গাজীপুরে গ্যাসের সংকট কাটেনিঃ উৎপাদন ব্যাহত হয়ে শিল্প কারখানা বন্ধ হওয়ার উপক্রম
২২ জানুয়ারি ২০২৪, ০৬:১৩ পিএম | আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০২৪, ০৬:১৩ পিএম
গাজীপুরে শিল্প কারখানা সহ বাসা বাড়িতে তীব্র গ্যাসের সংকট এখনো কাটেনি। এই সংকটের কারণে কারখানাগুলোতে উৎপাদন অর্ধেকে নেমে এসেছে বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন কারখানার কর্তৃপক্ষ। এ সংকট চলতে থাকলে কারখানা বন্ধ করে দেয়া ছাড়া তাদের আর কোন উপায় থাকবে না বলেও তারা জানিয়েছেন।
গাজীপুরে গ্যাস সংকটের কারণে শিল্পাঞ্চল এলাকার কলকারখানায় উৎপাদন ব্যাহতের কারণে শিল্প মালিকরা শ্রমিকদের বেতন বোনাস দিতে হিমশিম খাচ্ছেন।
গাজীপুরে প্রতিষ্ঠিত এসে এস নীটওয়্যারের এক কর্মকর্তা জানান, এক সপ্তাহ ধরে তীব্র গ্যাসের সংকটের কারণে তাদের কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে এবং তাদের প্রচুর লোকসানের সম্মুখীন হতে হচ্ছে। বিদেশি অর্ডারের মাল সময় মত দিতে না পারলে অর্থনৈতিক সংকটে শ্রমিকদের বেতন সময় দেয়া সম্ভব হবে না।
গাজীপুরের কোনাবাড়ী, কাশিমপুর, বাসন ও টঙ্গীসহ বিভিন্ন এলাকায় বেশিরভাগ কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পথে। শ্রমিকরা কারখানায় আসছেন ঠিকই কিন্তু গ্যাস সংকটের কারণে কাজ করতে পারছেন না। ৮ ঘন্টার কাজ ১৬ ঘন্টা করেও শেষ করতে পারছেন না বলেও তাদের দাবি। প্রতিদিন তাদের গুনতে হচ্ছে লাখ লাখ টাকা লোকসান।
গাজীপুরের কোনাবাড়ি আমবাগ সড়কে অবস্থিত এম এম নিটওয়্যার কারখানার এজিএম এডমিন মনোয়ার হোসেন বলেন, কারখানায় গ্যাসের চাপ কম থাকায় তাদের উৎপাদন ব্যহত হচ্ছে। আগে দিনে গ্যাসের চাপ কম থাকলেও রাতে গ্যাসের চাপ ভালোই পাওয়া যেত। কিন্ত কিছুদিন ধরে রাতে বা দিনে গ্যাসের চাপের একই অবস্থা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, আমাদের কারখানার উৎপাদনের চালিকা শক্তির মধ্যে গ্যাস ও বিদ্যুৎই প্রধান। এরমধ্যে বর্তমানে গ্যাসের সংকটের কারণে আমাদের কারখানার উৎপাদন অর্ধেকে নেমে এসেছে।
তিনি আরো বলেন, কারখানায় প্রতিদিন ৪০ থেকে ৫০ টন উপাদন ক্ষমতা থাকলেও এখন গ্যাসের সংকটের কারনে ২০ থেকে ২৫ টনে নেমে এসেছে। তাই সরকার যদি এলএনজি আমদানি যথাযথ সময়ে করে দিতে পারেন তাহলেও পোশাক কারখানাসহ গ্যাস নির্ভর সকল কারখানা চালু রাখা সম্ভব হবে। এ সংকটের কারণে কিছুদিন ধরে আমরা কারখানায় অর্ধেক মেশিন চালু রাখতে পারছি, বাকি মেশিন বন্ধ রাখতে হচ্ছে। এতে একদিকে উৎপাদনও কম হচ্ছে অপরদিকে অনেক সময় নষ্ট হচ্ছে।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কোনাবাড়ী শিল্পাঞ্চল (বিসিক) এলাকার বেশ কয়েকটি কারখানার কর্মকর্তারা বলেন, মাস ঘুরতেই শ্রমিকের বেতন-ভাতা পরিশোধ করতে হয় নতুবা তারা আন্দোলনে নামেন বেতন ভাতার দাবিতে।
অথচ গ্যাস সংকটে কারখানা গত চার দিন বন্ধ থাকার পর বিকল্প হিসেবে মাত্রাতিরিক্ত খরচে সিএসজি ও ডিজেলের মাধ্যমে ব্রয়লার এবং জেনারেটর চালু করা হয়েছে। তারা আরো বলেন, এর আগে মাস খানেক ধরেই গ্যাস সংকটে কারখানা চলেছে নানা সংকটের মধ্য দিয়ে।
গাজীপুর সদর উপজেলার ভবানীপুর বানিয়ার চালা এলাকার মোশাররফ টেক্সটাইল কারখানার এজিএম আব্দুস সালাম বলেন, কারখানায় গ্যাসের সংকটের কারনে আমাদের অতিরিক্ত বিদ্যুৎ ব্যয় হচ্ছে। ফলে আমাদের কারখানার উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় লোকসান গুনতে হচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা ভেবেছিলাম নির্বাচনের পর হয়তো ঠিক হয়ে যাবে কিন্তু না গ্যাসের সংকট আরও প্রকট আকার ধারণ করেছে। এছাড়া গাজীপুরের শ্রীপুর, কোনাবাড়ি, কাশিমপুর এলাকার বেশ কয়েকটি কারখানা কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে জানা যায় তাদেও কারখানাও গ্যাসের একই চিত্র।
মহানগরের সালনা এলাকায় অবস্থিত প্রীতি গ্রুপ’র জিএম একেএম ফজলুল হক বলেন, তাদের কারখানায়ও গ্যাসের সংকট রয়েছে। গ্যাস সংকটের কারণে উৎপাদন ব্যহত হওয়ায় ক্রেতাদের চাহিদা মতো মাল সরবরাহ করতে পারছি না। এতে ব্যবসার ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। তারা আরো বলছেন খুব দ্রুত গ্যাস সংকট সমাধান করা না হলে এ অঞ্চলে শিল্প কারখানার বড় রকমের ক্ষতি হতে পারে। শুধু শিল্পকারখানায় নয়, গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় আবাসিক লাইনেও গ্যাসের চাপ কম বলে জানা গেছে।
গাজীপুর মহানগরের বাসন সড়ক এলাকার ইকবাল হোসেন জানান, গত এক সপ্তাহ ধরে তাদের বাসায় গ্যাস না থাকার কারণে রান্নাবান্না বন্ধ রয়েছে। বাহির থেকে খাবার কিনে এনে খাওয়া হচ্ছে।
ভোগড়া এলাকার রেহেনা বেগম বলেন, রান্নার জন্য এখন সিলিন্ডার গ্যাসই ভরসা। একদিকে তিতাসের লাইনের গ্যাস ব্যবহার না করেই ব্যাংকে নির্ধারিত হারে বিল গুনতে হচ্ছে। অপরদিকে সিলিন্ডার গ্যাস নগদ টাকায় কিনতে হচ্ছে। এতে জ্বালানি খরচও দ্বিগুণ গুনতে হচ্ছে।
তিতাস গ্যাস বিপনন ও সরবরাহ, গাজীপুর শাখার ম্যানেজার অপারেশন ইঞ্জিনিয়ার মো. রিদওয়ানুজ্জামান বলেন, গাজীপুরে দুই হাজারের মতো শিল্প কারখানায় তিতাসের সংযোগ রয়েছে। সম্প্রতি চট্টগ্রামে টার্মিনাল থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (খঘএ) সরবরাহ কম থাকার কারণে ভোক্তাদের ব্যবহারের জন্য গ্যাসের সংকট দেখা দিয়েছে। গাজীপুরে গ্যাসের চাহিদা রয়েছে দৈনিক ৫৯০ মিলিয়ন ঘনফুট, কিন্তু গ্রীড থেকে সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে ৪৬০ মিলিয়ন ঘনফুট।।
গ্যাসের এই তীব্র সংকটের কারণ জানতে গাজীপুর তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করা হলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মকর্তা জানান, শীতের হাওয়ার কারণে গ্যাসের চাপ অনেকটা কম। তবে এ সমস্যা সাময়িক। সংকট নিরসনে তারা কাজ করে যাচ্ছেন এবং অচিরেই এ সমস্যার সমাধান হবে।
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
ভিনিসিউস-এমবাপ্পে ঝলকে রিয়ালের বড় জয়
ফের বিবর্ণ ইউনাইটেড হারাল পয়েন্ট
দিয়াজের জোড়া গোলে চূড়ায় অলরেডসরা
এবার বুন্দেসলীগায়ও বায়ার্নের গোল উৎসব
দিয়াজের জোড়া গোলে চূড়ায় অলরেডসরা
দ্বিতীয় ওয়ানডেতেও অজিদের অনায়স জয়
প্লটবঞ্চিত পূর্বাচলের আদিবাসিন্দাদের ৩শ’ ফুট সড়কে অবস্থান : বিক্ষোভ অব্যাহত
দেশে সংস্কার ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠার আহ্বান
ছাত্রলীগের হামলার শিকার শিক্ষার্থীদের মামলা করতে বললেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ
উম্মাহর কল্যাণে মুসলমানদের ঐক্যের বিকল্প নেই
বৈরুতে ইসরাইলি হামলায় হিজবুল্লাহর শীর্ষ কমান্ডারসহ নিহত ১৪
পুলিশের লুট হওয়া অস্ত্র অপরাধে ব্যবহারের আশঙ্কা
মস্কোয় হামলার উপযুক্ত ক্ষেপণাস্ত্র কিয়েভে পাঠাবে না জার্মানি
জিয়ার ভূমিকাকে অবহেলা করায় পাহাড়ে সমস্যা হচ্ছে : জামায়াত নেতা শাহজাহান চৌধুরী
মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে ঐক্যবদ্ধ থাকার কোনো বিকল্প নেই: তারেক রহমান
বিচার বিভাগে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা প্রধান বিচারপতির
একদিনে ৮৪৩ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত, মৃত্যু ১
কুষ্টিয়ায় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে সুগার মিলের নিরাপত্তা প্রহরীর মৃত্যু
সাজেক ভ্রমণে আটকা পড়েছেন ৮০০ পর্যটক
‘শুধু সংস্কারে থেমে থাকলেই চলবে না, অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন করতে হবে’ : তারেক রহমান