রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবে থামছে না কাটা, ১১ জুনকে জাতীয় পাহাড় রক্ষা দিবস ঘোষণার দাবি
১১ জুন ২০২৩, ১১:০৫ পিএম | আপডেট: ১২ জুন ২০২৩, ১২:০০ এএম
পাহাড় ধ্বসে চট্টগ্রামে ও তিন পার্বত্য জেলায় নিহতদের স্মরণে এবং ১১ জুনকে জাতীয় পাহাড় রক্ষা দিবস ঘোষণার দাবিতে পিপল’স ভয়েস ও বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের আয়োজনে মোমমবাতি প্রজ্জ্বলন ও নাগরিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সমাবেশে বক্তারা বলেন রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবে এবং প্রাশাসনিক নির্লিপ্ততায় পাহাড় কাটা থামছে না। পাহাড় ধসে প্রাণহানি ঠেকাতে হলে আগে পাহাড় কাটা বন্ধ করতে হবে। আর পাহাড় কাটা বন্ধে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর উদাসীনতা দূর করতে কঠোর কর্মসূচির কোনো বিকল্প নেই।
নাগরিক সমাবেশ শেষে ২০০৭ সালে চট্টগ্রামে পাহাড় ধ্বসে নিহত ১২৭ জন এবং ২০১৭ সালে রাঙামাটিতে পাহাড় ধ্বসে নিহত ১৩০ জন সকল পাহাড় ধ্বসে সকল নিহতদের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। এরপর মোমবাতি প্রজ্জ্বলন করা হয়।
নাগরিক সমাবেশে পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদ চট্টগ্রামের সভাপতি ডা. একিউএম সিরাজুল ইসলাম বলেন, রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ও প্রাশাসনিক উদ্যোগ ছাড়া পাহাড় রক্ষা হবে না। আমরা বহু বছর ধরে পাহাড় রক্ষার দাবিতে আন্দোলন করছি। কিন্তু কারো টনক নড়ছে না। বর্ষা এলে সরকারি সংস্থাগুলো কিছু মিটিং করে। এসব করেই তারা দিন পার করে। কার্যকর কোনো কিছু এত বছরেও দেখলাম। তাই সবার আগে প্রয়োজন রাজনৈতিক সদিচ্ছা। তারপর পাহাড় রক্ষার উদ্যোগ নিলে তা বাস্তবায়ন সম্ভব হবে। অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইদ্রিস আলী বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে ২ বছর আগে এই সমাবেশ থেকেই বলেছিলাম চট্টগ্রামের পাহাড় রক্ষার দায়িত্ব উনাকেই নিতে হবে। তিনি ৪ সরকারি সংস্থাকে ডেকেছিলেন। কিন্তু এসব সংস্থার কর্তাদের ঘুম ভাঙে না। যাদের কাজ করার কথা তারা যেন যন্ত্রমানব, নির্লিপ্ত। তাদের ঘুম ভাঙে না। ১৬ বছরে আমরা কিছু করতে পারিনি। যাদের দায়িত্ব ছিল তাদের নিরবতাকে ধিক্কার জানাই। যারাই দায়িত্বে অবহেলা করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাই।
উদীচী চট্টগ্রাম জেলা সংসদের সভাপতি জসিম চৌধুরী সবুজ বলেন, এই চট্টগ্রামে পরিবেশ অধিদপ্তরের ভবন পাহাড় কেটে। সিডিএ পাহাড় কেটে রাস্তা করেছে। সিটি করপোরেশন কাউন্সিল আকবর শাহতে পাহাড় কাটছে। যাদের রক্ষার কথা তারাই পাহাড় কাটছে। তাই প্রতি বছর পাহাড় ধ্বসে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। পাহাড় কাটা বন্ধ করতে হবে। কিন্তু সেই উদ্যোগ কেউ নিচ্ছে না।
আইইবি চট্টগ্রাম কেন্দ্রের সাবেক সভাপতি প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদার বলেন, বছরের পর বছর ধরে আমরা দাবি জানাচ্ছি। কিন্তু যাদের কাজ করার কথা তারা ঘুমিয়ে আছে। নির্লিপ্ত প্রশাসনকে ধাক্কা দিয়ে সজাগ করতে হবে। প্রয়োজনে আমরা কঠোর কর্মসূচি দিব। পাহাড় নিয়ে যা চলছে তা হলো ছিনিমিনি খেলা। এভাবে চলতে পারে না। পাহাড়-প্রকৃতি না থাকলে ভবিষ্যত প্রজন্মই থাকবে না। নানা উন্নয়ন উদ্যোগের সুফল ভোগ করা যাবে না।
কলামিস্ট ও সাংবাদিক কামরুল হাসান বাদল বলেন, আমাদের বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। পরিবেশের গুরুত্ব যদি তার রক্ষার দায়িত্বপ্রাপ্তরা না বুঝেন তাহলে সেটা তাদের বুঝাতে হবে। এভাবে চলতে পারে না।
অ্যাডভোকেট প্রদীপ কুমার চৌধুরী, চট্টগ্রামের মত শহরে সবার চোখের সামনে পাহাড় কাটা চলছে বছরের পর বছর। শুধু তাই নয় পাহাড় থেকে আদিবাসীদের উচ্ছেদ করা হচ্ছে পাহাড় দখলের জন্য। নানা উপায়ে পরিবেশ ধ্বংস হচ্ছে। এর ফল ভোগ করতে হচ্ছে প্রাণ দিয়ে। প্রমা আবৃত্তি সংগঠনের সভাপতি রাশেদ হাসান বলেন, প্রতি বছর আমরা এখানে দাঁড়াই। কিন্তু দায়িত্বপ্রাপ্তদের টনক নড়ে না। আরো কঠোর কর্মসূচি দিতে হবে৷ নানা অর্থলোভী গোষ্ঠীর জন্য দেশের পরিবেশ ধ্বংস করছি। শুধু পাহাড় না নদী, বন, জঙ্গল সব ধংস করছি। প্রকৃতি ধংস করে সকল ধরণের উন্নয়ন কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে। ব্যবসার জন্য নানা লাভের জন্য যারা পরিবেশ ধংস করছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে। এসব না থামলে কেউ রক্ষা পাব না। এই চট্টগ্রাম আমাদের। একে কেউ ধংস করলে তা আমরা মেনে নেব না।
বাংলাদেশ পরিবেশ ফোরামের সভাপতি আলীউর রহমান বলেন, মেয়র ও সিডিএ চেয়ারম্যানের সাথে বৈঠক হয়েছে অনেক। পাহাড় রক্ষা কমিটির কোনো সুপারিশ বাস্তবায়ন হয়নি। আজ সকাল থেকেও আকবর শাহতে পাহাড় কাটা চলছে। সেখানে সিটি করপোরেশন রাস্তা উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ দেয়। পরিবেশ পুলিশ করা হোক। যাদের সার্বক্ষণিক ম্যাজিস্ট্রেট থাকবে।
পিপল’স ভয়েসের সভাপতি শরীফ চৌহানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মুহাম্মদ আতিকুর রহমানের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক ইউনুস হাসান, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষক মোস্তফা কামাল যাত্রা, , ওয়ার্কার্স পার্টি চট্টগ্রাম জেলা কমিটির সদস্য মনসুর মাসুদ, ইকো ফ্রেন্ড সভাপতি উত্তম কুমার আচার্য, ব্রাইট বাংলাদেশ ফোরামের উৎপল বড়ুয়া, ইন্ডাস্ট্রিয়ার গ্লোবাল ইউনিয়নের মোহাম্মদ শরীফুল ইসলাম, নজরুল ইসলাম মান্না, হেলাল উদ্দিন, পিপলস ভয়েসের পক্ষ থেকে শিক্ষিকা মাগ্রেট মনিকা জিনস, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি নরেশ চাকমা, পহাড়ি ছাত্র পরিষদ চট্টগ্রাম মহানগরের সাধারণ সম্পাদক লামিও মারমা।
উপস্থিত ছিলেন পটিয়া উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মাজেদা বেগম শিরু, কবি আশীষ সেন, কাজী এএএম মমতাজুল ইসলাম, শিল্পী আলোকময় তলাপত্র, শরৎজ্যোতি চাকমা, পরিবেশ সংগঠক ই. কে ঘোষ, শেখ বিবি কাউসার, আরিফুল হক, এরশাদুল করিম, খোকন মিয়া, তিতুমীর বান্না প্রমুখ।
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
সিলেট সীমান্ত দিয়ে ৪ জনকে পালাতে সহায়তা করছিলেন আ. লীগ নেতা!
শান্ত আশুলিয়া শিল্পাঞ্চল, কাজে ফিরেছে শ্রমিকরা
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ইতালির প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ (ভিডিওসহ)
শিক্ষার্থী হত্যা মামলা, ‘রূপান্তর’র নির্মাতা রিংকু কারাগারে
শ্রীলঙ্কার সংসদ ভেঙে প্রেসিডেন্ট : চিন্তার ভাজ ভারতীয়দের কপালে
বসতঘরে মাদকের দোকান, যৌথবাহিনী মাদকসহ আটক করলো যুবককে
শাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সজিব গ্রেপ্তার
পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের ৬৮ জনকে আসামী করে আজকের প্রভাতের জেলা প্রতিনিধির মামলা
বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপ, পায়রা বন্দরে ০৩ নম্বর সতর্ক সংকেত
বন্দরে ব্যাটারী কারখানার দূষণের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে হামলায় আহত ৪০
জার্মানিতে উত্থান হচ্ছে রাশিয়াপন্থি শক্তির
কাপ্তাই পাল্পউড বাগান বিভাগে ১০একর জায়গা উদ্ধার ও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ
যুক্তরাষ্ট্র আরও ১৯৯ মিলিয়ন ডলার সহায়তা দেবে রোহিঙ্গাদের জন্য
বিল ক্লিনটনকে ‘দ্য আর্ট অব ট্রায়াম্ফ’ উপহার দিলেন ড. ইউনূস
দ্রুত রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে ড. ইউনূসের তিন প্রস্তাব
জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভের ৫০তম বার্ষিকীর সংবর্ধনায় প্রধান উপদেষ্টা
কোয়াড থেকে চীনকে কড়া বার্তা মোদির, মুক্তির আশায় তিব্বত?
রোহিঙ্গা সংকট : জাতিসংঘে ড. ইউনূসের সঙ্গে উচ্চ-পর্যায়ের কর্মকর্তাদের বৈঠক
ইউনূস-বাইডেন বৈঠক নিয়ে হোয়াইট হাউস যা বললো
শেরপুর জেল পলাতক ধর্ষণ মামলার ৩০ বছরের সাজাপ্রাপ্ত আহাম্মদ আলী আটক