যেন অরিক্ষিত সিলেটের বিশাল সীমান্ত। দেখার কেউ নেই, অথচ সীমান্তে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), অভ্যন্তরে জেলা পুলিশ, নগর পুলিশ সেই সাথে হাই ওয়ে পুলিশ। কিন্তু সবকিছু নস্যি করে সিলেটে প্রবেশ করছে ভারতীয় মালামাল। এর মধ্যে রয়েছে ভয়ংকর নেশা ইয়াবাও। ইদানিং অবৈধ পথে আসা ভারতীয় চিনিতে সয়লাব সিলেট। চিনি চোরাকারবারীতে যুক্ত ভয়ংকর একাধিক সিন্ডিকেট। সেই সিন্ডিকেটে ক্ষমতাসীন রাজনীতিক নেতাকর্মীদের সংশ্লিষ্টতা ওপেন সিক্রেট। আছে প্রশাসনের গভীর যোগাযোগও। কারন বাগবাটোয়ারা সর্ম্পক। প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে চোরাচালান নির্বিঘ্নে করতে মাই ম্যনদের পোষ্টিং দেয়া হয়েছে এমন তথ্যও অনেক। কিন্ত চাপা আতংকে জেনে শুনেও সার্বিক তথ্য প্রকাশে এড়িয়ে যাচ্ছেন সংবাদ কর্মীরা।
সেকারনে দেদারাচ্ছে ভারতীয় পণ্য ঢুকছে দেশের সীমানায়। এতে করে দেশি চিনির বাজার এখন যায় যায়। কেবল চিনি বা ইয়াবা নয়, গরু, মহিষ, কাপড়, সিগারেট, চকলেট, কসমেটিক্সসহ বিভিন্ন দ্রব্যও এখন ঢুকছে অবৈধ পথে সীমান্ত দিয়ে। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র বলছে, পরিবেশ পরিস্থিতির সাথে মিলে মিশেই চোরাকারবারীদের সাথে হাত মেলাতে হচ্ছে সীমান্ত সহ আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনির। অন্যথায় চোরাকারবারী চক্রের ভয়ংকর ক্ষমতায় পোষ্টিং সহ নানা বিড়ম্বনায় পড়তে হবে তাদের। নাম প্রকাশে ইচ্ছুক এক প্রশাসনের এক কর্মকতা বলেন সাংবাদিকরা যেমন লিখতে বহুমুখী বাধায় পড়ে, তেমনি আমরা এই চক্রকে আটকাতে গেলে বিড়ম্বনার শেষ নয়। সেকারেন চোখে বুঝে মিলে মিশে থাকতে হচ্ছে, আর যাই হোক আর্থিক ফায়দা তো হচ্ছে। তিনি আফসোস করে বলেন, দেশ প্রেমিকের বর্তমান-ভবিষ্যত এদেশে হুমকির মুখে। তবে তিনি বলেন তারপরও প্রায় প্রতিদিনই সিলেটে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে ধরা পড়ছে মাদকদ্রব্য। কিন্তু অপর একটি সূত্র বলছে, অভিযানে যেগুলো ধরা হয় তা কেবল ‌আই ওয়াশ'। এক চালান ধরা খেলে আরো একশ' চালানের পথ খুলে যায়। মাঝে মধ্যে চোরাকারবারী প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের সাথে যোগাযোগ এড়িয়ে কোন কিছু করতে গেলে এদের ধরিয়ে দিয়ে বাধ্য করা হয় সমঝোতা করে পরবর্তী চালান সিলেটে প্রবেশ করাতে। এর মানে সিন্ডিকেট বাদ দিয়ে কিছু করা গেলেই বিপদ !

গত বুধবার (৩০ আগস্ট) সিলেটে ধরা পড়েছে ইয়াবা ট্যাবলেটের একটি বড় চালান। এগুলো জব্দের সময় তিন মাদক কারবারিকে আটক করে পুলিশ। তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরপূর্বক বৃহস্পতিবার (৩১ আগস্ট) আদালতে প্রেরণ করে পুলিশ ৭ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করলে ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।

গ্রেফতারকৃতরা হলেন- সিলেটে জকিগঞ্জ উপজেলার মানিকপুর গ্রামের মৃত মোজাম্মিল আলীর পূত্র মুহিবুর রহমান (৪০), সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার জাহাঙ্গীরনগর গ্রামের শফিকুল ইসলামের পূত্র রাসেল আহমদ (৩২) ও সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার রামপাশা ইউনিয়নের পাঠাকইন গ্রামের মৃত জাবেদ আলীর পূত্র আজির উদ্দিন (৩০)।

বুধবার বিকাল সাড়ে ৩ টার দিকে সিলেট নগরের আম্বরখানা এলাকার (এসএমপির কোতোয়ালি থানাধীন) পেট্রোল পাম্পের সামন থেকে এ তিন জনকে কয়েক হাজার পিস ইয়াবাসহ আটক করে পুলিশ। পরে তাদের সঙ্গে নিয়ে পুলিশ অভিযান চালিয়ে মহানগরের এয়ারপোর্ট থানাধীন পীর মহল্লা আবাসিক এলাকার প্রভাতী ৪১/সি বাসা থেকে আরও ইয়াবা, মাদক বিক্রির ৫০ হাজার টাকা ও রশিদ বই জব্দ করে। এ অভিযানে মোট ১৫ হাজার ৬শ’ পিস ইয়াবা জব্দ করা হয়। সিলেটে এর আগে আর এত বড় ইয়াবার চালান ধরা পড়েনি বলে জানায় পুলিশ।

কোতোয়ালি মডেল থানার অফিসার ইনর্চাজ (ওসি) মোহাম্মদ আলী মাহমুদ আজ বৃহস্পতিবার (৩১ আগস্ট) বিকালে বলেন- ‘গতকাল (বুধবার) ইয়াবাসহ আটক হওয়া তিনজনকে আজ আদালতে প্রেরণ করে ৭ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করা হয়েছিলো। বিজ্ঞ আদালত ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।’
এছাড়া তিনি বলেন- ‘সিলেটে এর আগে আর এত বড় ইয়াবার চালান জব্দ করা হয়নি। এই চালান কে বা কারা নিয়ে এসেছে, আরও চালান এসেছে বা আসবে কি না এসব বিষয়ে তদন্ত চলছে। এছাড়া গ্রেফতারকৃতদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে আরও তথ্য বেরিয়ে আসবে। ইতোমধ্যে কিছু তথ্য মিলেছে।