ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৪ আশ্বিন ১৪৩১
মে মাসে সরকারী হাসপাতালেই সাড়ে ১২ হাজার নতুন রোগী

দক্ষিণাঞ্চলে অপ্রতিরোধ্য ডায়রিয়া পরিস্থিতি

Daily Inqilab নাছিম উল আলম

০৬ জুন ২০২৩, ১০:২০ এএম | আপডেট: ০৬ জুন ২০২৩, ১০:২০ এএম

দক্ষিণাঞ্চলে ডায়রিয়া পরিস্থিতি কোনভাবেই নিয়ন্ত্রনে আসছে না। প্রতি দিনই আক্রন্তের সংখ্যা ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। সদ্য সমাপ্ত মে মাসের ৩১ দিনে দক্ষিণাঞ্চলের ৬ জেলার শুধু সরকারী হাসপাতালগুলোতেই সাড়ে ১২ হাজার ডায়রিয়া রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। চলতি মাসের প্রথম ৬ দিনে আক্রান্তের সংখ্যা আরো প্রায় দেড় হাজার। এ নিয়ে চলতি বছরের গত ৫ মাসে এ অঞ্চলের সরকারী হসপাতালসমুহে ডায়রিয়া আক্রান্ত প্রায় ৩৭ হাজার ডায়রিয়া রোগী চিকিৎসা গ্রহন করল। এর বাইরে বেসরকারী হাসপাতাল ও ক্লিনিক সহ বিভিন্ন চিকিৎসকের ব্যাক্তিগত চেম্বারে আরো দ্বিগুনেরও বেশী রোগী চিকিৎসা নিয়েছে বলে মনে করছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বাস্থ্য বিভাগের দায়িত্বশীল মহল। তবে গত বছরের মত চলতি বছরের প্রথম ৫ মাসেও দক্ষিণাঞ্চলে ডায়রিয়া আক্রান্ত কারো মৃত্যু হয়নি বলে নিশ্চিত করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ।
গত বছরও মার্চ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত দক্ষিনাঞ্চলের সরকারী হাসপাতালগুলোতে ডায়রিয়া আক্রান্ত প্রায় ৭২ হাজার নারী-পুরুষ ও শিশু চিকিৎসা গ্রহন করে। ২০২১ সালেও মার্চ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত দক্ষিণাঞ্চলের সরকারী চিকিৎসা সেবা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ডায়রিয়া আক্রান্ত ৭০ হাজারের বেশী নারী-পুরুষ ও শিশু চিকিৎসা গ্রহন করেছিলেন। সে সময়ে মৃত্যু হয়েছিল ১২ জনের। তবে যে সংখ্যক ডায়রিয়া রোগী সরকারী হাসপাতালসমুহে চিকিৎসা গ্রহন করে থাকে, তার দ্বিগুনেরও বেশী বিভিন্ন চিকিৎসক সহ বেসরকারী হাসপাতাল ও ক্লিনিকে চিকিৎসা নিয়েছেন বলে একাধিক সূত্রে দাবী করা হয়েছে। বিষয়টির সাথে দ্বিমত পোষন করছেন না স্বাস্থ্য বিভাগের দায়িত্বশীল মহলও।
গত মে মাসে ডায়রিয়া আক্রান্তদের মধ্যে বরিশালে প্রায় দেড় হাজার, পটুয়াখালীতে ১ হাজার ৮শ, দ্বীপজেলা ভোলাতে আড়াই হাজার, পিরোজপুরে প্রায় ২ হাজার, বরগুনাতে ১২ শ এবং ঝালকাঠীতেও সহশ্রাধিক নারী-পরুষ ও শিশু ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে সরকারী হাসপাতালসমুহে চিকিৎসা নিয়েছেন।
এ নিয়ে চলতি বছরের প্রথম ৫ মাসে বরিশালের বিভিন্ন সরকারী হাসপাতালে ৬ হাজার, পটুয়াখালীতে প্রায় ৭ হাজার, ভোলাতে প্রায় ১০ হাজার, পিরোজপুরে প্রায় সাড়ে ৭ হাজার ,বরগুনাতে প্রায় ৪ হাজার এবং ঝালকাঠীর ৪টি উপজেলার বিভিন্ন সরকারী হাসপতালে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার নারী পুরুষ ও শিশু ডায়রিয়ার চিকিৎসা গ্রহন করে সুস্থ হয়ে ঘরে ফিরেছেন বলে জানা গেছে।
দক্ষিণাঞ্চলের ৬ জেলায় গত জানুয়ারীতে ৪ হাজার ৩৪৫ জন ডায়রিয়া রোগী বিভিন্ন সরকারী হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহন করলেও ফেব্রুয়ারীতে সংখ্যাটা ৪ হাজার ৬২০ জনে উন্নীত হয়। কিন্তু মার্চে এ অঞ্চলে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা এক লাফে ৬ হাজার ৭০৪ জনে উন্নীত হয়। এপ্রিলে পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটে। এ সময়ে সরকারী হাসপাতালসমুহে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যাটা ৯ হাজার ৬৮২ জনে উন্নীত হয়। আর সদ্য সমাপ্ত মে মাসে চলতি বছরের সর্বাধিক ১২ হাজার ৪৬৪ জন ডায়রিয়া রোগী দক্ষিণাঞ্চলের সরকারী হাসপাতালসমুহে চিকিৎসা গ্রহন করেছেন। এ পরিসংখ্যান দক্ষিণাঞ্চলের ডায়রিয়া পরিস্থিতির জন্য কোন সুখকর বার্তা দিচ্ছে না বলেই শংকা প্রকাশ করছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বাস্থ্য বিভাগের দায়িত্বশীল মহল সহ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগনও। চিকিৎসকগন সহজপাচ্য খাবার গ্রহনের পাশাপাশি পথ খাবার গ্রহনে সতর্কতা অবলম্বন সহ বিশুদ্ধ পানি পান নিশ্চিত করারও পরামর্শ দিয়েছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় পরিচালক ডা. হুমায়ুন শাহিন খান জানান, গত কয়েকটি বছর করেনা’র সাথে ডায়রিয়া ও ডেঙ্গু নিয়ে দক্ষিনাঞ্চলের সব চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা নিরন্তর পরিশ্রম করে চলেছে। তার মতে,পানিবাহিত এ রোগ প্রতিরোধে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে বলেও জনান। তারমতে, ডায়রিয়া চিকিৎসায় দক্ষিণাঞ্চলে ৪১০টি মেডিকেল টিম কাজ করছে। তিনি সকলকে খাবার গ্রহনে অধিকতর স্বাস্থ্য সচেতন হবারও পরামর্শ দেন। চিকিৎসকের কিছু ঘাটতি থাকলেও ডায়রিয়া প্রতিরোধে এ অঞ্চলের সবগুলো সরকারী স্বস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠান ও কর্মী প্রস্তুত রয়েছে বলে জানান বিভভাগীয় পরিচালক। এমনকি ডায়রিয়া চিকিৎসায় আইভি স্যালাইন সহ কোন চিকিৎসা সামগ্রীর অভাব নেই বলে দাবী করে পরিচালক জানান, মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত দক্ষিণাঞ্চলের সরকারী হাসপাতালগুলোতে ১ হাজার সিসি’র প্রায় ৪৮ হাজার এবং ৫শ সিসি’র প্রায় ২৭ হাজার ব্যাগ স্যালাইন মজুত রয়েছে। পাশাপাশি প্রয়োজনীয় ক্যাপসুল এবং ওরাল সাসপেন্সন এর কোন সংকট নেই বলেও দাবী বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক-এর।


বিভাগ : বাংলাদেশ


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

ইত্তিহাদেই সিটিকে রুখে দিল ইন্টার

ইত্তিহাদেই সিটিকে রুখে দিল ইন্টার

রোনালদোদের নতুন কোচ পিওলি

রোনালদোদের নতুন কোচ পিওলি

দক্ষিণ আফ্রিকাকে গুড়িয়ে আফগানদের ঐতিহাসিক জয়

দক্ষিণ আফ্রিকাকে গুড়িয়ে আফগানদের ঐতিহাসিক জয়

যেই গৌরব কেবল শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামের

যেই গৌরব কেবল শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামের

রিট করে ‘খেলাপি ঋণ স্থগিত’ বন্ধ চান ব্যাংক-মালিকরা

রিট করে ‘খেলাপি ঋণ স্থগিত’ বন্ধ চান ব্যাংক-মালিকরা

বিদেশি ঋণ ফের ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে

বিদেশি ঋণ ফের ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে

টাকা উদ্ধারের নামে ‘ঘুষ’ চাওয়ার অভিযোগ জিএম শাহজাহান চৌধুরীর’র বিরুদ্ধে

টাকা উদ্ধারের নামে ‘ঘুষ’ চাওয়ার অভিযোগ জিএম শাহজাহান চৌধুরীর’র বিরুদ্ধে

জাতীয় ঐক্য বিনষ্টকারী কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকতে হবে

জাতীয় ঐক্য বিনষ্টকারী কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকতে হবে

৬০ হাজার টন ইউরিয়া সার কিনবে সরকার, ব্যয় ২৩৬ কোটি টাকা

৬০ হাজার টন ইউরিয়া সার কিনবে সরকার, ব্যয় ২৩৬ কোটি টাকা

আইকনিক লিডার তারেক রহমান ও বাংলাদেশের রাজনীতি

আইকনিক লিডার তারেক রহমান ও বাংলাদেশের রাজনীতি

পতিত স্বৈরাচার ও ভারতের চক্রান্ত চলছেই

পতিত স্বৈরাচার ও ভারতের চক্রান্ত চলছেই

তারেক রহমানের রাষ্ট্রনায়কোচিত বক্তব্য ও দিকনির্দেশনা

তারেক রহমানের রাষ্ট্রনায়কোচিত বক্তব্য ও দিকনির্দেশনা

ইসরাইলের দখলদারিত্ব বন্ধের প্রস্তাব বিবেচনা জাতিসংঘের

ইসরাইলের দখলদারিত্ব বন্ধের প্রস্তাব বিবেচনা জাতিসংঘের

উত্তপ্ত মণিপুরে অত্যাধুনিক অস্ত্র দিয়ে নতুন করে গোলাগুলি

উত্তপ্ত মণিপুরে অত্যাধুনিক অস্ত্র দিয়ে নতুন করে গোলাগুলি

২৭ দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনার নতুন ভ্যারিয়্যান্ট

২৭ দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনার নতুন ভ্যারিয়্যান্ট

২০০ হাতি নিধনের সিদ্ধান্ত জিম্বাবুয়ের

২০০ হাতি নিধনের সিদ্ধান্ত জিম্বাবুয়ের

কলেরাসহ মারাত্মক রোগের ঝুঁকিতে সুদানের ৩৪ লাখ শিশু

কলেরাসহ মারাত্মক রোগের ঝুঁকিতে সুদানের ৩৪ লাখ শিশু

১১ হাজার ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীর প্রাণ গেছে

১১ হাজার ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীর প্রাণ গেছে

বেলারুশে হামলা হলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবে : লুকাশেঙ্কো

বেলারুশে হামলা হলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবে : লুকাশেঙ্কো

তাইওয়ান প্রণালীতে চীনের যুদ্ধবিমান

তাইওয়ান প্রণালীতে চীনের যুদ্ধবিমান