নির্বাচনী প্রচারনায় আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শুক্রবার বরিশাল সফর শেষে ফিরে যাবার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই মহানগরী যুড়ে অবৈধ পথ খাবারের দোকানিরা ফিরে এসে ইতোমধ্যে তাদের পূর্ব অবস্থান সংহত করতে সক্ষম হয়েছে। পুনরায় বেদখল হয়ে গেছে বঙ্গবন্ধু উদ্যান সংলগ্ন রাস্তা ও নবগ্রাম রোড-চৌমহনী লেকের পাড় সহ নগরীর যেসব স্থান থেকে অবৈধ পথ খাবারের দোকান অপসারন করা হয়েছিল, তার প্রায় সবই। গত শুক্রবার সড়ক পথে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরিশালে পৌছে স্থানীয় বঙ্গবন্ধু উদ্যানে দলীয় এক বিশাল জনসভায় ভাষন দেন। ঐ দিন সন্ধার আগে প্রধানমন্ত্রী সড়ক পথেই গোপালগঞ্জের উদ্দেশ্যে বরিশাল ত্যাগ করেন।
নগরভবনের কড়াবার্তা পেয়ে গত ২৩ ডিসেম্বর মধ্যরাতের পরে নগরীর নবগ্রাম রোড-চৌমহনী লেকের পাড়ের শতাধিক পথ খাবারের অবৈধ দোকানপাট সরিয়ে নিয়েছিল এর মালিকেরা। প্রায় একই সময়ে বঙ্গবন্ধু উদ্যানের অবৈধ স্থাপনাও সরিয়ে নেয় দোকানীরা। ঐসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের ফলে গত সোমবার থেকে নগরীর অভ্যন্তরভাগে দেশের ৮ নম্বর জাতীয় মহাসড়কের নবগ্রাম রোড চৌমহনী, নথুল্লাবাদের কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল ও মিনিবাস টার্মিনাল সংলগ্ন রূপাতলী এলাকায় যানবাহান চলাচল সহ পথচারীদের জন্য অনেকটাই স্বস্তি ফিরে আসে। কিন্তু নির্বাচনী জনসভা শেষে শুক্রবার সন্ধ্যার আগে প্রধানমন্ত্রী ফিরে যাবার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই অবৈধ দখলদাররা ফিরতে শুরু করে এবং রাতের মধ্যে স্ব-স্ব স্থানের দখল কায়েম করে নির্বিঘেœই।
এমনকি গত রোববার থেকে নবগ্রাম রোড-চৌমহনী লেকের পাড়ের বিশাল ওয়াকওয়েতে সবাই প্রায় সাচ্ছন্দে ঘুরে বেড়ালেও শণিবার থেকে সে পথও রুদ্ধ হয়ে গেছে। লেকটির পশ্চিম-দক্ষিন কোনে স্থানীয় অধিবাসী ও দক্ষিণাঞ্চলে তাবলীগের প্রধান কেন্দ্র চৌমহনী মারকাজ মসজিদের মুসুল্লীদের অজু-গোসলের জন্য নির্মিত ঘাটলাটির প্রবেস পথও আটকে দিয়েছে পথ খাবারের দোকানগুলো।
শতাধিক পথ খাবারের দোকানের কারণে প্রায় ৫ কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মিত বরিশাল মহানগরীর সৌন্দর্য বর্ধনকৃত ‘নবগ্রাম রোড-চৌমহনী লেক’টি ইতোপূর্বেই নগরবাসীর গলার কাটা হয়ে উঠেছে। নতুন নগর পরিষদও বিষয়টি নিয়ে চরম বিব্রত। তবে ঐসব অবৈধ স্থাপনার দখল কায়েমের পেছনে নগর পরিষদের একজন কাউন্সিললের ভ’মিকার অভিযোগ এলাকাবাসীর। এসব অবৈধ দোকানের কারণে দেশের ৮ নম্বর জাতীয় মহাসড়কটির এ অংশে প্রতিনিয়ত দূর্ঘটনার ঝুকি বাড়ছে।
লেকটির উত্তর প্রান্তে সড়ক অধিদপ্তরের জমি দখল করে জাতীয় মহাসড়কের ওপর নির্মিত শিশু পার্কটিও ইতোমধ্যে নগরীর অন্যতম দূর্ঘটনাস্থলে পরিনত হয়েছে। নতুন নগর পরিষদও বিদায়ী পরিষদের বিবেকহীন এ কর্মকান্ড নিয়ে যথেষ্ঠ উদ্বিগ্ন। এমনকি এ পার্ক নির্মানের নামে সিটি করপোরেশনেরই ‘রাজকুমার ঘোষ রোড’টির সাথে মহাসড়কের সংযোগ স্থলটি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ফলে এখানে অন্তত ৩শ পরিবার সহ দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রী ও অভিভাবকদের চলাচলের সহজ পথ রুদ্ধ করেছে সিটি করপোরেশন।
এ পার্কটির বিষয়ে সড়ক অধিদপ্তর ও নগর ভবন কোন সিদ্ধান্ত নেবেন কিনা তা জানা যায়নি। তবে বরিশাল সদর আসনের এমপি ও আসন্ন নির্বাচনের আওয়ামী লীগ প্রার্থী জাহিদ ফারুক ‘স্থানীয় গনমানুষ না চাইলে পার্কটি অপসারনের বিষয়টি বিবেচনা’র কথা ইতোমধ্যে গনমাধ্যম কর্মীদের জানিয়েছেন ।
তবে লেকটির পাড় থেকে অবৈধ পথ খাবারের দোকানপাট উচ্ছেদের পরে তা পূণর্বহালে স্থানীয় এলাকাবাসী ও মুসল্লীয়ান সহ ঐ মহাসড়ক ব্যাবহারকারী এবং নগরীর বেশীরভাগ মানুষ চরম হতাশা সহ ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তাদের অনেকেই অবৈধ এসব দখলদারদের ফিরে আসাকে ‘নগর প্রশাসনের ব্যার্থতা ও উদাশিনতা’ বলেও মন্তব্য করেছেন। অনেকেই প্রধানমন্ত্রী চলে যাবার পর পরই অবৈধ পথ খাবারের দোকান আবার নগরীর গনমানুষের ব্যাবহৃত এসব সরকারী সম্পদ দখল করায় হাতাশা ব্যক্ত করে ‘আমরা চাই প্রতিমাসেই প্রধানমন্ত্রী বরিশালে আসুক’ এমন মন্তব্যও করেছেন।