দক্ষিণাঞ্চলে ঠান্ডাজনিত রোগ ক্রমশ উদ্বেগ বাড়াচ্ছে

করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় উদ্যোগ নেই ভ্যাকসিন সহ পরিক্ষা কার্যক্রমও বন্ধ

Daily Inqilab নাছিম উল আলম

২০ জানুয়ারি ২০২৪, ০৪:৪৮ পিএম | আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০২৪, ০৪:৪৮ পিএম

 

 বরিশাল সহ দক্ষিণাঞ্চলে গত কয়েকদিনের শীতের দাপটে ঠান্ডাজনিত নানা সংক্রমক রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমে উদ্বেগ ছড়াচ্ছে। বছর যুড়ে উদ্বেগ ছড়িয়ে ডেঙ্গু অনেকটা নিয়ন্ত্রনে এলেও মৃত্যুর মিছিল থামছে না। শণিবার দুপুরেও বরিশাল শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এক ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যুর খবর দিয়েছে স্বাস্থ্য দপ্তর। এনিয়ে শুধু সরকারী হাপসাতালে ২১৪ জনের মৃতুর সাথে আক্রান্তের সংখ্যাও সাড়ে ৩৮ হাজারে পৌছল।
নতুনকরে করোনার চোখ রাঙানি উদ্বেগ তৈরী করলেও টেষ্ট কিটের অভাবে এ অঞ্চলের কোথাওই কোভিড পরিক্ষার কোন ব্যবস্থা নেই। বরিশাল শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজ ও ভোলা জেনারেল হাসপাতালে দুটি পূর্ণাঙ্গ ‘করোনা টেষ্ট ল্যাব’ থাকলেও জনবল প্রায় শূণ্যের কোঠায়। এছাড়া প্রতিটি উপজেলা সদরেও কোভিড-১৯’এর প্রাথমিক শনাক্তের সুবিধা থাকলেও কীটের অভাবে দক্ষিণাঞ্চলের কোথাও এখন আর করোনা শনাক্তের ব্যবস্থা নেই। এমনকি এ অঞ্চলে করোনা প্রতিরোধি ভ্যাকসিন-এর ৩ ডোজ গ্রহনের হার এখনো ৬০ ভাগেরও নিচে। ৫ ভাগ মানুষও ৪র্থ ডোজ গ্রহন না করলেও গত প্রায় ৬মাস ভ্যাকসিন কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
তবে খুব দ্রুত টেষ্টকীট সরবারহ সহ জনবল নিয়োগে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে জরুরী বার্তা পাঠান হয়েছে বলে বরিশালের বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক সহ শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজের দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে। বিভাগীয় পরিচালকের মতে ‘টেষ্ট কীট পাওয়া গেলে আমরা প্রতিটি উপজেলা পর্যায়েও কোভিড রোগী শনাক্তে পরিক্ষা কার্যক্রম দ্রুত শুরু করার প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি’।
সদ্য সমাপ্ত ২০২৩ সালে দক্ষিণাঞ্চলে করোনা প্রায় নিয়ন্ত্রনেই ছিল। ২০২২-এর ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এ অঞ্চলে শনাক্ত প্রায় ৫৫ হাজার করোনা রোগীর মধ্যে ৬৯৩ জনের মৃত্যু হয়। যার মধ্যে বরিশাল মহানগরীতেই দেড় শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়। পুরো করোনাকালীন সময়ে এ নগরী ছিল কোভিডের আতুর ঘর। অঅক্রান্তের শীর্ষেও ছিল এ মহানগরী। অথচ বিভাগের প্রায় ১ কোটি মানুষরে মাত্র ৬% এনগরীর বাসিন্দা।
করোনার মত ডায়রিয়া সহ ঠান্ডাজনিত সব রোগীর শীর্ষেও বরিশাল মহানগরী। এরপরেই দ্বীপজেলা ভোলার অবস্থান।
এদিকে গত বছর প্রায় ৭২ হাজার ডায়রিয়া আক্রান্ত নারী-পুরুষ ও শিশু দক্ষিণাঞ্চলের সরকারী হাসপাতাল গুলোতে চিকিৎসা গ্রহনের পরে নতুন বছরের প্রথম কুড়ি দিনেও আরো প্রায় আড়াই হাজার এ রোগ নিয়ে হাসপাতালে এসেছেন। প্রতিদিনই গড়ে শতাধিক নারী-পুরুষ ও শিশু ডায়রিয়া নিয়ে সরকারী হাসপাতালের এলেও বাস্তবে আক্রান্তের সংখ্যা এর তিনগুনেরও বেশী। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকসদের মতে, এখন অত্যন্ত মূমুর্ষ অবস্থায় না পৌছলে কেউ সরকারী হাসপাতালের স্মরনাপন্ন হননা। বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তরের মতে, গত বছর দক্ষিণাঞ্চলের সরকারী হাসপাতাল সমুহে ডায়রিয়ার রোগীর সংখ্যা ছিল প্রায় ৭২ হাজার। যা ২০২২ সালে ছিল ৭৮ হাজারের মত এবং ২০২১ সালে ৭৭ হাজারের কিছু বেশী।
এদিকে শীতের শুরু থেকেই এ অঞ্চলে নিউমোনিয়া সহ ঠান্ডাজনিত নানা রোগের প্রকোপও ক্রমশ বাড়ছে। সদ্য সমাপ্ত বছরে এ ধরনের ৭৭ হাজারেরও বেশী রোগী বিভিন্ন সরকারী হাসপাতালে এলেও নতুন বছরের গত ২০ দিনে আরো প্রায় আড়াই হাজার রোগী ঠান্ডাজনিত নানা উপসর্গ নিয়ে সরকারী হাসপাতালে এসেছেন। এমধ্যে মৃত্যুও হয়েছে ১ জনের। গত বছর সরকারী হাসপাতাল গুলোতে ঠান্ডাজনিত বিভিন্ন রোগে ১৫ জনের মৃত্যুর কথা জানিয়েছে বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তর। আর গত ১ মাসে শুধু নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত প্রায় দেড় হাজার রোগী সরকারী হাসপাতালে এসেছে বলে জানা গেছে। তবে এসব ক্ষেত্রেই আরো অন্তত তিনগুন রোগী বিভিন্ন বেসরকারী ক্লিনিক ও চিকিৎকদের ব্যক্তিগত চেম্বারে চিকিৎসা নিয়েছেন বলে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্রে বলা হয়েছে।
বরিশাল শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সহ দক্ষিণাঞ্চলের সবগুলো সরকারী হাসপাতালের শিশু এবং মেডিসিন ওয়ার্ডগুলো নিউমোনিয়া ও ঠান্ডাজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্তদের ভীড়ে ঠাশা। দক্ষিণাঞ্চঞ্চেলের সর্ববৃহত সরকারী চিকিৎসা সেবা প্রতিষ্ঠান, শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেই মাত্র ৩৬ শয্যার শিশু বিভাগে নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া ও ঠান্ডাজনিত রোগী সহ প্রায় পৌনে ৩শ শিশু চিকিৎসাধীন থাকছে। অনুমোদিত ১ হাজার শয্যার এ হাসপাতালে শিশু বিভাগের জন্য বরাদ্বকৃত বেড সংখ্যা এখনো মাত্র ৩৬। যার মধ্যে ডায়রিয়া আক্রান্ত শিশুদের জন্যও আইসোলেশন ওয়ার্ড রয়েছে। ১ হাজার শয্যার বিশাল এ হাসপাতালে শিশু বিভভাগের জন্য এ স্বল্পসংখ্যক বেড নিয়ে নিয়ে উদ্বিগ্ন ও বিষ্মিত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগন। স্বল্প সংখ্যক অনুমোদিত শয্যার কারণে হাসপাতালটিতে সুষ্ঠু চিকিৎসা সেবাও মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
এদিকে শণিবার শেষ রাত থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত মেঘনা অববাহিকা সহ সমগ্র দক্ষিণাঞ্চল ঘন কুয়শায় ঢেকে ছিল। সকালে তাপমাত্রার পারদ ১৩ থেকে ১৪ ডিগ্রীর মধ্যে থাকলেও আগামী তিন দিনে শীতের তীব্রতা আবারো বৃদ্ধির কথা জানিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ।


বিভাগ : বাংলাদেশ


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

কারো কাছে থাকা আমানত চুরি হয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে।

কারো কাছে থাকা আমানত চুরি হয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে।

মাগুরায় ট্রাক চাপায় মোটর সাইকেল চালক নিহত

মাগুরায় ট্রাক চাপায় মোটর সাইকেল চালক নিহত

শেখ হাসিনার আমলে সীমান্তের কাঁটা তারে লাশ ঝুলন্ত, এখন পতাকা বৈঠক হয়--শাকিল উজ্জামান

শেখ হাসিনার আমলে সীমান্তের কাঁটা তারে লাশ ঝুলন্ত, এখন পতাকা বৈঠক হয়--শাকিল উজ্জামান

পেকুয়ায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পথসভায় মাওলানা ইমতিয়াজ

পেকুয়ায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পথসভায় মাওলানা ইমতিয়াজ

থানা থেকে ছিনাইয়া নেওয়া যুবদল নেতা গ্রেফতার

থানা থেকে ছিনাইয়া নেওয়া যুবদল নেতা গ্রেফতার

শ্রীনগরে বিএনপির অঙ্গ-সংগঠনের ৩ কর্মী গ্রেপ্তার

শ্রীনগরে বিএনপির অঙ্গ-সংগঠনের ৩ কর্মী গ্রেপ্তার

মুকসুদপুরে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা, প্রতিবাদ জানালো আ.লীগ

মুকসুদপুরে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা, প্রতিবাদ জানালো আ.লীগ

নতুন কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামছে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো

নতুন কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামছে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সাকিবের বোলিং নিষিদ্ধ

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সাকিবের বোলিং নিষিদ্ধ

এই সরকার বিপ্লবের চেতনাকে পুরোপুরি ধারণ করতে পারেনি: মাহমুদুর রহমান

এই সরকার বিপ্লবের চেতনাকে পুরোপুরি ধারণ করতে পারেনি: মাহমুদুর রহমান

শার্শা থানা প্রেসক্লাবের উদ্যোগে সাংবাদিকদের মিলন মেলা

শার্শা থানা প্রেসক্লাবের উদ্যোগে সাংবাদিকদের মিলন মেলা

মুখ্য সংগঠক হান্নান মাসউদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা!

মুখ্য সংগঠক হান্নান মাসউদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা!

সোনারগাঁওয়ে শীতবস্ত্র বিতরণ ও ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প অনুষ্ঠিত

সোনারগাঁওয়ে শীতবস্ত্র বিতরণ ও ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প অনুষ্ঠিত

রাষ্ট্র সংস্কারে ১৫ দফা প্রস্তাবনা: পৃথক শরীয়া আদালত প্রতিষ্ঠার দাবি

রাষ্ট্র সংস্কারে ১৫ দফা প্রস্তাবনা: পৃথক শরীয়া আদালত প্রতিষ্ঠার দাবি

কলম্বিয়ায় বিমান বিধ্বস্ত হয়ে নিহত ১০

কলম্বিয়ায় বিমান বিধ্বস্ত হয়ে নিহত ১০

দেশের সংগ্রামের ইতিহাস-সংস্কৃতি বিশ্বে তুলে ধরার আহ্বান উপদেষ্টা নাহিদের

দেশের সংগ্রামের ইতিহাস-সংস্কৃতি বিশ্বে তুলে ধরার আহ্বান উপদেষ্টা নাহিদের

ভারতে চার বাংলাদেশি নাগরিক গ্রেপ্তার

ভারতে চার বাংলাদেশি নাগরিক গ্রেপ্তার

পথশিশুদের নিয়ে বিপিএলের ট্রফি উন্মোচন

পথশিশুদের নিয়ে বিপিএলের ট্রফি উন্মোচন

তামিমকে বিসিবির ধন্যবাদ

তামিমকে বিসিবির ধন্যবাদ

গণহত্যাকারীদের বিচারিক প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে: সারজিস

গণহত্যাকারীদের বিচারিক প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে: সারজিস