যুবদলনেতার ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে চিকিৎসার ছবি ভাইরাল, সমালোচনা
২৯ নভেম্বর ২০২৩, ০৪:২৪ পিএম | আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০২৩, ০৪:২৪ পিএম
হাসপাতালের মেঝেতে গুরুতর অসুস্থ হয়ে কাতরাচ্ছেন যুবদল নেতা। অসুস্থ অবস্থায় দুটো পা ভাজ করে শুয়ে আছে। পায়ে তার ডান্ডাবেড়ি। দুই পায়ে ডান্ডাবেড়ি থাকাতে দুই পা সোজাও করতে পারছে না। এছাড়া এক হাতে ঝুলছে হাতকড়া। অন্যহাতে ইনজেকশনের ক্যানোলা। দুই পায়ের মাঝখানে পড়ে আছে ‘ক্যাথেটার’। রক্তমিশ্রিত প্র¯্রাব সেখানে জমা হচ্ছে। ডান্ডাবেড়ি আর হাতকড়া পরিয়ে যুবদলনেতা চিকিৎসা দেওয়ার একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। যা রীতিমতো ছবিটি ভাইরাল হয়েছে।
জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ছড়িয়ে পড়া ছবির ব্যক্তির নাম আমিনুর রহমান মধু। তিনি যশোর জেলা যুবদলের সহসভাপতি। এছাড়া তিনি সদর উপজেলার আমদাবাদ ডিগ্রি কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এবং বাংলাদেশ কলেজ শিক্ষক সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সাহিত্য ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক। হাতকড়া পরা আমিনুরের ছবিটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হচ্ছে। আমিনুরের পরিপূর্ণ চিকিৎসায়ও বাধা দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ পরিবারের। আর পুলিশের এমন অমানবিক কান্ডে মর্মাহত তার পরিবার ও স্বজনরা। এমনটি সমিচীন নয় বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন আইনজীবীরা।
দলীয় ও পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, গত ২৯ অক্টোবর রাতে যশোর নড়াইল রোডে দুটি বাসে ককটেল ও লাঠি পেট্টোল জব্দের মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিতসহ জেলার শীর্ষ ৮৭ নেতাকে আসামি করে মামলা দেয় পুলিশ। ঐ মামলায় আসামি ছিলেন যুবদল নেতা আমিনুর রহমান মধু। এর পর হরতাল অবরোধের কর্মসূচিতে আরো দুটি নাশকতা মামলার আসামি ছিলেন তিনি। গ্রেফতার আতংকে তিনি আত্মগোপনে ছিলেন। কিন্তু গত ২ নভেম্বর সদর উপজেলার দেয়াড়া ইউনিয়নের আমদাবাদ গ্রাম থেকে পুলিশ আমিনুরকে আটক করে। এরপর ১২ নভেম্বর যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে থাকা অবস্থায় আমিনুর রহমান মধু হৃদরোগে আক্রান্ত হন। কারাগার থেকে তার দুই পায়ে ডান্ডাবেড়ি হাতকড়া লাগিয়ে প্রথমে যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। সেখান থেকে অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় ওই রাতেই তাকে ঢাকার কেরানীগঞ্জ কারাগারে স্থানান্তর করা হয়। পরদিন ১৩ নভেম্বর কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে তাকে জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউটে ভর্তি করা হয়। দুই পায়ে ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে ও ডান হাতে হাতকড়া লাগানো অস্থায় হাসপাতালের মেঝেতে রেখে চিকিৎসা দেয়া হয় তাকে। আবার ওই হাতে একগুচ্ছ দড়ি পেচানো ছিল। তার শরীরে ডান্ডাবেড়ি এবং হাতকড়া এমনভাবে লাগানো যাতে সামান্য নড়েচড়ে বসারও কোন সুযোগ নেই। কেবলমাত্র দুই হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকা ছাড়া। চিকিৎধীন থাকা অবস্থায় পুলিশের আপত্তির মুখে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে বিছানা পর্যন্ত দেয়নি। যে কারণে আমিনুর রহমান মধুকে মেঝেতে রেখে চিকিৎসা করা হয়। তার বাম হাতে ক্যানোলা লাগানো। সেখানে স্বজনদের তার সান্নিধ্যে যেতে দেয়নি পুলিশ। এমনকি সময়মতো তাকে ওষুধ সেবন পর্যন্ত করতে দেয়া হয়নি বলে অভিযোগ করছেন স্বজনেরা।
আমিনুর রহমান মধুর স্ত্রী নাহিদা সুলতানা লাবনী বলেন, ‘পরিবারের অভিভাবক গুরুতর অসুস্থ হয়ে জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। আমি আমার দুই শিশু সন্তানকে নিয়ে চরম উদ্বিগ্ন। এমতাবস্থায় তার প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পর্যন্ত দেয়া হচ্ছে না। তার ওপর কত অমানবিকভাবে দুই পায়ে ডান্ডাবেড়ি ও হাতে হাতকড়া পরিয়ে রেখেছে। তিনি জানান, বুধবার (২৯ নভেম্বর) হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে এনজিও গ্রাম করার কথা বলেছিল, এজন্যে তাকে মঙ্গলবার (২৮ নভেম্বর) পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি রাখতে বলা হয়েছিল। কিন্তু তার আগেই কারা কর্তৃপক্ষ তাকে জোর করে হাসপাতাল থেকে কারাগারে নিয়ে গেছে।
বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক (খুলনা বিভাগ) অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বলেন, বর্তমান সরকারের হাতে আইনের শাসন ও মানবাধিকার কতটুকু হতে পারে, আমিনুর রহমান মধুকে জামিন না দেয়া ও চিকিৎসার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করার ঘটনা তার জলজ্যান্ত প্রমাণ। এভাবে এখন জরুরি রোগীকে চিকিৎসা দেওয়াতে তার জীবনের জন্য ঝুকি।
এ বিষয় যশোর জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এম এ গফুর বলেন, বিষয়টা খুবই আমনবিক। একজন হৃদরোগ আক্রান্ত ব্যক্তিকে এভাবে ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে রেখে চিকিৎসা দেয়া মোটেও সমীচীন নয়। আইন আদালত- মানুষের কল্যাণের জন্যে অকল্যাণের জন্যে নয়।
প্রসঙ্গত যে, চলতি বছরের শুরুতে দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্ট ডান্ডাবেড়ি ও হাতকড়ার অপব্যবহার রোধ করতে পুলিশের মহাপরিদর্শক ও কারা মহাপরিদর্শক বরাবর আইনি নোটিশ প্রদান করেন। নোটিশে বলা হয়, যদি কোনো শক্তিশালী বন্দী সহিংস অপরাধে অভিযুক্ত হন বা কুখ্যাত হিসেবে পূর্বপরিচিত হন বা অসুবিধা সৃষ্টিতে উন্মুখ থাকেন বা রাস্তা দীর্ঘ হয় বা বন্দীর সংখ্যা অনেক বেশি হয়, সে ক্ষেত্রে হাতকড়া ব্যবহার করা যেতে পারে। হাতকড়া না থাকলে দড়ি বা কাপড় ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে। প্রবিধানের কোথাও ডান্ডাবেড়ি ব্যবহারের কথা নেই। মূলত ডান্ডাবেড়ির ব্যবহার কেবল জেলকোড ও কারা আইনের আওতাধীন। বেঙ্গল পুলিশ রেগুলেশন অনুযায়ী প্রযোজ্য ক্ষেত্রে কেবল হাতকড়া ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে, ডান্ডাবেড়ি নয়।
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
গণমাধ্যমে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রচারের ওপর গুরুত্বারোপ করলেন উপদেষ্টা
বগুড়ার ধুনট পল্লীতে জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে ব্যবসায়ীর ৩৫ হাজার টাকা ছিনতাই
দীর্ঘ ১৩ বছর পর দেশে ফিরছেন কায়কোবাদ
সিদ্দিরগঞ্জে নির্মাণাধীন ভবনের ছাদ থেকে পড়ে বিদ্যুতায়িত, দুই শ্রমিকের মৃত্যু
নাচোলে পিয়ারাবাগানে এক গৃহবধূ খুন
৫ জানুয়ারি থেকে ৪৪তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষা শুরু
নোয়াখালীর সুবর্ণচরে মোটর থেকে বৈদ্যুতিক তার খুলতে প্রাণ গেল যুবকের
কারখানায় আগুন, পরিদর্শনে হাতেম
নির্বাচনের তারিখ নিয়ে যা জানালেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার
কবি জসীমউদ্দিনের মেজ ছেলে ড. জামাল আনোয়ার আর নেই
ভাঙ্গায় দুই গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষে নারী-পুরুষসহ আহত- ১০
আমাদের সংস্কৃতির অংশ হলো সব ধর্মের মাঝে সম্প্রীতি ও সহাবস্থান: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
রাতের আধারে অসহায় ব্যাক্তিদের বাড়ির দরজায় গিয়ে কম্বল দিলেন ইউএনও
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রশংসা করলেন রাহাত, জানালেন নিজ অনুভূতি
সাবেক দুদক কমিশনার জহরুল হকের পাসপোর্ট বাতিল, দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
শ্রীপুরে ভুয়া মেজর আটক
প্রশ্ন: কিসব কারণে বিয়ের বরকত নষ্ট হয়ে যায়?
মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার অনুপম দৃষ্টান্ত মুহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ (সা:)
আল-কুরআন তাজকেরায়ে মীলাদ নামায়ে আম্বিয়া (আ:)
ভারত উপমহাদেশে মুসলিম সভ্যতার জাগরণে আবুল হাসান আলী নদভির শিক্ষাচিন্তা