ঢাকা   শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৬ আশ্বিন ১৪৩১

শৈত্যপ্রবাহে কাঁপছে দক্ষিণাঞ্চল বাড়ছে ঠান্ডাজনিত রোগ, কৃষি ব্যবস্থায় মারাত্মক বিরূপ প্রভাব

Daily Inqilab বরিশাল ব্যুরো

১৩ জানুয়ারি ২০২৪, ০২:৩৯ পিএম | আপডেট: ১৩ জানুয়ারি ২০২৪, ০২:৩৯ পিএম

ঘন কুয়াশা ও হিমেল হাওয়ার সাথে তাপমাত্রার পারদ স্বাভাবিকের প্রায় দেড় ডিগ্রী নিচে নেমে যাওয়ায় সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলের স্বাভাবিক জনজীবন প্রায় বিপর্যস্ত। শুক্রবার সকালে বরিশালে তাপমাত্রা ১১.৫ ডিগ্রী সেলসিয়াসে নামার পরে শণিবার তা ১০.৭ ডিগ্রীতে হ্রাস পেয়েছে। অথচ আবহাওয়া বিভাগের মতে এসময়ে বরিশালে সর্বনি¤œ স্বাভাবিক তাপমাত্রা থাকার কথা ১১.৯ ডিগ্রী সেলসিয়াস। শুক্রবার বরিশাল মহানগরী সহ দক্ষিণাঞ্চলের বেশীরভাগ এলাকায় দুপুর সোয়া ৩টার পরে সূর্যের দেখা মিললেও ৪টার পরেই তা মেঘে ঢাকা পরে। শণিবার দুপুর ১.৫৫ মেঘ সরিয়ে সূর্য উকি দিলেও রোদের তেমন তেজ ছিলনা। সাথে হিমেল হাওয়া আর মৌসুমের সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ও কুয়াশাচ্ছন্ন পরিবেশে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা বিপন্ন।
পৌষের প্রায় শেষে এসে শুক্রবার শেষ রাত থেকেই দক্ষিণাঞ্চল যুড়ে শীত জাকিয়ে বসে। সাথে হিমেল হাওয়া আর কুয়াশা ঠান্ডার অনুভুতিকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে তাপমাত্রার পারদ ১৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস শুক্রবার সকালে ১১.৫ ডিগ্রীতে হ্রাসের পরে শণিবার তা আরো দশমিক ৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস হ্রাস পাওয়ায় পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটছে। ৪৮ ঘন্টার ব্যবধানে তাপমাত্রা ২.৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস হ্রাস পেয়ে স্বাভাবিকের ১.২ ডিগ্রী নিচে নেমে মৌসুমের সর্বনি¤œ স্তরে পৌছেছে। অপরদিকে শুক্রবার বরিশালে দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার পরদও স্বাভাবিক ২৫.৫-এর স্থলে ১৭.৫ডিগ্রী সেলসিয়াসে হ্রাস পায়। যা ছিল স্বাভাবিকের প্রায় ৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস কম। ফলে গত দুদিন জরুরী প্রয়োজন ছাড়া বেশীরভাগ মানুষই ঘর থেকে বের হচ্ছেন না।
চলমান মৃদু শৈত্য প্রবাহে জনস্বাস্থ্যের সাথে বোরো ধান, গোল আলু ও শীতকালীন সবজি নিয়ে শংকিত মাঠ পর্যায়ের কৃষিবীদগন। পাশাপাশি ঠান্ডাজনিত রোগব্যাধী বৃদ্ধির আশংকাকেও বাড়িয়ে তুলছে। সদ্য সমাপ্ত ২০২৩ সালে ঠান্ডাজনিত নানা রোগ নিয়ে দক্ষিণাঞ্চলের সরকারী হাসপাতালগুলোতে প্রায় ৭৭ হাজার রোগী চিকিৎসা নিয়েছে বলে বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তর জানিয়েছে। এরমধ্যে শুধুমাত্র ডিসেম্বর মাসেই নিউমোনিয়া আক্রান্ত প্রায় দেড় হাজার রোগী চিকিৎসা নিয়েছে সরকারী হাসপাতালগুলোতে। শিশু ও বয়স্কদের এ সময়ে যথা সম্ভব ঠান্ডা এড়িয়ে চলতে পরামর্শ নিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগন।
এদিকে বর্তমান শৈত্যপ্রবাহ বরিশাল অঞ্চলের কৃষি ব্যবস্থায় মারাত্মক সংকট তৈরী করছে। গত অক্টোবর ও নভেম্বরে দুটি ঘূর্ণিঝড়ে ভর করে অকাল বর্ষণে দক্ষিণাঞ্চলের আমন ও রবি ফসল বিরূপ পরিস্থিতির শিকার হবার পরে এখন শৈত্য প্রবাহে নতুন সংতট তৈরী করছে। সদ্যসমাপ্ত খরিপ-২ মৌসুমে দক্ষিণাঞ্চলে প্রধান দানাদার খাদ্য ফসল আমন আবাদ লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করলেও বৈরী আবহাওয়ায় উৎপাদন যথেষ্ঠ ব্যাহত হয়েছে।
অপরদিকে দু দফার অকাল বর্ষণে রবি আবাদ বিলম্বিত হবার পড়ে এখন শেষ রাতের মাঝারী থেকে ঘন কুয়াশার সাথে তাপমাত্রা স্বাভবাবিকের নিচে নেমে যাওয়ায় বোরো বীজতলা ‘কোল্ড ইনজুরীর’ কবলে পড়ছে। গোল আলুর আবাদও বিলম্বিত হবার পরে শৈত্য প্রবাহে ‘লেট ব্লাইট’ রোগের ঝুকির মুখে।
চলতি রবি মৌসুমে বরিশাল কৃষি অঞ্চলের প্রায় ৪ লাখ হেক্টরে ১৭ লাখ টন বোরো চাল উৎপাদনের লক্ষে প্রায় ৯০ ভাগ বীজতলা তৈরী হয়েছে। কিন্তু লাগাতর ঘন কুয়াশার সাথে তাপমাত্রার পারদ স্বাভাবিকের নিচে নেমে যাওয়ায় এসব বীজতলা কোল্ড ইনজুরীর ঝুকির মুখে। এছাড়া প্রায় ১২ হাজার হেক্টর জমিতে যে প্রায় ২ লাখ টন গোল আলু উৎপাদনের লক্ষ্য রয়েছে, ঘন কুয়াশায় সেখানেও ‘লেট ব্লাইট’ রোগ হানা দেয়ার পরিস্থিতি তৈরী হয়েছে।
অপরদিকে দুটি ঘূর্ণিঝড়ের বিরূপ প্রভাবকে পেছনে ফেলে ১৫ লাখ টন সবজী উৎপাদনের লক্ষ্যে যে প্রায় ৭৫ হাজার হেক্টরে শীতকালীন সবজির আবাদ হয়েছে, সেখানেও নতুন সংকট তৈরী করছে ঘন কুয়াশার সাথে হিমেল হাওয়া সহ শৈত্য প্রবাহ। কনকনে ঠান্ডার সাথে ঘন কুয়াশায় ফুল কপি ও বাধা কপি সহ বিভিন্ন সবজির উৎপাদন ব্যাহত হবার পাশাপাশি গুনগত মানও বিনষ্ট হচ্ছে। বর্তমান জলবায়ু পরিস্থিতি মাঠে থাকা গমের ‘ব্লাষ্ট’ নামের এক ধরনের ছত্রাকবাহী রোগের পরিস্থিতি তৈরী হয়েছে। ইতোমধ্যে লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করে বরিশাল কৃষি অঞ্চলে প্রায় ৬০ হাজার হেক্টর জমিতে গমের আবাদ সম্পন্নের পথে। তবে চলমান কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়া এ ফসলের জন্য খুব একটা অনুকুল নয়। আবহাওয়া বিভাগ থেকে আগামী দুদিন দিন ও রাতের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধির কথা জানিয়ে ১৫ জানুয়ারীর পরবর্তি ৫ দিনে বৃষ্টি ও বজ্র বৃষ্টির সম্ভবনার কথাও বলা হয়েছে।


বিভাগ : বাংলাদেশ


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

ফিরেই গোলের দেখা পেলেন রোনালদো,নাসেরের সহজ জয়

ফিরেই গোলের দেখা পেলেন রোনালদো,নাসেরের সহজ জয়

কোহলি রিভিউ না নেওয়ার যে কারণ জানালেন সঞ্জয় মাঞ্জরেকার

কোহলি রিভিউ না নেওয়ার যে কারণ জানালেন সঞ্জয় মাঞ্জরেকার

মাঠের বাইরে নতুন পরিচয়ে মেসি

মাঠের বাইরে নতুন পরিচয়ে মেসি

দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করার আহ্বান উপদেষ্টা নাহিদের

দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করার আহ্বান উপদেষ্টা নাহিদের

মালয়েশিয়া আন্তর্জাতিক হালাল শোকেসের ২০তম আসরে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ

মালয়েশিয়া আন্তর্জাতিক হালাল শোকেসের ২০তম আসরে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জেলা প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত দেশকে অস্থিতিশীল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে পরাজিত শক্তি

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জেলা প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত দেশকে অস্থিতিশীল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে পরাজিত শক্তি

শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন কাল

শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন কাল

‘মব জাস্টিস’ বন্ধের আহ্বান বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরামের

‘মব জাস্টিস’ বন্ধের আহ্বান বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরামের

সাত দফা দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ

সাত দফা দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ

গৌরনদীর দই, একবার খাইলেও আর একবার খাই

গৌরনদীর দই, একবার খাইলেও আর একবার খাই

নোয়াখালীতে জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ বন্ধের দাবি

নোয়াখালীতে জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ বন্ধের দাবি

স্বর্ণের দাম বেড়ে রেকর্ড ২,৬০৯ ডলার ছাড়িয়েছে

স্বর্ণের দাম বেড়ে রেকর্ড ২,৬০৯ ডলার ছাড়িয়েছে

বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ ও বিচার দাবিতে খুলনায় মানববন্ধন

বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ ও বিচার দাবিতে খুলনায় মানববন্ধন

গাজায় অব্যাহত ইসরাইলি গণহত্যা ওআইসির নেতারা চেয়ে চেয়ে দেখছেন

গাজায় অব্যাহত ইসরাইলি গণহত্যা ওআইসির নেতারা চেয়ে চেয়ে দেখছেন

চাঁদপুর শহরে সড়ক সংস্কার কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ

চাঁদপুর শহরে সড়ক সংস্কার কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ

সেনা কর্মকর্তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেয়া প্রসঙ্গে

সেনা কর্মকর্তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেয়া প্রসঙ্গে

নোয়াখালীতে ৪৪ দিন পর লাশ উত্তোলন

নোয়াখালীতে ৪৪ দিন পর লাশ উত্তোলন

ভারতের দোসর ও হাসিনামিডিয়ার প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকা

ভারতের দোসর ও হাসিনামিডিয়ার প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকা

আশাশুনিতে হাজরাখালির নেটপাটায় পানিবন্দি ২শ’ পরিবার

আশাশুনিতে হাজরাখালির নেটপাটায় পানিবন্দি ২শ’ পরিবার

জামায়াত ক্ষমতায় গেলে নারীদের অধিকার খর্ব হবে না: সেলিম উদ্দিন

জামায়াত ক্ষমতায় গেলে নারীদের অধিকার খর্ব হবে না: সেলিম উদ্দিন