টানা বৃষ্টিতে রোহিঙ্গা ক্যাম্পসহ বিভিন্ন স্থানে ভূমিধ্বস ও বন্যায় নিহত ৭, চরম ঝুঁকিতে অনেক মানুষ
১০ আগস্ট ২০২৩, ০৪:০৬ পিএম | আপডেট: ১০ আগস্ট ২০২৩, ০৪:০৬ পিএম
বাংলাদেশের দক্ষিনাংশে গত কয়েক দিনের টানা মৌসুমি বৃষ্টির প্রভাবে তলিয়ে গেছে নিম্নাঞ্চল। বৃষ্টিতে পাহাড়ি ঢলে নদ-নদীর পানি টইটম্বুর হয়ে চতুর্পাশে বন্যার আকার ধারণ করে। উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ভুমি ধ্বসে ৪ জন নিহত হয়েছে, কক্সবাজার জেলায় অবস্থিত ৭১ ইউনিয়নের প্রায় ৬০ ইউনিয়নে বন্যার ঘটনা ঘটেছে। পানিবন্দী অনেকেই।
বিশেষ করে উখিয়া টেকনাফে পার্শ্ববর্তী দেশের জোরপুর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর আগমনে, অপরিকল্পিত নগরায়নের কু-প্রভাবে নদী-নালা, খাল-বিল ভরাট করে পয়:নিষ্কাশন ও পানি নিষ্কাশনের উপযুক্ত ব্যবস্থা না করে রোহিঙ্গা ক্যাম্প, ঘর-বাড়ি, দোকান পাট, অফিসের স্থাপনা তৈরি করাতে চতুর্পাশে মারাত্মক জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। রকম হিঙ্গা ক্যাম্প গুলো পাহাড়ের পাদদেশে বিস্তীর্ণ এলাকায় তৈরি করায়, টানা বৃষ্টিতে পাহাড়ের পাদদেশে ভুমিধ্বসের ঘটনা ঘটে। ইতিমধ্যে উখিয়া উপজেলা প্রশাসন মাইকিং এর মাধ্যমে ভুমিধ্বস প্রবণ এলাকা থেকে মানুষজনকে নিরাপদ আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান করার নির্দেশনা দেবার পরেও গত সোমবার ( ৭-আগষ্ট-২০২৩) বিকাল সাড়ে ৫ টার দিকে ক্যাম্প-০৯ এর এ/৬ ব্লকস্থ পাহাড়ের পার্শ্বে অবস্থিত এফডিএমএন সদস্য আনোয়ার ইসলাম (৩২) এর শেডের উপর পাহাড় ধসের ঘটনায় শিশু সহ ২ জন নিহত হয়েছে। নিহতরা হচ্ছে ক্যস্মপ ৯ এর এ ব্লকের আনোয়ারের স্ত্রী জান্নাত (২৮) ও তার মেয়ে মাহিম আক্তার (২)। অনেকক্ষেত্রে জোয়ারের পানিতেও তলিয়ে গেছে উপকুলীয় এলাকা। দৃষ্টিনন্দন কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের
টেকনাফ সাবরাং ইউনিয়নের পশ্চিম মুন্ডার ডেইল এলাকায় তীব্র ঢেউর আঁছড়ে প্রচন্ডভাবে ক্ষতবিক্ষত হয়েছে মেরিন ড্রাইভ সড়ক।
তাছাড়া অতি বর্ষণে গ্রামাঞ্চলের রাস্তাঘাট, অলিগলি ও নিচু এলাকার ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে গেছে। ফলে উপজেলা সদর, জেলা শহর ও বিভাগীয় শহরের সাথে গাড়ি যোগাযোগ বন্ধ হয়ে পড়েছিল।
বুধবার সকাল থেকে বৃষ্টির প্রবনণতা কমে, আকাশ কিছুটা পরিস্কার দেখা যায়। ভোর রাত থেকেই বৃষ্টি না হওয়ায় বাড়িঘর ও ওঠান থেকে পানি নেমে যেতে শুরু করেছে। বৃষ্টি কমে যাওয়ায় সাধারণ মানুষের জীবনে কিছুটা স্বাভাবিকতা ফিরে এসেছে। গতকালও বিভিন্ন এলাকায় হাটু থেকে কোমর সমান পানি জমে থাকতে দেখা গেছে।
অতি বর্ষণ ও হঠাৎ বন্যায় বাস্তব ঘটনার স্বাক্ষী হয়ে আছেন উখিয়ার রাজা পালং ইউনিয়নের পূর্ব সিকদারবিল এলাকার খেটে খাওয়া আবদুল করিমের পরিবার। ভারি বর্ষণে তার মাথা গোঁজানোর একমাত্র অবলম্বন মাটির ঘরটি ভেঙে গেছে। পরিবারের বৃদ্ধ মা বাবা, পরিবার পরিজন নিয়ে তিনি এখন নিদারুন কষ্টে কালাতিপাত করছে।
আবদুল করিম ইনকিলাব প্রতিনিধিকে বলেন, ' আমার দুই মেয়ে। বড় মেয়ে প্রতিবন্ধী। বৃদ্ধ বাবা-মা এবং স্ত্রী ও দু মেয়ে নিয়ে কোনভাবে খেয়ে না খেয়ে মুরগি ও কবুতরের ব্যবসা করে কোনপ্রকার সংসার চালিয়ে যাচ্ছিলাম। অভাবের সংসাব হলেও, বৃদ্ধ বাবা মাকে কোনদিন কষ্ট পেতে দিইনি আমি। শত কষ্টের মাঝেও পরিবারের মুখে হাসি ফুটাতে ধার দেনা করে ও নিজের উপার্জিত জমানো আড়াই লাখ টাকা খরচ করে একটি টিনের ছাউনি দেওয়া বাসযোগ্য স্বপ্নের মাটির ঘর তৈরি করেছিল। কিন্তু গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে আমার স্বপ্নের মাটির ঘরটি পানিতে তলিয়ে গেছে'।
তিনি আরো বলেন, ' এখন আমি খুবই অসহায় অবস্থায় আছি। বহুতল বাড়ি নির্মানের সময় পানি চলাচলের পথ বন্ধ করে দিয়ে পানি নিস্কাশনের ব্যবস্থা না রাখায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হওয়ায় আজকে আমার এ দশা '।
এদিকে গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টি, বন্যা ও ভূমিধসের কারণে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থীসহ চট্টগ্রাম ও পার্বত্য জেলা বান্দরবানের কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে চরম ঝুঁকিতে রয়েছে।
পরিস্থিতির ভয়াবহতা বিবেচনায় সরকার ইতিমধ্যে উদ্ধার তৎপরতার জন্য সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনীকে মাঠে নামিয়েছে।
হাসপাতাল, পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, সোমবার থেকে মঙ্গলবার বিকেল নাগাদ কক্সবাজারের উখিয়া ও চকরিয়ায় এবং বান্দরবানে পাহাড় ধসের আলাদা ঘটনায় চার রোহিঙ্গাসহ সাতজনের মৃত্যু হয়েছে।
এর মধ্যে সোমবার চার রোহিঙ্গাসহ ছয়জনের এবং মঙ্গলবার আরো একজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
চট্টগ্রাম কক্সবাজারের রেল লাইনের কারনে চট্টগ্রামের দক্ষিণাংশের উপজেলা সমুহে অপরিকল্পিত রেল লাইনের কারনে দক্ষিন চট্টগ্রামের উপজেলা সমুহ মারাত্মকভাবে জলাবদ্ধতা ও বন্যায় নিমজ্জিত!
আজকে শত শত ঘরবাড়ি, গবাদি পশু-পাখি, শস্যমাঠ, তরিতরকারির খেতসহ হাজার হাজার মানুষ বন্যায় পানির নিচে। তারা আজ খাদ্য, পানীয় জল ও নিরাপত্তা সংকটে। তাদের জীবদ্দশায় এরুপ পানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হয়নি। আজ কেন এরুপ অবস্থা তা ভেবে দেখার সময় এসেছে।
অনেক ময়-মুরব্বিদের বলতে শুনেছি, অন্তত গত ৫০/৬০ বছরেও এমন বন্যা তারা চোখে দেখেননি। সাতকানিয়া-চন্দনাইশ-চকরিয়া-ঈদগাঁ ও রামুর মানুষ আজ পানিবন্দী। স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার সম্মুখীন তারা।
অন্যদিকে, ভূমিধসের ঝুঁকিতে থাকা চট্টগ্রাম ও পার্বত্য জেলা বান্দরবানের জনসাধারণকে উদ্ধারসহ ত্রাণ তৎপরতার জন্য মঙ্গলবার সেনাবাহিনী মোতায়েন করেছে সরকার।
একইসাথে কক্সবাজার জেলায় নৌবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে বলে মঙ্গলবার সশস্ত্রবাহিনীর মুখপাত্র প্রতিষ্ঠান আইএসপিআর জানিয়েছে।
মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে গত বৃহস্পতিবার থেকে বৃহত্তর চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে প্রচুর বৃষ্টিপাত চলছে। এই কয়েকদিনের মধ্যে সেখানে ৩৪০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে বলে মঙ্গলবার আবহাওয়া অধিদপ্তরের উপপরিচালক বজলুর রশীদ জানান।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পানি নেমে যাওয়ার পর তিন জেলায় ভূমিধসের ঘটনা আরও বাড়তে পারে।
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
চাঁদপুরে জাহাজে সেভেন মার্ডারের ঘটনায় মামলা
গাজায় বড়দিনে শান্তির জন্য প্রার্থনা,নিহতের সংখ্যা ছাড়লো ৪৫ হাজার
স্ত্রী-সন্তানসহ শাহরিয়ার আলমের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
মোজাম্বিকে বাংলাদেশিদের ৩শ' ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান লুটপাট ও ভাঙচুর
অতিসত্বর নির্বাচন হওয়ার দরকার : আমীর খসরু
দুর্নীতিগ্রস্ত লুটেরা মাফিয়াদল যাতে বাংলাদেশে আর ফেরত না আসতে পারে : মেজর হাফিজ
বঞ্চিত ৭৬৪ কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি দিচ্ছে সরকার
ক্যাডার বর্হিভূত রাখার সুপারিশ প্রত্যাখ্যান শিক্ষা ক্যাডারের
শেখ হাসিনাসহ ৬৩ জনের নামে মামলা
অভিযানের খবরে পালাল শ্রাবণধারা কারখানার পরিচালক-ম্যানেজার
সর্বজনীন পেনশন স্কিমে নেই আশানুরূপ সাড়া
একতাই পারবে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে
তিতাস গ্যাস টি.এন্ড ডি. পিএলসি’র ৫% নগদ লভ্যাংশ অনুমোদিত
ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল্লামা সাজিদুর নির্বাহী সভাপতি মাওলানা জুনায়েদ
‘আপনারা আমার খালেদকে ফেরত এনে দেন’ : নিখোঁজ সহ-সমন্বয়কের বাবা লুৎফর
২৮ ডিসেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে খেলাফত মজলিসের অধিবেশন প্রেস ব্রিফিংয়ে নেতৃবৃন্দ
ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা
ইনসেপ্টার বিক্রয় প্রতিনিধির ২২টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ
পিকে হালদারের পাঁচ সহযোগীর ব্যাংক হিসাব ফ্রিজের নির্দেশ
ভূমধ্যসাগরে ৮ বাংলাদেশি নিহত