দেড় দশক পর আবারও মাদারীপুর জেলায় দেশের নিষিদ্ধ সশস্ত্র সংগঠন পূর্ব বাংলার সর্বহারা পার্টি সক্রিয় হয়ে উঠেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সম্প্রতি জেলার বিভিন্ন গ্রামের হাট–বাজারে লাল পতাকা উত্তোলন ও দেয়ালে লিফলেট সাঁটিয়ে নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে তারা। এতে জনমনে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মাদারীপুর সদর উপজেলার দুধখালী ইউনিয়নের হাউসদী বাজারে শুক্রবার সকালে ‘মা টেলিকম’ নামের একটি দোকানের সামনে স্থানীয় লোকজন পূর্ব বাংলার সর্বহারা পার্টির লেখা ও হাতুড়ি ও কাস্তে প্রতীক আঁকা লাল রঙের একটি পতাকা উড়তে দেখে। এ সময় বাজারের বেশ কয়েকটি স্থানে কম্পিউটারে টাইপ করা ‘ভারতের পা’ চাটা ও ‘সাম্রাজ্যবাদের দালাল হাসিনা—আওয়ামী ফ্যাসিবাদের নির্বাচনী প্রহসন বর্জন করুন’ শিরোনামের একটি লিফলেট সাঁটানো দেখা যায়। দীর্ঘ কয়েক বছর পর স্থানীয়রা সশস্ত্র সংগঠন পূর্ব বাংলার সর্বহারা পার্টির এই তৎপরতা দেখে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে।
পূর্ব বাংলার সর্বহারা পার্টির লিফলেটে লেখা—‘৭ জানুয়ারি ফ্যাসিবাদী হাসিনা–মার্কা নির্বাচনে জনগণের ভোট দেওয়া না দেয়া সমান কথা। এতে জনগণের মতামতের কোনো মূল্য নেই, স্বার্থও নেই। বরং তারা নতুন করে ক্ষমতায় এলে জনগণের ওপর আরও বর্ধিত রুপে ফ্যাসিবাদী দুঃশাসন জেঁকে বসবে। দ্রব্যমূল্যের চাপে জনজীবন হবে আরও দুর্বিষহ। বিদেশি শয়তানরা, বিশেষত ভারত এদেশে তাদের থাবা আরও জোরালো ভাবে বসিয়ে দেবে।’
পূর্ব বাংলার সর্বহারা পার্টির লিফলেটে আরও বলা হয়েছে, ‘দক্ষিণাঞ্চলের মাদারীপুর, শরীয়তপুর, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ ও বরিশালকে হাসিনা–আওয়ামী লীগ তাদের পৈতৃক সম্পত্তি মনে করে। মাদারীপুরের এক সময়ের কুখ্যাত খুনী জাসদ পান্ডা, বর্তমানে আওয়ামী সন্ত্রাসের গডফাদার শাজাহান খান, শিবচরের চৌধুরী পরিবার, বরিশালের সেরনিয়াবাত পরিবার ও গোপালগঞ্জের শেখ পরিবার—এই চার পরিবার মিলে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষকে জিম্মি করে রেখেছে।’
লিফলেটে কৃষক–শ্রমিক–দরিদ্র–মধ্যবিত্তের বিপ্লবী রাষ্ট্র–ক্ষমতা প্রতিষ্ঠার জন্য মাওবাদী গণযুদ্ধ গড়ে তোলার আহ্বান জানানো হয়। প্রায় দেড় দশক পর জেলার বিভিন্ন গ্রামে–গঞ্জে পূর্ব বাংলা সর্বহারা পার্টির এসব কর্মকাণ্ড নতুন করে দেখে মানুষের মনে আতঙ্ক দেখা যাচ্ছে।
পেয়ারপুর গ্রামের এক বাসিন্দা বলেন. ‘আমার বাড়ি থেকে হাউসদী বাজার খুব কাছেই। সকালে বাজারে গিয়ে দেখি মানুষের মনে কৌতূহল। বাজারের মূল পয়েন্টে সশস্ত্র সংগঠন পূর্ব বাংলা সর্বহারা পার্টির পতাকা ও লিফলেট লাগানো। এক সময় এই অঞ্চলে সর্বহারা পার্টির অনেক দৌরাত্মের কথা মুরুব্বিদের মুখে শুনেছি। আজ সকালে কিছুটা কর্মকাণ্ড দেখলাম। এই বিষয় নিয়ে মানুষের মনে আতঙ্কের পাশাপাশি কৌতূহলও দেখা গেছে।’
দুধখালী ইউনিয়নের আরেক বাসিন্দা বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার রাতে আমাদের এলাকায় ও ইউনিয়ন পরিষদের সামনে কিছু হাতবোমা বিস্ফোরণের শব্দ হয়। গভীর রাত হওয়ায় কেউ তেমন খোঁজ নেয়নি। কিন্তু সকালে সর্বহারা পার্টির কিছু কার্যক্রম চোখে পড়ায় অনেকে ধারণা করছে, ওই পার্টির সদস্যরাই রাতে হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। অনেক বছর ধরে এই এলাকায় সর্বহারা দলের সদস্যদের তেমন কোনো কার্যক্রম চোখে পড়েনি। হঠাৎ অনেক বছর পর আবার চোখে পড়ল। বিষয়টি কিছু উদ্বেগের মতনই মনে হচ্ছে।’
এ বিষয়ে মাদারীপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘পূর্ব বাংলা সর্বহারা পার্টির সদস্যদের অপতৎপরতা বন্ধে পুলিশ প্রশাসন কাজ করছে। কারা এই ঘটনার সাথে জড়িত, তাদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে।