কুবিতে হলে আসেন না আবাসিক শিক্ষকরা, চিনেন না শিক্ষার্থীরাও
০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৭:০৯ পিএম | আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০০ পিএম
আবাসিক শিক্ষক ও ছাত্রদের মধ্যে সম্পর্ক থাকার কথা ডাক্তার ও রোগীর মতো। একজন ডাক্তার তাঁর রোগীর সাথে যেমন আচরণ করে তাঁকে সুস্থ করে তুলে, ঠিক তেমনি একজন আবাসিক শিক্ষক ছাত্রদের দেখাশোনা করেন। তবে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে চিত্র ভিন্ন। বিশেষ কোনো আয়োজন বা বড় ধরনের কোনো ঝামেলা ব্যতীত কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে দেখা মিলে না দায়িত্বরত আবাসিক শিক্ষকদের। ফলে অনেকেই জানেন না আবাসিক শিক্ষক কারা। এছাড়াও দায়িত্বরত অনেক শিক্ষক উচ্চ শিক্ষার জন্য বিদেশ পাড়ি জমিয়েছে পদে বহাল রয়েছেন তাঁরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হাউজ টিউটরের দায়িত্বরত শিক্ষকদের মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ৬ জনের মধ্যে মো. মাছুম বিল্লাহ ও নয়ন বণিক, কাজী নজরুল ইসলাম হলে ৫ জনের মধ্যে মো. এনামুল হক ও মো. মুর্শেদ রায়হান, শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হলে ৪ জনের মধ্যে চৌধুরী শাহরিয়ার মোজাম্মেল ও মো. মুহিব্বুল্লাহ, নওয়াব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানী হলে ৬ জনের মধ্যে রাশেদ আহমেদ, সংগীতা বশাক ও সাদিয়া জাহান, শেখ হাসিনা হলেও ৬ জনের মধ্যে মো. রাসেল মনি ও নিশাত নিগার শিক্ষা ছুটিতে রয়েছে।
এদিকে আবাসিক শিক্ষকদের অনেকের নামও জানেন না হলের শিক্ষার্থী। জানে না সংখ্যাটা। বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতারা মনে করেন, ছাত্রদের সঙ্গে হলের প্রাধ্যক্ষ ও হাউস টিউটরদের মধ্যে যে দূরত্ব এবং দায়মুক্তির সংস্কৃতি, তা শিক্ষার্থীদের শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ, গাইডলাইন প্রদানে ব্যাহত হচ্ছে। এছাড়াও হলগুলোতে শিক্ষার্থীদের নির্যাতন ও বিভিন্ন ঘটনা বৃদ্ধির মূল কারণ।
এ নিয়ে প্রতিবেদকের সাথে কথা হয় বিভিন্ন আবাসিক হলের শিক্ষার্থীদের সাথে। তারা বলেন, আমরা তখনই কয়েকজন হাউজ টিউটরদের দেখতে পায়, যখন হল প্রাধ্যক্ষ কয়েকজন হাউজ টিউটরদের নিয়ে হল পরিদর্শন করেন। এ ছাড়া অভিভাবকদের নিয়মিত ভূমিকার অভাব এবং হাউজ টিউটরদের নিজেদের দায়িত্বের প্রতি উদাসীনতা যা প্রতিনিয়ত হলগুলোতে বিভিন্ন ঘটনার জন্ম দেয়। বলতে গেলে হলগুলোতে তাদের (হাউজ টিউটর) কোনো নিয়ন্ত্রণই নেই।
কাজী নজরুল ইসলাম হলের এক শিক্ষার্থী বলেন, আসলে স্যারেরা (আবাসিক শিক্ষকরা) নিয়মিত হলে আসেন না, সেখানে নাম কি করে জানব। কারা কখন দায়িত্বে থাকে তাও জানা হয় না।
এদিকে আবাসিক হলগুলোতে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ঘটনার সৃষ্টি হয়। গেল বছর তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে মধ্যরাতে কাজী নজরুল ইসলাম হল ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় অন্তত ১০ জন আহত হয়। ২০১৬ সালের শোকাবহ আগস্টের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে মোমবাতি প্রজ্বলনের পর আধিপত্য বিস্তার ও হল দখলকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন খালিদ সাইফুল্লাহ। ২০২০ সালে শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হলে সিট নিয়ে কথা বলার এক পর্যায়ে সজীব বণিক নামে এক সাংবাদিকের জিনিসপত্র ভাঙচুর ও মারধর করেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
এছাড়া গত ৩০ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের পরিচয়ে বঙ্গবন্ধু হলে উঠার চেষ্টা করে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা (২০১৭ সালের বিলুপ্ত কমিটির সাধারণ সম্পাদক) রেজা-ই-এলাহি সমর্থিত অছাত্ররা। এসময় শাখা ছাত্রলীগের সদ্য সাবেক সভাপতি ইলিয়াস হোসেন সবুজ সমর্থিত ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে।
গত ২১ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ হাসিনা হলের প্রাধ্যক্ষ সাহেদুর রহমানের সাথে হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি কাজী ফাইজা মেহজাবিনের বিরুদ্ধে সিট নিয়ে শাসানোর অভিযোগ উঠেছে।
এছাড়াও হলগুলোতে প্রশাসনকে পাশ কাটিয়ে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের সিট নিয়ন্ত্রণ, শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক লাঞ্ছনা, নিয়ম অমান্য, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ, ডিজে পার্টি করে সিনিয়রকে মারধর, নেত্রীদের হাতাহাতি, রুমে নিয়ে শাসানো, মাদকের আসর বসান নেতাকর্মীরা। তবে এসব অভিযোগ থাকলেও হল প্রশাসনকে কঠোর কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। বরং বিভিন্ন সময় ঘটনা সমাধানের দায়িত্ব দেওয়া হয় অভিযুক্ত নেতাদের। তবে হলগুলোতে এসব অপরাধের বিরুদ্ধে নামমাত্র ব্যবস্থা নেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
এদিকে দায়িত্বে থাকা আবাসিক শিক্ষকদের
শিক্ষাছুটির বিষয়ে জানতে চাইলে শেখ হাসিনা হলের প্রাধ্যক্ষ মো. সাহেদুর রহমান বলেন, আমাদের দুইজন শিক্ষক শিক্ষা ছুটিতে রয়েছে। আমাদের কাজে এখনো তেমন প্রতিবন্ধকতা আসেনি। এ ছাড়া উপাচার্য মহোদয় আমাদের যেকোনো সমস্যায় দ্রুত পদক্ষেপ নেন। খুব বেশি একটা প্রবলেম হচ্ছে না, তাই এখনো উপাচার্য মহোদয়কে বলিনি। আশাকরি আমরা যখনই বলব তখনই উনি দিয়ে দিবে।
নওয়াব ফয়জুন্নেছা চৌধুরাণী হলের প্রাধ্যক্ষ জিল্লুর রহমান বলেন, আমাদের তিনজন শিক্ষক (হাউজ টিউটর) শিক্ষা ছুটিতে চলে গেছে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত কেউকে উনাদের জায়গায় নিয়োগ দেওয়া হয়নি। কিছুদিন আগে আমি ভিসি স্যারকে এ বিষয়ে বলছিলাম, আমার এখানে মেম্বার কম, ইমার্জেন্সি দুই-একজনকে প্রয়োজন। পরে স্যার বিষয়টা দেখবে বলে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈন তথ্য প্রমাণ ছাড়া কোন মন্তব্য করতে পারবেন না বলে প্রতিবেদকের ফোন কেটে দেন।
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
সর্বদলীয় সভায় অংশ নিবেন বিএনপির সালাউদ্দিন আহমেদ
নারীর সঙ্গে মদ্দপ অবস্থায় পুলিশ-আ.লীগ ডান্স পার্টি ভাইরাল, ভিডিওতে যা আছে?
আশুলিয়ায় হিজড়াদের অশ্লীল মেলা বন্ধের দাবীতে এলাকাবাসীর গণসাক্ষর
কুতুবউদ্দিন আহমেদ বাংলাদেশে পূর্ব তিমুরের অনারারি কনসাল হিসেবে সরকারের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি পেয়েছেন
১৭ বছর পর কারামুক্ত বাবর
রোববার কার্যকর হবে গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তি, জানালেন কাতারের প্রধানমন্ত্রী
এবার ৩০ যুদ্ধবন্দির বিনিময়ে ২৪৬৬ সেনা ফেরত পেল রাশিয়া
দেশের মানুষ আর ভোট বিহীন সরকার দেখতে চায় না - আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী
সর্বদলীয় সভায় অংশগ্রহণে এখনো সিদ্ধান্ত নেয়নি বিএনপি
কিশোরগঞ্জে ভূয়া মানবাধিকার চক্রের ৯ সদস্য আটক
ভারতের বক্তব্যে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর তীব্র প্রতিক্রিয়া
লক্ষ্মীপুরে জামায়াত নেতা ফয়েজ হত্যা : শেখ হাসিনাসহ ৪১ জনের নামে ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ
ঢাকা-লক্ষ্মীপুর মহাসড়ক বালিতে বায়ু দূষণ, অতিষ্ঠ জনসাধারণ
‘কর্মের মাধ্যমে মানুষের হৃদয়ে নিজেদেরকে মর্যদাশীল করা সম্ভব’
ডা. ফয়েজ হত্যা: শেখ হাসিনাসহ ৪১ জনের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দাখিল
সাইফের শরীরে একাধিক অস্ত্রোপচার, ডাকাত সন্দেহে আটক ৩
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদের গেজেট প্রকাশ
টুইটারের পর এবার টিকটক কিনছেন মাস্ক?
বর্ধিত ১৫% ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবিতে নরসিংদীতে রেস্তোরা মালিক সমিতির মানববন্ধন
গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছে সউদী আরব