ওরিয়ন গ্রুপের চেয়ারম্যান ও তাঁর পরিবারের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দের নির্দেশ
১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০৫ এএম

ওরিয়ন গ্রুপের চেয়ারম্যান ওবায়দুল করিম ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দের নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট বিএফআইইউ। বুধবার সব ব্যাংকে চিঠি দিয়ে তাদের ব্যক্তি হিসাব জব্দের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
রাষ্ট্রীয় আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বিএফআইইউ'র চিঠিতে ওরিয়ন গ্রুপের চেয়ারম্যান ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ন্ত্রী আরজুদা করিম, সালমান ওবায়দুল করিম, জারিন করিম, মেহেদি হাসানের ব্যক্তি হিসাব জব্দের নির্দেশ দেওয়া হয়।
৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর সাবেক মন্ত্রী, এমপি, রাজনীতিবিদ, আমলা, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন ব্যক্তির অ্যাকাউন্ট জব্দ করতে শুরু করে বিএফআইইউ। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড থেকেও নেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
সব সরকারের আমলে ক্ষমতাসীনদের ব্যবসায়িক অংশীদার বানিয়ে সরকারি অর্থ লুটপাটের অভিযোগ উঠে ওরিয়ন গ্রুপের বিরুদ্ধে। এই শিল্প গ্রুপটি ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে একে একে সাতটি পাওয়ার প্লান্ট স্থাপনের নামে অন্তত আড়াই হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে। আবার সরকারকে কোনো বিদ্যুৎ না দিয়ে ক্যাপাসিটি চার্জের নামে আত্মসাৎ করেছে আরও সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা।
এইসব লুটপাটে সহায়তায় সাত বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালিকানাও দেওয়া হয় আওয়ামী লীগ নেতা মির্জা আজম, আলাউদ্দীন নাসিম ও শামীম ওসমানকে। ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের অনুসন্ধানে সরকারি অর্থ লুটপাটের এই চিত্র পাওয়া গেছে। টিআইবি বলছে, এইসব লুটপাটে জড়িতদের দ্রুত শাস্তির আওতায় আনা প্রয়োজন।
নারায়ণগঞ্জের গগন নগরের ১০২ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎকেন্দ্র ডিজিটাল পাওয়ার অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস লিমিটেডের ৬০ শতাংশের মালিকানা ওরিয়নের। বাকি ৪০ শতাংশের মালিকানা দেওয়া হয় আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী ও হুইপ মির্জা আজম, তাঁর তিন ভাই ভাই মির্জা গোলাম কিবরিয়া, মির্জা গোলাম রাব্বানি ও মির্জা জিল্লুর রহমানকে।
নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে ওরিয়ন গ্রুপের আরও একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র ১০০ মেগাওয়াটের ডাচ বাংলা পাওয়ার অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস। এতে ওরিয়নের হাতে ৭০ শতাংশ মালিকানা রেখে, বাকি ৩০ শতাংশ দেয়া হয় আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য আলাউদ্দীন আহমেদ চৌধুরী নাসিম ও তাঁর ভাই জামাল উদ্দীন আহমেদকে।
একইভাবে নারায়ণগঞ্জের আরেকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র ১০৪ মেগাওয়াটের ওরিয়ন পাওয়ার সোনারগাঁও লিমিটেডের ৪ শতাংশের মালিকানা আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি শামীম ওসমানের। আর বাকি ৯৬ শতাংশের মালিকানা ডিজিটাল পাওয়ার অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস লিমিটেডের। এই কোম্পানিটির মালিকানায় আছে ওরিয়ন ও মির্জা আজম এবং তাঁর তিন ভাই।
অনুসন্ধান আরও বলছে, খুলনার জাবুশায় অবস্থিত ১১০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার ওরিয়ন পাওয়ার রুপসা লিমিটেডের যৌথ মালিকানায় আছে ডিজিটাল পাওয়ার অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস লিমিটেড। সঙ্গত কারণে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রেও মির্জা আজম ও তাঁর তিন ভাইয়ের অংশীদারত্ব আছে।
আবার মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ার ৬৩৫ মেগাওয়াটের ওরিয়ন পাওয়ার ইউনিট-২–এর মালিকানায় ওরিয়ন গ্রুপের পাশাপাশি রাখা হয়েছে চীনের ফুজিয়ান লং এনার্জি ও দুবাইয়ের ফাস্টজেন এনার্জি নামের দুইটি কোম্পানিকে। অবাক করা বিষয় হচ্ছে, ওই দুই বিদেশি কোম্পানির মালিকও ওরিয়ন গ্রুপের চেয়ারম্যান ওবায়দুল করিম ও তাঁর ছেলে সালমান ওবায়দুল করিম। অভিযোগ উঠেছে, অর্থ পাচারের সুবিধার্থে দুবাই ও চীনের এই দুই কোম্পানিকে ব্যবহার করা হয়।
ওরিয়ন পরিবারের মালিকানাধীন ১০০ মেগাওয়াটের ক্ষমতার সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র মোংলার এনারগন রিনিউএবলস লিমিটেডে চীন ও দুবাইয়ের প্রতিষ্ঠান দুইটির শেয়ার আছে। মূলত এই দুই বিদ্যুৎকেন্দ্রের কেনাকাটা আর বিনিয়োগের বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশি চীন-দুবাইয়ের প্রতিষ্ঠান দুইটির মাধ্যমে মাধ্যমে পাচার করা হতো।
তবে ওরিয়ন পাওয়ার মেঘনাঘাট লিমিটেড নামের বিদ্যুৎকেন্দ্রটির একক মালিকানা ওরিয়ন গ্রুপের। পরিসংখ্যান বলছে, এই ৭ বিদ্যুৎকেন্দ্রের নামে বিভিন্ন সময়ের ব্যাংক ঋণ নেওয়া হয় ৪ হাজার ৪৯৫ কোটি টাকা। আর সহজে ব্যাংক ঋণ পাওয়াতে সহায়তা ছিল বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালিকানায় থাকা আওয়ামী লীগ নেতারা।
এর মধ্যে ডিজিটাল পাওয়ার অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস লিমিটেডের নামে নেওয়া হয়েছে ৩৪০ কোটি, ওরিয়ন পাওয়ার মেঘনাঘাট লিমিটেডের নামে ২৩৫ কোটি, ওরিয়ন পাওয়ার ইউনিট-২ এর নামে ১ হাজার ৭৬ কোটি, এনারগন রিনিউঅ্যাবলস লিমিটেডের নামে ১ হাজার ৩০৬ কোটি, ডাচ–বাংলা পাওয়ার অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস লিমিটেডের ১০২, ওরিয়ন পাওয়ার রুপসার নামে ৬২৫ ও ওরিয়ন পাওয়ার সোনারগাঁও লিমিটেডের নামে নেওয়া হয়েছে ৮১১ কোটি টাকা।
এছাড়াও ওরিয়ন বিভিন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্রের নামে সরকারের কাছ থেকে ক্যাপাসিটি চার্জ নিয়েছে প্রায় ৪ হাজার ৫২৫ কোটি টাকা, যা সহজে পেতে সহায়তা করেছে ওরিয়ন সাথে থাকা আওয়ামী লীগ নেতারা। বিশ্লেষকরা বলছেন, বিদ্যুৎখাত নিয়ে ওরিয়ন যে নৈরাজ্য করেছে তার জন্যে তাদের বিচারের আওতায় আনা উচিত ।
ওরিয়ন যখন যে রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় আসে তাদের অংশীদার বানিয়ে গ্রুপের বিভিন্ন কোম্পানির নামে ১১ হাজার ৪১৯ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। এর মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১ হাজার ২৩৯ কোটি টাকা।
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও






আরও পড়ুন

ইউএসএআইডি বন্ধ করে দেয়া ‘সম্ভবত অসাংবিধানিক’

বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী পাসপোর্ট কোন দেশের?

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জরুরি হস্তক্ষেপ চায় সউদী, নিন্দা রাশিয়ার

বিচার প্রক্রিয়ায় ধীরগতি

ঈদের ছুটিতে শুল্ক স্টেশনে চালু থাকবে আমদানি-রপ্তানি সেবা

নারী সাংবাদিককে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ: এক জনের দোষ স্বীকার, অপরজন কারাগারে

পরিবেশগত ছাড়পত্র না থাকলেই ইটভাটা অবৈধ

অস্ত্র মামলায় ১৭ বছরের দ- থেকে খালাস লুৎফুজ্জামান বাবর

সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক-ইনুসহ সাত জন বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডে

তারেক রহমানসহ সব আসামির খালাস আদেশের বিরুদ্ধে আপিল

রাজধানির বিলাসি ব্র্যান্ডের আউটলেটে ভিড় বাড়ছে ক্রেতাদের

ধামরাইয়ে ব্রিজের নিচ থেকে মাটি কেটে নিল দুর্বৃত্তরা

রিমান্ড শেষে কারাগারে পলক, প্রতিমন্ত্রী এনাম ফের রিমান্ডে

হায়রানিমূলক ধর্ষণ মামলায় গ্রেফতারের প্রতিবাদে নেত্রকোনায় বিক্ষোভ মিছিল

ইফায় ফ্যাসিস্টের সহচরদের পদোন্নতি দেয়ার পাঁয়তারা

নারীর প্রতি সহিংসতা ভয়াবহতায় রূপ নিয়েছে মহিলা পরিষদ

পাঁচ পণ্য নিয়ে ঢাকায় ‘জনতার বাজার’ উদ্বোধন

ড. ইউনূসের আপিলের রায় ২৩ এপ্রিল

ঈদ নিরাপত্তায় ডিএমপি ১৪ নির্দেশনা

জাগপা’র নিবন্ধন ফেরত দিতে ইসিকে নির্দেশ