রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে সুখবর
০৩ মে ২০২৩, ০৬:৩৫ পিএম | আপডেট: ০৩ মে ২০২৩, ০৬:৫২ পিএম

- শুক্রবারে আরাকানে যাচ্ছেন রোহিঙ্গা প্রতিনিধি দল
- বাংলাদেশ-মিয়ানমার মতপার্থক্যে কাটছেনা শঙ্কা
প্রায় ছয় বছর আগে পার্শ্ববর্তী মিয়ানমারের আরাকান থেকে নির্যাতিত লাখ লাখ রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছিল। সেই থেকে এই পর্যন্ত বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় ও মানবিক সহযোগিতার পাশাপাশি তাদের স্বদেশে প্রত্যাবাসনের প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছে। অনেক পেপার ওয়ার্ক শেষে কয়েক দফা প্রত্যাবাসন উদ্যোগ নেয়া হলেও নানা কারণে তা পিছিয়ে যায়। তবে এবার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে সুখবর পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, এ মাসে প্রথম ধাপে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে দুই দেশের কর্মকর্তারা কাজ করছেন। আর
মিয়ানমার এই প্রথমবারের মতো প্রত্যাবাসন প্রস্তুতি দেখার জন্য রোহিঙ্গা মুসলমানদের একটি প্রতিনিধিদলকে আরাকানে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। সূত্রমতে
আরাকানের পরিস্থিতি প্রত্যাবাসনের জন্য কতটা অনুকূল, তা দেখতে বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে ২০ সদস্যের একটি রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদল আগামী শুক্রবার (রাখাইনের) আরাকানের মংডুতে যাওয়ার কথা রয়েছে।
সূত্র জানিয়েছে, গত ১৮ এপ্রিল কুনমিংয়ে চীনের মধ্যস্থতায় বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় এক বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, চলতি মাসে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুর পরিবেশ কতটা অনুকূল, তা দেখতে তাদের প্রতিনিধিদের নিয়ে বাংলাদেশের কর্মকর্তারা আগামী শুক্রবার আরাকান বা রাখাইনে যাবেন। ওই সফরের এক সপ্তাহের মধ্যে মিয়ানমারের একটি প্রতিনিধিদল কক্সবাজারে এসে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলবেন। পরিস্থিতি ঠিক থাকলে চলতি মাসে ১ হাজার ১৭৬ জনের প্রথম রোহিঙ্গার দলটি নিয়ে প্রত্যাবাসন শুরু করতে চায় চীন ও মিয়ানমার।
বাংলাদেশে রোহিঙ্গা আগমনের পর প্রায় ছয় বছর পেরিয়ে গেলেও দুই দফা তারিখ চূড়ান্ত করেও প্রত্যাবাসন শুরু করা যায়নি। বিশেষ করে রাখাইন বা আরাকানে প্রত্যাবাসনের সহায়ক পরিবেশ এবং মিয়ানমারের সদিচ্ছার অভাবের কারণে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর বিষয়ে রাজি করানো যায়নি মনে করা হয়।
পর্যবেক্ষকদের মতে এমন এক সময়ে মিয়ানমার হঠাৎ করে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করতে চাইছে, যখন আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) দেশটির বিরুদ্ধে গণহত্যা মামলায় পাল্টা যুক্তি উপস্থাপনের সময়সীমা নির্ধারণ করা আছে। আগামী ২৪ মে আইসিজেতে মিয়ানমারের লিখিত সাফাই জমা দেওয়ার কথা রয়েছে। এ ছাড়া আগামী জুনে রোহিঙ্গা ইস্যুতে পাশ্চাত্যের দেশগুলোকে নিয়ে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে একটি নতুন প্রস্তাব উত্থাপনের প্রস্তুতি চলছে। তাই আন্তর্জাতিক চাপ কমাতে
চীনকে সঙ্গে নিয়ে মিয়ানমার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের সর্বশেষ এই পদক্ষেপ নিয়েছে বলে মনে করেছেন আন্তর্জাতিক রোহিঙ্গা বিশ্লেষকেরা।
কূটনৈতিক সূত্রমতে, মিয়ানমারের সামরিক জান্তার ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে চীন কয়েক মাস ধরে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে তৎপর হয়ে উঠে। বিশেষ করে গত বছরের ডিসেম্বরে চীনের বিশেষ দূত দেং সি জুন মিয়ানমার সফর করেন। গত মাসের শুরুতে তিনি ঢাকা সফর করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন এবং পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে দেখা করেন।
পর্যবেক্ষকদের মতে, কয়েক বছর ধরে রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদের রাখাইনে ঘুরিয়ে দেখানোর বিষয়টি আলোচনায় এলেও মিয়ানমার তাতে রাজি হয়নি। এবার হঠাৎ করেই রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদের (রাখাইনে) আরাকানে নিতে রাজি হওয়ার পেছনে কোন দুরভিসন্ধি নাই তা বলা যাবেনা। এ মাস থেকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের যে আগ্রহ চীন ও মিয়ানমার দেখাচ্ছে, তা কতটা বাস্তবসম্মত সেটিও দেখার বিষয়। তাদের মতে প্রত্যাবাসন শুরুর আলোচনা এগোলেও বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে মৌলিক কিছু বিষয়ে মতপার্থক্য রয়ে গেছে।
বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও চীন আলাদা ও যৌথ আলোচনায় সিদ্ধান্ত হয়, এ বছর আরও ৫ ধাপে প্রতিবারে ১ হাজার ২০০ জন করে ৬ হাজার রোহিঙ্গাকে ডিসেম্বরের মধ্যে আরাকানে বা রাখাইনে ফিরিয়ে নেওয়া হবে। সূত্রমতে, এমন সিদ্ধান্ত হলেও মৌলিক কিছু বিষয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমারের মতপার্থক্য দূর হয়নি। বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে সই হওয়া প্রত্যাবাসন চুক্তি অনুযায়ী, প্রতিদিন ৩০০ জন করে সপ্তাহের ৫ দিনে ১ হাজার ৫০০ রোহিঙ্গাকে পাঠানোর কথা। কিন্তু মিয়ানমার এখন বলছে, তাদের প্রস্তুতিতে ঘাটতি থাকায় প্রতিদিন ৩০ জন করে সপ্তাহের ৫ দিনে ১৫০ রোহিঙ্গাকে রাখাইনে ফিরিয়ে নেওয়া যাবে। আর বাংলাদেশ বলছে, চুক্তির শর্ত অনুযায়ী রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে হবে।
২০১৭ সালের আগস্টে রোহিঙ্গা ঢলের মাত্র তিন মাসের মাথায় অনেকটা চীনের চাপে মিয়ানমার বাংলাদেশের সঙ্গে প্রত্যাবাসনের জন্য সমঝোতা স্মারক সই করেছিল। ওই সময় একাধিকবার বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সফর করেছিলেন চীনের তখনকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই। নেপথ্যে চীন থাকলেও তখন বলা হয়েছিল, বাংলাদেশ ও মিয়ানমার দ্বিপক্ষীয়ভাবে এই সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছে।
জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) সর্বশেষ
পরিসংখ্যান অনুযায়ী বাংলাদেশে নিবন্ধিত ৯ লাখ ৬০ হাজার ৫৩৯ জন রোহিঙ্গা অবস্থান করছে। এদের মধ্যে পুরোনো নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা ৩৭ হাজার ৩৬৬।
তবে বাস্তবে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের সংখ্যা ১৬ লাখেরও বেশী।
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

শ্রীপুরে একাধিক মাদক মামলার আসামি আতিকুল ঢালী গ্রেফতার

বিডিআর হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করতেই হবে জানালেন প্রধান উপদেষ্টা

নওগাঁয় জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাচনের দাবিতে মানববন্ধন

কালীগঞ্জে বজ্রপাতে কৃষকের মৃত্যু

প্রশাসন বিএনপির পক্ষে কাজ করছে, এ অবস্থায় নির্বাচন সম্ভব নয়: নাহিদ

চুক্তিতে থাকা সচিবদের ভ্রমণ রাজত্ব

গফরগাঁওয়ে অবশেষে স্বস্তির বৈশাখীর বৃষ্টি

চিঠিতে প্রধান উপদেষ্টাকে যা লিখেছেন বিএনপি মহাসচিব

আশুলিয়ায় সাব-রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে দুদকের অভিযান

গাজা গণহত্যার প্রতিবাদে মৌলভীবাজারে সমাবেশে ইসরাইলী পণ্য বর্জনের আহবান

৬ দফা দাবীতে মহাসড়ক অবরোধ করে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীরা

ইসলাম প্রচারের জন্য শক্তিশালী রাজা-বাদশাহদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন আউলিয়ায়ে কেরামগণ - মাওলানা রেদওয়ান চৌধুরী

নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত থেকে এক বাংলাদেশীকে ধরে নিয়ে যায় আরাকান আর্মী

নওগাঁয় দুই দিনব্যাপী হজযাত্রীদের হজ বিষয়ে প্রশিক্ষন কর্মশালা

ইসলামী ফ্রন্ট আনোয়ারা পশ্চিম পরিষদের কমিটি গঠন সভাপতি মনির,সম্পাদক রফিক

বজ্রপাতে হবিগঞ্জ হাওরে দুই শ্রমিকের মৃত্যু

স্ত্রীসহ সাবেক এমপি ওমর ফারুকের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

আমিরাতের বিনিয়োগ ফোরামে ইরানের সাংস্কৃতিক কূটনীতির অগ্রগতি

নোয়াখালীতে দু’প্রতিবন্ধীকে ধর্ষণ, গ্রেফতার ১

সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে মহাসড়ক ছাড়লো পলিটেকনিকের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা