যশোরে ইজিবাইক-বাস দুর্ঘটনায় নিহত ৭ জনের দাফন সম্পন্ন, শোকে বাকরুদ্ধ স্বজনরা
০৮ জুলাই ২০২৩, ০৩:২৩ পিএম | আপডেট: ০৮ জুলাই ২০২৩, ০৩:২৩ পিএম
যশোর মাগুরা মহসড়কে যাত্রীবাহি বাসের সঙ্গে ইজিবাইকের দুর্ঘটনায় নিহত ৭জনের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। বাঘারপাড়ার যাদবপুরে স্থানীয় একটি বিদ্যালয় মাঠে তিনজন, সেকেন্দারপুর গ্রামে দুই জন আর মথুরাপুর গ্রামে একজন এবং সদরের সুলতানপুর একজনের জানাযা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাদের দাফন সম্পন্ন হয়। এর আগে তাদের জানাজায় ঢল নামে শোকার্ত মানুষের। একসাথে এতোগুলো প্রাণ ঝরে যাওয়ায় গোটা এলাকা শোকস্তব্ধ। এদিকে, নিহতের সবার পরিবারে বিরাজ করছে সুনসান নীরবতা। শোকে বাকরুদ্ধ স্বজনরা। আহাজারিতে ভারি হয়ে গেছে যশোরের চারটি গ্রামের বাতাস। পরিবারের সদস্যদের কারও মুখে কথা নেই, সবাই যেন পাথর হয়ে গেছেন।
শুক্রবার সন্ধ্যায় সদর উপজেলার তেঁতুলতলা বাজারে যশোর-মাগুরা মহাসড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতদের মধ্যে তিন শিশু, নারীসহ সাতজন। এর মধ্যে যাদবপুরে একই পরিবারে পাঁচজন। আহত অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছে দুইজন। নিহতরা হলেন, যাদবপুর গ্রামের হেলাল মুন্সির দুই জমজ ছেলে হাসান ও হোসাইন (২), হেলাল মুন্সি শাশুড়ি মাহিমা (৪৩), খালা শ্বাশুড়ি রাহিমা খাতুন ও তার মেয়ে জেবা (৮), মথুরাপুর গ্রামের ওবায়দুর রহমানের ছেলে ইজিবাইক চালক মুসা (২৭), সদর উপজেলা সুলতানপুর গ্রামের সাইফুল ইসলামের ছেলে ইমরান হোসেন(২৬)। এ সময় হেলাল মুন্সির স্ত্রী সোনিয়া ও তার মেয়ে খাদিজা গুরুতর আহত হয়। আহতদের যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তির পর অবস্থার অবনতি হলে সোনিয়াকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। এদের মধ্যে হাসান, হোসাইন, মাহিমা, রাহিমা ও ফাহিমা একই পরিবারের লোক।
শনিবার সকালে বাঘারপাড়ার যাদবপুরে নিহতদের বাড়ি যেয়ে দেখা গেছে যেন বিরান ভূমি। শুক্রবার মধ্য রাতেই বাড়িতে পৌঁছায় নিহত হেলাল মুন্সীর যমজ দুই ছেলে ও শ্বাশুড়ির মরদেহ। এর খালা শ্বাশুড়ি ও তার মেয়ে জেবার মরদেহটি পাঠানো হয় পাশ্ববর্তী গ্রাম মথুরাপুরে। হেলাল মুন্সী ঢাকাতে একটি গার্মেন্সে চাকুরি করেন। ঘটনার সকালে তিনি ঢাকাতে চলে যান। ঢাকাতে পৌচ্ছানোর কিছুক্ষণ পরেই শুনের পরিবারে নেমে আসা এমন দুর্ঘটনার কথা। দুই সন্তানসহ নিকট আত্মীয়ের হঠাৎ চলে যাওয়াতে তিনি কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না। তার সঙ্গে হাসপাতালের বেডে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন স্ত্রী ও বড় মেয়ে। পরিবারের করুন পরিণতিতে নির্বাক হয়ে গেছেন তিনি।
কাঁদতে কাঁদতে হেলাল মুন্সী বলেন, 'কত সাজানো সংসার ছিলো আমার। হাসি খুশির সংসার। একটা দুর্ঘটনায় সব শেষ। আমার কলিজার দুই হাসান-হোসেন কই, তাদের ছেড়ে আমি কিভাবে থাকবো। হাসপাতালে আমার জান্নাতের বাগানের টুকরা মেয়েটা আর বউটা মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে। কি হবে আমার। যাদের সুখের জন্য আজ গ্রাম ছেড়ে ঢাকাতে কাজ করি; তারাই আজ নেই। সব শেষ রে আল্লাহ.....। বাবার চোখে সন্তান বউ ও স্বজন হারানোর এ পানির ঝরার দৃশ্য দেখে আশেপাশের লোকজনও শান্ত থাকতে পারেনি। উপস্থিত অনেকই তাকে শান্তনা দেওয়ার টেষ্টা করতে দেখা যায়।
আহত সোনিয়ার চাচা ছোটন হোসেন বলেন, খাদিজার গলায় টিউমার ছিল। এটি অপারেশনের জন্য শুক্রবার বিকালে তারা বাড়ি থেকে ইজিবাইকে যশোরের একটি ক্লিনিকে যাচ্ছিল। পথিমধ্যে লেবুতলা এলাকায় বিপরীত দিক থেকে আসা বেপরোয়া একটি বাস তাদের চাপা দিয়ে কিছু দূর সামনে নিয়ে যায়। এতে আমাদের পরিবারের পাঁচ জন মারা যান। এ ছাড়া আমার ভাইঝি সোনিয়া ও তার মেয়ে খাদিজা গুরুতর আহত হয়। অবস্থার অবনতি হওয়ায় গতকাল রাতেই সোনিয়াকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। খাদিজা যশোর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
অপরদিকে, একই উপজেলার বন্দবিলা ইউনিয়নের সেকেন্দারপুর গ্রামে প্রবাসী সাইদুল ইসলামের বাড়িতেও একই অবস্থা দেখা যায়। আত্মীয়- স্বজন ও প্রতিবেশীদের কান্নার রোলে বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। সাইদুল ইসলামের বড় ভাই সাংবাদিক সিরাজুল ইসলাম বলেন, রাহিমা বেগম মুক্তা ও তার মেয়ে জেবা তাহিরা স্বজনদের সঙ্গে যশোরে ক্লিনিকে যাওয়ার পথে মারা যান। তার ভাই সাইদুল ইসলাম মালয়েশিয়া প্রবাসী। মাস দুয়েক আগে সর্বশেষ তিনি দেশে এসেছিলেন। সাইদুলের তিন মেয়ে। বড় মেয়ে সুমাইয়া শিরিন ষষ্ঠ শ্রেণিতে, মেজো মেয়ে রিফা তামান্না পঞ্চম শ্রেণিতে এবং জেবা তাহিরা এ বছর স্কুলে ভর্তি হয়।
জহুরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান
আসাদুজ্জামান মিন্টু বলেন, 'এই ইউনিয়নে এমন হৃদয়বিদারক দুর্ঘটনা এর আগে কখনো দেখেনি। একই পরিবারে ৫জনসহ ৭ জন মারা যাওয়াতে ইউনিয়ন জুড়েই শোকের ছাঁয়া নেমে এসেছে। আসলেই প্রতিদিনই ছোট বড় দুর্ঘটনা ঘটনার সঙ্গে জড়িত ড্রাইভাররা হলেও আইনের ফাঁকে তারা পার পেয়ে যাচ্ছেন। আশা করি এই ঘটনায় জড়িত ড্রাইভারকে আইনানুগ ব্যবস্থা নিবে প্রশাসন। তিনি আরো বলেন, নিহত ও আহতদের সবরধরণের সহযোগিতা আশ্বাস দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। একই সাথে আমার ব্যক্তিগতও যত সহযোগিতা দরকার সেটা করা হবে।
যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেলাল হোসাইন বলেন, লেবুতলায় সড়ক দুর্ঘটনায় ইজিবাইক চালকসহ সাতজন নিহত হয়েছে। এদের মধ্যে একই পরিবারের ৫ জন রয়েছে। বাস ও ইজিবাইকটি পুলিশ জব্দ করা হয়েছে। এই ঘটনায় কোন মামলা হয়নি এবং কাউকে আটকও করা যায়নি। জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান বলেন, নিহতদের দাফন ও আহতদের চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করা হবে। একইসাথে তিনি নিহতের ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেন।
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
জনগণের প্রত্যাশা পূরণে কাজ করছে সরকার : সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান
দোকান বরাদ্দের বিষয় খতিয়ে দেখতে কমিটি
শুটিং ফেডারেশন চলছে অপুর নির্দেশেই!
বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলে পোশাক কারখানায় ৪৩২ কোটি টাকার বিদেশি বিনিয়োগ
আরামবাগ ক্রীড়া সংঘের সভাপতি তাজওয়ার আউয়াল
সাবেক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ব্যাংক হিসাবের তথ্য চেয়েছে বিএফআইইউ
রংপুর রেঞ্জের নতুন ডিআইজি আমিনুল ইসলাম
গণঅধিকার পরিষদের ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখার ৯৩ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি
বগুড়ায় সহযোগী সহ শীর্ষ সন্ত্রাসী সাগরকে নৃশংস কায়দায় হত্যা
শৈলকুপায় অস্ত্র ও গুলিসহ ২ জন আটক
পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে : বাংলাদেশ ন্যাপ
পাহাড়ে অশান্তির বীজ উপরে ফেলতে হবে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে যে কোন চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র রুখে দিতে হবে
ওরা পার্বত্য অঞ্চলকে ভারতের অঙ্গরাজ্য বানাতে চায়
ঈশ্বরদীতে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান তুহিনসহ যুবদল নেতাদের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ
এখনো ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেম্বরদের রেখেছেন কেন? - রিজভী
কোর্ট ম্যারেজ করা প্রসঙ্গে?
গুজবে কান দেবেন না : জনপ্রশাসন সচিব
কোয়াড সম্মেলনে বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা
এনজিও,নাস্তিকদের প্রতিষ্ঠা করতে চাইলে সংগ্রাম চলবে- চরমোনাই
লৌহজংয়ে দিনমজুর যুবকের আত্মহত্যা