকের অধীনে সর্বোচ্চ তিনজন শিক্ষার্থী এই পেপার করার নিয়ম রয়েছে। স্নাতকোত্তর ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে বনানী বিশ্বাসের অধীনে ৩ জন, অধ্যাপক ড. এমএম শরীফুল করিমের অধীনে ২জন, সহকারী অধ্যাপক আবুল হায়াতের অধীনে ৩ জন ও সহকারী অধ্যাপক শারমিন সুলতানার অধীনে ২ জনসহ মোট ১২জন থিসিস করার সুযোগ পেয়েছিলো। এতে ফাইনাল ভাইভা বোর্ডে বনানী বিশ্বাস এবং শারমিন সুলতানার বিরাগভাজনের শিকার হয় আবুল হায়াত ও শরীফুল করিমের অধীনে থিসিস করা শিক্ষার্থীরা। হায়াত ও শরিফুলের অধীনে থিসিস করা শিক্ষার্থীদের 'সি+' ও 'বি-' গ্রেডে নম্বর দেয়া হয়, যেখানে বনানী ও শারমিনের অধীনে থিসিস করা ৫ জনই পেয়েছে 'এ' এবং 'এ+' গ্রেডে। এতে ফল বিপর্যয় ঘটে শিক্ষার্থীদের।

এর আগে স্নাতকোত্তর ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের দুইজন শিক্ষার্থী ১ম সেমিস্টারে অন্যান্য কোর্সে 'এ' এবং 'এ-' পেলেও বনানীর কোর্সে পায় 'বি' ও 'বি-'। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ তারা যেন পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক পদে আবেদন করতে না পারে সেজন্য কোর্স শিক্ষক ইচ্ছেকৃতভাবে নম্বর কমিয়ে দিয়েছেন। একই ব্যাচের দুইজন শিক্ষার্থী পরবর্তী সেমিস্টারে শরিফুল করীমের অধীনে থিসিস করায় নম্বর কমিয়ে দেয় বিভাগের বনানী ঘনিষ্টজন শিক্ষক শারমিন সুলতানা। ফলে তারা পেয়েছেন 'বি-'। এটা কোনভাবে গ্রহণযোগ্য না বলে জানান একাধিক শিক্ষকরা।

কেন বিশ্ববিদ্যালয়ে নাম্বার টেম্পারিং হচ্ছে? এবিষয়ে একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এবং ছাত্র পরামর্শক ও নির্দেশনার পরিচালক ড. মোহা. হাবিবুর রহমান বলেন, শিক্ষকদের দ্বন্দ্বের কারণে কেন শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্থ হবে? এটা এক ধরণের অপরাধ। একজন শিক্ষকের নৈতিকতা থাকলে এই কাজ করা সম্ভব না।

স্নাতকোত্তর ২০১৯-২০ সেশনের এক শিক্ষার্থী বলেন, একাধিক সেমিস্টারে ১ম, ২য় হওয়ার শিক্ষার্থীরা কিভাবে ভাইবাতে 'সি' এবং 'সি+' পায়! আমরা রেজাল্ট প্রকাশ হওয়ার আগে জানতাম যারা বনানী ম্যামের অধীনে থিসিস করবে তারা ভাইভাতে 'এ+' বা 'এ' পাবে। রেজাল্ট প্রকাশের পর সেটাই হয়েছে। কারণ আমরা জানি তিনি পছন্দের শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে এটা করেন।

ভুক্তভোগী আরেক শিক্ষার্থী বলেন, আমরা অন্যান্য কোর্সে ভালো করলেও ম্যামের কোর্সে ভালো করতে পারিনা। কারণ ওনি নির্দিষ্ট কয়েকজনকে নম্বর দেয়। এছাড়া ওনার অধীনের থিসিস না করায় তিনি আরও ক্ষুব্ধ হয়। যার ফলে এর প্রভাব ফলাফলে দেখতে পাচ্ছি।

বিভাগটির একাধিক শিক্ষকরা বলেন, এটা খুবই দুঃখজনক ঘটনা। শিক্ষকরা নম্বর টেম্পারিং করলে উচ্চশিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন উঠে। একজন শিক্ষকের নৈতিকতা থেকে এরকম কাজ করা উচিত নয়। শিক্ষার্থীরা যেকোনো শিক্ষকের অধীনে থিসিস করতে পারে। এটা তাদের ব্যক্তিগত বিষয়। সেক্ষেত্রে কেন শিক্ষককের ব্যক্তিগত আক্রোশ শিক্ষার্থীদের ফলাফলের উপর পড়বে? এটা কোনভাবে কাম্য নয়।

তবে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অভিযোগের বিষয়ে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে নারাজ অধ্যাপক ড. বনানী বিশ্বাস।

সার্বিক বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি বনানী বিশ্বাস ও শারমিন সুলতানার বিরুদ্ধে স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীদের নম্বর টেম্পারিং এর বিষয়ে অবগত ছিলাম না। এখন যেহেতু জানলাম, শিক্ষার্থীরা লিখিত অভিযোগ করলে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নিব। সেটা যেই হোক, প্রমাণ পেলে আমরা বিষয়টি দেখবো।


বিভাগ : বাংলাদেশ


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

হেলিকপ্টার দেখতে গিয়ে গুলিতে নিহত সুমাইয়ার মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য উত্তোলন
আগামী বছরের প্রথমে কুবিতে সমাবর্তন হবে: উপাচার্য
শেরপুরে পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু
চাঁদপুরে ৪ ইউপি সদস্য আটক
মাদারীপুরে ঘুষ দুর্নীতির মামলায় ডিআইজি কারাগারে
আরও

আরও পড়ুন

রাজধানীতে ট্রেনে কাটা পড়ে সাবেক সেনা সদস্য নিহত

রাজধানীতে ট্রেনে কাটা পড়ে সাবেক সেনা সদস্য নিহত

নতুন আইজিপি হিসেবে নিয়োগ পেলেন বাহারুল আলম

নতুন আইজিপি হিসেবে নিয়োগ পেলেন বাহারুল আলম

জীবন থাকতে জুলাই গণহত্যার দায়ে হাসিনার বিচার করে যাব: আসিফ নজরুল

জীবন থাকতে জুলাই গণহত্যার দায়ে হাসিনার বিচার করে যাব: আসিফ নজরুল

হেলিকপ্টার দেখতে গিয়ে গুলিতে নিহত সুমাইয়ার মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য উত্তোলন

হেলিকপ্টার দেখতে গিয়ে গুলিতে নিহত সুমাইয়ার মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য উত্তোলন

আগামী বছরের প্রথমে কুবিতে সমাবর্তন হবে: উপাচার্য

আগামী বছরের প্রথমে কুবিতে সমাবর্তন হবে: উপাচার্য

ব্যাটারিচালিত রিকশা চালকদের আন্দোলনে মিরপুরে যানচলাচল ব্যাহত

ব্যাটারিচালিত রিকশা চালকদের আন্দোলনে মিরপুরে যানচলাচল ব্যাহত

সুইফটের নিরাপত্তায় লন্ডন পুলিশের এক মিলিয়ন ডলার ব্যয়

সুইফটের নিরাপত্তায় লন্ডন পুলিশের এক মিলিয়ন ডলার ব্যয়

শুধু পরীক্ষার নম্বরের ওপর জোর দেওয়া হয় এমন শিক্ষা ব্যবস্থা তৈরি করা উচিত নয় : প্রধান উপদেষ্টা

শুধু পরীক্ষার নম্বরের ওপর জোর দেওয়া হয় এমন শিক্ষা ব্যবস্থা তৈরি করা উচিত নয় : প্রধান উপদেষ্টা

শেরপুরে পানিতে ডুবে  শিশুর মৃত্যু

শেরপুরে পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু

উদ্যানজাত পণ্য রপ্তানিতে ইরানের আয় ৩ বিলিয়ন ডলার

উদ্যানজাত পণ্য রপ্তানিতে ইরানের আয় ৩ বিলিয়ন ডলার

চাঁদপুরে ৪ ইউপি সদস্য আটক

চাঁদপুরে ৪ ইউপি সদস্য আটক

স্পেনের বিদায়ে থামলেন নাদালও

স্পেনের বিদায়ে থামলেন নাদালও

মাদারীপুরে ঘুষ দুর্নীতির মামলায় ডিআইজি কারাগারে

মাদারীপুরে ঘুষ দুর্নীতির মামলায় ডিআইজি কারাগারে

ঢাকা ও সিটি কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে মুখোমুখি সংঘর্ষ

ঢাকা ও সিটি কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে মুখোমুখি সংঘর্ষ

আওয়ামী লীগকে রাজনীতি করার সুযোগ আমরা দিয়েছি,  এ কথা সঠিক নয়: ফখরুল

আওয়ামী লীগকে রাজনীতি করার সুযোগ আমরা দিয়েছি, এ কথা সঠিক নয়: ফখরুল

আমতলীতে বিএনপি অফিসে হামলা ও ভাংচুর,  বাঁধা দেয়ায় কুপিয়ে জখম  আহত -২

আমতলীতে বিএনপি অফিসে হামলা ও ভাংচুর, বাঁধা দেয়ায় কুপিয়ে জখম আহত -২

উচ্চশিক্ষার গুণগতমান উন্নত করতে অ্যাক্রেডিটেশন অর্জন জরুরি

উচ্চশিক্ষার গুণগতমান উন্নত করতে অ্যাক্রেডিটেশন অর্জন জরুরি

সিটিতে আরও এক বছর গুয়ার্দিওলা

সিটিতে আরও এক বছর গুয়ার্দিওলা

গাজার শিশুদের জন্য এক বিভীষিকা, প্রতি ৩০ মিনিটে একজনের মৃত্যু

গাজার শিশুদের জন্য এক বিভীষিকা, প্রতি ৩০ মিনিটে একজনের মৃত্যু

মরমী কবি আব্দুল কাদের হাওলাদারের ইন্তেকাল

মরমী কবি আব্দুল কাদের হাওলাদারের ইন্তেকাল