ঢাকা   সোমবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৮ আশ্বিন ১৪৩১
ইয়াবা, গুম, খুন ও অপহরণ নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা

রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে বিবদমান সন্ত্রাসী গ্রুপের হামলায়, গত ৬ বছরে দেড় শতাধিক খুন

Daily Inqilab উখিয়া (কক্সবাজার) সংবাদদাতা

১২ জুলাই ২০২৩, ১২:২৮ পিএম | আপডেট: ১২ জুলাই ২০২৩, ১২:২৮ পিএম

কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের ৩৩টি ক্যাম্পে আশ্রয় নেওয়া (পার্শ্ববর্তী মিয়ানমার রাষ্ট্র থেকে জোরপূর্বক বাস্ত্যুচ্যুত) রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সংখ্যা প্রায় সাড়ে ১২ লাখ। তাদের মধ্যে আট লাখের বেশি রোহিঙ্গা ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর কয়েক মাসে রাখাইনে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর দমন-পীড়নের মুখে পালিয়ে এসেছে। আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের মধ্যে বিভিন্ন দল ও গ্রুপে বিভক্ত হয়ে প্রায় ৩৩টি ক্যাম্পেই পরস্পরবিরোধী একাধিক রোহিঙ্গা সশস্ত্র গ্রুপ মুখোমুখি অবস্থান করছে। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসতেই ক্যাম্পগুলোর সর্বত্র আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। জনশ্রুতি আছে বিকাল হয়ে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসলেই রোহিঙ্গা ক্যাম্প সমুহের নিয়ন্ত্রণ রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীগ্রুপগুলোর হাতে চলে যায়। বিবদমান সন্ত্রাসী গ্রুপের কারণে স্থানীয় ও সাধারণ রোহিঙ্গারা আজ বড়ই বেকায়দায়। বিবদমান গ্রুপগুলোর এক পক্ষ অন্যপক্ষকে কোনভাবেই বিশ্বাস করছেনা। একচেটিয়া ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ন্ত্রন, ইয়াবা, স্বর্ণ, অপহরণ, পারস্পরিক দ্বন্ধ, অবিশ্বাস, প্রত্যাবাসনের পক্ষ বিপক্ষ অবস্থানসহ বিভিন্ন বিষয়ে বিবদমান সন্ত্রাসী গ্রুপগুলো প্রায়শ মুখোমুখি সংঘর্ষে লিপ্ত হচ্ছে। ক্যাম্পগুলোতে গুম, খুন, অপহরণ, লুটপাট এখন রীতিমতো স্বাভাবিক ঘটনায় রূপ নিয়েছে। ক্যাম্পের একাধিক সূত্র বলছে, এসব অপরাধের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত মিয়ানমারের সশস্ত্র কয়েকটি সন্ত্রাসী বাহিনী। তারমধ্যে রয়েছে , আরাকান স্যালভেশন আর্মি (আরসা), রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও) ও সন্ত্রাসী নবী হোসেন বাহিনী।

এই সন্ত্রাসী গোষ্ঠী গুলোর হাত থেকে স্থানীয়, রোহিঙ্গাসহ রেহাই পাচ্ছেন না আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও। গতবছর সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর হাতে গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তা খুন হয়েছেন। সর্বশেষ শুক্রবার ( ৭-জুলাই) আরএসও সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর হাতে খুন হন অন্য সন্ত্রাসী আরসার পাঁচ সদস্য।

এমন পরিস্থিতিতে এই দুই সন্ত্রাসী গ্রুপের সদস্যদের তালিকা নিয়ে অভিযান শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সম্প্রতি একটি গোয়েন্দা সংস্থার তালিকায় দেখা গেছে, কক্সবাজার ও টেকনাফের ৩৩টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পেই দুই সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সশস্ত্র সদস্যরা অবস্থান করছে। তারা সময় সুযোগ বুঝেই একে অপরের সাথে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে লিপ্ত হয়ে পড়ে।

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রের বরাতে জানা যায়, সশস্ত্র গ্রুপগুলো নিজেদের ব্যবসা বাণিজ্য, স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে পারস্পরিক মুখোমুখি। কথিত আছে, সশস্ত্র আরসার সদস্যরা বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের জন্য আন্দোলন করছে। আবার আরএসওর বেশির ভাগ নেতাই প্রত্যাবাসনের বিরোধিতা করছে। এই নিয়ে আরসা ও আরএসও’র মধ্যে দ্বন্দ্ব চরমে পৌঁছেছে। এ কারণে দুই গ্রুপের মধ্যে খুনোখুনি ও হামলার ঘটনা বেড়ে চলেছে। তবে সন্ত্রাসী উভয় বাহিনীর চরিত্র ক্ষণে ক্ষণে বদল হয়ে বিপরীতমুখী অবস্থান ও হয়ে পড়ে। সবগুলো তাদের ব্যক্তি ও গোষ্টি স্বার্থ- এ ব্যাপারে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই।

এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঊর্ধ্বতনরা আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য না দিলেও নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি সূত্র জানায়, চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা, মানবপাচারসহ গুরুতর অপরাধের সঙ্গে এই দুই সন্ত্রাসী গ্রুপের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। আরসার সদস্যরা অস্ত্র ও মাদক চোরাকারবারে সক্রিয়ভাবে জড়িত। তারা ক্যাম্পের সদস্যের তালিকায় নাম লেখালেও বেশির ভাগ সময় শূন্য রেখায় অথবা মিয়ানমারে অবস্থান করে। আবার কিছু সদস্য সাধারণ রোহিঙ্গাদের সঙ্গে মিশে গিয়ে সার্বিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে তথ্য আদান প্রদানে উভয় পক্ষকে সহযোগিতা করে।

গত ৬ বছরে বিভিন্ন ক্যাম্পে নিজেদের মধ্যে আধিপত্য বিস্তারের জেরে ১৬০ এর অধিক লোক খুন হয়েছে। এসব ঘটনার জের ধরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযান চালিয়ে দুই শতাধিক দেশি-বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করেছে। গত ছয় বছরে ২ হাজার আট শতাধিক মামলায় আসামি হয়েছে ৬ হাজার ২২৬ জন। এর মধ্যে ১১৫টি হত্যা, ১৮৫টি অস্ত্র, ১ হাজার ৬৩৬টি মাদক, ৮৮টি ধর্ষণ ও ৩৯টি অপহরণ মামলা।

কক্সবাজার জেলা পুলিশের তথ্যানুযায়ী, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অন্তত দেড় শতাধিক হত্যাকাণ্ড হয়েছে। এর মধ্যে ২০২১ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর খুন হন স্বেচ্ছাসেবক মোহাম্মদ ইলিয়াস, ২১ সেপ্টেম্বর খুন হন মোহাম্মদ জাফর নামের এক নেতা (মাঝি), ২২ সেপ্টেম্বর মোহাম্মদ এরশাদ নামে এক জন স্বেচ্ছাসেবক খুন হন। ঐ বছরের ২২ অক্টোবর ক্যাম্প-১৮-এর একটি মাদ্রাসায় ছয় জনকে হত্যা করা হয়। এর আগে একই বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর হত্যা করা হয় রোহিঙ্গা নেতা মহিবুল্লাহকে। ২০২২ সালের ৯ আগস্ট দুই রোহিঙ্গা নেতা ও ৮ আগস্ট টেকনাফের নয়াপাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের এক স্বেচ্ছাসেবক খুন হন। ঐ বছরের ১ আগস্ট একই ক্যাম্পে সন্ত্রাসীদের গুলিতে আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিত্সাধীন অবস্থায় এক জন নেতা মারা যান। গত বছরের মে মাসে খুন হন রোহিঙ্গা নেতা সানাউল্লাহ ও সোনা আলী। সর্বশেষ চলতি বছরের ৭ জুলাই আরএসওর হাতে খুন হন আরসার পাঁচ সদস্য। এর পরেও হতাহতের পরিমান থেমে নেই।

সর্বশেষ শুক্রবার (৭ জুলাই) ভোরে উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আরসা ও আরএসও-এর মধ্যে পাল্টাপাল্টি গুলিতে ঘটনাস্থলে পাঁচ রোহিঙ্গা নিহত হন। এরপর রাতে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের একটি নালা থেকে আরও একজনের গলাকাটা লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। অর্থাৎ শুক্রবার একদিনেই ক্যাম্পে ছয়জন নিহত হয়েছে। নিহতরা সবাই আরসা সদস্য বলে জানিয়েছে পুলিশ।

ক্যাম্প সূত্রে জানা গেছে, ক্যাম্পে আরসা-আরএসও সদস্যদের মধ্যে বর্তমানে দ্বন্দ্ব চরম আকার ধারণ করেছে । তাদের বিভিন্ন স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যাপারে মতবিরোধ দেখা দেওয়ায় আরসা’র প্রধান আতাউল্লাহ আবু আম্মার ওরফে জুনুনির গ্রুপ থেকে সরে আসার চেষ্টা করছে অন্য একটি অংশ। আর এ অংশকে নিজেদের দলে ভেড়াতে চাইছে আরএসও। এতেই দেখা দিয়েছে বিপত্তি। এছাড়া রয়েছে ক্যাম্পের ত্রাস নবী হোসেন গ্রুপ। আবার ক্যাম্পের অনেক সাধারণ রোহিঙ্গাও আরসা সন্ত্রাসী দলের ওপর অতিষ্ট হয়ে গোপনে আরএসওকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। এদের যুক্তি আরএসও ক্যাম্পে শান্তি বজায় রাখতে চায়। এভাবে উভয় পক্ষই সাধারণ রোহিঙ্গাদের তাদের পক্ষে নিয়ে স্বার্থসিদ্ধি করতে চেষ্টা করছে।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, বুধবার (০৫ জুলাই-২০২৩) বিকেল পৌনে ৫টার দিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) প্রধান কৌঁসুলি করিম এ এ খান কক্সবাজার পৌঁছান। তার সঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দুজন কর্মকর্তা রয়েছেন। তারা বিমানবন্দর থেকে সরাসরি শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয়ে আসেন। প্রতিনিধিদলের সদস্যরা কমিশনের সঙ্গে প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা বৈঠক করেন।

বৈঠকে অংশ নেওয়া একাধিক কর্মকর্তা জানান, আইসিসির প্রধান কৌঁসুলি রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পরিস্থিতি, আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা ও তাদের সহায়তা নিয়ে আলোচনা করেন। এ সময় খাদ্য সহায়তা কমিয়ে দেয়ায় তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন।খাদ্য সহায়তা কমিয়ে দেয়ায় ক্যাম্পের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে এবং ক্যাম্পের নারী ও শিশুদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে জানান আইসিসির কৌঁসুলি। মিয়ানমারে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর চালানো নির্যাতন-নিপীড়নের তথ্যানুসন্ধানের জন্য কক্সবাজার সফর করছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) প্রধান কৌঁসুলি।

আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) টিম চলে যাওয়ার একদিন পর ( ৭-জুলাই) বিবদমান গ্রুপগুলোর গোলাগুলিতে ৬ জন খুন হবার ঘটনায় ইতিমধ্যে জনমনে নানা প্রশ্ন ও সংসয় সৃষ্টি হয়েছে।
অন্যদিকে আইসিসির প্রধান কৌঁসুলি করিম আসাদ আহমাদের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য নির্যাতিতদের ডাকতে গিয়ে মো. এবাদুল্লাহ (২৭) নামের এক রোহিঙ্গা সাব মাঝি (নেতা) ছুরিকাঘাতে নিহত হয়েছেন।

সুত্রে জানা যায়-রোহিঙ্গাদের অধিকার নিয়ে কাজ করতে গঠিত হয়েছে বেশ কয়েকটি সংগঠন। এর মধ্যে আরএসও মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের বিষয় ও অধিকার নিয়ে কাজ করে বলে জানা যায়। আর অন্যদিকে ক্যাম্পে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করছে আরসা। আরসার নিয়ন্ত্রণে থাকা সন্ত্রাসীরা মিয়ানমার সরকারের ইন্ধনে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন ও আন্তর্জাতিক আদালতের বিচার বাধাগ্রস্ত করতে কাজ করছে। প্রত্যাবাসনের আগ্রহী রোহিঙ্গাদের টার্গেট করে হত্যা ও ভয়ভীতি দেখাচ্ছে তারা। (অবশ্য বিপরীত কথাও শুনা যাচ্ছে অর্থাৎ আরসা রোহিঙ্গাদের সুন্দর প্রত্যাবাসনের পক্ষে কাজ করছে এবং আরএসও সুন্দর প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্থ করছে।) সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোর লক্ষ্য, উদ্দেশ্য যাই হোক না কেন-মুলতঃ সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপগুলো সাধারণ রোহিঙ্গা জনগোষ্টীকে ব্যবহার করে তাদের হীন স্বার্থ চরিতার্থ করার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে মাত্র!
বৃহস্পতিবার আইসিসির প্রধান কৌঁসুলি করিম আসাদ আহমাদ খানের ক্যাম্প সফর ও বিচার কার্যক্রমের সাক্ষ্য দিতে আগ্রহী রোহিঙ্গাদের ভয় দেখাতে এ হামলা বলে ধারণা সাধারণ রোহিঙ্গাদের।

উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ আলী বলেন, দিনে দিনে রোহিঙ্গা জনগোষ্টীর মধ্যে কিছু সন্ত্রাসী বাহিনী সৃষ্টি হয়ে তারা তাদের স্বার্থ হাসিলের জন্য অপ্রতিরোধ্য, বর্বর ও নিয়ন্ত্রনহীন হয়ে পড়ছে। মুলতঃ সাধারণ রোহিঙ্গা জনগোষ্টিকে পুজি করে তারা তাদের পকেট ভারি করার কৌশলে মশগুল। এ অবস্থা দীর্ঘকাল চলতে দেওয়া যায়না। রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে অবশ্যই ফেরত যেতেই হবে। রোহিঙ্গাদের দ্রুত স্বদেশে প্রত্যাবাসনের মধ্যেই নিহিত রয়েছে এতদ অঞ্চলের শান্তি শৃঙ্খলা। না হয় আমাদের জাতীয় নিরাপত্তা, মানবিকতাবোধ ও রাষ্ট্রীয় অখন্ডতা হুমকির মুখে পড়বে, বৈকি।
এ বিষয়ে ১৪-এপিবিএন অধিনায়ক (অতিরিক্ত ডিআইজি) আমির জাফর বলেন, ক্যাম্পে একাধিক সশস্ত্র গ্রুপের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে বাড়ছে রক্তপাত-খুনোখুনি। কে আরসা, কে আরএসও সেটি দেখার বিষয় নয়। ক্যাম্পে কোনও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চলবে না, চলতে দেওয়া হবে না। ক্যাম্প আমাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। যারাই অপরাধে জড়াবে, তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। আমরা আইন শৃংখলা ভালো রাখার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
জেলা পুলিশ ও এপিবিএনের তথ্য অনুসারে, কক্সবাজারের ৩৩টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গত প্রায় ৬ বছরে ১৭৩টি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন কমিউনিটি নেতা, স্বেচ্ছাসেবক ও সাধারণ রোহিঙ্গা। এর মধ্য চলতি বছরের সাত মাসে (৭ জুলাই) রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে একাধিক সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনায় অন্তত ৫৯ জনের মৃত্যু হয়েছে।

গত এক বছরে উখিয়া-টেকনাফের বিভিন্ন ক্যাম্পে অভিযান চালিয়ে ৩৮০টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার ও ১৬৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। একই সময়ে ২৬ লাখের বেশি ইয়াবা ও ২৯ কেজি আইসসহ ৭৭৯ রোহিঙ্গাকে ধরা হয়। এছাড়া ১৩৬ রোহিঙ্গা অপহরণের ঘটনায় ১৮ মামলায় ২৯ জনকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

মানবতার ক্ষেত্রে উদারতা দেখালেও নিরাপত্তা ইস্যুতে কোনো ছাড় দেবে না বাংলাদেশ। বিবদমান গ্রুপ ‘আরসা’ ও ‘আরএসও’র পারস্পরিক সংঘাতে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নিরাপত্তা পরিস্থিতি জটিল হয়ে নতুন মাত্রা পাচ্ছে এবং দিন দিন তা আরও জটিলতার দিকে এগুচ্ছে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। রোহিঙ্গাদের স্বার্থরক্ষার জন্য সংগঠিত বৃহত্তর জোট আরাকান রোহিঙ্গা ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স (এআরএনএ), আরসা, আরএসও ও অন্য দলগুলোকে সঙ্গে নিয়ে দ্রুত এ ধরনের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনে প্রত্যাবাসন কার্যক্রম ত্বরান্বিত করার উদ্যোগ নিতে হবে। বাংলাদেশ তথা আঞ্চলিক নিরাপত্তার স্বার্থে রোহিঙ্গাদের যে কোনো অপরাধমূলক কার্যক্রম শক্ত হাতে দমন করতে হবে এবং কোনোভাবেই ক্যাম্পগুলোকে সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্য হতে দেওয়া যাবে না।

বিভিন্ন সুত্রমতে ও অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নিয়োজিত আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন)দ্বারা ক্যাম্প নিয়ন্ত্রন রীতিমতো চ্যালেঞ্জিং ও অসাধ্য হয়ে পড়ছে। এপিবিএন-অনেকদিন যাবত রোহিঙ্গাদের সাথে অবস্থান করতে গিয়ে তাদের অবস্থা-ব্যবস্থা, তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ যেমন করতে পেরেছেন, তেমনি অনেকেই বিভিন্ন অপরাধের সাথে একীভুত হয়ে দুষ্কর্মেও সহযোগি হিসেবে কাজ করছে-যা দেশের জন্য মারাত্মক নেতিবাচক হচ্ছে। তাই রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দেশ ও জাতির স্বার্থে দেশপ্রেমিক, নিঃলোভ, দায়িত্ববান, নিবেদিপ্রান (সেনাবাহিনী, বিজিবি, র‍্যাব, পুলিশ ও অন্যান্য বাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত) সমন্বিত বাহিনী দিয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্পকে কঠোর নজরদারিতে রেখে তাদের (রোহিঙ্গাদের) আদ্যপান্ত খবরা-খবর রাখার সময় এসেছে। অনেক সময় ব্যক্তি স্বার্থ চরিতার্থ করতে গিয়ে শষ্যের ভিতর ভুত থাকলে তা নিরাময় করা কঠিন হয়ে পড়ে।


বিভাগ : বাংলাদেশ


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

গোল উৎসবে বার্সার ছয়ে ছয়

গোল উৎসবে বার্সার ছয়ে ছয়

রোনালদোর দ্রততম শত গোলের রেকর্ড ছুঁলেন হল্যান্ড

রোনালদোর দ্রততম শত গোলের রেকর্ড ছুঁলেন হল্যান্ড

ঘটনাবহুল ড্রয়ে শেষ আর্সনাল-সিটি মহারণ

ঘটনাবহুল ড্রয়ে শেষ আর্সনাল-সিটি মহারণ

বায়তুল মোকাররমের ঘটনার জেরে ইফা মহাপরিচালক প্রত্যাহার

বায়তুল মোকাররমের ঘটনার জেরে ইফা মহাপরিচালক প্রত্যাহার

কোর্ট ম্যারেজ করা প্রসঙ্গে?

কোর্ট ম্যারেজ করা প্রসঙ্গে?

এখনো ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেম্বরদের রেখেছেন কেন? - রিজভী

এখনো ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেম্বরদের রেখেছেন কেন? - রিজভী

নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে

নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে

রাষ্ট্র গঠনে যা করা জরুরি

রাষ্ট্র গঠনে যা করা জরুরি

নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে একটি প্রস্তাবনা

নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে একটি প্রস্তাবনা

ঈশ্বরদীতে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান তুহিনসহ যুবদল নেতাদের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ

ঈশ্বরদীতে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান তুহিনসহ যুবদল নেতাদের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ

ইসরাইল এখনো সন্ত্রাসীর মতো হামলা চালাচ্ছে

ইসরাইল এখনো সন্ত্রাসীর মতো হামলা চালাচ্ছে

দিল্লির নতুন মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন অতিশী

দিল্লির নতুন মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন অতিশী

ওরা পার্বত্য অঞ্চলকে ভারতের অঙ্গরাজ্য বানাতে চায়

ওরা পার্বত্য অঞ্চলকে ভারতের অঙ্গরাজ্য বানাতে চায়

বৃষ্টির মতো রকেট নিক্ষেপ হিজবুল্লাহর পালিয়েছেন লাখ লাখ ইসরাইলি

বৃষ্টির মতো রকেট নিক্ষেপ হিজবুল্লাহর পালিয়েছেন লাখ লাখ ইসরাইলি

পাহাড়ে অশান্তির বীজ উপরে ফেলতে হবে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে যে কোন চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র রুখে দিতে হবে

পাহাড়ে অশান্তির বীজ উপরে ফেলতে হবে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে যে কোন চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র রুখে দিতে হবে

পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে : বাংলাদেশ ন্যাপ

পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে : বাংলাদেশ ন্যাপ

শৈলকুপায় অস্ত্র ও গুলিসহ ২ জন আটক

শৈলকুপায় অস্ত্র ও গুলিসহ ২ জন আটক

অশান্ত মণিপুরে সেনা টহল

অশান্ত মণিপুরে সেনা টহল

‘ট্রাম্প ও তার দল ভণ্ডামি করছে’

‘ট্রাম্প ও তার দল ভণ্ডামি করছে’

হেলিকপ্টারে যেতে পারলেন না ভারতের দুই মন্ত্রী

হেলিকপ্টারে যেতে পারলেন না ভারতের দুই মন্ত্রী